তৃতীয় বর্ষ ।। পঞ্চর্বিংশতি ওয়েব সংস্করণ ।। ১২ চৈত্র ১৪২৯ ।। ২৭ মার্চ ২০২৩


নিজের বাসা নির্মাণ না করে অন্যের বাসায় কোকিলের প্রবেশ, এ শুধু আলস্য নয়, এ একপ্রকার চালাকি। কোনো না কোনভাবে এও এক প্রকার আগ্রাসন। অন্যকে পরিশ্রম করিয়ে নিজের যাপনকে নিশ্চিত করা। নিশ্চিত করা নিজের বংশের ধারাবাহিকতাকে টিকিয়ে রাখার বিষয়টাকেও। তার জন্য সেই পরিশ্রমকারী পাখির ডিম ভেঙ্গে দেওয়া, ডিম খেয়ে দেওয়া বা আরও আরও জঘন্য কিছু করতেও পিছপা নয় তারা। নিজের বংশ রক্ষার্থে অন্যের এই বংশ নাশের খেলায় মেতে উঠতে উঠতে ভুলে যায় একদিন তারও বংশ নাশ করতে মুখোমুখি দাঁড়াবে কেউ। দাঁড়াবে গদা-চক্র অথবা লাঙ্গল কাঁধে।
            লাঙ্গলের অধিকার ছিনিয়ে নিলে ছিনিয়ে নিতে হবে ক্ষুধার অধিকার। খুরধার বক্তব্যের বদলে ছিনিয়ে নিতে হবে অধিকার কঠোর পরিশ্রমের। তাহলেই বোঝা যাবে কে কত আন্তরিক, কে কত হিতৈষী। 
              চালাকির আশ্রয়ে কতদিন তা দেবে ডিমে? কতদিন জন্ম দেবে নিজের সন্তান? ঠোঁট পোক্ত করছে তারাও। প্রখর করছে দৃষ্টি গুগলি ঝিনুকের মাংস খেয়ে। একদিন না একদিন ছিঁড়ে খাবে তোমারও সন্তানের মাংসল পেশি। সেদিন বুঝবে কাক আসলে উদার, বোকা নয় কখনও।


উত্তম মাহাত, সম্পাদক 
            

______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
দুর্গা দত্ত / সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় / অশোক দত্ত / অরবিন্দ চক্রবর্তী / রামকুমার আচার্য / বিশ্বম্ভর নারায়ণ দেব / সুপ্রিয় দেওঘরিয়া / অঙ্কন রায় / সুজন পণ্ডা / ব্রততী পরামানিক / ময়ূখ দত্ত
______________________________________________



দুর্গা দত্তের গুচ্ছ কবিতা 

১.
অজন্তা কথা 


জানলা থেকে দূরের মাঠে পাহাড় ঘেঁষা গ্রাম,
চাষীর ঘর , দেওয়াল জুড়ে গরুর গাড়ির চাকা
ঝুলছে লাঙল , কাজ হারানো জোয়াল বাঁধা দড়ি
কেউ কোথ্থাও নেই, দাঁড়িয়ে দু চারটে শালগাছ...

সাহেব স্মিথের পায়ের তলে বিঁধলো কীসের কাঁটা?
হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে বাঘের গুহার মুখ 
অগুনতি সব রঙের খেলা চোখে আঁধার, আলো
সাপের খোলশ লুটিয়ে আছে বোধিসত্ত্বের গায় 

এঘর ওঘর অন্ধঘরে বাদুড় উড়ে যায় 
শ্বাপদ বিষ্ঠা, জ্বলজ্বলে চোখ, চতুর্দিকে জেগে
তারই মধ্যে জন্ম এবং ভিন জনমের আলো
চোখে ভেজা মায়ার কাজল সময় বেঁচে ওঠে 

কোথায় ছিল এদেশ? ছিল কোন পাহাড়ের খাদে?
কাদের চোখ দেখেছিল এমনতর ছায়া?
কাদের হাতে জেগেছিলেন অলখ পদ্মপাণি ?
কাদের স্তবে স্বরধ্বনি গুহায় বেঁচে ছিল ?

তুমি দেখছো কবের থেকে, আমি তথৈবচ --
ধীর চলনে পৌঁছে গেছো, ধুলোয় মলিন পা 
কোথায়  যে দিন ফুরিয়ে গেল, জানলো না কেউ আর
মধ্যিখানে তুমিই আমার অজন্তা সংবাদ ...



২.
উনুনের পাশে বসে  : এক


যাকে তুমি নেই ভাবছো
সে তোমার কাছে পিঠেই আছে...

হয়তো হাতের কাছে
হয়তো বুকের কাছে
হয়তো বা প্রতিটি শ্বাসের পরে ঘুমন্ত মুদ্রায়

নেই ভাবলেই তো সে আর 
নেই হয়ে যাবে না সহজে।
অনেক আছে-র থেকে 
সে অনেক দূরে দূরে ঘুরে ঘুরে ছায়া মেখে
তোমার ঘুমের মধ্যে এনে দেয় 
ধানশিসের শিশিরের ফোঁটা 
হলুদ সর্ষের ক্ষেতে বিকেলের আলো ।

আগুন পরিধি জুড়ে কলঙ্ক রেখায় তার 
ঘন চলাচল।

নেই ভাবলেই 
কী করে সে শুদুমুদু 
নেই হয়ে যাবে বলো দিকি !




৩.
উনুনের পাশে বসে : দুই


যখন তখন কোথায় যে চলে যাও 
আগে থাকতে কিছুই বলোনা

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে পাশ ফিরতেই দেখি
তুমি নেই

ভোরের উঠোনে মাড়ুলি এঁকেই
ঘরের চৌকাঠে পৌঁছে নীচু হয়ে দেখি
পড়ে আছে রুদ্রপলাশের পাপড়ি 
তুমি নেই 

শুকনো পাতা উড়ে আসে ফাগুন বাতাসে 
খসখস শব্দ করে হাওয়া এসে 
সঙ্গতি সাজায়

কারও কি পায়ের শব্দ ভেসে এলো ? 
দূর থেকে ? বহুদূর থেকে?
নেই, তুমি নেই

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি শুধু 
ধু ধু হাওয়ায় 
নৌকা ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায় 
নামহীন মাঝি
তুমি নেই

বলা নেই কওয়া নেই
যখন তখন 
কোথায় যে হুটহাট কোন দেশে চলে যাও 
আগে থাকতে কিছুই বলোনা





৪.
উনুনের পাশে বসে : তিন 


তোমাকে দেখতে থাকি
প্রতিটি মুহূর্তে 
পাতা পড়বার শব্দে 
শিরশিরে হাওয়ায় 
শুকনো ডালে একা একা দূরের কোকিলে 
দূরে কোথাও জেগে ওঠা শিমূলে পলাশে ...

তোমাকে দেখতে থাকি
সারা দিনরাত 

দূরান্বয়ী অতিজাগতিক এক ধ্বনির সঙ্কেতে ...




৫.
উনুনের পাশে বসে : চার 


বলো, এই অন্ধকারে 
কার কাছে মেঘ রেখে এলে?

কার কাছে রেখে এলে 
অমিত্র অক্ষর ধারা ? বৃষ্টি চারুলতা ?

কোথায় বা দিয়ে এলে 
পুরনো পলাশ ছবি ? 
অলস দুপুর জোড়া গান ?

বলো,  আমি কী করে প্রবোধ দিই এই 
বাবুইয়ের বাসার সৌষ্ঠবে ?

সবকিছু তোমাকে দিয়েছি।

আমার সঞ্চয় আজ 
শুধু এই দুএকটি জোনাকি উড়াল।

বলো,  এইটুকু দিয়ে আমি 
কী করে বা তোমাকে সাজাই ?

বৃষ্টির ফোটা গুলি তোমার হাতের কাছে 
সারিবদ্ধ রেখে দিয়ে চলে যাচ্ছি 
উত্তরায়ণের আল ধরে ---

নাও আর না-ই নাও
আর কখনও ফিরে তাকাবো না...








ছেদ

সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় 


শহরের উপকন্ঠ থেকে খবর এলো 
শীতের ডিগ্রি নিম্নগাম শিখরে। 
শৈত্য এক অবধারণ। 
তোমার বাহু বেয়ে নেমে এলো ওই 
উমরাও জান অদা মিনাকারী বালু। 
এশেক এক তুখোড় ধুলাঝড়। 
শহরের কেন্দ্রে কারা মোটর বাইকে 
ঘোষনা করলো দণ্ডক পৌরুষ। 
রতি এক হলান্ত শব্দ। 
তোমার বুক চিরে বেরিয়ে এলো 
খিলখিল অবোধ্য হৃৎপিণ্ড। 
মৃত্যু এক অবধ্য পরিণাম। 
ছিটকে পড়লো পদভাগ রেখায় 
মাশুকের অশ্রুর স্ফুলিঙ্গ।
বিরহ এক অভ্যাস।









বটের ছায়া বর্তিকা 

অশোক দত্ত


বটের ছায়া বর্তিকা ! 

খোলার ছাউনি
মাটির বাড়ি 
মাটির হাড়ি 
শান্তির এক পায়রাঘর

কি ছায়া কি মায়া গো --- 
ইঁটের পাঁচিল, হয় কখনো গঙ্গাধর 
বটবৃক্ষ মাথায় করে  ---- 
গগনপটে যা মহীরুহ, পঞ্চবটীর ন্যগ্রোধ !

সত্য বটে, এখন যা' মৃত্তিকা
বটের ঝুরি নামবে যখন, ছায়াসূর্য 
       তখন আলোকবর্তিকা ।

বটের ছায়া বর্তিকা।







অরবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতা 

১.
সমুদ্র সংস্করণ


সমুদ্রে শুয়ে থাকা আজব কিছু নয়—মা শিখিয়েছেন।

কৈবর্ত পরিবারের সন্তান না হলেও
আমাদের নদীপাড়ে বাস–কুমারপুত্র আমি
অদৃষ্টের অথইয়ে জাল ফেলে
বাবা অতল থেকে তুলে আনেন 
প্রচুর রহস্য, দৈনিক খুদকুড়ো।

সবারই রয়েছে জিতে যাওয়ার বিজ্ঞতা
আমরা হেরে যেতে পারি জেনে 
আমার পিতা নিয়ত উজানে বৈঠা চালান

চোখও যে সমুদ্রের সর্বশেষ সংস্করণ
মায়ের মুখে তাকিয়েই পেয়েছি এর সরল অনুবাদ।



২.
তোমার ভেতরে তুমি, আমিও


ভেতরে আছে ভেতর; প্রত্যেকের প্রত্যেক অটল

ফল পাও তো বীজের থেকে খসিয়ে
আরেক ঝাঁকুনি

হয় তো গাছতলায় আমার হাসির কুটিকুটি 
ছড়িয়ে বিহারি

কাকে তুলবে, সিদ্ধান্তদ্বিধায় তোমাকেই তুমি 
ফুল তুলে ফিরছ মহিমাগৌরবে!

বলি
ভেতরে আছে বিহন; ওইটুকু তুমি, আমার পরিমাণ।









একফালি

রামকুমার আচার্য 


আমার ঘরে ফেরার রাস্তা লম্বা চওড়া
জাতীয় সড়ক। 
আমি কেবল তার কাছ থেকে ধার নিয়েছি
একফালি চলা 
আমার সঙ্গী নেই
তাড়াহুড়ো নেই,
টপকে যাওয়ার প্রতিযোগিতা থেকেও দূরে আছি
ভিড় ঠেলে বাজাই না বাইকের হর্ন

আমার বাইকের আলোর সঙ্গে মেশে
এই চৈত্রের জোৎস্না 

দেখি দূরের শালবনে ঝরছে ফুল









দাগ 

বিশ্বম্ভর নারায়ণ দেব 


পুরনো ছাদের উপর
তোমার বসে থাকার দাগ লেগে রয়েছে 
এক টুকরো বাংলা কবিতার দাগ 
আবহমানতার সবুজে
তাকে ঘিরে রেখেছে রঙচটা দেয়াল 
বেয়ে ওঠা লাউগাছের পাতাগুলি ।

মাঝে মাঝে সে দাগের পাশে এসে বসি 
বর্ণ ভেজা শুদ্ধতার পাশে এসে বসি 
এক রচনা থেকে আর এক
রচনায় যেতে যেতে
যেভাবে প্রকৃত পাঠক
ফিরে আসে কবিতার কাছে।

দুরগামী স্মৃতির নিবিষ্টতম অভিমুখে 
আজ বাতাস বইছে খুব।







সুপ্রিয় দেওঘরিয়ার কবিতা 

১.
পাথর


ছুঁয়ে দেখলে পাথর
অনুভূতি নেই, রুক্ষ পথের পাশে পড়ে থাকে।
সেই পাথরের মধ্যে আগুন আছে,
হয়তো তা চোখে দেখা যায় না।
অনেক পথ ঘুরে আসার পর
নিজের বুকেও মনে হয়
পাথর জন্ম নেয়, রক্ত শুকিয়ে যায়,
তাতে আঘাতের পর আঘাত দিলে
আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছিটিয়ে যায়,
আলো আসে,
কিন্তু পাথরের আঘাত কেউ দেখতে পায় না!
এইরকম পাথরের আঘাত গুলি
জমে থাকে তাদের বুকের মধ্যে
যারা দীর্ঘ পথের পথিক,
অথচ ছুঁয়ে দেখলে
অনুভূতহীন - আঘাত দিলে, আলো
যেন আলাদিনের প্রদীপ!




২.
কার্ড


ঘরের এককোনে দেখতে পেলাম
পড়ে আছে একটা কার্ড
সোনালি হরফে লেখা "শুভ বিবাহ"
দুই দিকে মুখোমুখি প্রজাপতিরা

কার্ড খুললেই সিঁদুর
কার্ড খুললেই দুপাশে দুই গ্রাম
মাঝে একটি হলুদ ডোর

আপনার পালকিতে বউ চলে যায়
আমার বাড়িতে পড়ে থাকে
হলুদ ডোর, পাত্র পাত্রী পরিচিতি
আর একটা উড়ন্ত প্রজাপতি









আলিঙ্গন

সুজন পণ্ডা


পথ আলিঙ্গন করেছে শিশুকে, 
শিশু জড়িয়ে আছে উদ্ভিদ।
একটি শিশু, তার হাত চেপে আরেকটি।
অসংখ্য বীজের মিছিলে
থইথই রাস্তাঘাট।
একটি ভোরের সূর্য
একটি লাল প্রবাদ।

দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে বাড়িঘর।
অফিস। আদালত। বন্ধ জানালা।

একটি শিশু, তার হাত চেপে আরেকটি।
উষ্ণতা ভাগ হচ্ছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

পথ আলিঙ্গন করেছে শিশুদের।
ওই পথ, ওই সূর্য জানে
শিশুরা প্রবাদ বানায়,
ওই উদ্ভিদ জানে
শিশুরা আগামী বানায়।







ভুলে যাওয়া বসন্ত থেকে... / এক

অঙ্কন রায়


এই বসন্তে ফুল ফোটানোর খেলা 
থাকলো তোলা তোর মুখটাই চেয়ে 
তোর যে এখন ক্লান্ত দু'চোখ মেলা 
তোর যে এখন দৃষ্টি সুদূর বেয়ে ...।

এই বসন্তে কিছু পলাশের নেশা 
শিরীষ বকুল আমের মুকুল সবই 
থাকলো পড়ে, ফাগের ধুলোয় মেশা 
আমার চোখে শুধুই ধূসর ছবি।

তোর শুনেছি দিনের হিসেব সারা 
তোর মনে কি খেলছে না সেই সুর? 
তোর সঙ্গেই পালিয়ে যাবার তাড়া 
আমায় এখন ভাসায় বহু দূর... । ।










ব্রততী পরামানিকের কবিতা 

১.
অম্লান স্মৃতি


সাতরঙা আবিরে পূর্ণ তোমার 
মুখ, অপরূপ দীপ্তিতে ঝলমল-
বোঝাপড়া জীবনের এক অঙ্গ,
সত্য দাঁড়িয়ে থাকে বিশ্বাসে-
ভালোবাসার জ্যোতি জ্বলে শাশ্বত
হৃদয়ের মায়াভরা আত্মিক বন্ধনে,
চিরকাল স্মৃতিরা থাকে অম্লান- 
বিস্মৃতি সহজেই কাছে আসে না।



২.
কদিনের অতিথি 


এই পৃথিবীটা একটা অতিথিশালা 
অতিথি আমরা সবাই ক'দিনের, 
একদিন সব ছেড়ে চলে যেতেই হবে 
তবু ঝগড়া, বিবাদ, হিংসা, স্বার্থপরতা কেন?
থাকি যদি মিলেমিশে হাতে-হাত রেখে, 
বিভেদ দূর করে ভালোবাসার ডোরে-
স্বর্গরাজ্য হবেই আমাদের জন্মভূমি যে।








গল্পবাসা 

ঘুষ...

ময়ূখ দত্ত


সমরেশবাবু পি ডব্লু ডি তে চাকরী করেন। মফঃস্বলে বড় হয়ে ওঠা মানুষ, পাড়ার বরাবরের 'ভাল ছেলে', মানে ঠিক যেরকম ছোটোবেলায় শেখানো হত - কখনো মিথ্যে কথা বলবে না, সন্ধ্যে সাতটার পরে বাইরে থাকা ঠিক নয়, পাড়ার উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করার দরকার নেই, ইত্যাদি, ইত্যাদি... ইঞ্জিনীয়ারীং পাশ করে প্রথম জীবনে কয়েকবছর প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করে, বিভিন্ন সাইটে সাইটে ঘুরে উপলব্ধি করেছিলেন যে এত খাটাখাটনি করে পয়সা রোজগার করে পেটের ভাত যোগাড় করাটা ঠিক জমছে না যেন, জীবনের সব রং, রস থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন, সময়ই পাচ্ছেন না নিজের হাজারটা শখ পূর্ণ করার!! শেষে, কলেজের বন্ধু সুমিতের কথায় সরকারী পরীক্ষা দিয়ে এই পি ডব্লু ডি র চাকরী। প্রথমে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, "ওখানে তো শুনেছি, ঢুকলেই সবাই কে ঘুষ নিতে হয়!!"
- কে বলল তোকে? তুই না নিতে চাইলে নিবি না.... আর তোকে আমি জানি, ঘুষ নিতে হলে কলজের কিছুটা জোরও থাকতে হয়, ওটাও একটা আর্ট, তোর সেই স্কিল নেই!!
" না, মানে, কেউ নিতে না চাইলে নাকি চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়..."
- ওসব লোকের বানানো কথা, নিজেদের দুনম্বরীকে মান্যতা দিতে এসব রটায় সবাই... আমি জানি বেশ কিছু লোককে, যারা ঘুষ নেয় না... পৃথিবীটা এখনো পুরোটা নষ্ট হয়ে যায় নি রে... বেশী চিন্তা করিস না, তোর মত ছেলের কাছে সাইটে সাইটে ঘুরে জীবন নষ্ট করতে না চাইলে এই সরকারী চাকরীর মত ভাল চাকরী আর হয় না... 

এরপরে পরীক্ষা পাশ করে সরকারী কাজে যোগদান, এদিক ওদিক কিছু প্রেশার ছাড়া এখনো অবধি ঘুষের ধারে কাছে নেই সমরেশবাবু, এখন বীরভূম জিলা সদর অফিসে পোস্টিং!! কাজের "সাহেব" হিসেবে অল্পদিনেই বেশ পরিচিতি হয়ে গেছে!! সহকর্মী, অফিসের পিওন, কন্ট্র‍্যাকটার সবার সাথে সুব্যবহার করেন, সবাইকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করতে উন্মুখ থাকেন নিজের ক্ষমতামত, কিন্তু নিয়মের বড্ড কড়া, সময়মত অফিসে আসেন, খুব দরকারী কাজ না থাকলে সময়মত কোয়ার্টারে ফিরে যান। পোস্টিং এর একমাসের মধ্যেই সম্মিলনী পাড়া থেকে স্টেশান চত্তরের ন্যাড়াকালীতলা অবধি মোটামুটি সবাই কানাঘুষোয় জেনে গেল বাকি সব "সাহেব"এর মত উনি নাকি ঘুষ খান না। সিউড়ি একটা ছোট্ট শহর, তাই সবাই সবাই কে চেনে... ঠিক কবে থেকে এই প্রথা চালু হল বলা খুব মুশকিল, তবে পি ডব্লু ডি বা সেচ দপ্তরের যে কোনো কাজে ৫% থেকে ১০% ঘুষ দিতে হবে, সেটা সবাই জানে, এবং টেন্ডারের দামের সাথেই এই হিসেবটা ধরে নিতে হয়!! সমরেশবাবুর দপ্তরে কন্ট্র‍্যাক্টারের মাসিক বিল পেমেন্ট করতে হলে ওনাকে নাকি কিছু দিতে হবে না - এসব নতুন নিয়মে আরো অনেক অধস্তনের সাথে বেজায় চিন্তায় পড়ে গেল দপ্তরের পুরোনো পিওন অজয়ও...। প্রতিটা বিলের ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নিয়ে যেতে ওর পকেটেও ১০০/২০০ টাকা আসে... সরকারের টাকায় কি আর সংসার চলে আজকালকার এই ঊর্ধমুখী বাজারে? এমনিতে এই নতুন সাহেব কে অজয়ের বেশ পছন্দ, সারাক্ষন একটা মায়াময় হাসি লেগে থাকে মুখে, এই একমাসে কোনোদিন মাথা গরম করতে দেখে নি বীরভূমের এই কাঠাফাটা গরমের মধ্যেও... আপনি, আপনি বলে কথা বলেন সবার সাথে, একদিন তো অনেকক্ষন ধরে অজয়ের পুরো পরিবারের খোঁজ নিলেন, ছেলে বড় হয়ে ইঞ্জিনীয়ার হতে চায় শুনে বেশ কিছু টিপস দিলেন, বললেন ".. একদিন আমার কাছে নিয়ে আসুন, আমি ওর সাথে কথা বলে দেখব কোন লাইনে ওর উতসাহ আছে, সেই হিসেবে আগে থেকে তৈরী হওয়া দরকার, নাহলে আজকের যুগে ইঞ্জিনিয়ারীং কথাটা খুব জেনারেল একটা কথা... ওকে এখন থেকেই তৈরী করা দরকার..." 
মূলত অজয়ের থেকেই ওনার ব্যাপারে বিভিন্ন খবর বা গল্প চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল এই ছোট্ট শহরে। সব কিছুর মধ্যে আবার, এই ঘুষ না খাওয়া সমরেশবাবুকে দিয়ে কিভাবে "কাজ উদ্ধার" হবে -এসব চিন্তা করতে লাগল অনেকেই......। 
" আরে টাকা খায় না তো কি, দেখ মদ খায় কিনা, বা মেয়ে চায় কিনা, তাহলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেব.." কন্ট্র‍্যাক্টরস ফোরামের অফিসে সেদিন আলোচনা হচ্ছিল...
"ঠিকই, ব্যাটা নিশ্চই অনেক বড় খেলোয়াড়, হয়ত সবার চোখের আড়ালে সবকিছু করতে চায়, ৭ দিন, ৬ রাতের একটা পাটায়া ট্যুরের অফার দিয়ে দেখা যেতে পারে..."
কিন্তু, জানা গেল যে মদ, মেয়েমানুষ কোনো কিছুতেই নাকি ওনার নেশা নেই!! ঘোরতর সংসারী, ছাপোষা একটা মানুষ, পাসপোর্ট করার কথাই নাকি কোনোদিন চিন্তা করেন নি, পাটায়া তো দূরঅস্ত, জীবনে নাকি বাংলার বাইরেই কোনোদিন বেরোন নি, কি ঘরকুনো রে বাবা!! 

এভাবেই আরো দুমাস কেটে গেল, এক কন্ট্র‍্যাকটারের বিল পাশ করে দেওয়ার পরে সেই কন্ট্র‍্যাকটার সিউড়ি বাজার থেকে নাকি পাঁচ কিলো আম কিনে একটা ঝুড়িতে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছিল " স্যার, আপনি তো আর অন্যদের মত কিছু নেবেন না, তাই আমার বাগানের আমই আনলাম আপনার জন্য!!" সমরেশবাবু দুটো আম নেড়ে চেড়ে দেখে, একবার নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকে মুচকি হেসে নাকি বলেছিলেন "আমি যে আম খেতে ভালবাসি সেটা কি অজয় বলেছে আপনাকে? তবে আলফান্সো আমের ফলন যে আজকাল বীরভূমের গ্রামেও হচ্ছে সেটা আমার জানা ছিল না!!" যাই হোক, এর পরে খুব ঝামেলা করে ঐ কন্ট্র‍্যাকটরের হাতে পাঁচশো টাকা গুঁজে দিয়ে বলেছিলেন "দয়া করে আর আপনার বাগানের আম বা পুকুরের মাছ, ইত্যাদি আনবেন না, ওই সব অর্গ্যানিক খাঁটি জিনিশ কি আর আমাদের মত ভেজাল খেয়ে বড় হওয়া ছাপোষা লোকেদের পেটে সয়?, আমাদের পেট খারাপ হয়ে যায়..."। দরজার পাশ থেকে সব শুনে অজয় কিছুটা যেন লজ্জা পেয়েই সরে গেল.... 

একদিন সন্ধ্যেবেলা পি ডব্লু ডি ব্যাচেলার মেসে তাস খেলার আড্ডায় একদিন এক শুভানুধ্যায়ী বলেই বসল "... নিজে ঘুষ নেবেন না, ঠিক আছে, কিন্তু সাপ্লাই চেইন টা ভাঙবেন না যেন.... তাহলে কিন্তু অনেকেই রেগে যাবে, আপনার পেছনে পড়ে যাবে...."। শান্তিপ্রিয় সমরেশবাবু কি বুঝলেন কে জানে, শুধু বললেন "আরে, আমি সরল সাদাসিধে মানুষ, আমি তো কারুর পেছনে লাগছি না, আমি শুধু বলছি যে বিলে সাইন করতে আমাকে কোনো টাকা দিতে হবে না... বাকি যে যা নিচ্ছে তাতে আমি কি কিছু বলছি?!!"
পাশ থেকে একটা ফচকে নতুন জয়েন করেই ফুলে ফেঁপে ওঠা অচিন্ত্য বলে উঠল ".. তা আজকের যুধিষ্ঠির দা, আপনি নিশ্চই ছোটোবেলায় পড়েছিলেন যে ' অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে...' ওই প্রবাদ টা...?"
- আমি খুব ভীতু মানুষ, ওসব আমার হবে না...
মনে মনে খুব বিরক্ত সমরেশবাবু ঠিক করলেন আর এই ব্যাচেলর মেসে তাস খেলতে আসবেন না.. 

এই ক`মাসে আস্তে আস্তে অজয়ের কেমন যেন ভাল লাগতে আরম্ভ করেছে এই নতুন সাহেব কে। ক্লাশ টেনে পড়া ছেলেটাও ওর সাথে কথা বলে খুব খুশী, আজকাল ইঞ্জিনীয়ারীং এরও যে এত এত শাখা আছে ওর জানাই ছিল না, সব শুনে এখন ওর ইচ্ছে মেরিন ইঞ্জিনীয়ারীং পড়তে যাওয়ার, সমরেশবাবু ইন্টারনেট ঘেঁটে অনেক কিছু ছেলেকে পাঠাচ্ছেন। মাঝে মাঝেই কিছু টাকা জোর করে ওর হাতে গুঁজে দিয়ে বলেন ছেলেকে ভাল করে পুষ্টিকর খাওয়ার খাওয়াতে! তাই ফাইল চালাচালি বাবদ উপরি পাওনা কিছু কমে গেলেও অজয় আজকাল খুশীই থাকে নতুন সাহেব আসার পরে...সম্পর্ক টা এখন অনেক সহজ, বয়সে বড় বলে স্যার অজয়কে সম্মানও করেন, সম্পর্ক টা এখন সাহেব-পিওনের বাইরে বেরিয়ে অনেক সহজ, একদিন কথায় কথায় অজয় একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করেই বসল "স্যার, সবাই বলে আপনি কোনো ঘুষ নেন না, আপনি জীবনে সত্যিই কোনোদিন কোনো টাকা নেন নি?"
- আরে, এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ শোরগোল দেখতে পাচ্ছি, এটা নিয়ে এত হৈ হট্টোগোলের কি আছে? যেদিন ইঞ্জিনীয়ারীং পাশ করে চাকরীতে ঢুকি, আমার বাবা একটা কথা বলেছিলেন, আজও আমার কানে বাজে - 'যদি কোনোদিন ঘুষ খাও, এটা নিশ্চিত করে নিও যে পরের দিন থেকে সারা জীবন যেন আর চাকরী করতে না হয়'!! তাই যে কোনো ঘুষ নেওয়ার পরিস্থিতি এলেই আমি নিজেকে বলি ' এই টাকাটা নিয়ে আমি কি কাল থেকে চাকরী ছেড়ে রিটায়ার্ড জীবন কাটাতে পারব? আমার কি আর চাকরী করে খাওয়ার চিন্তা করতে হবে না? সেটা কোনোদিনই হয় না বলে প্রতিবারই আমি পিছিয়ে আসি...আসলে ঘুষ খেয়ে ধরা পড়লে যদি আমাকে জেলে পাঠায়, আর তারপরে আমাকে জেলের ওই খাবার খেতে হবে ভাবলেই পিছিয়ে আসি, অন্যদের মত আমার অত স্কিলও নেই!!" বলে একটা কিরকম যেন সরল অসহায় হাসি হাসলেন সমরেশবাবু... 

সমরেশবাবুর একটাই নেশা - ফিল্টার উইলস সিগারেটের!! সিগারেটের অন্য ব্রান্ড মুখে তোলেন না, সেটা যদি রথম্যান্স বা ডানহিল বা ওইরকম দামী কোনো ব্রান্ডও হয়, তাহলেও...কথায় কথায় বলেন " পুরুষ মানুষ তো!! একটা কিছু নেশা তো রাখতেই হয়!!" কলেজ জীবনে বিড়ি খেতে হত বাবার মেপেঝুকে দেওয়া টাকা থেকে বাঁচিয়ে নিজের হাতখরচ যোগাড় করতে, বাধ্য হয়ে বিড়িই ভরসা... ফিল্টার উইলস তো দূরের কথা, অন্য কোনো কমদামী সিগারেট কেনারও পয়সা থাকত না, তাই চাকরী করে একমাত্র ওই নেশাটাই ধরে রেখেছেন এবং ওই লাল-সাদা উইলস ফিল্টারের প্যাকেট টা দেখলেই মনটা কেমন যেন হূ হূ করে ওঠে!! শান্ত, নির্বিবাদী দাম্পত্য জীবনে এই একটা ব্যাপারেই বৌ এর সাথে সমরেশবাবুর ঝামেলা লেগে থাকে প্রায় প্রতিনিয়ত... বিয়ের এত বছর পরেও সিগারেটের গন্ধটা কিছুতেই যেন সহ্য হয় না ওনার বৌ এর.... কিন্তু হাজার ঝামেলা করেও এই বদভ্যাস টা কিছুতেই ছাড়াতে পারেন নি। মাসকয়েক পর থেকে অনেক কন্ট্রাক্টারই কিছুটা জেনে বুঝেই যেন ওনার অফিসে এসে কথাবার্তা বলার পরে আধা প্যাকেট বা একটা গোটা প্যাকেট ফিল্টার উইলস ওনার টেবিলে ফেলে রেখে যেতে লাগল!! সমরেশবাবু প্রথম দিকে সিগারেটের আসল মালিক কে খোঁজার খুব চেষ্টাও করতেন, তারপরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, মানুষের 'ভালবাসার দান' হিসেবে রেখে দিতেন, মাঝে মাঝে অজয়কে ডেকে হয়ত পুরো প্যাকেট টাই দিয়ে দিতেন, বলতেন " যান, আজ রাতে খাওয়ার পরে মৌজ করে ফিল্টার উইলস খান, বিড়ি মুখে তুলবেন না, মুখে বাজে গন্ধ লেগে থাকে...বৌ নিশ্চই খুশী হবে..."। 

এমনিতে স্বভাবশান্ত সমরেশবাবুর চেম্বার থেকে সেদিন হঠাত প্রচন্ড জোরে চীতকার, তর্কাতর্কি শুনে অজয় ঘাবড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখল সমরেশবাবু আর শহরের প্রভাবশালী কন্ট্র‍্যাকটার বংশীর মধ্যে তুমুল ঝামেলা, কোনোভাবে ক্রুদ্ধ বংশীকে ঘরের বাইরে বের করতে করতে বেশী কিছু না বুঝলেও অজয় শুধু এটুকু বুঝল যে কোনো একটা নতুন কাজের বরাত কেন বংশীকে দেওয়া হল না, সেসব নিয়ে ঝামেলা.... অজয় এমনিতে মাঝে মাঝে সাহেবের কোয়ার্টারে এটা সেটা দেওয়া নেওয়া করতে যায়, সেই সুত্রে ম্যাডামের সাথেও দু একটা কথা হয়, মাঝে মাঝে আবার চা খেয়েও যেতে বলেন... সেদিন সাহেবের এই উগ্র রূপ দেখে একটু চিন্তিত হয়েই বিকেলে ম্যাডামকে গিয়ে বলল - " স্যারের মনে হয় কাজের চাপ খুব বেড়ে গেছে, ওনাকে দুদিন ছুটি নিতে বলুন আপনি..." তারপরে অফিসের সব ঘটনা খুলে বলল...
এর দুদিন পরে, হঠাত একদিন অফিসের দেওয়ালে কাঁচা হাতের লেখায় একটা কার্টুন পোস্টার পড়ল - এক চশমা পরা লোক একহাতে একটা ফিল্টার উইলস সিগারেটের লাল-সাদা প্যাকেট, আর এক হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট!! সাথে ক্যাপশানঃ 

"সবাই জানে, আমি ঘুষ খাই না
আমি শুধু সিগারেট খাই...
বিশ্বাস করতে মন মানে না
আর কি কিছুই খাই না? হয়ত কেউ জানে না...." 

অফিস যাওয়ার পথে ওই কার্টুন পোস্টার টা দেখে সমরেশবাবু এক ঘন্টা অফিসের দরজা বন্ধ করে বসে রইলেন, তারপরে অজয়কে ডেকে পাঠিয়ে খুব শান্ত ভাবে প্যান্টের পকেট থেকে একটা ফিল্টার উইলসের প্যাকেট আর লাইটার বের করে হাতে দিয়ে বললেন " আজ থেকে আমার জীবনের একমাত্র নেশা - এই সিগারেট খাওয়াও ছেড়ে দিলাম সারা জীবনের মত, এটা শহরের সবাই কে একটু বলে দেবেন তো!!" 

ব্যাপার স্যাপার দেখে অজয় আরো ঘাবড়ে গিয়ে সাহেবের কোয়ার্টারে গিয়ে ম্যাডামকে বলল "ম্যাডাম, স্যার কিসব বলছেন!!, কন্ট্র‍্যাক্টারের সাথে ঝামেলা করে সিগারেট খাওয়া নাকি ছেড়ে দেবেন...এক্কেবারে পাগল!! আপনি দেখুন একবার!!"
ম্যাডামের মুখে একটা হালকা রহস্যময় হাসি ভেসে উঠল, অজয় তার কিছুই বুঝতে পারল না...





_____________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া 
______________________________________________
১/ উত্তম, তুমি আগে আগে বেশকিছু সংখ্যা আমাকে পাঠিয়েছ কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী আমার কোনোটাই ঠিক মতো পড়া হয়নি।তার জন্য আমি তোমার কাছে অপরাধী। কিন্তু গত কয়েকটি সংখ্যা মন দিয়ে পড়েছি।পড়ে খুব ভালো লেগেছে। সর্বোপরি তোমার সম্পাদকীয় উপলব্ধিগুলো খুবই নির্ভেজাল।এত ছোট বয়সেও এত সাহসী এবং অকৃত্রিম উপলব্ধি আমাকে মুগ্ধ করেছে। কয়েকটি কবিতা বেশ ভালো।গত সংখ্যায় বিপুল চক্রবর্তী,ডরোথী দাস বিশ্বাস ভালো লাগলো।ময়ূখ দত্তের ডাইরীর ছেঁড়া পাতা বেশ ভালো। অনিকেতের বন্ধুদের জন্য একরাশ ভালোবাসা। পুরুলিয়ার মাটি এক অকৃত্রিম মননের উত্তরাধিকার তা তোমরা প্রমাণ করেছ সুদক্ষতায়।
                          --------কবি অনিমেষ মণ্ডল


২/রূপকধর্মী সংক্ষিপ্ত সম্পাদকীয়।
কবিতা গুলি এবং অলঙ্করণ প্রশংসনীয়। ডরোথী দাশ বিশ্বাসের কবিতা তিনটিই অপূর্ব। সব মিলিয়ে ভালো লাগলো খুব।

চিত্র প্রদর্শনশালা এবার বিস্মিত করলো। এক ইতিহাস এনে হাজির করল চোখের সামনে। অপূর্ব!!
                          -------কবি সুনৃতা রায়চৌধুরী


৩/ সম্পাদকীয়👌👌👌
প্রত্যেকটি কবিতা ভীষণ সুন্দর।
 
ছবিতে, মন্তব্যে অরন্ধনের বৈচিত্র্যপূর্ণ সাজ দারুণ লাগলো।
 
ছবিগুলো দেখছি আর ভাবছি--- না থাকলে ভিতরে গল্প, হয় না জীবন্ত ছবি, গল্পের টানে ধরা দেয় সবুজ সজীব ভাব, গল্পকথা না লিখলে কে জানতো এত কাহিনী ছিলো!
                         ---------কবি ডরোথী দাশ বিশ্বাস


৪/অনিকেত বন্ধুদের গ্রুপে আগেই পড়লাম। সম্পাদকীয় ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রাসঙ্গিক হয়েছে। ভালবাসা নিও।
                           -----------কবি সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়


৫/"অরন্ধন"-এর বর্তমান সংখ্যায় শ্রী সন্দীপ কুমার-এর আলোকচিত্রগুলি দেখলাম। 
প্রথম দর্শনে একটা ঝাঁকুনি লেগেছিল এই কারণে, যে, শিল্পীর আলোকচিত্র বিষয়ে যে পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছিল, সংস্কারবশতঃ তারই একটি প্রলম্বিত অধ্যায় এবারে দেখবো বলে ভেবেছিলাম। 
তারপর, মন প্রস্তুত হবার পর, দেখলাম শিল্পীর নতুন অধ্যায়, নতুন মেজাজ। এক কথায় বলবো শিল্পীর নবজন্ম। 
আলোকচিত্রগুলির বিষয়, আর তাদের গাঢ় রঙ, ঘন আলোছায়া, সাহসী মুদ্রা -- সব মিলিয়ে অনবদ্য।
                      ---------গল্পকার স্বপন চক্রবর্তী

৬/
* ধন্যবাদ। প্রথমে সঠিক শব্দটি,
 ' বিড়ুল ', জানানোর জন্য। তার পরে এসেছে শব্দার্থের বিস্তার।
• এবার আমার অভিজ্ঞতা:
______
* এই ধূলি ঝড়ে তৈরি হয় ছোট ঘূর্ণি---অন্তত আমার দেখা বাস্তব স্মৃতি তাই মনে করাচ্ছে।
* এই বিড়ুলের সময়কাল, ফাল্গুন অন্তে, পুরো চৈত্র- বৈশাখ। অবশ্য বৈশাখী ও কালবৈশাখী তো মুদ্রিত পাঠে বহুল প্রচারিত।
* আমার অভিজ্ঞতার সাথি হতে পারে কি পুরুল্যার বিড়ুল।
* এই ঝড় আকাশ ছোঁয়া। এবং ঝরা পাতারা বাতাসে নিবেদিত। অনেক উঁচুতে ওড়ে। আমাদের কিশোরকাল এই ঝড়কে ডাকত ভুত ঝড়। দিগন্ত বিস্তারি মাঠে, আপন বুকে থুথু দিয়ে, রামনামে ভুত তাড়াতাম ( রাখালিয়া স্মৃতি)।
______
* সম্পাদকের পাঠানো বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাসহ সমস্ত বিষয়টি পড়ে
বড়ই প্রীত হলাম। ভালবাসা জানাই সকলকে। বর্তিকার বেড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সঙ্গকে আশীর্বাদ করি।
                     ---------অশোক কুমার কুন্ডু, প্রাক্তন কর্মী আনন্দবাজার পত্রিকা 



৭/সম্পাদকের উপস্থাপনায় কুনোব্যাঙের উপর যে সম্পাদকীয় তা চমকে দিল। এমন সহজ ও অসামান্য লেখাটির জন্য অভিনন্দন।

সন্দীপ কুমারের ছবিগুলোও এক লহমায় আমাদের নাগরিক শিল্প চেতনার অন্তরে টেনে নিয়ে যায়। কুর্নিশ রইলো।
                          ------------বিজয়াদিত্য চক্রবর্তী 

৮/অসাধারণ সব চিত্রকলা।
                        ------------কবি তৈমুর খান


৯/ সত্যিই অসাধারণ। ----------সমর


১০/অসাধারণ ছবিগুলো। একদম জীবন্ত।
                                  ----------কবি সায়ন্তন ধর 

১১/সন্দীপদার ছবি নিয়ে নতুন কিছুই বলার নেই। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো আগেই দেখেছি। অসাধারণ আলোর কাজ।
                                  ------------দেবমাল্য মাহাত 
______________________________________________

                                           আমাদের বই














সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ :  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পেন্টিং, আন্তর্জাল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com





 

মন্তব্যসমূহ

  1. কবিতায় সমৃদ্ধ হোলাম।ছোট গল্পটিও বেশ।এককথায় অনন‍্য সুন্দর লাগলো ভাই।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪