দুর্গা দত্তের একগুচ্ছ কবিতা


হাতের পাঁচ : এক


তুমি যে আগুন আমি জানি

তুমি যে সমুদ্র আমি জানি

তুমি যে বিকেল জুড়ে
শালবনে ডুবে যাওয়া সূর্যাস্তের আভা
আমি জানি

তুমি যে সেই অলৌকিক তিরতিরে স্রোতে
কেঁপে ওঠা পুণ্ডরীক
আমি তা-ও জানি

আজ বালির ওপরে চেয়ে দেখি
আঁকি বুকি করে গেছি তোমার মুখের রেখা
রক্তাভ অক্ষরে

ভূর্জপত্রে

দিনরাত

সারাটা জীবন ...





হাতের পাঁচ : দুই


শব্দেরও কি রঙ থাকে ?
লাল ! নীল ! হলুদ ! সবুজ ! ...

শব্দেরও কি গোত্র থাকে ?
আদিম ! কৌমতন্ত্রী ! আলোকিত!
ইয়াহু সজীব !...

তোমাকে শীতের চিঠি লেখবার আগে
এই নিঝুম ঠাণ্ডায়
ভোররাতে
মাঝগঙ্গায় ডুব দিয়ে
সব শব্দ ঠুকে ঠুকে ধুয়ে মুছে চোখ বুজে
আসনে বসেছি...

শব্দের যদি কোনো প্রাণ তুমি
না-ই খুঁজে পাও
আমাকে দুষো না কোনোদিন --

জেনে রেখো
মন্ত্রাচারে আমি কোনো ফাঁকই রাখিনি --

চুপ করে সব কিছু দেখে শুনে মেনে নিয়ে
সাবলীল লালন করেছি

তাই বলে মনে কোরো না
আমি কখনও হাতে নিইনি
ভূর্জপত্র বেলকাঁটা তুলোট কাগজ --

মনে কোরো না যেন
আমার এই স্বরধ্বনি
বৃক্ষমূলে রৌদ্রস্নানে কখনও ডোবেনি !!






হাতের পাঁচ  :  তিন 


ইতর জীবন এই দুপায়েই জড়িয়ে মড়িয়ে
হামাগুড়ি দিয়ে দিন ঝরে গেছে বনে ও বাদাড়ে

খোলশ খুলেছে রোজ, 
উড়ে গেছে হাওয়ায় হাওয়ায় --

রক্তচিহ্ন কেউই দেখেনি ...

এটুকু সবাই জানে 
আর যাই মানে থাক শরীর সত্তার

খোলশের অভ্যন্তরে 
কোনোদিন কোনোরূপ রক্তই থাকে না ...






হাতের পাঁচ : চার 


আমার প্রতিটি ঘরে দরজায় চৌকাঠে 
ঘুরে ঘুরে বসে পড়ে পথের ধুলোরা--

জানলায় জানলায় তার ধূসরিত ছায়া ...

লোকগানে জেগে ওঠে রাসপূর্ণিমার ঠাণ্ডা চাঁদ

আমার উৎসব নেই।

কেন যে সেই অভিনব হলুদ জ্যোৎস্নায়
কেবলই তোমার মুখ ভেসে ওঠে 
শূন্যগর্ভ ধানক্ষেত জুড়ে
রাতগুলি ডানা নাড়ে গঙ্গাজলে ধোওয়া --

এখনও বুঝিনি ।






হাতের পাঁচ : পাঁচ 


হয়তো বা যেতেই পারতো
নীল নদের ওপর দিয়ে উড়ে উড়ে 
দূরে কোনো পাহাড়তলীতে

হয়তো বা যেতেই পারতো
বালিয়াড়ি ভেঙে ভেঙে
ধানখেত জলাভূমি পেরিয়ে পেরিয়ে
লাঙল ঝোলানো কোনো খড়িওঠা মাটির দাওয়ায়

কোথাও গেল না।
ডানা ঝাপটে মুখ গুঁজে পড়ে থাকলো 
অর্জুনের মগডালে 
গরামের থানে

সাংকেতিক ডালে ছিল খড়কুটো বাসার তুলনা !






হাতের পাঁচ : ছয় 

( প্রতর্ক )


এটা হয় নাকি
আমি তোমাকে কিছুই দিইনি বলে 
তুমি আমাকে কিছুই দেবে না!

কোনো ডুব, কোনো স্নান, 
কোনো অতলান্ত ঢেউয়ের জগৎ 
কোনো অলৌকিক উপত্যকায় 
আশিরনখ সর্বস্ব খোয়ানো
কোনো ভ্রূণের উন্মেষ --
কিছুই দেবে না!
এটা হয় নাকি ! 

এ কি কোনো ধুরন্ধর শকুনির 
পাশার চলন ?
একবগ্গা জিত ছাড়া অন্য আর কিছুই থাকে না ?

তাহলে তো হিমযুগ ঢের বেশি সুখপ্রদ নিভৃত জগৎ!
তাহলে তো ঘুম ভালো! দীর্ঘ শীতঘুম!
তাহলে তো শব্দহীন ধ্বনিহীন আলোহীন
অন্ধকার অতল সমুদ্রতল বেশি অভিপ্রেত!


কোনো কিছু না ভেবেই সব তর্ক শিকেয় ঝুলিয়ে 
মাঝরাতে অন্ধকার গিলে নিয়ে 
চুপিচুপি 
পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো মাংসহীন শামুকের খোল 

সকালের তটে কেউ বালি আর ফেনা ছাড়া
কোনো কিছু দেখতেই পেলো না...







হাতের পাঁচ :  সাত


এত যে রূপোলি রেখা 
জল নেমে গেলে চরে যেরকম ভাঁজ চিহ্নে 
ভেজা ভেজা মাটি দেখা যায়
তোমার মুখেও কি অবিকল তারই আভাস !

তোমারও কি বয়স বেড়েছে সুলোচনা!

কই ! সেরকম তো ইতি উতি 
ছুটকো ছাটকা কোনো রূপ আলাপ বিলাপ
কোনো ফাঁক ফোকরেও কখনও শুনিনি।

আমারই বিভ্রম বুঝি !

আমারই বয়স হলো,  হয়তো বা খেয়ালই করিনি...

পায়ে পায়ে রোদে পুড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গেলে 
কেন যে কোথাও কোনো ধুলোই ওড়েনা 
বলুক আর না-ই বলুক কেউ
এখন তা হাতে কলমে বুঝতে পেরেছি ।

কীকরে বোঝাবো বলো তবুও প্রতিটি দিন
প্রতি সূর্যোদয়ে নোনা জলে 
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছি অবিকল
তোমাকে দেখবো বলে 
অর্ধশতক জুড়ে প্রায় 
বাইশ বছরি যুবা :-

সোঁদা গন্ধে উতরোল দেহাতি মাদল...





কবি দুর্গা দত্তের বৈঠক খানাতে ওনার সঙ্গে আমি।

খবরের কাগজ হাতে কবি দুর্গা দত্ত।





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪