তৃতীয় বর্ষ ।। অষ্টাদশ ওয়েব সংস্করণ ।। ৩ পৌষ ১৪২৯ ।। ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
একদিন হঠাৎ এক কাক সৃষ্টিকর্তাকে জিজ্ঞেস করে বসল------ মনুষ্য চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে জটিল চরিত্র কোনটি প্রভু?
প্রভু সহাস্যে উত্তর দিলেন------ কবি চরিত্র।
কাক সৃষ্টিকর্তার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ কিছুক্ষণ থাকল। তারপর বলল------ এ কি কথা বললেন প্রভু! কবিরা তো সহজ সরল প্রকৃতির হয়ে থাকেন। প্রকৃত মানুষের মতো আচরণ করেন। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করেন। অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। সামাজিক কুসংস্কার দূর করার কাজে অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করেন। সেই তাঁরা জটিল কীভাবে হয়? এ তো অসম্ভবের কথা।
প্রভূ শান্তভাবে বললেন------ আচ্ছা বলো তো, তুমি তো কাক সমাজের একজন বিশিষ্ট কবি। তুমি কি অন্যের কবিতা পড়ো?
--------পড়ি প্রভু।
--------কেন পড়ো?
--------তাকে ও তার কবিতাকে অন্যের কাছে তুলে ধরার জন্য।
--------কিন্তু মনুষ্য সমাজের কবিরা কদাচিৎ তা করে থাকে। তারা কেবল নিজেকে তুলে ধরার কাজেই ব্যস্ত থাকে। এমন কি কোথাও তাদের লেখা প্রকাশ হলে সেই ম্যাগাজিন হাতে আসার পর কেবলমাত্র নিজেরটা পড়েই রেখে দেয়।
--------সে তো ব্যস্ততার কারণে প্রভু।
--------একই ভাবে সকলে ব্যস্ত থাকলে তার লেখা কে পড়বে, সেটাও তো ভাবা দরকার??
--------ব্যস্ততার কোনো বালাই নেই কবি। আসলে এরা, নিজের লেখাটা সকলে পড়ুক সেটা আশা করে। কিন্তু নিজে সকলের লেখা পড়তে অনিহা প্রকাশ করে। এটা তাদের অভ্যাস। আর প্রায় সকলেই এমন হয় বলে, কেউ কারোর লেখা পড়ে না। নিজের লেখা নিজে পড়ার পর বাকি সকলের কাছে অপাঠ্য থেকে যায়।
--------লজ্জা দিলেন আমাকে। আমি কি প্রকৃতপক্ষে কবি?
--------হ্যাঁ কবিই তো। কাক সমাজের কবি। মুখে মুখে পাঁচ হাজার কবিতা রচনা করেছো। সব ঠোঁটস্থ। কাক সমাজের অনেকের মুখে মুখে ঘোরেফেরে তোমার কবিতা। পৃথিবীজুড়ে তোমার পরিচিতি। সুনাম। আমার কাছে কাক আর মানুষের পার্থক্য কি আছে? কবি হিসেবে তুমিও যা একজন মনুষ্য কবিও তা। তোমাদের কাজ দিয়েই আমি বিচার করি, কাক ছোটো না মনুষ্য।
তারপর মুচকি হেসে আবার বলতে শুরু করলেন প্রভু------- মানুষকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব করার জন্য আমি তাদের অনেক গুণ প্রদান করেছিলাম। কিন্তু তারা তাদের কোয়ালিটি মেনটেইনড করতে পারেনি। অথচ তোমাদের দেখো, তোমাদেরকে আমি কিচ্ছু দিইনি সেইভাবে, তার পরেও তোমরা তাদেরকে অতিক্রম করে গেছো। সবই অভ্যাসের গুণে।
কাক উৎসাহের সঙ্গে বলে ওঠে------ কিন্তু এই সামান্য একটা বিষয়ের উপর নির্ভর করে তো তাদের চরিত্র বিচার হয় না প্রভু?
---------তা হয় না। তবে এর পরের যে বিষয়টা বলবো, তা শোনার পর বুঝতে আর অসুবিধা হবে না তোমার।
--------সেটা কি রকম?
--------আচ্ছা বলো তো, পরচর্চা পরনিন্দাতে কারা বেশি মত্ত থাকে?
--------এ তো সহজেই অনুমেয়। নারীরা। শুনেছি, নারীদের মতো পরচর্চা পরনিন্দাতে পারদর্শী আর কেউ নেই। তাছাড়া পুকুরের ঘাটে, কুঁয়োতলাতে শুনেওছি তাদের কথাবার্তা।
--------কবিদের কথাবার্তা শুনেছো?
--------না।
--------শুনবে কি করে? তারা তো বন্ধ ঘরে কথাবার্তা বলে। তারা পরচর্চা পরনিন্দাতে নারীদেরকেও অতিক্রম করে গেছে এখন। কারোর একটা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হলে অন্যেরা জ্বলে মরে খাক হয়ে যায়। তার সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে দেয় অনেকে।
--------এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার কি আছে প্রভু? সেও তো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে পারে।
--------সে পারে বৈকি। কিন্তু ভিখিরির সঙ্গে তাল মেলায় লক্ষপতিরা, কোটিপতিরা। তারাও তাদের মতোই মাগনের টাকায় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে চায়। কেউ কেউ আবার টাকার জোরেই ছাইপাঁশ লেখাকেও বড়ো প্রকাশনীর মাধ্যমে প্রকাশ করে দেখাতে চায় সেই বড়ো কবি। সমস্যাটা সেখানেই। ফলে একসঙ্গে থাকা কবিরাও একসঙ্গে থাকে না।
সুশিক্ষিত বলে একসঙ্গে ঘোরাফেরা করে। আবার ঈর্ষার কারণে একসঙ্গে থেকেও একসঙ্গে নেই তারা। এরকম একটা অদ্ভুত জটিলতাপূর্ণ জীবন যাপন করে মনুষ্য সমাজের কবিরা।
--------এরপর বলো, কোয়ালিটি মেইনটেনড করে তারা?
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
সজল রায় / সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় / বিপুল চক্রবর্তী / অপূর্ব সাহা / ডরোথী দাশ বিশ্বাস / নিমাই জানা / কল্পোত্তম / অমিত মণ্ডল
______________________________________________
দোস্তজী
সজল রায়
বিরহের লিপি জ্যোৎস্না রাত্রির আলো
বিরহের লিপি বনকলমির ফুল
বিরহের লিপি বৈকুণ্ঠপুরের মাঠ
মাঠে অনন্ত যাত্রাপথ, মায়ের কবর
মাঠে ভুরভুর করছে কুর্চি ফুল
মাঠে পীর বাবার থান, গোধূলির রঙে
বিরহের লিপি ওখানেও লেখা!
রাত্রি নামছে গাছের মাথায়
রাত্রি নামছে নলখাগড়ার ঝোপে
সেখানেও বনতুলসী! বিরহের লিপি !
লিপি আমলকী, লিপি অর্জুন পিয়াল
লিপি কত কি পাখির ডাক
লিপি বিরহের কালোয়াতি গানে
আমাদের ইসমাত আফিয়া ৷
পলায়ন
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
আর কতদূর টেনে নিয়ে যাবে বলো।
তুমি তো এখনও না-ভেবেই পথ চলো।
অনন্তরেখা ছুঁয়েছে জলের বিন্দু।
তোমার খেলার অপার বিষাদসিন্ধু
স্মরণে রেখেছি এ খেলার শেষ রাত্রে।
চলো নেশাতুর ডুবে যাই সুধাপাত্রে
সন্ন্যাসী হবো, পেরোতে আকাশ গঙ্গা।
প্রহর গুনেছি, জাগরুক অতি সংজ্ঞা।
আঙুল ছুঁয়েছে তোমার চিবুক শেষবার।
পৃষ্ঠ দেখেছো, পলায়নদাগে জেরবার ?
এবার পালিয়ে নিশ্চিত নেশা ছাড়বো।
তোমার থেকে তোমাকেই শেষে কাড়বো।
শুভ সকাল!
বিপুল চক্রবর্তী
আমাদের কথায় কী হয়---
তবে কেন বলি, শুভ হোক
অশুভ ঘিরেছে, দুঃসময়
ছিঁড়ে নেয় রঙিন পালক...
তবু ডানা মেলেছে এ প্ৰাণ
বুকে তার অসীম আলোক
দিবারাত্রি গেয়ে চলে গান
হোক শুভ হোক শুভ হোক...
ঘটনার অব্যবহিত পরে
অপূর্ব সাহা
ঝুলি থেকে যে বেড়ালগুলো বেরিয়ে রাস্তায় খেলছিল
শীতের রোদে পিঠ দিয়ে তাদের দৌড়ঝাঁপ
আমরা দেখছিলাম অন্ধের স্পর্শের মতো তাৎক্ষণিকের প্রেমে ডুবে যেতে যেতে
কুয়োগুলো ঘিরে ফেলা হচ্ছিল উঁচু পাঁচিলে
নিজস্ব তাবুর ছেঁড়া জানালা দিয়ে
দেখা যাচ্ছে গোলাকার নীলাকাশ
দু'একটা নেড়ি কুকুর ধেয়ে যাচ্ছে ইতস্তত
রুদ্ধশ্বাস ধারাবাহিকগুলো অভিনীত হচ্ছে
এখনই
এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ
ক্ষমতার অনুশীলনে ব্যস্ত দাস-দাসী
নানান রঙ ও মাপের বেলুন সকল
খুঁটিতে লেজ আটকে টানটান
পত পত করে ওই উড়ছে দেশপ্রেম
বেড়ালেরা ঢুকে পড়ছে নিশ্চিন্ত ঝুলিতে
রঙিন উলকিতে ভরে উঠছে নগ্ন শরীর
চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয়, বিচারাধীন
আর যা কিছু ঈষৎ লালাভ
ভিক্ষাপাত্রে জমা রেখে
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হোক
ধর্মাবতার।।
ডরোথী দাশ বিশ্বাসের কবিতা
১.
আকাশের দিকে চেয়ে ...
গত তিনদিন ছিলো ঘনঘোর কুয়াশা চাদরে মোড়া, রাজপথ দৃষ্টি অগোচর।
আজ সারাদিন
আকাশ জমকালো নীল,
জোরালো রোদের তেজ,
কনকনে শীত
আমার দৃষ্টিতে ধু ধু মাঠ নয়,
নয় হলুদ সর্ষেক্ষেত,
সবুজ চাঁদোয়া থেকে
ঝুলে আছে দেখি
কনের কানের দুল
ক্লেরোডেনড্রন
আর
শুধুই আকাশ
যেখানে তোমার আমার কোন ছায়া পড়ে না,
লীন, নীলে লীন,
সেখানেই স্থির দৃষ্টিপাত,
নীরবতার আঘাতে কি ভীষণ নীল!
শূন্য হতে মহাশূন্য,
সেও এতো নীল!
বড় মোহময়!
আকাশের দিকে চেয়ে
তোমারও কি এমনই মনে হয় ?
২.
রাত উঠোনে তোমার রূপকথা ...
তোমার উদ্ধত তর্জনীতে
শাসন শুধু আমার জন্য
অথচ তোমারই দু'হাতে
দেখেছি হৃদয় জয়ের স্বপ্ন
টানটান রূপটানের আড়ালে
লুকিয়ে রাখা মরমী মন
রূপকথার গল্পের মাঝে মেঘমুক্তি
আর সুরুচির ধারাবর্ষণ
এ সবই তোমার শিল্প সংস্কৃতি
নিয়মের কঠোর অনুশাসন
আমার অগোছালো জীবনে
তাই তো তোমার বড় প্রয়োজন ...
৩.
একবারটি ডেকে নাও যৌবনের ওপার থেকে ...
আমি তো তোমায় ছুঁয়ে যাই দিনরাত,
তুমি কি ঘুরে কখনো দেখো তা ?
ইচ্ছে হয় না কখনো অনুভবে স্থান দিতে ?
শুধু জানি, অনুমানে চলো তুমি।
ভয় ? না কি তীব্র বিষ মনে ধারণ করো তুমি ?
পক্ষান্তরে আমি অনুভব করি চোরাটান,
ভেবো না, তোমাকে তোমার মতোই থাকতে দিতে চাই।
আপাতস্থির আমি, যতোই বুকভাঙা কান্না পাক।
আলাপ -প্রলাপ -বিলাপ- কোনটাই নয়,
শুধু নদীর স্রোতের মতো তোমার আসা- যাওয়া,
তোমার অস্তিত্বে বুঁদ হয়ে থাকা,
না, এটা বাধ্যতামূলক নয়, বরং নেশাগ্রস্তের মতো শুধু চেয়ে থাকা।
শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে যত্ন করে লুকিয়ে রাখা তোমার পায়ের ছাপ,
আঁচল ঘিরে জমানো যতো দুঃখকথা,
উপচে পড়া অশ্রু যখন ভেজায় কপোল
তুমি তখন অনেক দূরে কোন মোহনায় !
সুনামী থেকে রক্ষা করি আমার আমিকে,
বেলা যায়, একবারটি ডেকে নাও যৌবনের ওপার থেকে,
প্রস্ফুটিত হই আর একবার নিজের অজান্তে,
প্রেমরেণু ওড়াও তোমার হৃদয় অঙ্গনে।
নিমাই জানার তিনটি কবিতা
১.
বিশুদ্ধ শ্মশান ও শীতলকুচির প্রোল্যাকটিন দ্রব্য
শ্মশান শুয়ে আছে শ্মশানের মতো
একটা গোলার্ধ বিহীন লাল রঙের অশ্বখুরাকৃতি সাপ নাভি বিন্দুর নিচে ধারালো অযোনিসম্ভব নপুংসক অন্ধকারে নেমে শল্কমোচন ঘটিয়ে যায় বৈসাদৃশ্য ঋষি পুরুষদের মতো , লাল পারদের জমে যাওয়া ল্যাকটেক দ্রবণ আমরা কতদিন একটা কৃষ্ণাঙ্গ নারীর সাথে ভাগ করে খাইনি
টেস্টিস বিহীন সাপ শুয়ে আছে সাপের মতো , ফসফরাসের দাঁত শুয়ে আছে সারারাত সঙ্গম ক্লান্ত আগুনের মতো , অদৃশ্য আলো জ্বেলে আমরা ব্রহ্মকুণ্ডের দিকে কেউ কেউ ছুটে যাই মাংসাশী গন্ধ নিয়ে , পূর্ণবৃত্তের শ্মশানে যাত্রীরা বিন্দু উৎসের আকাশমনির নিচে শবাসনে শুয়ে পড়লো এবার দৈবাৎ বিশুদ্ধতায়
সারারাত আলোর মতো কোনো এক ভৌতিক আবহবিকার এসে শীতলদায় নেমে বারবার প্রোল্যাকটিনের মতো দাঁতাল হয়ে যায় , এই অভয়ারণ্যে আর কোন জরায়ুজ গন্ধ নেই শীতল বরফ কুচি খাবার পর ,
বৃষ্টির মতো উভয় লিঙ্গ গিরিপথের কাছে আমি এক মন্দির সমগ্র রচনা করি আর্তচিৎকারের শূন্য ভগ্নাংশে ,
কেউ কেউ এক অমৃতযোগ , দুই বিদূর পুরুষের ধারাপাত , তিন স্বরবর্ণ , চতুর্থ পাললিক হাড় সমূহের ধারালো কৌস্তভ নিয়ে সাদা রঙের পুরুষ হয়ে যায়
নিরাময় শ্মশানের কাছে এলে সকলেই কেমন বর্ণহীন সতীচ্ছদ ফেলে হঠাৎ করেই পুরোহিত সেজে ওঠে , আমার গায়ে দ্রাঘিমাহীন জ্বর বেড়ে উঠছে অযৌন পারদের স্কেলিটন বেয়ে
২.
প্রতিবিম্বহীন নীলাদ্রি ও চন্দ্রগুপ্তের পঞ্চম বংশধর
নীল গর্ভপাতের পর আর কোন মিথোজীবী গন্ধ নেই আমাদের,
প্রত্নতত্ত্ব ঈশ্বরীরা উল্টানো অ্যালকোহল গ্লাসের ভেতরে সাদা রঙের দেবদূতদের দেখতে পায় প্রতিবিম্বহীন সরলবর্গীয় নীলাদ্রি খোলসের ভেতর ,
তারা সকলেই প্লাজমা অন্ধকার থেকে নারী শরীর নিয়ে সরলবর্গীয় লিঙ্গ দৈর্ঘ্যের উপরে উলঙ্গ নৃত্য করতেই শুকতারার মতো দ্বি পারমাণবিক হয়ে যাচ্ছে,
নুনের পাথর মাপতে গিয়ে ঈশ্বরের মতো কঙ্কাল বিহীন পুরুষেরা মাঝদরিয়ায় হারিয়ে গেছে চন্দ্রগুপ্তের চতুর্থ পূর্ণবর্গাকার অদৃশ্য বংশধরদের মতো , ঈশ্বর মাঝে মাঝে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন প্রাজ্ঞ বৈষ্ণবের মতো
ধোঁয়া উঠলেই আমার বুকের ভেতর অদৃশ্য অ্যাড্রিনালিনের কম্পাঙ্ক বাজতে থাকে , দুই হাতে আগুন ভক্ষণ করি , দাউ দাউ জ্বলে ওঠে আমার শিরদাঁড়া
আমি শুধু বিন্দু উৎসের মৌলিক পদার্থগুলো আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেওয়ার পর কোন একটা আদিম পুরুষ এসে আমার মস্তিষ্ক প্রহর তৃণভোজীর মতো গলাধঃকরণ করছে
সারা গায়ে চন্দ্রবিন্দুর মতো পোড়া পোড়া আগুন যার কোন জ্যামিতিক পরাবৃত্ত নেই
শ্রী হরি প্রদেশের শিথিল চিহ্নের ক্ষুদ্রাকৃতি মানুষগুলো করতাল আর মঞ্জিরা বাজিয়ে অসংখ্য শ্মশান বন্ধুর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে শূন্য গ্ৰহের ঈশ্বরীরা শুকনো পাতা জ্বালিয়ে গোলাপি অন্তর্বাস খুলে রাখে রক্তকণিকার ভেতরে
৩.
নেশাখোর জিওল মাছ ও সাদা রঙের বীজগণিত
নিপুন অলিন্দের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত মৃত আত্মা খণ্ডকের বিস্ময় বোধক চিহ্নগুলোকে কেউ আবার নোঙরহীন জলাশয়ে স্নান করিয়ে যায় প্রতিদিন দুই বেলা
আমি একটি মৃত নাবিক , দুটো আঁশবিহীন উলঙ্গ মাছ , তিনটি অশ্বগন্ধার পোশাক নিয়ে সারা রাত একটা শিরদাঁড়া ভাঙা সরীসৃপ কণ্ঠের কাছে ঝুলে থাকি আত্মহত্যা শিকড়ের মতো
আমার মা মোমবাতি রঙের একটা জিওল মাছ পুড়িয়ে যাচ্ছে ভর দুপুরের ভস্মীভূত সাদা রঙের কয়লা খণ্ডকের ভেতর থেকে উঠে আসা লিগনাইট নারীদের মতো
মৃত্যুর কোন বীজগণিত হয়না ,
রক্তাক্ত দাঁতের নিচে জড়িয়ে থাকা স্তন বৃন্তের তরুক্ষীর অপাদান কারক আর জলাশয়ের চারপাশে ভেসে ওঠা স্থির উভয় লিঙ্গ পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে মেনোপেজ ফুলের সাপ হয়ে
আমি শুধু নন্দন পুরুষদের মতো সারারাত বিষাক্ত যৌন চিহ্ন খুঁজে বেড়াই অথচ একটা আয়নার নিচে আমার সর্বাঙ্গ বারবার পুড়তে থাকে দ্রোহের হোমাগ্নি কাঁটার মতো , এলাচ ফুলের হরিণীরা পর্যাবৃত্ত স্নান করলেই ভঙ্গুর হয়ে যায় শাঁখের মতো
আমি ত্রিশুল , ক্লোরোফিল নেশাখোরের মায়াবী পাতার ছিদ্রাল চাঁদের কম্পাঙ্ক আবিষ্কার করি , একা একা বিসর্গ চিহ্নের রক্তাক্ত মাংসল খণ্ডক গুলো নৌকার উপর ভরে রাখি প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায়
আসলে মাটির উনুনের লাল লাল দ্রাঘিমা ফুলের রজনীগন্ধাগুলো নিয়ে আমরা মাটির কলসির ভেতরে থাকা এক একটা শ্মশানতন্ত্রের নাভিময় পালক ,
নিমাই দৈর্ঘ্যের সব জ্ঞান শূন্য অজগর পাখিরা শ্মশান বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বসে আছে প্রাচীন রাত্রি কালের একাকী বীজগণিতের কঠিন অংক গুলোর সাথে মিথুন পরবর্তী অ্যামোনিয়া খাবে বলে
কল্পোত্তমের দুটি কবিতা
আলংকারিক
১.
হাওয়ায় ঝুলে ঝুলে কতদিন শ্বাস নেওয়া? মাটির কাছাকাছি পৌঁছে দাও। পৌঁছে দাও গভীরে তোমার। আমার মূলত্রের টানে বেরিয়ে আসুক জল তোমার গর্ভের। খনিজের গন্ধ মাখা জল বাষ্প হয়ে ছড়াক বাতাসে। পরমাণুর পরম কোনায় প্রতিস্থাপিত জানালার ফাঁকে বলে ওঠো-----মুক্তিও কোনো না কোনো বন্ধনের নাম।
শেকড় হারিয়ে যায় মাটির পরতে। মাটিও হারিয়ে ফেলে শিকড়ের গান। তবু দেহে লেপ্টে থাকে দেহ, লেপ্টে থাকে প্রাণ। আগুন জ্বলতে থাকে দু'পাশেই সমান সমান।
২.
আশ্রয় চাইলাম, দিলে ঘর। জল চাইলাম, দিলে কলসি, হাতে তুলে। ঘর আর আশ্রয় এক নয়। কলসি আর জলও এক নয় জেনেও এ তোমার কোন্ হিসেব?
হিসেবের জটিলতায় পাক খেতে খেতে পেরিয়েছি অনেক ঘূর্ণাবর্ত। অনেকবার ডুবেছি অভিকর্ষজ টানে।
টানতে টানতে কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে? কোন্ চেতনা দিতে এই মহাটানে করেছো নিক্ষেপ সমস্ত নিষ্ঠুরতা দিয়ে?
চারপাশ থেকে পিষ্ট হতে হতে হারিয়েছি আকার। হারিয়েছি চলা। নিজেকে হারানোর অপেক্ষায় বসে আছি, ধস নামা ঘাটে।
ছ’জন কবি ও কবিতা নিয়ে যৎসামান্য
অমিত মণ্ডল
ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, কবিতা নিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পাণ্ডিত্যপূর্ণ শব্দের প্রয়োগ, প্রচুর অপরিচিত অনুষঙ্গ ও উপমা নিয়ে লেখা কবিতা হয়তো গবেষকদের গবেষণার বিষয় হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু একজন মানুষ যিনি কবিতা পড়তে ভালোবাসেন, তিনি সেই কবিতাই পড়তে চাইবেন যে কবিতার তল খুঁজে পাওয়া যায় সহজে। একজন কবিতা পাঠক সেই কবিতাই পড়তে চান, বা আগামী দিনে সেই কবিতাই পড়তে চাইবেন, যে কবিতার ভিতরে সহজে প্রবেশ করা যায় বা গভীরে হারিয়ে যাওয়া যায়, কিংবা মনের মধ্যে তৈরি হয় মৃদু আলোড়ন, যে আলোড়ন ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে তাঁকে নিজের গহনে, এবং একই সঙ্গে চোখের সামনে উঠে আসে কত বাস্তবতা, কত মনখারাপ, কত চোখের জল, কত আনন্দ। এ বিষয়ে আমি উল্লেখ করতে চাই ছ'জন কবি – তারাপদ রায়, মানিক চক্রবর্তী, সুব্রত চক্রবর্তী, ভাস্কর চক্রবর্তী, দেবদাস আচার্য ও অরণি বসু । এঁদের বাইরে আরো অনেকে আছেন অবশ্যই। তারাপদ রায় পঞ্চাশ দশক, ভাস্কর চক্রবর্তী, সুব্রত চক্রবর্তী ও মানিক চক্রবর্তী ষাট দশক, অরণি বসু ও দেবদাস আচার্য সত্তর দশকের কবি। যদিও আমি দশকওয়ারি বিভাজনে বিশ্বাসী নই। কবিতার আবার দশক কি? কবিতা তো আবহমানকালের। ভাস্কর চক্রবর্তী, সুব্রত চক্রবর্তী, মানিক চক্রবর্তী এবং তারাপদ রায় প্রয়াত। আমি মনে করি বাংলা কবিতার চালচিত্রে এখনও আলো ছড়িয়ে আছেন কবি অরণি বসু ও কবি দেবদাস আচার্য। আমি নিশ্চিত সত্তর দশকের শক্তিমান কবি সুব্রত চক্রবর্তী ও মানিক চক্রবর্তীর কবিতা অনেকেই পড়েননি, প্রচারের আলোয় এঁরা আসেননি। একইভাবে সত্তর দশকের বিশিষ্ট কবি অরণি বসুও প্রচারের আলো থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন এবং আছেন। ভাস্কর চক্রবর্তীর ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’ কিছুটা আলোড়ন তোলা কবিতাগ্রন্থ। তরুণ কবিদের তখন মুখে মুখে ঘুরছিল ‘আমাদের স্বর্গ নেই, স্যারিডন আছে’। দেবদাস আচার্যকে নিয়ে বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিন কাজ করেছে ও করছে। কিন্তু তারাপদ রায়? অরণি বসু, মানিক চক্রবর্তী ও সুব্রত চক্রবর্তী? এঁরা প্রাপ্য প্রচার পেলেন না কেন? উত্তরটা আমি নিজের মতো করে খুঁজে নিয়েছি— আসলে একটা সময় কয়েকজন কবি কবিতার জগতকে শাসন করেছেন, এবং প্রাতিষ্ঠানিক আলোর কেন্দ্রবিন্দুতে তখন ওঁরা উজ্জ্বল ও বিরাজমান। তার মানে আমি কিন্তু কখনই বলতে চাইছি না, সেইসব কবির কবিতা প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারের যোগ্য নয়, এবং তাঁদের প্রশ্নাতীত মনীষা, বৈদগ্ধ্য ও মনন নিয়ে বিন্দুমাত্র কথা বলার স্পর্ধা আমার নেই। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানের শক্তিকে অস্বীকার করতে পারি কি আমরা? হ্যাঁ, আমরা পরোয়া না করতে পারি। সেজন্যই তারাপদ, সুব্রত, মানিক, দেবদাস, অরণি বসুরা আড়ালে চলে গেলেন।
আমি কিছু ব্যাখ্যার মধ্যে যাচ্ছি না। শুধু উল্লেখ করছি ছ'জন কবির কবিতা। যদিও বিশ্বাস করি, একটা কবিতা দিয়ে একজন কবির কবিসত্তার ব্যাপকতা পরিমাপ দুরূহ। কবিতাগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন, কবিতাগুলো আপাত সরল হলেও কিন্তু গভীর। আছে তীব্র জীবনবোধ। শব্দচয়ন, ব্যঞ্জনা, বিষয়ের ভেতর কবি পাঠকের কাছে পৌঁছতে চেয়েছেন, এবং পাঠকও কবিতার গভীরে ডুব দিয়ে খুঁজে নিতে পারবেন জীবনের রস। যেখানে অকারণ দুর্বোধ্যতা নেই, নেই অহেতুক শব্দ বিন্যাসের জাগলারি।
১। বাজে কবিতা লেখার মতো স্বাভাবিক তুমি।
দমকা হাওয়ায় নড়বড়ে ছাতা উলটে যাওয়ার মতো,
মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও
ক্যালেন্ডারে পাতা ছিঁড়তে ভুলে যাওয়ার মতো।
বিনা বাক্যে সব কিছু মেনে নেওয়ার মতো,
যুদ্ধের মাঠ থেকে বারবার পালিয়ে আসার মতো,-
স্বাভাবিক
স্বাভাবিক তুমি।
স্বাভাবিক তুমি / তারাপদ রায়
২। আজকাল আমার ভাতের থালায়
ভাতের পরিমাণ দিনেদিনেই কমে আসছে
আমার ছেলে মেয়ে রুমনি ও রুদ্রের মুখ
আর তেমন উজ্জ্বল নয়
সুষম খাদ্যের অভাব হচ্ছে বলে টের পাচ্ছি।
আমার বৌয়ের শরীরে চাল ধোয়ার স্নিগ্ধ ঘ্রাণ
সারাদিন বৃষ্টি হলে আমার ছেলেমেয়েরা
ভুলেও আর খিচুড়ির কথা মুখে আনে না
শুধু আমার ভালোমানুষ বুড়ো বাবা
মাঝে মাঝে ভাতের থালার সামনে
ঝুঁকে পড়ে বিড়বিড় করে বলে ওঠেন-
‘মাছ কই, অ বৌমা, মাছ কই’।
১৯৭৯ / সুব্রত চক্রবর্তী
৩। মার চিঠি আসে, টাকা পাঠনোর রসিদও ফিরে আসে,
মা ঘুরে বেড়াচ্ছে এ-আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ও-আত্মীয়ের বাড়ি—
ঠিক আছে,
সবই বুঝলাম।
তবু বাবার ছবির মত মার এখনো ঘরে কোনো ছবি নেই।
মার ঠোঁট শুকনো হয়ে গিয়েছিল যাবার সময়,
লজেন্স কিনে মার ব্যাগের মধ্যে পুরে দিয়েছি—
দাঁতব্যথা যেন না ওঠে,
ট্রেন ছাড়ার আগে শুধু জল ছাড়া খেতে দিইনি কিছু,
এখন শুনি মা ওখানে আনন্দেই আছে,
প্রচুর আত্মীয়স্বজনের বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছে—
যখন ছটা থান মোট নিয়ে গিয়েছিল মা,
পরিষ্কার হয়ে থাকতে বলেছিলাম।
শোনো।
অন্তত বাইরে—এতগুলো আত্মীয়স্বজনের সামনে পরিষ্কার থেকো।
মা কি তাই থাকবে?
বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়বে না?
চশমাটা চোখের ওপর আর বইটা বুকের ওপর কি খোলা থাকবে না?
কে বলতে পারে!
মা যেমন হাঁ করে ঘুমোয়,
যেমন অনেকখানি জায়গা নিয়ে, পা দুটো ছড়িয়ে,
কোলবালিশ পাশে নিয়ে শুতে ভালোবাসে,
মা কি লজ্জায় বলতে পারবে ওখানে?
লুকিয়ে লুকিয়ে দোক্তা-পান খাবে?
দুটো চোখ কড়ি-বরগার দিকে স্থির রেখে
একমনে চিন্তা করবে হয়তো ওখানেও মা—
মার যা স্বভাব;
হয়তো আরামেই আছে,
সবই বুঝলাম—
তবু, মার অসুবিধেগুলো আমরা ছাড়া
তেমন করে কে আর বুঝবে ওখানে!
শুতে যাবার সময় রোজ মার পোষা ছাগলগুলোর গায়ে হাত রাখি—
ভোরবেলা টবের ফুলগুলি একটা-একটা ফেরে,
সারাদিন মার হাঁস তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াই,
মা যে ছেঁড়া কাপড়টা আলনায় রেখে গেছে,
সেটাও এবার পাঠিয়ে দেব কিনা,— রোজই ভাবি।
ছেঁড়া কাপড়টার দিকে বারবার চোখ পড়লে মনে হয়,
মা বুঝি আর ফিরবে না—
মার ছেঁড়া কাপড়টা/ মানিক চক্রবর্তী
৪। ছেলেটি অফিস থেকে মেয়েটি কলেজ থেকে এলো আর বিদ্যুৎ চমকালো
সিনেমায় যেতে চায় ওরা?
অন্তরঙ্গ হতে চায় কাফে দ্য মনিকোয়?
-কালো মেয়েটি আর আমাকে পাত্তাই দেয় না
জানিয়েছে: যেখানে উনুন, ধোঁয়া, দারিদ্র সেখানে —
#
যে কোনো চাকরি চাই, সাত কি আটশো মাসে-দুপুরে টিফিন
ভাস্কর চক্রবর্তী / বিজ্ঞাপন
৫। বাবার পায়ের শিরা ফুলে ওঠে খরায়
বহুদুর হাঁটা পথে কাপড় জামা ফিরি করে তিনি ঘরে ফেরেন
মা এসে বসেন তাঁর পাশে, তাঁর ওই ফুলে ওঠা শিরায় হাত দেন
আমরা ভাইবোনেরা তাঁর চারপাশে দৌড়ঝাঁপ করি
বাবা আমাদের পিঠে হাত রেখে গল্প বলেন, আর
গল্প করতে করতে, নানারকম গল্প করতে করতে তাঁর চোখ
উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, যেন
একটা বটচারা গজিয়েছে তাঁর চোখে
আর তিনি ঝরিয়ে দিতে চাইছেন
বিশাল ছায়া, মৃদু বাতাস
বটগাছ / দেবদাস আচার্য
৬। কোথাও কি চিড় ধরেছে?
সমুদ্র-পাহাড় নেই, রঙিন বেলুন নেই,
শনিবারের নতুন হাট নেই,
যে চোখে খেলে বেড়ায় অনিবার্য বিদ্যুৎ-
সেই চোখে ধু-ধু মরুভূমি।
#
ইচ্ছে হয় তার পাশে গিয়ে বসি।
বুজিয়ে দিই ফাঁকফোকর,
মুছিয়ে দিই চোখের জল।
#
কতটাই-বা পারি-
শুধু পারার ইচ্ছেটুকু নিয়ে জেগে উঠি প্রতিদিন,
জেগে থাকতে চাই আজীবন।
অরণি বসু / ইচ্ছে
পাঠক, কবিতাগুলো পড়লেন তো ? এবার ভাবুন, বাংলা কবিতার আয়ু আরও কত সহস্র বছরের। সবিনয়ে একটা কথা বলি, এই ছ'জন কবি ছাড়াও বাংলা কবিতার জগতে আরও অনেক কবি আছেন যাঁদের কবিতা পাঠককে নাড়িয়ে দিতে পারে, সব কবিতার উল্লেখ সম্ভব হল না। আগামী দিনের জন্য তোলা রইল।
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ : গল্পকার স্বপন চক্রবর্তী, ঔপন্যাসিক দীপংকর রায় এবং কবি ও চিত্রশিল্পী শ্যামল বরণ সাহার সাম্প্রতিক পুরুলিয়া ভ্রমণের ছবি
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
💐❤️🎉
উত্তরমুছুন