জলশ্যাওলার বিরহকথা

জলশ্যাওলার বিরহকথা

দীপংকর রায়



১২ তম পর্ব



উনত্রিশ , তিরিশে অঘ্রাণ


       ছাব্বিশ তারিখের পর আর দিনলিপির খাতায় হাত পড়েনি। কেন পারিনি, সে কথা জানি না। লিখতে ইচ্ছে করেনি তাই পারিনি। চলছে শুধুই এলোমেলো বিচরণ, এসব একটি বিষয় যেমন, তেমন হয়তো আরো আছে কিছু যা অজানা। 

        ওদিকে ঢাকা থেকে ফিরেই রফিকভাইএর ভাষা সংখার জন্যে পাঠানো চেক পেলাম। এই একজন মানুষ ----- যার কাছে কত ঋণ রয়ে গেল।
        এর পরের পরের দিন একবার রাড়ীখালী মুখো গেলাম আবারও ------ কেন যে, তা তো জানি না! সামান্য সময়ই ছিলাম, তারপরে আবার মাগুরা। 
         মাগুরা পর্ব এবারের মতো সেরে অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে শ্বশুরালয়ের দিকে পা বাড়ালাম। একবারও মন চাইনি যে তা না, চেয়েছে, ভেবেছিলাম অবাধ্য হয়ে প্রথমে আমাকে বাড়ির ভেতরে হাত ধরে নিয়ে যাবে সেই। কিন্তু না। তা আর পারলো কই ----- অভিমান? হয়তো। কিন্তু কিসের? 
        এসবের মধ্যেও নাকি অন্য দরদ আছে! 

         বারবার মনে পড়ছিল সেদিন রাতে রাড়ীখালী থেকে ফেরার সময় নদী পার করে মামার অন্ধকার পথ পেরিয়ে বাসে তুলে দিয়ে যাবার কথাটি। বাকি পথটুকু তার অন্ধকারে একা একা ফিরে যাবার চিত্রটা যেন নিমেষে চোখের সামনে দেখতে পেলাম এই দিনের আলোতেও। কিন্তু কেন, এখন সে কথা মনে পড়লো কেন এভাবে? 
         জানি না মাঝখানে সে চিন্তা ঢুকে পড়লো কেনই বা অমন করে! সে প্রসঙ্গে অন্য কোনো আবেগ কাজ করলো কি এখানে? 
          জানি না । তবু এলো যে এটাই যেন সব সত্যি। 
          যাক, এখন এইমুহূর্তের যেটা সেটাই বলি। পারলো না। অভিমান টেনে ধরে হয়তো আটকে রাখতে পারলো না। চলে এলো। কাছে এসেই গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়ালো। ভেবেছিল কি আবেগে জড়িয়ে ধরবে ! জাপটে ধরে নিতান্ত শিশুর মতো মুখ ঘষবে বুকের ভেতরে? 
          হয়তো ভেবেছে মনে মনে। হয়তো আমার মন ও চেয়েছে সে সব একান্তে। হয়তো অন্য কোনো আড়াল খুঁজে নিয়েছে ভেতরের আর একটা মন। তবু অন্য একটা মন যেন বলছে, তাঁর প্রত্যেকটা দানই রহস্যময়। সেখানে ইচ্ছে করলেও খামচে ধরে কিছুই দেখানো যায় না যেন।

          কিন্তু না, পারলাম না । তাহলে এখন আমায় কী গ্রহণ করতে বলছ? 
           গাল ধরে আড়ালে নিয়ে গেল। আমিও মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম কেন জানি না। মন তাতে কি ভরলো ? এই ছেলেমানুষী নিয়ে আমি কি কারো গনগনে আঁচে ঝলসে দিলাম কিছু গ্রন্থি? যেন দেখতে পেলাম, একেবারে টাটকা মাংস মজ্জা রক্ত পুড়ে ছাই হয়ে গেল যেন। 
         স্বপ্ন-কল্পনায় কত কথাই তো হয়; এই যেমন, দেখুন, দেখছেন তো? ভালো করে দেখবেন কিন্তু সব! 
         উঠতে পারলাম না। না পারলেও উঠতে কি পারতাম এই চিত হওয়া অবস্থা থেকে? পড়ে থাকলাম হাত দুটো ধরে।
          রাতে শোয়া নিয়ে আবারও আর এক প্রস্থ ----- বড় বউ না পারছে, না করতে; না পারছে, হ্যাঁ বলতে। সে বড়ই ঝামেলায় পড়েছে তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন ; শেষপর্যন্ত টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেল সেই এসে। ঘরে নিয়ে যেয়ে কেন বুঝলাম না আর এক প্রস্থ ছেলেমানুষী , গালে কপালে ঠোঁটে ক্রিম লাগলো বেশ খানিক। আবারো যেন জ্বর এলো। পারলাম না। তাও কিছুই বলতে পারলাম না। 
          হৃদয় কী যে চায়? কিন্তু সত্যিই কি এই দেওয়া নেওয়ায় সংসারের সব ভালোবাসাবাসি লুকিয়ে আছে? সব ভালোবাসার চেহারা কি এমন কিছু ভঙ্গির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে? এই মেয়েটির কাছ থেকে এর বাইরেও কি চাওয়া পাওয়ার আছে আমার ? বুকের ভেতর বা ঠোঁটের কোনে এর চাইতেও বড় কিছু কি আছে, যা সে এগিয়ে ধরতে পারছে না? কামড়ে হেঁচড়ে টেনে ধরে কিছু বিনিময়ের থেকে এই মিলনে কি তার চাইতে বড় জিনিস কিছুই নেই? 

          কিছুক্ষণ বাদে আবারও এলো, আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না দেখতে। বুঝলাম ওর স্ত্রী হওয়ার মিলন শেষে, আমার প্রতি দায়িত্বের কথাটা মনে পড়াতে, আমার খোঁজ নিতে এসেছে। এই রাতে আবারও কিছুক্ষণ পাশে বসে থাকলো। ভাবলাম, একে কী দিয়ে বর্ণনা করবো এখন, কোন ভাষায় বলবো? শেষ পর্যন্ত হাতের মধ্যে হাত রেখে কী জানাতে চায় আমায়? তুমি কি জানো মন, এই সম্পর্কের অদেখা আশ্চর্যটা কী? কী সেই আনন্দ-সুখের রহস্যময় রূপ? একবার অন্তত জানতে বড় ইচ্ছে করে।

           ঘুম ভেঙে গেল। এখন কার সঙ্গে যে কথা কই ? কিই বা করা যায় এই রাতে? কিছুক্ষণ ছটফট করলাম। ঘুম না আসাতে আবারো প্রলাপ লেখায় মন দিলাম ---- এখন রাত একটা। ঘুম নেই। চোখের সামনে যেন মুঠো মুঠো ফুল। এ ফুল আমি কার পায়ে উৎসর্গ করবো? 
         শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। মানুষ কত কিছুই না পেতে চায়! কত মিথ্যে ----- অলীক সব কল্পনায়, প্রেমে ----- আমি যেন আমার হৃদয় চিতায় দাহ করি এইসব যা কিছু বারবার ঘুরে ঘুরে ...। সম্পর্কের এই সব মোহময় ঋতুগুলি কত ফুল যে ফোটাবে আমার চারপাশে! 
         কোনোদিন কারো কোনো অবচেতনের আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি কি হয়েছে কখনো? 
          তাহলে ---- এখন এই রাত দুপুরে গায়ে জ্বর নিয়ে কেন বসে বসে কষ্ট পাচ্ছি? ভোরবেলার কুয়াশার মতো সব আকাঙ্ক্ষা -স্বপ্ন -প্রেম --ভালোবাসা -ভালোলাগা ,হৃদয়ে হৃদয়, টাটকা গন্ধগুলোকে মেরে ফেলবো ভেবেছি গলা টিপে। এখনো বেলা আছে, পালাও, এইসব মোহ তোমার জন্যে না। পথের মায়া পথেই পড়ে থাক। এসব এক দিন ওই মেয়েটিও ভুলে যাবে। চিনতেই পারবে না। দেখবে, সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সব মোহ, প্রেম, ভালোবাসার এইসব উষ্ণ প্রস্রবণ ----- সব কোথাও অন্য কোনো খাড়ি-পথ ধরে বয়ে চলেছে যেন....। সে যে প্রেমই জেগে থাকুক, যে ভালোবাসায়ই আলোড়িত হোক না কেন এখন, এইসব চরাচর জুড়ে; সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে একদিন ---- সে যে অনুভবই জাগুক, তা হয়তো তার মতো না, হয়তো বন্ধুর মতো কি? না কি প্রকৃত আপন জনের মতো? 
         স্বামী-- সন্তান -- সংসার -- অন্য আর দশজনের মধ্যে মিশে সবটাই কি হারিয়ে যায়, এইসব মুগ্ধতা একদিন? সে সব অজানা আবেগের কোনো বহতা খড় কুটোর টুকরো, নদীর চড়ায় জোয়ার ভাটা কাটিয়ে অবশিষ্ট কিছুই কি দুমড়েমুচড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় না; যেমন প্রতিমা বিসর্জনের পরে পড়ে থাকে তার ভাঙা কাঠামখানা। রোদ্দুরে জলে শুকিয়ে কুয়াশায় ভিজেও, অতি শ্রাবণ শরীরে মেখেও, একেবারে নিশ্চিহ্ন হয় না যেন কিছুতেই। 
           মাথাটা বনবন করে ঘুরছে যেন। পারছি না বসতে আর বুঝি, তবু বসে আছি কোন দিকে চেয়ে? 
           ঘুম আসছে না। ঘুম কি এসেছিল? না ঘুমিয়ে পড়তে চাইছি না! জোর করে , ঘুমের ভান করে কাটিয়ে দিলাম বাকি রাতটুকু চিত হয়ে পড়ে থেকে।
            সকালে উঠে যখন ভাবছিলাম, এত কিছু তো হলো, কিন্তু এই রঙ্গ, বা নিতান্ত ধাপ্পাবাজিও বললে কম বলা হয়, ঢ্যমনামি বলবো কি তবে ? এসব কি যে কাণ্ডকারখানায় ডুবে পড়েছি আমি, এর কোনোটাই তো সত্য নয় কিছুই ---- খেলা একধরণের, নিতান্তই ঢ্যমনামি মিশ্রিত এক খেলার রঙ্গরসে ডুবে এ কোন জগতের হদিশ চাইছি? 

          সাতটা বেজে গেল , না চা, না কারো দেখা, না বোঝার কোনোটাই নেই তোমার মন ; এত টান, এত যত্ন, এত গায়ে গা লাগালাগি মুহূর্তেই উবে গেল! 
           মন বলছে সবই তো এক ; কিন্তু কিভাবে যে ছাড়বো এসব ? ভাবছি ,পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর তো কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না এই মুহুর্তে! কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? কিন্তু আমি যে ভেবেছিলাম ঢাকা থেকে ফিরে একটা বড় লেখা লিখবো! তার কী হবে তাহলে, সে কথাই সামনে এসে দাঁড়ালো যেন। 
           মন বলছে, ভাবের জন্যে ভাবের পথ ধরো এবার। এতসব দিকে তাকাচ্ছো কেনই বা ; অন্য আর কিছুই হবে না তোমাকে দিয়ে। তুমি কেবল মাত্র সেই কাজের জন্যেই পথে নেমেছো। সেই কাজটা হয়ে ওঠে কিভাবে , সেটাই ভাবো আগে । 

         বেশ বেলা হলো। খাওয়া স্নান এক চক্র বাজারে ঘোরা সবই হলো। কিন্তু কিছুতেই প্রসন্নতাকে ফিরে পাচ্ছি না যেন ভেতরে ভেতরে । কী অস্থিরতার কবলে যে পড়েছি , তা আমি নিজেই বুঝতে পারছি না । এবং মুশকিল হচ্ছে যেটা, সেটা হলো তার ছাপ চোখে মুখে ফুটে উঠেছে যে বেশ, সেটা আমি ভালো করে উপলব্ধিও করছিও ; বাড়ি শুদ্ধ একেই তো সকলের চোখে পড়েছি আগেই ----- আমার কথা বাদ দি না হয়। আর একজনের কথা? তার চোখে মুখেও তো বেশ স্পষ্ট! কেউ তা গভীর ভাবে না বুঝলেও আমি তো বুঝতে পারছি ভালো করে। অথচ কতরকম ভাবেই না ঢাকা দেবার চেষ্টা চলছে ভেতরে ভেতরে। ' চরিত্র, ভালোমানুষ আপনি, শ্রদ্ধা করি, সত্যিই আপনাকে শ্রদ্ধা করি..... ' 

          কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না আমি এসবে একটুও অসঙ্গত হবো না কিছুতেই। যতক্ষণ না এই ভাবটা মন থেকে ঝেড়ে ফ্যালে। কত ভৎর্সনা যে আড়ালে আড়ালে চলছে! তার এক একটা ইঙ্গিত যখন ছিটকে এসে পড়ছে, তখন মনে হচ্ছে বরশা এই বুঝি বিঁধে গেল এবার. .!
          এই যে খেলায় যেভাবেই হোক জড়িয়ে পড়ছি , এ তো নিষ্ঠুর এক খেলা ---- তবু মন যেন বুঝতে চায় না ; কেন যে এমন অকাল বর্ষা ভেজাচ্ছে আমায়...! যদিও ভিজলাম বা আবার কই ---- শুধুই তো কাটফাটা এক ভাব ; এও তো ---- নিতান্ত সাজানো কি, যদিও সাজানোই বা বলি কি করে ; যদি সবটাই সাজানো হবে কোনো এক পক্ষের, তাহলে বেদনা অনুভব করছি কেন? তাহলে কষ্ট তো পাবার কথা না! 
         সমস্ত চিন্তাভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে এই এক অসম মুগ্ধতা ঘিরে ধরছে কেন অমন ধিরে ধিরে? একি সব অর্থে ন্যায় ? অন্যায় নয় কি ? না, না বলবে যে কেউ। মনে হয়, না তো বলাই যাবে না। কোথাও একটি হ্যাঁ তো আছেই! 
         ওই না কথাটার ভেতরেই অনেক হ্যাঁ আছে লুকোনো। 
          কাউকেই বুঝানো যাবে না। 
           তাকে কি বুঝানো যাবে? 
           না, তাকেও যাবে না ----।
           মাঝে মাঝেই ভাবছি, কেন যে আবার এখানে ফিরে এলাম? সবসময় এই অন্তরদাহের প্রকাশ যে ভাবেই করি না কেন, তার অর্থ উল্টো হয়ে দাঁড়ায় যে ; যদিও বেশ খানিকটা নিদারুণ নিষ্ঠুরতা দিয়েই একে অতিক্রম করতে হবে যে, তা বেশ বুঝতে পারছি। মাঝে মাঝে এ কথাও ভাবছি , আমি কি ভেতরে ভেতরে খুব হ্যাংলা হয়ে পড়ছি নাকি ? নাকি নিজেকে লম্পট বানিয়ে ফেলছি ? 

         যদিও এর কোনোটা বানিয়েও নিজেকে খুব একটা শান্তিতে রাখতে পারবো না যে , তাও জানি । এই আত্মলাঞ্ছনার কথা কাউকে কি এক বুক গঙ্গাজলে দাঁড়িয়ে বললেও বিশ্বাস করবে? নাকি আমি সত্যি সত্যি কি চাই, কি চেয়েছিলাম, এ কথা যত ভালো ভাষায়ই বলি না কেন, এইসব কিছুর অর্থ তো একটাই দাঁড়ায় ------ কেউ বিশ্বাস করবে না আমার মনের কথা কোনটি! আচ্ছা, সত্যি করে কি আমিও বলতে পারবো খুব পরিষ্কার করে, কী আমার মনের কথা ? তবু কার উদ্দেশ্যে যেন বললাম, না না, আমি ঠিক তা না, যা তোমরা বুঝতে চাইছো শাদা চোখে চোখ মেলে।
           তাহলে সেও কি সেটাই ভাবছে? কিন্তু আমার মন যা বলছে, তাতে তো তার অব্যক্ত বেদনা ভরা মুখটি দেখে সে কথা তো মনে হয় না ----- অন্য কথা মনে হয় ; তাহলে এখন কি করা! 
           এর কোনো সঠিক বোঝাপড়াই মনে হয় সম্ভব না। এখানে দাহই ভবিতব্য শুধু ----- যে দাহ থেকে নতুন কোনো সম্ভাবনার উৎসমুখের জন্ম হয়। 
           যদি তাই হয়, বা নাও হয়, তাহলে কি তার নির্বাণ নেই কোনো? 
          তাহলে যা কিছু ধারণ করি আমরা, তা কি ব্যক্তিবিশেষের জন্যে শুধু এক এক রকম? তা কি সবটাই একা একার? কিন্তু একা কি কিছু দগ্ধ হয় কখনো? একা তো কিছুই পোড়ে না! দুয়ে মিলেই তো তার সমন্বয় ! 

         যেন এই দুয়ের সমন্বয় ঘটবেই।

         
                                             চলবে.....

মন্তব্যসমূহ

  1. মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব অসাধারণ ভাবে লিখতে পারেন। এত তলিয়ে যাই যে তখন নিজেই সেই চরিত্র হয়ে ওঠি। এত সহজ ভাবে এত আন্তরিক রচনা বাংলা সাহিত্যে বিরল।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪