প্রথম বর্ষ ।। একাদশ ওয়েব সংস্করণ ।। ১৯ পৌষ ১৪২৭
পৌষ মাস হলো গ্ৰাম বাংলার পার্বণের মাস। মাসের শুরুতে গ্ৰামের মেয়েরা টুসু পাতায়। তারপর প্রতিদিন একটা করে আলাদা আলাদা ফুল দিতে দিতে কখন যে শেষ হয়ে যায় মাস বোঝা যায় না।
গ্ৰাম বাংলার ঘরে ঘরে মুড়ি, চিড়ে, পিঠে পুলির জোগাড়ের সাথে সাথেই ঘরের সমস্ত কাপড় চোপড় কাচার কাজ চলতে থাকে। ঘরের মহিলাদের এতটুকু বিশ্রামের সুযোগ থাকে না এই মাসে। মকর ঢুব দিয়ে স্নান ঘাট থেকে নতুন কাপড় পরে এলে তবে বিশ্রাম।
পৌষ পার্বণ হলো গ্ৰাম বাংলার মহোৎসব। এই সময় নতুন ধান উঠে আসায় ঘরে ঘরে সচ্ছলতা। কারো কোনো অভাব নেই। যারা ভূমিহীন তারাও চাষির ঘরে দু'তিন মাস চাষের কাজ করে রোজগার করে কাঁড়ি কাঁড়ি ধান। সেই ধানের একাংশ বিক্রি করে জোগাড় করে সবকিছু। হাসি ফোটে সকলের মনে।
মকরের আগের দিন বাঁউড়ি। সেদিন বাঁউড়ি বেঁধে রাখে। পরের দিন বাঁউড়ি বাঁধা ঘটি নিয়ে গিয়ে মকর ঢুব দিয়ে জল নিয়ে আসে। সেই জল ছিটিয়ে দেওয়া হয় সারা ঘরে। ঘরদোর পবিত্র করা হয়। শান্তি বিরাজ করে ঘরে।
কথিত আছে, মকরের দিন ইঁদুরেরা নাক বিঁধায়। তাই অনেক ইঁদুর জড়ো হয়ে থাকে একটি গর্তে।সাঁওতাল, সহিস, মুন্ডারা সেই সুযোগে চালিয়ে যায় ইঁদুর ধরার কাজ। এতে ফসল নষ্ট করা ইঁদুরের সংখ্যা কমে আর ইঁদুর মাংসের পিঠেও খাওয়া হয় তাদের। তারপর মকরের দিন মেলার মজা। টুসু গান গাইতে গাইতে দল বেঁধে এগিয়ে যাওয়া মেলার দিকে। রঙিন টুসু নিয়ে হেলাদোলা।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
টুসু গান : মা, মেয়ে ও ঘর-সংসারের গান
তপন পাত্র
"আবার এসেছে পৌষ "... , পৌষ এলেই মানভূম-পুরুলিয়ার আকাশে বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় টুসু গান --"আ'সচে মকর দু'দিন সবুর কর..."। কারণ এ সময় দিগবধূরা ধানের ক্ষেতে হাওয়ার নেশায় মেতে ওঠে, মাটির আঁচলে ছড়িয়ে পড়ে রোদের খাঁটি সোনা । মাঠের বাঁশি শুনে শুনে খুশি হয় আকাশ । প্রাচুর্যের স্বর্ণময়ী পৌষে আমরা শুনতে পাই পল্লীপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথের সুপরিচিত কণ্ঠস্বর "ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে, ..."।
শূন্য ভাদরে যখন রাজার ভান্ডার খালি, তখন যে কৃষক, কৃষিমজুর অনাহারে , অর্ধাহারে বহু আশায় বুক বেঁধে কঠোর পরিশ্রম ক'রে হাল বেয়েছিল, কৃষাণী চারাতলা বসিয়েছিল , আগাছা নিকিয়েছিল পৌষে সেই শ্রম সোনা হয়ে গেছে । সোনার ফসল রূপশালি ধান বিরাজ করছে খামারে খামারে ঘরে ঘরে । সম্বৎসরে এই একটি মাস উৎসবের মাস । এই একটি মাস প্রকৃতিরাজের রাজত্বে সবাই রাজা।
অঘ্রানের সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত টুসু বা তুষু পূজা । কোথাও তুষু, কোথাও তোষলা , কোথাও পৌষলক্ষ্মী , মানভূমিতে টুসু । তুষ টুসু ব্রতের একটি অপরিহার্য উপাদান । কৃষি বা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে এর একটি নিবিড় সংযোগ । গোরুর গোবর, সরষে ফুল, নতুন ধানের তুষ ইত্যাদি উপকরণ টুসু পাতার সাথে সংযুক্ত । টুসু পাতার দৃশ্যটি দেখলে দর্শকমাত্রই বুঝতে পারবেন এর সঙ্গে উর্বরতাবাদের যোগসূত্রটি সুস্পষ্ট ।
আমরা একটু ব্রতের বিধিটির দিকে নজর দিই । এক সময় সারা পৌষ মাসের প্রত্যেক সকালে কুমারী মেয়েরা কিংবা সধবারা স্নান সেরে গোবরের ছ'কুড়ি ছ' গন্ডা অর্থাৎ একশত চুয়াল্লিশটি গুলি পাকিয়ে কালো দাগহীন নতুন সরাতে বেগুন পাতা পেতে তার উপর গুলি গুলো নামিয়ে রাখাতো । সেখানে নতুন আতপ চালের তুষ ও কুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে সরষে , শিম , তিসি ইত্যাদি ফুল দিয়ে ছড়া বলা হতো । সময়ের সাথে সাথে নিয়মের জটিলতা কমেছে । ক্রম বিবর্তনের পথ ধরে ছড়া পরিবর্তিত হয়েছে গান-এ । পৌষের প্রত্যেক সন্ধ্যায় গান গেয়ে মুড়ি , চিড়া গুড় , জিলিপি ইত্যাদি নৈবেদ্য সাজিয়ে টুসু পূজার আয়োজন হয়েছে । তা-ও বহুকালের প্রাচীন রেওয়াজ ।
আমরা যদি প্রাচীন প্রচলিত টুসু গানগুলি বিশ্লেষণ করি , যে গানগুলি কোন নির্দিষ্ট রচয়িতার রচনা নয় , সাম্প্রতিক কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরার জন্য কোনো কৃত্রিম বাহাদুরি নয় , প্রকৃতপক্ষেই লোকজ সম্পদ তাহলে দেখব এই গানগুলিতে অত্যন্ত প্রাণবন্ত রূপে ফুটে উঠেছে মাটির কাছাকাছি মা, মেয়ে এবং পল্লী-বাংলার ঘর-সংসারের কথা ।
শাক্ত পদাবলীতে যেমন দেখি , সারা বছরের শেষে শরৎ এলে মা মেনকা গিরিরাজ হিমালয়কে বারবার মিনতি জানান কন্যা উমাকে নিয়ে আসার জন্য । উমার শ্বশুর ঘরে সুখ শান্তি নেই । মেনকা বলছেন, "কুস্বপ্ন দেখেছি গিরি , উমা আমার শ্মশানবাসী" । আবার বলছেন, উমা বাপের বাড়ি আসার জন্য, "মা মা বলে কেঁদেছে" , কারণ ---"একে সতীনের জ্বালা, না সহে অবলা প্রাণে কত সহেছে"। মায়ের ভাবনা ---উমার গৌর বরণ কালো হয়ে গেছে । একই ভাবনা মানভূম জননীর মাতৃরূপিনী কন্যা টুসুমণির জন্য । তাকে নিয়ে আসতে দেরি হচ্ছে , কন্যা হয়তো ভাবছে এবার তাকে বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে না , অসম্ভব সম্ভাব্য যন্ত্রণার কথা ভেবেই ভাবনাটি গান হয়ে গেছে ,
" এত বড় পৌষ পরবে রাখলি মা পরের ঘরে,
মাগো আমার মন কেমন করে।"
আদরিণী কন্যার 'মন কেমন করা' খুব স্বাভাবিক । শাশুড়ি-ননদী-সতীন পরিবৃত্ত একান্নবর্তী পরিবারে মেয়ের রূপের সেই জৌলুস আর নেই । বাপের বাড়ির মতো শ্বশুরবাড়িতে নিজের রূপচর্চার সময় পায় নি টুসুমণি । মায়ের মনে প্রশ্ন জাগে ---
"হলুদ বনের টুসু তুমি হলুদ কেন মাখনা ?
শাশুড়ি ননদের ঘরে হলুদ মাখা সাজেনা !"
"হলুদ বনের টুসু" --অর্থাৎ যে কন্যার প্রাত্যহিক প্রসাধন ছিল সারা শরীরে হলুদ মাখা ; সেই কন্যা এখন আর সেই সুযোগ পায় না । তাছাড়া সংসারে রয়েছে সতীনের জ্বালা । সতীনের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে একসময় যেন টুসুও বলছে ---
"আয় ন সতীন মারবি নকি , তর হাতে কি মার খাব ?
তর দুয়ারে কাটরা গা'ড়ে তকেই বলিদান দিব ।"
অথবা ---
"এক গাড়ি কাঠ, দু'গাড়ি কাঠ কাঠ্-এ আগুন লাগাব ।
যখন আগুন পরবল্ হব্যাক সতীনকে ঠে'লে দিব ।"
---নারী-জীবনের সর্বাপেক্ষা মর্মান্তিক দাবদাহ সপত্নী-কণ্টকিত জীবন নির্বাহ । সতীন এর জন্য স্বামীর ঘরও পরবাসে পরিবর্তিত হতে পারে । সপত্নী-যাপিত জীবনের হিংস্রতা দাম্পত্য জীবনকে গরল সমুদ্রে পরিণত করে তোলে । তাই আমরা টুসুর আচরণেও পরিচয় পাই হিংস্রতার ।
শ্বশুরবাড়িতে কোনো অর্থেই সুখ স্বাচ্ছন্দ নেই টুসুর । তাই সে আক্ষেপের সুরে বলে ---
"বাপের ঘরে ছিলাম ভাল কাঁখে গইরা চাল ভাজা ।
শ্বশুর ঘরে বেড়ি জ্বালা লক বুঝাইতে যায় বেলা।"
যে টুসুকে বাপের বাড়িতে খুব একটা শারীরিক পরিশ্রম করতে হত না, সেই টুসুকেই হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শিকার হতে হয় শ্বশুরবাড়িতে । রোগ জীর্ণ শীর্ণ শরীরের মতো গড়ন , বরণ হয়ে যায় টুসুর, তাই জননীর ব্যাকুল জিজ্ঞাসা ---
"মা -এ বলে হ্যাঁগো বিটি এত কেন শুখালি ?
শ্বশুর ঘরের ফঁপরা মুড়ি খাঁইয়ে খাঁইয়ে শুখালী।"
অবশেষে মা-বাবার সংসারে টুসুমণির আগমন । আনন্দ উৎসবের উদযাপন । "তিরিশ দিন রাখিলাম মাকে তিরিশ স'লতা দিয়ে গো..."।
যেমন কন্যা উমার আগমনে মা মেনকা বলে উঠেছেন --- "তিনদিন স্বর্ণদ্বীপ জ্বলিতেছে ঘরে,
দূর করি অন্ধকার; শুনিতেছি বাণী ---
মিষ্টতম এ সৃষ্টিতে এ কর্ণকুহরে ।"
এই সৃষ্টির মিষ্টতম বাণী একাক্ষর ডাক "মা" । মানভূমের সকল নারীর, সকল কুমারীর মনোবাসনা ব্যক্ত হয় একটি কলিতে --"মা বল মা বল টুসু, আমি তুমার মা হব "।
আর টুসু বলে ---
"মা গো , আর যাব না শ্বশুরের বাড়ি ,
হামকে কিলাঁই দিল শাশুড়ি"।
শাক্তগীতে মা মেনকা , গিরিরাজ হিমালয়ের কাছে বলেছিলেন ---
"এবার আমার উমা এলে আর উমা পাঠাবো না,
বলে বলুক লোকে মন্দ , জামাই বলে মানবো না ।
যদি এসে মৃত্যুঞ্জয়, উমা নেবার কথা কয়, এবার মায়ে-ঝিয়ে করবো ঝগড়া, জামাই বলে মানবো না "।
মানভূমের টুসুমণির জননীও কম যায় না , সে বলছে ---
"হামার টুসু একটি ছ্যে'লা মানবাজারে শ্বশুর ঘর,
কলসির উপর কলসি রা'খে পালাঁই আ'ল্অ বাপের ঘর।।
পালাঁই আলি , ভাল'ই কল্লি আর ত বিদাই দিব না ,
জামাই আ'লে ঝগড়া ক'রব লাজের বালা'ই রা'খব না।।"
আদুরে কন্যার দুঃখ-দুর্দশায় মায়ের বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায় । শ্বশুর বাড়ির লোকের চোখে ফাঁকি দিয়ে মেয়ে প্রাণে বাঁচার জন্য কোনোরকমে মায়ের বাড়িতে চলে এসেছে, কেননা "কিলাঁই দিল শাশুড়ি" ! মানভূমের আপামর নারীর কাছে টুসুমণি শুধু কান্না নয় , সে তাদের বঞ্চিত উপেক্ষিত জীবনের এক প্রাণবন্ত সত্তা । সে কখনো দেবী, কখনো জননী , কখনো কন্যা, আবার কখনো সখী, কখনো প্রেমিকা । তবে কন্যারূপেরই প্রাধান্য অধিকতর ।
এই কন্যাকে নিয়ে মায়ের গর্বের , আদর -সোহাগের অন্ত নেই । আর পাঁচ জনের মেয়ের মাঝে নিজের মেয়ে-ই শ্রেয়া ।
"একটি টুসু, দু'টি টুসু , কন টুসু টি ভালো লো ?
হামার টুসু ঝলকদারী জলে আঁখি ঠারে লো ।।"
--আমার কন্যা বালিকা বয়সেই 'ঝলকদারী' অর্থাৎ পাঁচ জনের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম । তাই তো মা গর্ব ভরে বলে --
"এক সড়পে , দু' সড়পে , তিন সড়পে লোক চলে ,
হামার টুসুর এমনি চলন , বিন বাতাসে গা দলে।"
---মেয়ের চালচলন কে নিয়েও মায়ের আহ্লাদ । মনে পড়ে যায় বৈষ্ণব কবি বলরাম দাসের চরণ । কখনো শ্রীরাধার , আবার কখনো শ্রীকৃষ্ণের গর্ব ভরা ভুবনমোহিনী পদসঞ্চার কে চিত্রিত করার জন্য তিনি বলছেন ---
"রসের ভরে অঙ্গ না ধরে
হেলিয়া পড়িছে বায়। "
অথবা
"আধ চরণে আধ চলনি
আধ মধুর হাস।"
---তবে শুধু মায়ের হৃদয়ে জেগে থাকা বাৎসল্যের চিত্রই নয়, আদরিণী টুসুমণি মানভূম-পুরুলিয়ার সাধারণ ঘরের সাধারণ মেয়ে , তাই সে মুড়ি ভাজে , গরু-মোষ চরায় আবার হালও বায় ।
"আমার টুসু মুড়ি ভাজে, চুড়ি ঝলমল করে গো ।
তদের টুসু ছঁচরা মাগি , হাত বাড়িয়ে মাগে লো ।"
--এই দু'টি চরণে শুধু টুসুর মুড়ি ভাজার কথাই নেই, পাশাপাশি পরিবারের মধ্যে একটা বাদ-বিবাদ এর বাস্তব ছবিও ফুটে উঠেছে । আবার কিছু গানে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের বাগালি করার দৃশ্য, চাষ জমিতে লাঙ্গল দেবার প্রতিচ্ছবি ---
(১) "হামদের টুসু ম'ষ চরা'ছে বনকানালীর ওই পারে,
পান কাঁটা চুল মেলে দিঁয়ে ব'সে আছে জল ধারে ।"
(২) "হামদের টুসু হাল বাহিছে, ডাইনে-বাঁয়ে লাল গরু ।
বা'ছে বা'ছে কামিন ক'রব দাঁত কাল, কাঁকা'ল সরু ।।"
একদিন, যখন টুসু নিতান্ত নাবালিকা তখন মা বলেছিল ---"কুলি ধারে ব'স টুসু একাই গরু খু'ল না।
আমার কিরা সংতি ছাড়া বন-বাদাড়ে যাইয়না ।।"
--যেমন পদাবলী সাহিত্যে শ্রীকৃষ্ণজননীর মুখ দিয়ে বাল্যলীলার পদে পদকর্তা যাদবেন্দ্র শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে বলছেন ---
"আমার শপতি লাগে না যাইও ধেনুর আগে
পরাণের পরাণ নীলমণি।"
এখানেও সেই একই কথা, একই ভাব, একই রূপ ,একই ভাবনা একই অন্তরের আকুতি ।
এই বালিকা টুসু যখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করছে , তখন সে লাঙ্গল ধরছে , মুড়ি ভাজছে আবার অন্যদিকে জীবনের স্বাভাবিক বিকাশ ধারায় অন্তরের অভ্যন্তরে প্রেমও এসে দানা বাঁধছে । মেয়ে হয়েও ছেলেদের মতো সে গরু বাগালি করতে যায় , কোন এক রাখালের রাখালিয়া বাঁশির সুরে তার মন উড়ু উড়ু হয়ে যায় । টুসুর সখীরা টুসুর উদ্দেশ্য বলে ---
"বন্ ডহ্ -রায় ডাকে কানহু,
বাজে বাঁশি মোহন স্বর।
লোকের কথা শুনিস না লো,
অ টুসু তর কিসের ডর !"
গানটি এক কানে শুনতে শুনতে আর কানে বেজে উঠছে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী :
"গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে
মৃদুল মধুর বংশী বাজে।
বিসরী ত্রাস লোক লাজে
সজনী আও আও লো।"
নবীনা তরুণীর হৃদয়ে যখন প্রেমের মৃদু শিহরণ , বুকের ভেতর দ্রিমিকি দ্রিমিকি তুং ---মাদোলের সুর , তখন সে কোন না কোন সহচরীর সাথে সখীত্বের প্রগাঢ়তা বাড়িয়ে তুলতে চায় , এতদঞ্চলে সখীদের একটি বড়ো মধুর দিক "মকর পাতানো", " ফুল পাতানো" ইত্যাদি । স্বাভাবিক সহজাত ভাবনায় টুসু বলছে তার মাকে ---
"মাগো আমি ফুল পাতাব, ফুলকে আমি কী দিব ?
বাজার যাব, পয়সা পাব, ফুলকে ফুলাম তেল দিব।"
নব যৌবনে যখন টুসুর হৃদয়ে প্রেমের চাপান-উতোর তখন পাড়ার মহিলারা গান বেঁধেছে --
"টুসুর মাকে বলে দিব টুসুর বিহা দিতে গো"।
তারা সত্যি সত্যি আবেদন জানিয়েছে টুসুর মায়ের কাছে। প্রাণের টুসুমণির একদিন সম্বন্ধ করে বিয়েও হয়ে যায় , সে অনেক ব্যয়বহুল কান্ড ।
"টুসুর বিহা যা তা লহে হাজার টাকা খরচ গো" ।
বিবাহের অনেকদিন পর টুসুর বাপের বাড়িতে পুনরাগমন । সে নাবালিকা থেকে গৃহবধূতে রূপান্তরিতা । বধূ জীবনের পূর্ণ সার্থকতা মাতৃত্বে । কন্যা টুসু সন্তানবতী না হওয়া পর্যন্ত মায়ের মনে একটা উদ্বেগ কাজ করে । অবশেষে কন্যা সন্তান সম্ভবা হলে মায়ের আর আনন্দ ধরে না । টুসুর সন্তানসম্ভাবনায় টুসুর মায়ের উৎসবের আয়জন ।
"ই ঘর কাদা , উ ঘর কাদা ,
কাদায় লুহার কপাট ব'সাব ।
আমার টুসুর ব্যাটা হ'লে হাজার টাকা উড়াব ।"
--মেয়ের ছেলে অর্থাৎ নাতি হ'লে তার সাথে রাজপুত্রের সঙ্গে তুলনা ক'রে দিদিমার মন পুলকিত হয়। কাল্পনিক আনন্দে সে গান ধরে --
"আজারে বাজারে যাব, রাজাকে কলে লিব।
য্যামনি রাজার বাঁকা সিঁথা তেমনি ভাইকে সাজাব ।"
এক সময় টুসু সন্তানের জননী হয়ে ওঠে । মানভূম-পুরুলিয়ার অন্যান্য ছেলে মেয়েদের মতোই টুসুর ছেলেও একটু বড় হয়ে কুলতলায় খেলা করে ।
"হামার টুসুর একটি ছে'ল্যা, কু'ল তলে বই খেলে না ।
কন সতীনে ধুলা দিল ধুলার চিহ্ন গেল না।"
সমাজ-সংসারের
ঘরের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে শ্বশুরবাড়িতে যেমন কারো কারো নিতান্ত যন্ত্রণা , তেমনি আবার দু'দিনের জন্য বাপের বাড়িতে এসেও শান্তি থাকে না । মা-বাবার দরদ মেয়ের জন্য উথলে পড়লেও ভাইয়ের স্ত্রী সংসারে ননদের আদর প্রাপ্তি ও প্রাধান্য পছন্দ করে না। ভাইয়ের স্নেহ বোনের প্রতি যতই প্রবল হোক স্ত্রীর চাপে প'ড়ে তার দুই নৌকায় পা দিয়ে দুই ধরণের ভালোবাসার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে চলা মুশকিল হয়ে পড়ে । তাই টুসুর মুখে উচ্চারিত হয় ---
"ভাই ভাল লয় , ভাজে গা'ল দিছ্যা ,
য্যামন্ জন্ হা'র খাড়ায় জ্বাল দিছ্যা ।"
জন্ হার অর্থাৎ ভুট্টার গাছ যদি শুকনো হয়ে যায় তবে তা জ্বালানীর কাজে ব্যবহার করলে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে বারুদের মতো । 'ভাজ' অর্থাৎ ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার মারাত্মক বীভৎস চেহারাটি বোঝার জন্য এই উপমাটি ব্যবহার করা হয়েছে ।
সময় এগিয়ে চলে । ধীরে পৌষ সংক্রান্তি এগিয়ে আসে । এগিয়ে আসে টুসুমণির শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যাবার পালা । সেখানে অশান্তি যাই হোক, বিবাহিতা নারীর হৃদয় স্বামীর সোহাগের জন্য ব্যাকুল হবেই । তাই টুসুমণি ফিরে যেতে চায় স্বামীর কাছে । বিষণ্ণ চিত্তে মা গান গায় ---
"তিরিশ দিন রাখিলাম মাকে তিরিশ স'লতা দিয়ে গো,
আর রাখিতে লাল্লম্ মাকে সাঁকরা'ত আ'ল বাদি গো।"
শাক্ত পদে নবমী রাত্রির উদ্দেশ্যে মা মেনকার মুখে কমলাকান্ত যেমন বলেছেন , "খলের প্রধান যত কে আছে তোমার মত" , "শুনেছি দারুণ তুমি না রাখো সতের মান", তেমনি এখানেও "সাঁকরাত" ভয়ঙ্কর বাদী হিসাবে হাজির হয়েছে ।
আবার একদিক থেকে এখানে সাঁ'করাত বা সংক্রান্তি একটি প্রতীক মাত্র । সে টুসুর প্রেমিক-স্বামী , সে টুসুর জননীর আদরের জামাই । সাঁকরা'ত আসতেই টুসু যেন ভাবছে ---"ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে ।
আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে ।।
..........
কেমনে রহি ঘরে , মন যে কেমন করে ---
কেমনে কাটে যে দিন , দিন গুনিয়ে । "
এদিকে সারা ঘর-সংসার জুড়ে বিদায়ের বিষণ্ণতার বাতাবরণ ।
"বাপে বলে ছা'ড়্যা দিব, মা-এ বলে ছা'ড়ব না ,
ভাইয়ে বলে, ঝিউড়ী ছানা কাঁদাঁইয়ে পাঠাব না।"
মা , ভাই না চাইলেও টুসু কে যেতে দিতে হয়। পিতৃগৃহে কিছুকাল থাকার পর সকল বিবাহিতা কন্যার মতো টুসুও স্বামীর সংসারে ফিরে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে । তার ব্যাকুলতায় আশ্চর্য হয়ে মা প্রশ্ন তোলে ---
"জলে হেল , জলে খেল, জলে
তোমার কে আছে ?
আপন মনে ভা'বে দ্যাখ, জলে শ্বশুর ঘর আছে।"
--- খুব তাৎপর্যমণ্ডিত গান ! জলে "শ্বশুর ঘর"। অর্থাৎ শ্বশুর ঘর বিবাহিতা মেয়েদের জীবনে "জলে"র মতো। জলই জীবন। শ্বশুর ঘর-ই জীবন তাদের । কিন্তু সব বুঝেও মাতৃহৃদয় বিদায় দিতে চায় না । বিদায় কালেও জানতে চায় , সারা বছর কেমন ভাবে কেটেছে মেয়ের !
" যাচ্ছ যাচ্ছ যাচ্ছ টুসু ফিরে দাঁড়াও আ'গনাতে
সম্বছরের মনের কথা খুলে বল আমাকে।"
গিরিরাণীর মতো মানভূমজননীও বলছে, 'এসো মা , এসো মা, উমা বলো না আর যাই যাই ..."
অবাক করা মোহময় মায়া এই ধুলার ধরনীর । এখানে আয়ুক্ষীণ নিবু নিবু শিখাটিকেও মাটির প্রদীপখানি ধ'রে রাখতে চায়। অতি ক্ষুদ্র তৃণকেও মাতা বসুমতী নিজের বক্ষে জড়ায়ে রাখতে চায় । চৌঢলে চেপে শ্বশুর বাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছে টুসুমণি । চৌঢল বা চৌদল বা চৌডল যাই বলি না কেন আসলে চতুর্দোলা , আসলে পালকি , একটি সম্মানজনক যানে চেপে আদরিণী কন্যা এগিয়ে চলেছে শ্বশুর বাড়ির দিকে ।
টুসুর জননী মানভূম-পুরুলিয়ার চিরন্তনী মাতৃহৃদয়ের হয়ে উচ্চারণ করি রবীন্দ্র চরণ ----
"এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
সবচেয়ে পুরাতন কথা সবচেয়ে গভীর ক্রন্দন 'যেতে নাহি দিব'
তবু যেতে দিতে হয় , তবু চলে যায়।
যৌথতা ভেঙে যায় (অষ্টম কিস্তি)
নির্মল হালদার
যুথবদ্ধ হয়ে কাজ করার দিন বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে। কেউ হয়তো বলবেন, রাজনীতি তো যুথবদ্ধতার এক রূপ। হ্যাঁ, রাজনীতির ক্ষেত্রে যুথবদ্ধতা দেখতে পাই কিন্তু এই যূথবদ্ধতা ভীষণভাবে ফাঁপা। মানুষের কল্যাণ করে না। রাজনৈতিকভাবে যারা যূথবদ্ধ হয়েছেন, তারা ক্ষমতায় থাকতে চান। ব্যবহার করতে চান ক্ষমতাকেই। সেখানে প্রত্যেকেই একা একা ক্ষমতার অধিকারী। যে যার নিজের বৃত্তে অধীশ্বর। সেই অধীশ্বরদের কাছে আমার কোন কথা নেই। কথা আছে এক চাষীর সঙ্গে। যিনি ফসল ফলানোর আনন্দ চেনেন। যিনি আনন্দকে বিলিয়েও দিতে জানেন।
অদূর ভবিষ্যতে চাষবাস কর্পোরেট হাউসের কাছে চলে গেলে, ছবিটা কি দাঁড়াবে এখন আমরা জানি না। জানি, সমস্ত কিছুই টেকনোলজির হাতে চলে যাবে। শেষ অব্দি যান্ত্রিকতা এসে আমাদের সমস্ত অনুভূতিগুলোকে যন্ত্রে পরিণত করবে। সেদিন আমরা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবো না।
আমরা তো একা একা বাঁচি। বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাটাই আজ আমাদের কাছে প্রধান বিষয়।
যুথবদ্ধ হয়ে থাকলে নদীবাঁধকে ভেঙ্গে ফেলা যায়।
যেকোনো উচ্ছেদ ও উৎখাতকে থামিয়ে দিতে পারি। কিন্তু পারি না।
সংবেদী মন ভেঙ্গে গেছে। ভেঙে যায়।
আমাদের হৃদয়কে আমরা নির্বাসন দিয়েছি।
(চলবে.....)
বিশ্বম্ভর নারায়ণ দেবের কবিতা
১.
স্মরণের পড়ন্তবেলায়
স্মরণের পড়ন্তবেলায় আকাশ যতোটা রঙিন
পথ ততটাই স্মৃতিমেদুর
দৃষ্টিতে মাটির দাওয়া কোঠাঘর
খড়ের চালা বেয়ে বৃষ্টি বিন্দুর মতো
টুপটাপ ঝরে পড়ে অন্তর্বেদন।
এই যে ভাষার বর্ণভেজা উচ্ছ্বাস
তার দ্যুতি ও দ্যোতনা দুই আঁখিতারায়
পুরনো বই খাতাপত্তর থেকে বেরিয়ে
মরমী অনুভূতিগুলো
অপেক্ষার পাশে দাঁড়ায়। মিলনের অপেক্ষা।
সান্ধ্যভ্রমণ সেরে তুমি এই সত্য দেখো
ডানায় ডানায় ঠোঁটে ঠোঁটে
প্রণয়ের গীত গেয়ে পৃথিবীর পাখিসকল
ফিরে আসে নিজের বাসায়
আমাকে ফেরাও তোমার চিরাশ্রয়ে, সে আশায়।
২.
যোগসূত্র
বড়ো লোভাতুর
খুব চোখে লাগা
এই মধ্যবয়সী কামসুত্র।
আবেগ মথিত
ললনা তনুতে
বিদ্যুৎ চমকালো।
মরণের প্রান্তদেশ
ছুঁয়ে ফেলে
প্রণয় ভূবন।
রাত কলমে
ভাষ্য রচেন
একা বাৎস্যায়ন।
ডরোথী দাশ বিশ্বাসের কবিতা
১.
তুমি হাত নাড়বে কখন...
স্বপ্ন দেখি না,
তবু নতুন নতুন স্বপ্ন ভরা চোখের সন্ধানে ফিরি।
কেমন পরস্পর বিরোধী বিষয় নয় ?
ডুবে গিয়েছিলাম এক সমুদ্র মন নিয়ে-
সাঁতার জানা ছিলো,
ভেসে উঠেছি অজানা এক নতুন তটে।
হারিয়ে গিয়েছিলাম ভরা বর্ষার কালো মেঘে,
অঝোর বাদল শেষে
কমলা মেঘের দল হেসেছে পশ্চিমাকাশে,
আমি আশ্রয় খুঁজি সেখানে।
পৌষালী শীতের বনে ফাল্গুনী বাতাসের আনাগোনা,
কুন্দকুঁড়ি পায়ে দলে দেখি কৃষ্ণচূড়ার হাসি,
হঠাৎ হতাশা ঝেড়ে কাব্য লিখে চিরকুটে ...
পাঠিয়ে দিই সেই নতুন ঠিকানায়।
দু'মিনিট নীরবতা,
না না, শোকসভা নয়,
তুমি হাত নাড়বে কখন সম্মতির,
তারই প্রতীক্ষায়!!!
২.
সম্পর্ক
কোন এক ফাল্গুনে
যখন প্রথম দেখা হলো আমাদের
একটা অস্পষ্ট ভালোলাগার চাদর জড়িয়ে নিয়েছিলাম আলগোছে।
সে চাদরে আঁকা ছিলো সবুজ ঘাস-জমি,
মাঠ,পুকুর,বনলতা,নদী,আকাশ আর চাঁদের ছবি।
ভোরে উঠে সেটা জড়িয়ে নিতাম রোজ,
ঘুমের সময়ও থাকতো গায়ে লেপ্টে।
একটা দীর্ঘ পথ হেঁটেছিলাম আমরা পাশাপাশি।
অনেক কথা,ফুরোতেই চাইতো না!
বেলা অবসানে যখন সন্ধ্যা নামতো ধীরে ধীরে,
কর্মক্লান্ত মন সুন্দর অবকাশ যাপনে প্রস্তুত হতে থাকে,
সেই এক পবিত্র ক্ষণে তুমি বলেছিলে,"সবুজ সুন্দরের মাঝে বেড়ে উঠেছো,তাই তো তোমার চেতনার ব্যাপ্তি এতো গভীরে ..."
প্রতি মুহূর্তে ভালো লাগার পরতে পরতে এভাবেই পোক্ত হয়েছিলো নামগোত্রহীন এক সম্পর্ক।
এলো এক চৈত্রের দিন।
উড়ে আসা ধুলোয় ক্রমশঃ আড়াল হতে হতে
শুকনো পাতার খসখস শব্দের সাথে মিলিয়ে গেলো তোমার পদশব্দ।
তোমাকে ঘিরে অনেক আশা প্রত্যাশা তাড়িয়ে বেড়াতো আমাকে,
আজ আশা-প্রত্যাশাগুলোকে ছেঁটে ফেলে দিয়ে পেলাম নির্ভেজাল মুক্তি।
৩.
জীবনযুদ্ধ বনাম শিল্পীসত্তা
তোমার মতো প্রতিটি জীবনই সংগ্রামসঙ্কুল,
প্রত্যেকেই তোমারই মতো প্রতিটি যুদ্ধের পর ক্লান্ত এক সৈনিক।
বিধ্বস্ত মননে আঁকা হয়ে যায় কত আপনজনের মুখ!
যারা এযাবৎকাল শুধুমাত্র বাক্যবাণে বিঁধেছে তোমার মন,
তারাই যেন বেশী আপন হয়ে মনের ক্যানভাসে ছায়া ফেলে যায়।
কে বলে তারা বুদ্ধিহীন ?
আমি বলি,তারাই পরাক্রমশালী যোদ্ধা।
তুমি শুধু নও,
প্রতিটি নিরীহ সৈনিকও মননে শিল্পী।
এদের মতো তুমিও ছবি এঁকেছো আত্মপ্রতিষ্ঠার,আত্মসম্মানের,নিরাপত্তার,
সর্বোপরি ভালোবাসার।
দুঃখ মুছে স্বপ্ন এঁকেছো নিরন্তর।
সবাই তোমার মতই
আশৈশব সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতেই ভালোবাসে।
সামাজিক সত্তা,দায়বদ্ধতা,প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির
সমস্ত হিসেবনিকেশ এভাবেই ভাষা খুঁজে পায় মনক্যানভাসের মুক্ত দুনিয়ায়।
চিত্রপটে মেলে ধরে অব্যক্ত আমিকে।
নিমগ্ন হতে চায় শাশ্বত অনুরাগের রহস্য উন্মোচনে, অধরা সত্যসুন্দরের সন্ধানে,
সহজ ভঙ্গিমায়,
নিজস্ব ঘরাণায় ...!!
যুদ্ধ আসে বারবার,
যুদ্ধ একদিন
শেষও হয়ে যায় শৈল্পিক নিয়মে।
সুপ্রিয় দেওঘরিয়ার কবিতা
১.
হাজারিবাগের লেখাগুচ্ছ
সকালে পুরি-সব্জির আড্ডা আর কলোনির সবচাইতে সুন্দর বাড়িটার মালিককে নিয়ে জল্পনা এই নিয়েই হেমন্তের সকালগুলি পার হয়ে যেত। দেখতাম নাইয়ের সেলুনে ভিড় জমেছে আর কদ্দু-করেলা-ভিন্ডির সাইকেল পার হচ্ছে। তালগাছের মতো লম্বা সরু ঠিকাদারটা গলায় গামছা মাথায় ছাপরা জেলার টিকি নিয়ে কন্সট্রাকশনের কাজ দেখতে এসেছে। দূরে তেঁতুল গাছের পাতায় লোভনীয় রোদ জাঁক বসিয়েছে।
শুধু আমাদের চারজনের মুখগুলিই কেমন বেচারা-বেচারা লাগত। যেমন কেউ নেই কিছু নেই দেশ থেকে আসা হতাশা। হঠাৎ একদিন রাস্তার এক নেড়ি কুকুরের ছানা কোত্থেকে বেরিয়ে এসে ঢুকে পড়ল মেসবাড়িতে। আমাদের ভেতরটাও নেচে উঠল। ছেঁড়া জামা আমার কেনা বিস্কুট দিয়ে আদর যত্ন হল। আমাদের পরম আত্মীয় যেন সে! আমাদের হতাশার সংসারে নতুন অতিথি সে অথবা সদ্য দেখা পুরানো ভ্রান্তিবিলাস সিনেমার সিনেমার বার বার হারিয়ে যাওয়া সেই চাকর --তাই ছানাটি কোনো কোনো দিন পালিয়ে গেলে নবীন তাকে নাম দিল কিংকর !
মহিউদ্দিন সাইফের কবিতা
১.
সেইসব সন্ধ্যে
স্মৃতির দিকে হাঁটছে এখন সেই সন্ধ্যেগুলো।
যখন পাড়ার সমস্ত বৃদ্ধ-যুবা-বালক মিলে
গোল হয়ে বসতাম কাঠের আগুনকে ঘিরে।
অবাক হয়ে শুনতাম
রসিক বুড়োদের দোক্তাখাওয়া মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা মহাজনী কথা।
আরও একটু কুয়াশা ঘনালে
পলাশ দিয়ে মোড়া আদিবাসীদের পাড়া থেকে আসত রঘু, মহুয়া গিলে।
এসে শোনাতো তার স্বরচিত সাঁওতালি শের ও শায়েরী।
প্রেমের আখ্যান।
আমরা কোনো তর্ক করতাম না।
গভীরভাবে বিশ্বাস করতাম তার সকল কথা,
যেমন করি গ্রন্থের আত্মাকে।
আজ কেন হঠাৎ রঘুকে মনে হল পিকিং মানব,
আর দোক্তাখাওয়া মুখদল শবরপা, কাহ্নপা,
বলছেন ভাঙ্গা ঘর আর নৈরামনির গল্প!
২.
পথ
এই যে দেখছ পথ,
এ পথ একজন কবির
এ পথ একান্ত আমার।
ওই যে এক চিলতে আনন্দ,
ওই-ই সে গন্তব্য।
এ পথ ওখানে গিয়েই ফুরিয়ে গেছে।
কার জন্য কবিতা লিখি?
অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি।
তাদের ফিরে পেতে চাই।
এক-একটা কবিতা চিঠির মতো
পাঠিয়ে দিচ্ছি বাতাসের হাতে।
বিষাদ অহৈতুকী, বুক ভরে উঠলে অন্ধকারে আসি।
ঘোরতর দুঃখের ঘরে একটি মোম জ্বলছে।
আমি লিখতে বসেছি,
নিজেকে নিরাভরণ করবো বলে
রাতের পর রাত।
৩.
বারোহেলিয়া
ভীত অবাকচক্ষু আকাশ
চেয়ে আছে নির্নিমেষ।
সত্যযুগ পেরিয়ে গেলো ঝরা ফুল, দূরের গহনে।
রূপোর প্রাচীন ছুরি গেঁথে আছে
বলয়ে বিদ্যুৎরেখাটি।
রাঙা মেঘ, ছাইবন পেরিয়ে গিয়ে দেখি,
বারোহেলিয়ার জঙ্গলে
টিলায় টিলায়
রোদ পিঠে নিয়ে কাঠবিড়ালিরা দৌড়াদৌড়ি করে।
মেঘেদের বর্ণমালা
দীপংকর রায়
মেঘেদের বর্ণমালায় ভেসে বেড়াচ্ছে সে;
লিপি, অক্ষরে হারিয়ে যাচ্ছে
যাবতকালের দৃশ্যমালা!
ভুলে যাও কোথাকার নাগরিকত্ব নিয়ে
তুমি কোন দেশের ভাষায় লেপ্টে ছিলে,
পথের তথ্যচিত্র তৈরি করে
ছুটতে ছুটতে চলেছে আকাশ...
যত দূরে সরে যাচ্ছে অস্পষ্ট
আতঙ্কিত হচ্ছি ততোই পরবর্তী অধ্যায়ে;
বর্ণমালায় ভেসে বেড়িয়ে
যে ভাষায় অনুবাদ করতে গেছি তোমার মুখ
দুর্বোধ্যতা অনন্ত অসীমে নৃত্যরত।
কোনো বিদ্যুৎ চমকেই, রেখাঙ্কিত করতে পারিনি
নিঃসঙ্গ একটি হু হু পথ-ই ছুটছে শুধু...
যে মেঘ অনন্তকাল
তার মুখ এঁকে চলেছে নিঃশব্দে।
কার্তিক নাগের কবিতা
বাকি শোক নির্মূল হোক
হঠাৎ যদি বৃষ্টি নেমে আসে
হঠাৎ যদি শান্ত হয় শহর
হাওয়া-নদীর মেঘমল্লার ডাকে
পাঠিও তােমার বুনে রাখা চর।
হঠাৎ যদি এমন তাণ্ডব রাত
শাওয়াল-চাঁদে হয়ে ওঠে লাস্য
কয়েদ তুমি বিবর্তিত মুখ
জিভের তলায় খুঁজে পাবে শস্য!
কিম্বা এমন পরিযায়ী রাস্তায়
ক্লান্তিগুলি যদি হয়ে যায় ফুল
প্রিয় মুখ তুমি কাছাকাছি এসাে
বাকি শােক হােক নির্মূল।
হঠাৎ যদি বৃষ্টি নেমে আসে
হঠাৎ যদি শান্ত হয় শহর।
হাওয়া-নদীর মেঘমল্লার নাউয়ে
ভাসিও তােমার তুলে রাখা স্বর।
তন্ময় সরকারের কবিতা
আলো ও আলো
যদি এইসব ধানজমি ছেড়ে নেমে যাই উত্তরে
কখনও ?
যদি সব আলের মায়া কাটিয়ে,
যে সব আল জল বেঁধে রাখার ছলে
মাটিকে খণ্ড খণ্ড করে…
সব ছেড়ে ছুটে যাই অদ্ভুত এক আলোর পিছনে ?
আমি জানি তুমি আমার সঙ্গে আছো ।
সঙ্গে থাকা বলতেই মানুষ পাশে থাকা বোঝে কেনও ?
ভিতরেও তো থাকতে পারো !
যেমন শহুরে ট্রামের ভিতরে মানুষ থাকে !
কবিকে দুখন্ড করে ছুটে চলা ট্রামের ভিতরেও মানুষ ছিলো !
ভাবি আমি ।
তারা কি সঙ্গে ছিলো ?
সাথে ছিলো ?
পাশে ছিলো ?
না কি সবই মহাজাগতিক !
বিশ্বাস করো,
তোমাকে দ্বিখণ্ডিত করতে আমি চাইনা ।
আল দিয়ে তোমার জল বাঁধায়
অথবা ভ্রাতৃদ্বন্দপ্লাবিত সীমানানির্দেশে
কোনো আগ্রহ নেই আমার ।
শুধু পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো শেষবিকেলে ।
অথবা সাথে, বা সঙ্গে, বা ভীষণ ভিতরে ।
আর আলো দেখবো ।
তোমার সবুজে
তোমারই জলে
আলোর খেলা
অহরহ
দেখবো,
আর বেঁচে থাকবো ।
এটুকুই…
গোধূলিবেলায় গোয়ালিকোচায়
ভাস্কর বাগচী
আধ ভেজা সোঁদা হাওয়ার মাতন সুদুর থেকে ভেসে আসা মেঘের মতো উড়িয়ে নিয়ে যায় আমাদেরও । প্রকৃতির অবুঝ চেতনায় বাস্তবকে ছুঁয়ে যাওয়ার অদম্য প্রয়াস আমাদের কে মাতিয়ে তোলে প্রকৃতি প্রেমে । এ যেন এক অনাঘ্রাত ভুবনের মাঝে আদিম সখ্যতা - যা বাস্তবকে ছুঁয়ে যেতে চায় বারবার-স্বতন্ত্র ভাবনায় ভাস্বর হয় মনের গভীরে নিসর্গ নির্মাণে ।
এক দুপুরে বেরিয়ে পড়েছিলাম গোয়ালিকোচা ড্যামের উদ্দেশ্যে ।পুরুলিয়া শহর থেকে সীমানা ছাড়িয়ে টামনা মোড় থেকে ডান দিকে বাঁক নিলেই পুরুলিয়া- আড়সা রাজ্য সড়ক । এই রাস্তায় পুরুলিয়া থেকে ৩৩ কিমি দূরে আড়সা গ্রাম । আড়সা পেরিয়ে বামদিকে ঘুরলেই পলপল গ্রাম । সেখান থেকে ৪-৫ কিমি দূরে চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা তিলাইটাড় গ্রাম । প্রাইমারি স্কুল পেরিয়ে আর একটু এগোলেই নিঝুম পরিবেশে শুয়ে আছে গোয়ালিকোচা জলাধার । অনেকে তিলাইটাড় ড্যাম বা আপার বান্দু ড্যামও বলে থাকেন । নীলচে মায়াবী আলোয় টলটলে জলের তিলাইটাড় বা গোয়ালিকোচাকে অপরূপা লাগছিল । মানুষ বলতে শুধু আমরা ।ওপারে অযোধ্যার টিলা ধরা দিয়েছে মেঘের আলিঙ্গনে । নিসর্গের ঘেরাটোপে চকেদাবাদ গ্রাম আর ভাল ডুংরি পেরোলেই প্রকৃতির আবিলতায় এক চিলতে নিসর্গ মায়া । মনের গহীনে মরমে রং ধরা এই প্রকৃতির কোলে নির্জনতার আর এক স্টেশন পাহাড়ি বান্দু নদীর ওপরে এই তিলাইটাড় ড্যাম । বান্দু কোনও বড় নদী নয় । ঠিক যেন পাশের বাড়ির চঞ্চল মেয়ে । নীল আকাশে শীত পাহারায় সাদা ছেঁড়া ছেঁড়া জলদ মেঘের আকুল আহ্বান । সোঁদা গন্ধ লাগা জল সরে যাওয়া ভেজা মাটিতে নাম না জানা গুল্মের জলজ মজলিশ , নীল জলের রোমান্স আর সবুজ প্রকৃতির রম্যতা – এ যেন এক শৈল্পিক বনেদিয়ানা । অভাব শুধু থাকার জায়গা । নামী দামী টুরিস্ট স্পটের আভিজাত্য বা উচ্চবিত্ত মানসিকতা কোনটাই নেই এই অখ্যাত ড্যামের । তবু প্রকৃতি পাঠ আর কাছে পিঠের হঠাৎ ভ্রমণ এখানে সমার্থক । প্রকৃতির রম্যতায় শীত বেলার মিঠে রোদের আলোয়ান জড়ানো এ এক অনবদ্য নিরিবিলি ঠেক । মানভুমের রুক্ষ প্রকৃতির মরুভূমিতে এ এক অনন্ত নিবিড়তার মরূদ্যানের সবুজাভার বর্ণময়তা । মায়াবী প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানে রোদ্দুরে পিঠ দিয়ে শীতের সারা বেলা জলের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় । অলস অনিমেষ রোদ আর সাদা মেঘের খেলায় বেলা বাড়ে । অস্তগামী সূর্য তখন ভ্রু সন্ধির উজ্জ্বল টিপের মতো পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে । পড়ন্ত বেলায় জলে রঙের খেলা ছেড়ে ফিরতে ইচ্ছে করে না । কিন্তু উপায় নেই । নাছোড় মন কে নিয়ে ফিরে আসতেই হয় । মুগ্ধতায় তখনও চোখের সামনে প্রকৃতির রং বাহারি আলাপন । দিলখুশ মেজাজে গর্বিত হই পুরুলিয়ার এই অসামান্য প্রকৃতির নতুন ঠিকানায়।
ড্যামের ধারে চলতে চলতে বেলা কখন গড়িয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি । পড়ন্ত রমণীয় বিকেল । দূরে সবুজ পাহাড়। দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অতীত থেকে হঠাৎ যেন নাকে ফিরে এল যেন ছেলেবেলার জামশেদপুরের দলমা পাহাড়ের সেই পরিচিত সুগন্ধ।
বৃষ্টি ভেজা বাতাস কানে কানে যেন বলল, ' আর নাই রে বেলা, নামল ছায়া. ধরণীতে,. ,. ওরে ডাকে আমায় পথের 'পরে. সেই ধ্বনিতে। চল্ রে ঘাটে ...'
ফেরার আগে শুধু মনে হচ্ছিল আশ মিটল না । আবার আসতে হবে প্রকৃতির এই জলসাঘরে । জলজ মজলিশের হাতছানি মনের ফ্রেমে রয়ে গেল ফ্রিজ হয়ে , হাজার চেষ্টাতেও যা মুছে যাবে না ...।
দুর্গা দত্তর কবিতা
আখেটিক : ছয়
তোমাকে দেবার মতো
আজ আর ভিটেমাটি কোনো কিছু নেই --
এই দেখো, মৃত ডানা
ভাসমান শরীরের ভাঁজে ভাঁজে
ঘুমিয়ে রয়েছে যেন প্রতিদিন অপরাহ্ন আলো
তোমাকে দেবার মতো
নিঃশ্বাসের মতো সত্যি প্রতি মুহূর্তের সন্ধ্যাদীপ
মান্য আঁধারের শান্ত অনর্গল জোনাকি ভূমিকা
কোথায় যে গেল!
আমার শরীরে ভাঙা কুলুঙ্গিতে
মন্ত্রগুপ্তি প্রত্ন আগুনের ,
পরিস্রুত বৃশ্চিকের অনাবিল ছাই।
তোমাকে দেবার মতো
আজ আর কোনো কিছু নেই
তবু দেখো, কেবল তোমারই জন্যে
আজ এই পড়ন্ত বিকেলে
ধুলো কাদা পাথর মাড়িয়ে
কাঁটায় কাঁটায় ঢাকা পথ থেকে
সমুদ্র মন্থন করে নিয়ে এসেছি
ডুবে থাকা অনন্ত পালক ...
অনামিকা ব্যানার্জির কবিতা
১.
আগামী
তারার দেশ আর আমি
আজ অমাবস্যা নয়,পৃথিবীটা তবুও অন্ধকারে,
এই তো দু-দিন আগেই ছিল আলোয় মোড়া,
আমি তো রাত্রি,তাই রাতের নিস্তব্ধতায় তারা খুঁজি, আজ অমাবস্যা নয়,পৃথিবীটা তবুও অন্ধকারে,
এই তো দু-দিন আগেই ছিল আলোয় মোড়া,
আমি তো রাত্রি,তাই রাতের নিস্তব্ধতায় তারা খুঁজি,
আজও এলাম,কিন্তু টিমটিম করে জ্বলে ওঠা-
বাড়ির ছাদের তারা গুলো আজ আর দেখতে পেলাম না,
সব কিছু আবার ফিরে গেছে অন্তঃপুরে,
আলোর দিনে আকাশে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে লাভ নেই,
আজ স্বাদ মিটবে,অন্ধকারেই তো আলোর দেখা মেলে,
ওই যে কালপুরুষ,সপ্তর্ষিমন্ডল সব যেন আমারি অপেক্ষারত,
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি মাঝে আমাদের যুগলবন্দি,
আজও এলাম,কিন্তু টিমটিম করে জ্বলে ওঠা-
বাড়ির ছাদের তারা গুলো আজ আর দেখতে পেলাম না,
সব কিছু আবার ফিরে গেছে অন্তঃপুরে,
আলোর দিনে আকাশে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে লাভ নেই,
আজ স্বাদ মিটবে,অন্ধকারেই তো আলোর দেখা মেলে,
ওই যে কালপুরুষ,সপ্তর্ষিমন্ডল সব যেন আমারি অপেক্ষারত,
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি মাঝে আমাদের যুগলবন্দি যত,
রাতের শেষে ভোরের ফোঁটা বেলিফুলের সুবাস মাখা আমি,
খোলা আকাশের নিচে দুচোখ জুড়ে থাকে প্রভাতের সূর্য আর আগামী ।।
২.
এক পৃথিবী দুই আকাশ সূর্য-চাঁদের খেলা,
নতুন করে সাজছে দেখ নতুন বছরের মেলা,
শত দুঃখ শত কষ্ট তবুও সবার মাঝে নতুন দেখায় আলো,
চেনা অচেনার ভীড়,কখনো রঙিন-কখনো আন্ধার,
নতুন বছরে সাথে নিয়ে আসে আনন্দ বার্তা আর শুভেচ্ছা হাজার,
পুরানো সব পিছনে ফেলে এগিয়ে চলে সব নতুনের দলে,
শীতের আমেজ আর নতুন গুড়ের বাহার,
রকমারি রান্না আর পিঠের আহার
বয়ে নিয়ে আসে নতুন বছরে খুশির জোয়ার,
গণেশ মারান্ডির কবিতা
ভোর
এক টুকরো আকাশ দাও আমাকে
যেখানে ছড়িয়ে দেব দীর্ঘশ্বাস আর কাঁপুনি ,
শিরদাঁড়ার যে শীতল স্রোত
তাতেই হামাগুড়ি দিয়ে
ছুঁতে চাই উন্মুক্ত মুখোশ।
পাশের নেড়ি কুত্তা যখন ঘেউ ঘেউ করে উঠবে
কামড়ে থাকব সবুজ মাটি ;
তার সোঁদা গন্ধের হাত ধরে
এলিয়ে দেব বুক ,
আর
বৃষ্টির ভিতর হব এক পাগল পথিক ,
ঐ এক টুকরো আকাশ
দিয়ে যাক শুধু মুখোশ খোলা ভোর
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
টুসুর ছবি : গুগল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ-৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল-uttamklp@gmail.com
খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন