চতুর্থ বর্ষ ।। দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ২৪ বৈশাখ ১৪৩০ ।। ০৮ মে ২০২৩
____________________________________________
পুরস্কার বা সম্মান কবি নির্মল হালদারের মতো কবির পথ চলাকে প্রভাবিত করতে পারে না। পারে না অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেও। তাই কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় নামাঙ্কিত পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি থেকে প্রাপ্তির পর বাড়ি ফেরার পরমুহূর্তেই কবি নির্মল হালদার লিখে ফেলেন এই কবিতা-
"শাল -পিয়ালের চিঠি
----------------------------
ঘাম ও তেল
-------------------
কচড়া তেলে রান্না নিম তেল মাখামাখি
অনন্ত বেসরার গায়ের ঘাম
নুন যেমন তেমনি তেল
নুনে--তেলে ঢেঁকি শাক ভাজে,
মা বসুমতি।
খ:
নিম তেল মাখামাখি কচড়া তেলে রান্না
ডুমুর ফেটে গেলেই অজস্র বীজ,
মস্ত পরিবার।
চোখে আলো জ্বলে নকুল মুড়ার।
গ:
কুড়ালটা হাত থেকে ফস্কে যেতেই,
যুধিষ্ঠিরের মনে হলো,
রাগ করছে গাছ-গাছালি
গাছে থাকা পোকারাও।
কুড়ালটা ছুঁড়ে দিয়ে সে
গাছের পায়ে কপাল ঠেকায়।"
-----২১ বোশেখ ১৪৩০
----৫---৫---২০২৩
-----নির্মল হালদার
অর্থাৎ কবির কলম থেকে সাবলীলভাবে বেরিয়ে আসে প্রতিবাদের ভাষা। কবি প্রমাণ করে দেন পুরস্কার বা সম্মান পাওয়ার পরও তিনি নির্মল হালদারই। এই কথা আরও বেশি করে সুপ্রতিষ্ঠিত হয় তাঁরই এক কবি বন্ধু দুর্গা দত্তের পাঠ প্রতিক্রিয়ায়। যিনি এই কবিতা পড়ে মতামত জানান--
মন্তব্য এক
"নগর মাড়িয়ে, পুরস্কার মাড়িয়ে, যাবতীয় ধান্দা, মতলব আর প্রতিষ্ঠাবাজির
চক্কর মাড়িয়ে তুমি যে ফিরে এসে এইরকম কবিতা লিখতে পেরেছো , সেজন্যেই তোমাকে পেন্নাম । 😀😀😀"
মন্তব্য দুই
"তুমিও অবশ্য চরে খাওয়া লোক। পাবলিক বোঝো।আর সেজন্যই বাঁচিয়ে রাখতে পারো নিজেকে। কাদায় ডুব দিয়েও পালকে কাদা লাগতে দাও না।
হ্যাটস অফ্ গুরু!"
গত ৩ মে ২০২৩ পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় নামাঙ্কিত পুরস্কারে সম্মানিত করলো কবি নির্মল হালদারকে। আমরা তাঁর পুরস্কারে গৌরব বোধ করছি।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় / হাবিবুর রহমান এনার / অঙ্কন রায় / সুরজিৎ পোদ্দার / ফজলুররহমান বাবুল / দেবাশিস মণ্ডল / দেবাশীষ সরখেল /
______________________________________________
একটি মলিন গামছা ও পাতার মুকুট
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রবহমান বাংলা কবিতা।
চর্যাপদ থেকে শুরু করে একের দশকের কোন তরুণ কবির সাম্প্রতিক উচ্চারণ _সবটুকুই ধরা আছে আখরে আখরে। আবহমানের এই স্রোতকে ছুঁতে চেয়েই কবিরা অনায়াসে তাচ্ছিল্য করতে পারেন অমরত্ব। জাজ্বল্যমান জ্বলন্ত শিখায় ঝাঁপ দিতে পারেন ইচ্ছে পতঙ্গের মতো। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব মেলে না। মেলার কথাও নয়। কারণ আর যাই হোক হিসেব করে কবিতা লেখা যায় না। কবিতা কি নির্জনের সাধনা? হয়তো বা তাই। সবকিছু অস্বীকার করে প্রকৃত অর্থে আত্মনিবেদন না করতে পারলে, কাঙ্ক্ষিত পথে আলোর দিশা মেলে না। কারণ কবিতা কিছু দিতে পারুক বা না পারুক, নিতে পারে অনেকখানি।
সবাই কি নিজেকে উজাড় করে দিতে পারে?
সব কবিই কি এতটা দুঃসাহসী? _প্রশ্ন রাখলে বিতর্কের ঝড় উঠবেই। পক্ষে বিপক্ষে সমালোচনা হবেই। যুক্তি তর্কের সেই পথে হাঁটার সময় বা সুযোগ কোনটাই এখানে নেই। এটুকুই শুধু বলার _অনেকেই পারেন। পেরেছেন। যাদের নামের পাশে টিক দেওয়া যায়, তাদের মধ্যে অন্যতম কবি নির্মল হালদার। বাংলা কবিতার সহজ, সরল উচ্চারণ। কবিতার সংসারে ঘোর সংসারী। বাংলা কবিতার 'আরেক ভুবন'।
সত্তরের টালমাটাল দশকে, বাংলা কবিতার উঠানে এসে দাঁড়িয়ে খুব নিচু স্বরে চিৎকার করে জানিয়েছিলেন তার অস্তিত্ব _'বাবুমশাই, আমি নির্মল হালদার '।
কে এই নির্মল হালদার?
দু পায়ে লাল ধুলো, গায়ে ঘামের গন্ধ, মাথায় নোংরা গামছা বাঁধা _এই গেঁয়ো কবিকে বাংলা কবিতা মঞ্চ ছেড়ে দেবে কেন? কেন শুনবে তার কবিতা?
স্বীকার করবে কেন?
অথচ অস্বীকার ও তো করতে পারলো না _চরম সত্য এখানেই।
এই জয় কার? কবির না কবিতার?
মাঝপথে পড়ে আছে দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প। অনেক ত্যাগ। নিবেদন। আত্মক্ষরণ। ক্ষোভ, দুঃখ, বঞ্চনা, অপমান। অপ্রাপ্তির হতাশা। নাগরিকতার শ্লেষ। অনেক গোপন চোখের জল।
অলঙ্কারহীন সহজ, সরল ভাষাতেই প্রান্তিক মানুষের কন্ঠস্বর তুলে ধরলেন কবি নিজের মতো করে। বাংলা কবিতা শুনতে বাধ্য হল _সবজীবিক্রেতা মাসির রোজনামচা, অনাবাদী চাষীর দীর্ঘশ্বাস, ভারে ভারে জল বহন করা 'মাহাত'র বাসিভাতের স্বাদ, চড়া রোদে রিক্সাটানা যুবকের ঘাম, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের সংগ্রাম। টুসু পরবের উন্মাদনা। মাদলের বোল। করমের নাচ।
স্বীকৃতির তোয়াক্কা না করা এই আস্পর্ধার নাম _নির্মল হালদার।
পুরস্কার তাচ্ছিল্য করার এই দুঃসাহসের নাম _নির্মল হালদার।
মেরুদণ্ড বিক্রি না করা এই আপোষহীন শপথের নাম _নির্মল হালদার।
আজ যখন বাংলা কবিতা আকাদেমি, সামগ্রিক কৃতির জন্য কবি নির্মল হালদারের হাতে তুলে দিচ্ছে _"সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্মাননা "_তখন সবার অলক্ষ্যে দূরে কোথাও কেঁপে উঠছে শালগাছের পাতা। আনন্দিত হয়ে উঠছে মহুল, পলাশ আর কুসুমের দল। এই সম্মাননা কবির নয় _এই সম্মাননা আবহমানের। এই স্বীকৃতি ব্যক্তিগত নয় _এই স্বীকৃতি সামগ্রিক বাংলা কবিতার। আনন্দিত লাল ধুলো, আনন্দিত অযোধ্যার চাটান পাথর, আনন্দিত কাঁসাইয়ের জল। বাংলা কবিতা আকাদেমির এই নির্বাচন ও বিবেচনা _অবশ্যই প্রশংসনীয়। আপামর পাঠক আশান্বিত হয়ে উঠেছে। নির্মল হালদার শুধু একটা নাম। তার মতো আরো অনেক কবিই আছেন _যারা বাংলা কবিতা দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়ে এখনো প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে নিজেদের ক্ষরিত করে চলেছেন। তাদের হয়তো কোথাও একটা স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা আছে। বাংলা কবিতার স্বার্থে _যোগ্যতম নির্বাচনের দায়িত্ব আকাদেমির। আমরা আশাবাদী _দল, মত, বর্ণ নির্বিশেষে উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়ে আকাদেমি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে বাংলা কবিতাকে গৌরবান্বিত করে তুলতে সক্ষম হবে। দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে আরো বেশি। নিছক পুরস্কার বা সম্মাননা নয়, সব ক্ষেত্রেই প্রমাণিত করবে নিজেদের উদার বিবেচনাবোধকে। সরকারী আনুকুল্যে যখন বছরে দু _তিনটা কবিতা উৎসব _তখন কেন বারবার একই মঞ্চে একই মুখ? সাংস্কৃতিক রাজধানী থেকে বহু দূরে বসে মফস্বলের কোন অখ্যাত গ্রামের যে তরুণ নিজের মতো করে কবিতা লিখে চলেছে _তথাকথিত 'দাদা _দিদি'দের সাথে পরিচয় না থাকার সুবাদে সে কেন মঞ্চে একবারের জন্যও কবিতাপাঠের ডাক পাবে না? কেন অনুসরণ করা হবে না 'রোটেশনাল পদ্ধতি '?
প্রশ্ন তো উঠবেই। উঠছেও।
স্বস্তি এটাই _এত 'কেন' বুকে নিয়েও, সংবেদনশীল পাঠক কিন্তু বাংলা কবিতার দিকেই ঝুঁকে আছে। স্বপ্ন দেখছে _বৈষম্যহীন বৌদ্ধিকতায় । বিশ্বাস রাখছে _আকাদেমির দক্ষতায়। আন্তরিকতার সাথে চায়ছে _নির্মল হালদারের মতো আরো অসংখ্য নির্মল হালদারের হাত ধরে বাংলা কবিতা ভিজতে থাকুক শ্রাবণের বারিষধারায়।
জয় হোক বাংলা কবিতার।
পুরস্কার প্রাপ্তি মুহূর্তের আরও ছবি দেখুন।
হাবিবুর রহমান এনারের কবিতা
১.
দ্যুতি নিভে যায়
অতঃপর দমকা বাতাসে সকল দ্যুতি নিভে যায়
রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকে বহুরঙের পত্রপল্লব-
পাখিকলরব
অতএব-
জানি আমি, একদিন মায়ের অভাবও পূর্ণ হবে
দেখো- পক্ষান্তরে পূরণ হবে না কোনো দিনও-
মাটির অভাব
২.
হায় সেলুকাস
বৃক্ষ— বৃক্ষকে এতো চেনা-জানার কী আছে—
বৃক্ষ হতে অক্সিজেন নির্গত হয় এতো নৈসর্গিক
বাতাসের বদৌলতে যে জীবনধারণ-বেঁচে থাকা
তাই নিয়ে কারও আগ্রহ দেখিনি কস্মিনকালেও
হায় সেলুকাস
কারও দীক্ষায়- চিনতে হয় জীবনের পথ-প্রান্তর
মহাকাশ...রঙ
তুমি আমাকে বড় সযত্নে মানচিত্র এঁকে চিনিয়েছ
পৃথিবীর অচেনা অলিগলি
আজ আমি অনায়াসে বৃক্ষ চিনি- পাতা ঝরা বা
বাকল বদলের দৃশ্য দেখলেই বুঝি ঋতু রহস্য
নব পল্লবের আবির্ভাব হলেই বুঝি, উৎসবের দেরি
নেই আর
সৌরা নামের নদী
অঙ্কন রায়
ও নদী, ও সৌরা নামের নদী ~
সারা বছর ঢেউ তুলে তুই বইলি এতই যদি,
তোর কেন রে এখন এমন শুকনো শরীর, মন?
আমার সঙ্গে সই পাতাবি? হবি আপনজন?
আমার আছে অনেক জমা জল।
বিশাল দীঘি বুকের ভিতর
সন্ধে সকাল করছে টলোমল।
আকাশ জুড়ে শাওন যখন আসে,
ও নদী, তুই যাবি না, তুই যাবি না ওর পাশে।
আমার বুকের উথালপাথাল বিছিয়ে দিলে তোতে...
সময় তেমন লাগবে না তোর বইতে আকুল স্রোতে।
ও নদী, ও সৌরা নামের নদী ~
উতল হিয়ার অতল থেকে দু'কুল ছাপা উপচানো জল
তোর শরীরে জড়িয়ে নিয়ে বইবি নিরবধি।।
ঋণ
(জঁ লুক গোদারের মৃত্যু এই কবিতার জন্মের কারণ, যদিও তিনি-ই এর একমাত্র কারণ নন)
সুরজিৎ পোদ্দার
মৃত্যুকালে যেভাবে না বলে চলে যায় সবাই
তেমনি, একে একে চলে গেছে বন্ধুরা
একবার ঘাঢ় ঘুরিয়ে দেখলাম
তখনও
আকাশে মেঘ
তারপর বৃষ্টি
একবার চোখ বন্ধ করলে অতীত,
চোখ খুললেই তুমি
তুমি ছাড়া বর্তমান কিছু নয়
ঘটমান বর্তমান
যেন সারাদিন কিছু হচ্ছে
সারাদিন বৃষ্টি পড়ছে
বৃষ্টিতে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরছে কেউ
কেউ বৃষ্টিতে ভিজবে বলে বের হচ্ছে
তিনি আমাদের
শান্ত করতে পারেন নি
ক্লান্ত করেছেন
নম্র করতে পারেন নি
অবদমিত করেছেন
তিনি কে?
এই প্রশ্ন ফিরে ফিরে আসে,
তাঁকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না
শুধুমাত্র কল্পনা করা যায়
কল্পনা বৃষ্টির রাতে চাদরের মতো
আমাদের ঘিরে থাকে
উষ্ণতা বজায় রাখে
আমরা নিজেদের তাপে
নিজেরাই তপ্ত হতে থাকি
অবিকল স্বমেহন ক্রিয়া
আমাদের মিছিলের সামনে তিনি
পিছনে তিনি
বোতলবন্দি ভূতের মতো
কল্পনায় অভিমন্যুর মতো রাজসূত্র
এছাড়া গর্বের কিছু নেই
প্রতিটি পরাজিত প্রাণ
নিজেকে কর্ণ ভেবে, হজরত আলী ভেবে
উপাসনায় রত
এই দেহ এক মন্দির
আমি ঈশ্বর
আমি ব্রহ্ম
অতঃপর ইএমআই কাটার ম্যাসেজ আসে
তিনি চলে গেছেন
কয়েকটা সিনেমা দিয়ে গেছেন
অনেকগুলো নিয়ে গেছেন
তাঁর সিনেমা দেখি সারাদুপুর
বাইরে বৃষ্টি আর ভিতরে সিনেমা
আমাদের আর খিদে পাবে কবে?
শুধুমাত্র অভ্যেসবশে
একটার পর একটা সিন চলে যায়
তিনি কি ঈশ্বর না পুলিশ
আমাদের রীতিমতো শাসন করলেন কেন
তাঁর সিনেমা আমাদের স্বন্ত্রস্ত করে
আমাদের ভাষা ফুরিয়ে যায়
বৃষ্টির শেষে।
ভাষা তরল, প্রবাহমান কিন্তু জীবন্ত নয়
জল জীবন্ত নয়
মৃত মানুষ জীবন্ত নয়
তবু তিনি কি করে বেঁচে আছেন?
তিনি ঈশ্বর?
অতঃপর গুলি চলে, পাথর, বোমা
আরও কত সুন্দর জিনিস।
যাদের প্রাণ নেই, তারা প্রাণ নেয়
মানববোমার ব্যাগভর্তি বই
এইসব আঁৎলামো হাতিবাগান খায় না
হাতিবাগান তো ঢিসুম ঢিসুমও খেল না
প্রতিটি হল ভেঙে মল
আমাদের আর খিদে পাবে কবে?
মা ভাত বেড়ে বসে থাকে
আমাদের বাড়ি ফেরা হয় না
না বলে চলে যাবে সবাই
না বলে চলে যাওয়াই একমাত্র ধর্ম
এসো এবার একটা নতুন ধর্মগ্রন্থ লিখি।
একবার ঘাঢ় ঘুরিয়ে দেখলাম
বৃষ্টি
তারপর মেঘ।
শুধু মেঘ
যেন পুরুষাঙ্গ নেই, যোনি নেই
দীর্ঘদিন কোনো প্রেম নেই
কোনো সঙ্গম নেই,
সঙ্গমের শব্দ শুধু স্মৃতিতে এক তাল সৃষ্টি করে
তাল ব্রহ্ম
তাঁকে মনে মনে ঈশ্বর ভেবে
কামনাসিক্ত বৃষ্টির দুপুরে
সমস্ত বিছানা জুড়ে এপাশ ওপাশ করি
অবিকল পাখির আকাশ
একা চিল উড়ে যায়
হা করে তাই গেলে এক বিড়াল
তার নরম থাবায় বিকেল আসে
নির্বাসনে কমলালেবু উপহার
অসুখের দিনে কমলালেবু শুশ্রূষা
মৃত্যুর পরে কমলালেবু হবিষ্যি
কমলালেবু কি তিনি?
তাঁর সাথে দেখা হল না আর
তাই তাঁর কবিতা ভালো লাগে
তাঁর সিনেমা ভালো লাগে
আমি আসার আগে তিনি চলে গেছেন
আমি কাছে যাইনি তাও তিনি দূরে চলে গেছেন
কতবার ঘাঢ় ঘুরিয়ে দেখলাম
তাও তিনি নেই
তাঁর ছবি আছে, সোনালী দুপুরে
তারাঝরা রাত্তিরে
বিষণ্ণ ঘরের ভিতরে
সর্বত্র তাঁর ছবি
তাঁরা কি ঈশ্বর না প্রিয়তমা-
ভাবতে ভাবতে ব্যারাকে আত্মহত্যা করে জওয়ান
সীমান্তে নয়, অসীমে চলে যায় একটা বুলেট
একটা ট্রাম অসীমে চলে যায়
আমাদের সমস্ত শিল্পবিপ্লব
সহজে ঈশ্বরপ্রাপ্তির আয়োজন হয়ে ওঠে
সারাদিনের পর আর বাড়ি ফিরতে চায় না কেউ
নিঃশব্দে এক নতুন ধর্মের জন্ম হয়
এক নতুন সম্প্রদায়
আমি প্রকৃত মায়ের মতো আশাবাদী মানুষ
গরম ভাত বেড়ে বসে থাকি
তাতে খেলা করে ছোটো ছোটো মরলা মাছ..
ফজলুররহমান বাবুলের কবিতা
১.
আক্ষেপ
রাস্তার পাশে দুটি সাদা গোলাপ
হেসে উঠলে রাস্তা শুনতে পায়—
রাস্তার কালো পিচ দেখতে পায়
গোলাপের মহিমা...
কালো পিচের বুকে শক্ত পাথর—
পাথর গোলাপ হতে পারে না!
২.
মানুষ, আকাশ
আমরা যদিও মানুষ...
আকাশ বলছে—
যেন তাকে বুকে রাখি...
মানুষ কি এতটা উদার হতে পারে?
মানুষের বুকে কত পাহাড়
মরা নদী, খানাখন্দ...
আর
আকাশ আছে
সাইবেরিয়া কিংবা কারাকোরামে
আছে আটলান্টিকের উপরে
আছে বাংলায়, বঙ্গোপসাগরে...
মানুষ কি আকাশ থেকে বড়ো?
দেবাশিস মণ্ডল
ঘর
আমার এক অক্ষরের একটি ঘর আছে
ঘরটির কোন দেওয়াল নেই
দরজা হাট করে খোলা-
এ ঘর আমার নিশ্চিন্ত আশ্রয়
আমি ঘরের ভিতর থেকে
মমতার সুউচ্চ পাঁচিল দেখি …
এই ঘরটি ছাড়াও পাশাপাশি
আরও একটি ঘর আছে আমার।
এই ঘরে অক্ষর একটি বেশি।
নিয়ন্ত্রণের ইটের উপর
ভালবাসার পলেস্তরা দেওয়া
দেওয়াল আছে ঘরটায়-
আছে মাথার উপর ভরসার ছাদ।
ঘরটি আমি জন্মসূত্রে পেয়েছি।
এখানে থাকতে থাকতেই শিখে নিয়েছি
ঘর বানানোর আদব কায়দা।
একটি ঘর আমি নিজেও বানিয়েছি
আমার তৃতীয় ঘর।
ছোট ছোট কল্পনা এবং চেতনার
ইটে গাঁথা এই ঘরটিতে ঢুকলেই
আমি- আমি হয়ে যাই।
পাথর মানুষ
দেবাশীষ সরখেল
সুখের পাথরে তুমি দিও না পুষ্পকুঞ্জ
না জল , না বেলপাতা
সময়ের স্রোতে পাথর মানুষ হয়
দেবতা মানুষ
শোকে তাপে মানুষ পাথর ।
একা কাঁদে ট্রেনে বাসে
বাতানুকূল ট্রেনের কুপিতে
তখনো হাসিটি ঝুলিয়ে রাখে মোহন মুদ্রায় ।
মহত্বের কথা বলে
সে সময় না ফুলিও বেলুনের পেট।
সন্তাপ এর মেঘ ঝরে টানা তিন মাস।
একদিন গরমের চেয়ে গুমঠা বেশি।
একদিন প্রকৃত সজলশ্যাম ধারা নীর।
দিনান্তে রাঙা সুতো মাঞ্জা সুতো
রাঙ্গায় আবার
মাঠে-ঘাটে কুঞ্চিত ললাটে
দেখা যায় অগুরু চন্দন মাখা ঘাসের প্রলেপ।
______________________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া
______________________________________________
১/ অরন্ধন চতুর্থ বৎসরে পদার্পণ করলো। জন্মদিনে অরন্ধনের জন্য রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা। আরও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলুক এই পত্রিকা। সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকেই ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা জানাই।
বরাবরের মতো এবারের সংখ্যাটিও বিভিন্ন লেখায় এবং অলঙ্করণে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
কর্মব্যস্ত বহু গুণে গুণান্বিত পৌষালী চক্রবর্তীর আলোকচিত্র প্রদর্শনী ভীষণ ভালো লেগেছে।
---------কবি সুনৃতা রায়চৌধুরী
______________________________________________
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ : চাইনিজ পেন্টিং, আন্তর্জাল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
অরন্ধন সাধারণ একটি পত্রিকার নাম।
উত্তরমুছুনঅরন্ধন অসাধারণ একটি পত্রিকার নাম।
মুছুন