তৃতীয় বর্ষ ।। চতুর্বিংশতি ওয়েব সংস্করণ ।। ২৮ ফাল্গুন ১৪২৯ ।। ১৩ মার্চ ২০২৩



কুনো ব্যাঙের তুলনায় সোনা ব্যাঙের লাফ দেওয়ার ক্ষমতা বেশি বলে দিব্যি বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায় সোনা ব্যাঙ। আদরও পায় অনেকের। ভোগও বেশি করে সে। আর কুনো ব্যাঙের লাফানোর ক্ষমতা কম। তাই তাকে মুখগুঁজে থাকতে হয় অন্ধকার কুঠুরিতে। পোহাতে হয় এর তার লাথির আঘাত।
    কুন্তি পিসি চটি পায়ে হাঁটাচলা করে। নীলচে শাদা শাড়ি। সোনা ব্যাঙকে আদর করে খুব। আদর খেতে খেতে তার চামড়া মসৃণ। আর কুনোব্যাঙকে যতকিছু বিষাক্ত সঞ্চয় করে রাখতে দেওয়ায় তার শরীর খসখসে। সারা গায়ে গুটি।
             হে পার্থ, তুমিই বলো, কুনো ব্যাঙের এইমতো হয়ে ওঠার দায় নেই, কুন্তি পিসির?


উত্তম মাহাত, সম্পাদক 


______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
হাবিবুর রহমান এনার / বিপুল চক্রবর্তী / সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় / অনিল মাহাতো / ডরোথী দাশ বিশ্বাস / উৎপল চট্টোপাধ্যায় / ময়ূখ দত্ত / 
______________________________________________



হাবিবুর রহমান এনারের কবিতা 

১.
অন্তরীক্ষে

পথে-প্রান্তরে অল্প কম্পন, অল্প দুঃখের ছায়া, দুরাশার
কলুষ

তুমি আমাকে রোখতে বললে-বনভূমিজুড়ে ছড়ালো রোশনাই : তোমার মাহাত্ম্যের আবির্ভাব হল

আমি আনত মস্তকে ছবি এঁকে চলেছি শুধু তোমারই- মাহাত্ম্যের অন্তরীক্ষে!




২.
বুভুক্ষা 

রূপকের অন্তরালে বিনষ্ট মানুষের মুখমণ্ডল, 
ক্লান্ত, মরাটে, আরক্ত পাতার মতো— দুঃখের- অংশু-তিমিরে একাকার!

ভ্রান্ত সাদৃশ্যের মতো ধুলোমাটির গন্ধ বয়ে যায়, 
সকল সৃজন শূন্যবুকে ফুটে ওঠে; আর চায়ের-
স্টলে বিবিধ গালগল্প আঁধারে তলায়!

কাল্পনিক বেড়াজাল অদৃশ্যে আড়াল তৈরি করে, স্তিমিত বিষাদ-বিষন্নতার দেহে,গরম ভাতের গন্ধ- ছেয়ে যায়,শুধু ক্ষুধা জেগে থাকে; অনন্ত বিক্ষুব্ধ 
ক্ষু-ধা!

মাইরি-ডিজিটাল উন্নয়নের জোয়ার চাই না, চাই; নিশ্চিন্তে দু'বেলা দু'মুঠো ডাল-ভাত !




৩.
একরোজ

একরোজ-বৃক্ষ পাতা
কুসুমিত হয়

প্রস্ফুটিত ভরা যৌবন

পরাগের ঘ্রাণে বিহ্বল
বৃক্ষ দেহ

কুণ্ঠিত নর্তন যত চলে
পবনের সঙ্গে

শাখা-
কাণ্ড আর শিকড়ের-
জীবন সৃজন









বিপুল চক্রবর্তীর কবিতা 

১.
ছিন্ন

আমি পাহাড়ের কেউ নই 
তারই মতো তবু চুপ 
ঘাড় উঁচু ক'রে সারাদিন 
দেখি আকাশের রূপ

আমি তটিনীর ঢেউ নই 
ভিজে থাকা তার তীর 
নীরবে কেঁদেছি সারারাত 
বুক জুড়ে ক্ষত, চিড়

আমি বনানীর কেউ নই 
বাঁচি নগরের ভীড়ে 
সুরে সুরে তবু খুঁজে মরি 
বনানীর পাখিটিরে



২.
কী কথা লিখছে নদী 

হয় সে শুকিয়ে মরবে নয়ত বা পাগলিনী হবে 
তার চলা রোধ ক'রে আষ্টেপৃষ্ঠে ওভাবে বেঁধো না 
এই সাবধানী-কথা কারা যেন বলেছিল কবে 
আমরা শুনিনি, শুনলে আজ এই অসীম বেদনা কপালে ছিল না বুঝি, অর্ধ পাগলিনী নদী আজ 
ভেঙে পড়ে যত বাঁধ ভেঙে পড়ে ঠুনকো সমাজ

নদীর কথাও শোনো, তুমি তার হাত ধ'রে থাকো 
হাত ধ'রে থাকা মানে হাত ধ'রে রাখাও তো বটে 
মাতা ব'লে ডাকো তাকে আর-বার কন্যা ব'লে ডাকো কী কথা লিখছে নদী, প'ড়ে নাও, প্লাবনের তটে এখনও সময় আছে, ফেরো তুমি ফেরাও নদীকে 
চেনো নদী-মৃত্তিকার দেশ, চেনো এ নিরবধিকে








সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা 


১.
থাকবো কেন

থাকবো কেন, তোমায় ব্যতীত?
হবো মীরার মতন, হবো রুমি। 
অবিভক্ত করবো এই বেজন্মভূমি। 
আশেকের মাশুকা হবেই হবে ‘তুমি’। 
অথবা স্বপ্নহীন বেছে নেবো ঘুমই। 
থাকবো কেন, আহাম্মক, এমন ব্যথিত?

থাকবো কেন, কেন থাকবো, 
তোমায় ব্যতীত?



২.
যতবার তুমি

যতবার তুমি পড়বে মনে
ততবার হবো পদ্য। 
যতবার তুমি শ্বাসচুমু দেবে  
ততবার আমি বধ্য। 
যতবার তুমি হাতেহাত রাখো 
ততবার জাত-সদ্য। 
ততবার হই প্রেমের কবিতা,
ভীষণ সহজবোধ্য।



৩.
তুমি

আমার পূর্ণতার প্রমাণ তুমি
আমার নগ্নতার আড়াল তুমি
আমার ঘৃণ্যতার হিসেব তুমি
আমার ক্রোধের উৎকোচ তুমি
আমার বৈরিতার আখ্যান তুমি
আমার আলস্যের সামগান তুমি
আমার অক্ষমতাজ্ঞান তুমি
আমার প্রেমের বৈরাগ্য তুমি
আমার বিরহের পদাবলী তুমি
আমার কবিতার বর্ণমালা তুমি
আমার বৈভববিভা তুমি
আমার নিস্বঃতার সাক্ষ্য তুমি
আমার জন্মের সিদ্ধান্ত তুমি
আমার মৃত্যুর সংবাদ তুমি



৪.
জন্মভূমি

একি আমার আয়না নাকি তুমি?
রাত্রি তবু একক ও নিঃঝুমই। 
চাঁদ খেয়ে যায় আঁধারজাত কুমির। 
তোমার বুকেই আমার জন্মভূমি।



৫.
আলিঙ্গন

তোমার ঠোঁটের বাঁকে
কিছুটা থমকে আছে, “নাঃ!”
আমার চোখের ভাষে
তোমার আখর ভাসে, “বাঃ!”
তোমার অবিশ্বাসে
লজ্জা ঠিকরে পড়ে, “যাঃ!” 
আমার বাহুর ভাঁজে
আশরীর জেগে ওঠো, “আঃ!”



৬.
ভাঙন

ভাঙনই প্রেমের সম্মাননা। 
অবজ্ঞা, আঘাত, অভিমানও না…
তুমি তা জেনেও তবু জানো না। 
পিছু ডাকে, তবু তুমি টানো না।
ছোবলের দাগ নাকি গহনা…
এতো মানো, এটা কেন মানো না?

ভাঙনই প্রেমের সম্ভাবনা।







টুসু কথা

অনিল মাহাতো 

আমাদের পরব-পালি আসে ফি-বছর 
আতপ চালের গুঁড়িতে আল্পনায়
টুসু মা থকেন একমাস তুলসী মঞ্চের পাশে 
তিরিশ দিন একটি করে ফুল দ্যায় কিশোরীরা

যে ধান ছড়ানো ছিল শয্যক্ষেতে 
অঘ্রাণে ঘরে এলো মাথায় চড়ে

ধান গাছ মরে গেলে বীজকে বাঁচিয়ে রাখে তুষ 
তুষই তো টুসু দেবী বীজের রক্ষাকর্ত্রী
টুসু পরব শষ্যদেবীর স্মরণ উৎসব

আসছে বছর ধানকে ছড়িয়ে দেবো শষ্যক্ষেতে 
সূর্যদেবের কৃপায় বৃষ্টি মাখবে মাটি 
জলের অন্য নাম জীবন
জলেই টুসু বিসজন।

মকর সিনান করে টুসু ভাসাবো জলে 
টুসু মাকে নতুন করে পাবার স্বপ্ন, সাধ নিয়ে। 
কাঁসাই নদীর বাঁকে শিমুলিয়া ঘাটে টুসুমেলা
নারী কন্ঠের কাকলীতে মুখরা হয় মেলা 
নাচে গানে উজাড় করে নারী মনের বাসনা
"ছটুই বিহা দিলি মা কেনে 
আমি ঝাঁপ দিব নদীর বানে।"
কাঁসাই নদীর ঘাটে
একগলা ভিড়ের মাঝে কিশোরীর টুসু গান 
লহকে লহকে ভেসে আসে। 
আসতেই থাকে।








ডরোথী দাশ বিশ্বাসের কবিতা 


১.
জাদু-ঘর

না---
জানতাম না,
কতটুকু কর্তব্য সম্পাদন করতে পারবো,
তা নিজেও জানতাম না।

তোমার নিজের সংসারে
তুমি ছুটি চাইবে কার কাছে?
ক্লান্ত মন
টানতে না পেরে
বিবশ হয়ে শয্যা নিতে শেখেনি বুঝি?

সবার অলক্ষ্যে খানিকটা সময় কাটিয়ে দাও
কাজের সীমারেখায় রাখো চোখ,

ফেলে রাখো হাসি কথা গান,
ওসব আড্ডাবাজেদের জন্য।

তোমার বাড়িতে কয়টি কক্ষ আছে-
তা তুমি নিজেও জানো না।
জানালায় কাচ,
মশা আটকানোর নেট আছে কি নেই
পর্দা সরিয়ে দেখার অবকাশ কোথায়!

কিন্তু তুমি জানো,
জানালার ওপারে তুনগাছ
সাদাফুলে ভরে গেছে,
আর কিছুদিন পরে
ঘোড়ানিমও আকাশরঙা-ফুলে ভরে যাবে।
তারও পরে ফল।
টিয়াপাখির ঝাঁক আসবে দিনে
রাতে বাদুড়।

এই দেখো--
কোথায় ক্লান্তি, কোথায় কি!
মন এখন ভাবতে বসেছে পূর্ণোদ্যমে।
এই মুহূর্তে তুমিই তোমার সাথি।
শীতল ছায়াঘরের এটাই জাদু।





২.
সোজা নয়---

কোন বন্ধন নেই,
তাই বুঝি ভীষণ ঝরঝরে লাগছে।
কোন কথা নেই,
অমূল্য সময়টা বেঁচে যাচ্ছে। 

কত কাজ
শুধুই নিজের জন্য
ঠান্ডা মাথায়
শুধু আখের গোছানো।

যা খুশি তাই
ভেবো না বলা যায়
নীরব থেকে গেলে
ভেবো না পেয়েছে ভয়।

ভুল ভুল ভুল---
সমস্ত অনুমান
এতোটা সহজ হলেও
উন্নত গুণমান।

নতুনে গলাগলি
কথায় নজরকাড়া।
অতোই সোজা---
অপরকে বুঝতে পারা?





৩.
কেন যে---

যত ঘাত, তত প্রতিঘাত
তবু কেন ভেঙে যায় মন
স্থিতিস্থাপকতা নেই কেন
তরুনাস্থিতে গড়া যেমন

যদি বেঁকে যেত আলোকের
প্রতিসরণের সূত্র ঠিক মেনে
সংযোগ ক্ষীণ হতে হতে
বিচ্ছেদ ঘটুক জীবনে

সোজা কথা সোজা নয় বলা
রাতদিন কি যে টানাপোড়েন
দর্পণে দেখে না যে মুখ
নিজেকে কি চিনতে পারেন

না কেটেও ছোট করা যায়
দাঁড়িয়ে থেকো তুমি ভাই
শ্যাম যদু মধু যাকে খুশি
গুরুত্ব তাকে দিয়ে যাই।

তবুও ফিরে তুমি এসো
নির্লজ্জের মত বারেবারে
সত্যি কি বেহায়া সে মন
উচ্ছ্বসিত হতে চায় প্রহারে








বর্ণভেদ 

উৎপল চট্টোপাধ্যায় 


তুমি খোঁপা ভাঙলে 
ছড়িয়ে গেল আমার শরীর 
এমন প্রিয় মুখে 
প্রবল অযত্নের মতো 
বুকের উথ্থানে নগ্ন ভাঁজ 
ছায়াহীন তুমি দাঁড়ালে 
দৈহিক বিযুক্তি রেখায় 
মিশে গেলো স্বতঃস্ফূর্ত জিভ 
সলজ্জ ভঙ্গিটির পুরুষ আলিঙ্গনে 
আমি তখন দুরন্ত যুবক 
নিস্তরঙ্গ সন্ধ্যার আকাশে 
এখন আর কোনো স্মৃতি নেই 
শুধু চাঁদ 
শুধু আলো 
তুমি পথ ভাঙলে 
অন্ধকারে বোঝা গেল
আমাদের বর্নভেদ









ডাইরীর ছেঁড়া পাতা

ময়ূখ দত্ত 

ছোটোবেলায় আমরা সবাই কিছু কিছু খেলা খেলতাম, যেগুলো পরবর্তীকালে বড় হয়ে আর কাউকে খেলতে শুনি না, বা দেখি নি। যেমন কুমীরডাঙা, চু কিত কিত, বাঘবন্দী, ষোল ঘুঁটি...আরো কত..ছোটোবেলায় প্রায় সব খেলাই আমরা পাড়ার ছেলে-মেয়ে, সবাই একসংগে খেলতাম, মারপিট, ঝগড়াঝাটি সবই হত.... এই খেলা গুলোর মধ্যে যে মজা আছে, যে উত্তেজনা আছে, সেটা আমাদের পরিচিত ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল ইত্যাদির থেকে খুব আলাদা হয়ত নয়, তবু বড় হওয়ার সাথে সাথে ওই খেলাগুলো কেমন যেন কোথায় হারিয়ে যায়... বন্ধুবৃত্ত থেকে ক্রমশঃ সরে যায় একটা সময়ে পাড়ায় একসাথে খেলতে থাকা সন্ধ্যা, লতা, বুলটি, মানসী, শ্যামলীরা... শৈশবের সাথেই হারিয়ে যায় ছেলে, মেয়ে নির্বিশেষে মজা করে একইসাথে খেলার আনন্দ!! বড় হয়ে এমন কোনো খেলা দেখতে পাই না যে যেটা ছেলে-মেয়ে একসংগে খেলে....সরল, সাদাসিধে খেলার সাথে কিছুটা জটিল নিয়মের প্রথাগত খেলার তো পার্থক্য থাকবেই, তবু আমার মনে হয় যে বড় হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্নভাবে আমাদের মনের গভীরে যে লিংগবৈষম্যের বীজ ঢুকে যায় নিজেদের অজান্তেই, সেটা একটা বড় কারন..... আজকের দিনে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েরা যখন একইভাবে যে কোনো সমস্যার সমাধান করে, সংসারে স্বামী-স্ত্রী দুজনে যখন ঘরে-বাইরে সব কাজ মিলেমিশে সামলায়, অফিসে ছেলেরা-মেয়েরা যখন একই মিটিং রুমে বসে কালেক্টিভ ডিসিশান নেয় একই টিমের কর্মী হিসেবে, সেখানে আমরা অনেকেই হয়ত ভেবে দেখি না যে কেন ছোটোবেলায় লুকোচুরী খেলার মত ছেলে-মেয়েরা একই টিমে একইভাবে ফুটবল খেলতে পারবে না? কেন কল্পনাতেও আসে না যে রবিচন্দ্রন অশিনের বলে ঝুলন গোস্বামী বা মিতালীরাজ ছয় মেরে টিম কে জেতাচ্ছে!! সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে আজকাল আমরা gender equality, inclusive atmosphere এর কথা বলি, তাহলে ছেলেদের ফুটবল আর মেয়েদের ফুটবল আলাদা হবে কেন?
জানি, এক্ষুনি অনেকেই হয়ত শারীরিক ক্ষমতার তফাত ইত্যাদি অনেক প্রসংগ টেনে আনবেন.... আচ্ছা এই শারীরিক তফাত গুলোকে জয় করেই তো আমাদের সমাজ এগোচ্ছে (ধীরে ধীরে হলেও) প্রতিদিন বিভিন্ন স্তরে, তাহলে খেলায় এই তফাত কেন? 

প্রশ্নগুলো আগেই ঘুরত মাথাতে, মনে আছে মাস্কাটে থাকাকালীন আমাদের বঙ্গীয় পরিষদের পিকনিকে mixed gender cricket নামে একটা খেলার খুব চল ছিল, প্রতি টিমে চারজন মেয়ে থাকতেই হবে, কোনো মহিলা ব্যাটসম্যান কে একজন মহিলা বোলারই বল করতে পারবে, মেয়েরা ব্যাটে বল লাগেতে পারলেই স্কোরবোর্ডে এক রাণ যোগ হবে, দৌড়ে রাণ নিলে সেটা দ্বিগুন হয়ে যাবে, ইত্যাদি অনেক নতুন নিয়ম কানুন...ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে হৈ হল্লা, বেশ মজা হত কিন্তু!! অনেকটা সেরকমই একটা খেলার সন্ধান পেলাম আজ, আর তাই এত কথা লেখা... 

খেলাটার নাম "কর্ফবল (korfball)"। হল্যান্ডের খুব পরিচিত খেলা..."Cousin of Basketball" নামে পরিচিত এই খেলাতে আটজনের টিমে চারজন করে ছেলে আর মেয়ে থাকে, মেয়েদের সামনে 'গার্ড' শুধু মেয়েরাই দিতে পারে, বল নিয়ে ড্রিবলিং করা বা দৌড়ানো বারন!! এই নিয়মগুলো ছেলে-মেয়েদের শারীরিক বৈষম্যজড়িত প্রতিবিন্ধকতা কে জয় করে এগিয়ে যাওয়াতে সাহায্য করছে। এখন পৃথিবীর প্রায় ৭০ টা দেশে এই খেলা হলেও হল্যান্ডের বাইরে খুব একটা পরিচিতি পায় নি, অলিম্পিকেও স্থান পায় নি...আরো একটা নতুন জিনিশ আসতে চলেছে এই খেলাটায় - ট্র‍্যান্সজেন্ডার দের জন্য... আমরা আস্তে আস্তে ভিন্ন চিন্তাধারায় উত্তীর্ণ হচ্ছি, আজকাল যে কোনো স্বীকৃত খেলাধুলায় এই ট্র‍্যান্সজেন্ডার রা খেলতে পারে, কিন্তু একটাই শর্তে, "ট্রান্সজেন্ডার মেয়ে" দের টেস্টোরেস্ট্রন এর মাত্রা কমিয়ে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার নীচে নামিয়ে আনতে হয়, যা অনেক সময়েই অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। জানি না কতজনের মনে আছে, দ্যুতি চাঁদ বা পিংকি প্রামানিকের গল্প!! টেস্টোস্টেরানের মাত্রা বেশী হলে তাকে 'মেয়ে' হিসেবে গ্রাহ্য করা হয় না, মেয়েদের প্রতিযোগিতায় তাকে খেলতে দেওয়া হয় না... এইসব থেকে ওপরে উঠে খেলার আনন্দ কে প্রাধান্য দিতে, এই "কর্ফবল" খেলায় এখন নতুন নিয়ম আসতে চলেছে যাতে আটজনের টিমে, চারজন মেয়ে থাকবে আর চারটে "open gender slot" থাকবে, যেখানে ট্রান্সজেন্ডাররাও খেলতে পারবে।
যে কোনো খেলা, তা সে গ্রাম্য খেলা কাবাডি বা খোখো ই হোক বা ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবলই হোক, আমাদের অনেককিছু শেখায় ছোটোবেলা থেকে -  সহনশীলতা, নিয়মানুবর্তিতা, সকলে মিলে কাজ করা, হারতে শেখা, হেরে জিততে শেখা, নির্দেশ মেনে চলা ইত্যাদি জীবনের প্রচুর শিক্ষা আমরা পাই খেলার মাঠের মধ্যে থেকে। যে কোনো সমাজের গঠন অনেকগুলো পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, খেলাধুলা সেরকমই একটা বড় পিলার। সেই পিলারের গা থকে আমরা যদি লিংগবৈষম্যের গন্ধটাকে কিছুটা হলেও সরাতে পারি, আশার আলোটা স্বাভাবিকভাবেই আরো উজ্জ্বল হয়। 

আমি তাকিয়ে রইলাম খেলা হিসেবে কর্ফবলের জনপ্রিয়তার দিকে, আমাদের ক্রমঃ উত্তরনের দিকে!!




______________________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া 
______________________________________________

১/পড়লাম তোমার এবারের সম্পাদকীয়টি... আমার একটাই অভিযোগ তোমার বিরুদ্ধে... সেখানে, সেই বিতর্কের মধ্যেই, তোমার এই কথাগুলো বলনি কেন?... গালাগালি খাবার ভয়ে?...  যত গালাগালি, সব কায়েমী স্বার্থ রক্ষাকারী ধান্দাবাজদের, সব কি একাই খেতে হবে আমাকে?... তোমাদের কাউকেই পাশে পাব না কোনদিনই?... তোমার এই ব্লগ ক'জন পড়বে?... ...
                             ---------কবি অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র


২/অমূল্য কবিতা পড়ার জন্য, কবিকে সম্মানিত করার জন্য কিছু মূল্য ধরে দিতে হয় বৈকি! প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয়।
কবির তালিকায় গীতশ্রী দি'র নাম পেয়ে উৎফুল্ল হলাম। শ্রীভূষণের কবিতাটি শিক্ষণীয় এবং সুন্দর।
আমার বাবা রাঢ় বঙ্গে কর্মসূত্রে থাকার জন্য তাঁর কাছে বিড়ুল সম্পর্কে জেনেছিলাম আগে। আর তোমরা তো প্রত্যক্ষ করো প্রতি গ্রীষ্মে! এর পৌরাণিক ব্যাখ্যা জেনে ভালো লাগলো। বর্তিকাও এই শিশুকাল থেকে প্রকৃতি পরিবেশ চিনছে। ওর অনেক উপকার হচ্ছে, সেটা বড়ো হয়ে বুঝতে পারবে।
           দীপাংশু মাহাতোর আলোকচিত্র আগেও দেখেছি অরন্ধনের পাতায়। এবারের পলাশ রাঙিয়ে দিল মন।
                             ----------কবি সুনৃতা রায়চৌধুরী


৩/পলাশের ছবি গুলো অসামান্য।
                                -------------কবি মধুপর্ণা


৪/পুরো পত্রিকায় তোমার লেখাটাই সবচেয়ে সুন্দর।
                            -----------গল্পকার এনাক্ষী রায়


৫/অসাধারণ ২০ টি ছবি, শিল্পীকে অভিনন্দন জানাই।
           দারুণ লাগলো---- সম্পাদকীয়, সাতটি কবিতা সব শেষে বিড়ুল, আমি তো ভেবেছিলাম বিড়ুল মানে বিড়াল! সব মিলে দারুণ সংখ্যা অরন্ধন।
                        -----------কবি ডরোথী দাশ বিশ্বাস


৬/আলোকচিত্রের পাতায় এত রঙ... বসন্ত ছুঁয়ে দেখলাম।

ব্যবসার সাথে সাহিত্য বা শিল্পকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে এখনো আমরা সরব, এই বিষয়টিই হয়তো বাঙালিকে আর সবার থেকে আলাদা করে। সম্পাদকের কলম যথাযথ ।

ভালো লাগলো কবিতা গুলিও।
                             ----------কবি সুজন পণ্ডা


৭/তোমার লেখা সম্পাদকীয়গুলো ভালো লাগলো। অনেকদিন পরে পড়লাম। ভালো থেকো তুমি।
                             ----------শিল্পী দেবাশীষ সাহা 


৮/অসাধারণ ছবি পলাশের । ফটোগ্রাফি শিল্পীকে অভিনন্দন ।

উত্তম বইএর দাম নিয়ে তোমার মন্তব্য ভাবনার ।

কবিতা কয়েকজনের বেশ ভালো ।

তোমার গল্প হঠাৎ শেষ হয়ে গেল ।
যুক্তির বাইরে যে কত অ যুক্তি আছে ....
যার বিস্ময় জুড়ে জুড়েই শিল্পিত শোভা বৃদ্ধি পায় বলেই জানি ।
                               ----------কবি দীপংকর রায় 
______________________________________________

                       আমাদের বই






















সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ :  পটচিত্র, আন্তর্জাল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com





 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪