প্রথম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১১ আশ্বিন ১৪২৭
আকাশে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি। বাতাসে পূজোর গন্ধ।আর মাঠেঘাটে কাশের শুভ্রতা। সবুজ ধান গাছের বুক চিরে শিসের বেরিয়ে আসা। এ সবের মাঝে সহজ হয়ে ওঠা আমাদের জীবন যাপন।
এবার এগিয়ে আসছে ভোট। কোরোনার আবহকে জোর করে পাল্টে দিয়ে মিটিং মিছিল, প্রচারের আবহ তৈরির চেষ্টা চলছে সরকারি ভাবে।
এতে ক্ষতি হবে আমাদেরই। তবু আমরা মেনে নেব। নেতাদের সাথে সাথে ভোট তো আমরাও চাই। আমরাও চাই তীব্র রোদে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে। নিজের অধিকার ফলাতে।
সেভাবেই শেখানো হয়েছে আমাদের। সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে আমাদের মনকে। সবকটা প্রতিনিধি অযোগ্য হলেও কাউকে না কাউকে ভোট দেবই দেব আমরা। ভোট না দিয়ে থাকতে পারব না।
উত্তম মাহাত
সম্পাদক
যৌথতা ভেঙে যায়
নির্মল হালদার
২০০১ এ বন্ধুদের সহযোগিতায় আমার একটি ঘর হলো। ঘর না বলে ডেরা বলতেই ভালো লাগে আমার।
ঘর মানেই তো, শুশ্রূষা। হাসিমুখের আহ্বান। তাই, তখন আমার ঘর ছিল না। আজও নেই। যা ছিল সেটুকুই বলছি আজ।
ডেরা বাঁধার পর আমি কখনোই দরজা বন্ধ করতাম না। বাজার যাচ্ছি কোনো কাজে, দরজা খুলে রেখেই যেতাম। সবসময়ই মনে হয়েছে, কেউ এসে যেন ফিরে না যায়। সব সময় দু হাট খোলা। কোনো চেয়ার টেবিল নেই, মেঝেতে বসতে হবে। যদি থাকো, শুতে হবে মেঝেতেই।
আলাপ হয়ে গেল গ্রাম থেকে আসতে থাকা অনেক তরুণ কবিদের সঙ্গে। যারা কবি যশোপ্রার্থী।
ঠিক হলো, তারা প্রতি শনিবার বিকেলে আসবে। নিজেরাই রান্নাবান্না করে খাওয়া দাওয়া করবে। চাঁদা দেবে সবাই।
তার আগেই এক শুভাকাঙ্ক্ষী রান্নাবান্নার সরঞ্জাম কিনে দিয়েছিল। স্টোভ কিনে দিয়েছিল। তখনো আমার দিদি পুরনো ঘর থেকে আমার ডেরায় আসেনি।
শনিবার তরুণ কবিরা এলেই, এক উৎসবের মেজাজ। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। তারুণ্যের দীপ্ত প্রকাশ।
খাওয়া-দাওয়ার আগে যে যার কবিতা পড়তো। আলোচনাও হয়েছে। তর্ক হয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া বলতে ডালভাত পোস্ত সোনামুখ করে সবাই খেয়েছে।
এক যৌথতার দিকে নিয়ে যাওয়া। আমি বরাবর যৌথ খামারের স্বপ্ন দেখেছি। সেই কারণেই, আমাদের বন্ধু সজল রায় তার পত্রিকার নামকরণ করেছিল, যৌথ খামার। একটা সংখ্যা প্রথম ও শেষ। সে হয়তো লক্ষ্য করেছিল, যৌথ খামার আজকের দিনে এক ভুল ভাবনা। যেমন ভুল হয়েছে আমার, দরজা খুলে রাখা। প্রতিবেশীরা বার বার সাবধান করেছে, আমি শুনি নাই। তার ফল, আমার টেপ রেকর্ডার চুরি হয়ে গেল । মোবাইল চুরি হয়ে গেল।
বই চোর কখনো আসেনি। বন্ধুরা এসেছে অনেক জায়গা থেকে। ভালোবাসার কবিতা নিয়ে। উজ্জ্বলতা নিয়ে। তারা প্রত্যেকেই দিয়ে গেছে অনেক অনেক কিছু। আমার ঋণ বেড়ে গেছে খুব।
আমি ভেতরে ভেতরে স্বপ্ন দেখি, একটা মাঠ। মাঠের মধ্যে একটা লম্বা চওড়া ঘর। দু তিনটে প্রশস্ত বাথরুম। অঢেল ব্যবস্থা জলের। যে যখন আসবে নিজেরাই ফুটিয়ে নিতে পারবে দু মুঠো চাল। দুটো আলু।
ঝুমুর ভাদু টুসু গানের আসর বসবে মাঝে মাঝে। কর্মশালাও হবে। মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যেতো, লেখাপড়ার ভাবনা। আমাদের পাড়াতে বিভিন্ন দোকানে গ্রামের ছেলেরা এসে কাজ করে, তাদের লেখা পড়া শেখাবো। সঙ্গে থাকবে বয়স্ক শিক্ষাও।
সপ্তাহে একদিন এলোপ্যাথিক হোমিওপ্যাথি ডাক্তার বসবেন। বিনা পয়সায় চিকিৎসা।
এতসব হবে কি করে??? হবে হবে। চারপাশে অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী, যারা ভালোবেসে অর্থের যোগান দেবে।
কোনোভাবেই এন জি ও নয়, নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের ভালোবাসায় একটি যৌথ খামার। যেখানে নিজে বাঁচো। অপরকে বাঁচাও।
আমার ডেরা শহরে যেমন আছে থাকুক, কোনো গ্রামের দিকে নির্জনে খামারের কাজ চলবে।
এই স্বপ্নই আমাকে বাঁচতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সব ভুল সব ভুল। যৌথতা শব্দটি কঠিন শব্দ। মুখে উচ্চারণ করলে হয় না, যৌথতা একটি বোধ। গভীর বোধ। ভেতরে না থাকলে, যৌথতার দিকে যাওয়া যাবে না।
দিন যায় দিনের পরে। সংঘ ভেঙ্গে যায়।
কার দোষে কি দোষে আজ আর বলছি না কিছুই।একা থাকবো সুখে থাকবো, এরকম চিন্তা আজও আমার নেই । এজন্যেই কবিযশো প্রার্থীদের ভিড় পাতলা হয়ে গেলে, আরো একদল আসে আমারই প্রশ্রয়ে। এদের মধ্যে সবাই কবিতা না লিখলেও কেউ কেউ অনুরাগী। শুরু হয়ে গেল আমার পরিচর্যা। কিন্তু না কোনো পরিচর্যাতেই কেউ পরিশীলিত হয় না মার্জিত হয় না। নিজেকে আমার ব্যর্থ মনে হয়। আমার ডেরায় কোনো মেয়ে আসত না। আজও কেউ আসে না। যারা আসে তারা অতিথি। প্রেম নিয়ে চুলোচুলি একদমই ছিল না। বিরহ ছিল অনেকের মধ্যেই। তার প্রকাশ দেখেছি কবিতায়। বারবার তাই গীতবিতান পড়ার জন্য বলেছি প্রায় সবাইকে। উপহার দিয়েছি কোনো কোনো জনকে। সব যুবকেরাই তো গ্রাম থেকে এসেছে, তাদের গান শোনার অভ্যেসটা পাল্টাক। রবীন্দ্রনাথের গান যেমন হয়েছে, তেমনি সুমন নচিকেতা অঞ্জন। মহীনের ঘোড়াগুলি। এবং চন্দ্রবিন্দুর গান। স্বর্ণযুগের গান সেই সময়ে তেমন করে শোনাতে পারিনি। শোনানোর অর্থ, টেপ রেকর্ডার। ক্যাসেটের দিন শেষ হয়নি তখনো।
তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস পড়তে যেমন বলেছি, বলেছি সতীনাথ ভাদুড়ী। বলেছি , তিতাস একটি নদীর নাম। বলেছি, অজস্র ফিল্মের কথা।
কবিতার কথা। সবাই যেন জগদীশ গুপ্তকে পড়ে। যেন, হেমন্ত শুনলে শ্যামলও শোনে।
রবীন্দ্রনাথ পড়লে হবে না বঙ্কিমচন্দ্র মধুসূদন পড়তে হবে।
আমাদের গানে কবিতায় গল্পে কত যে বৈচিত্র, না জানলে না শুনলে, ফাঁকা থেকে যায় অনেকটাই। সবই তো বেঁচে থাকার জন্য। সবাইকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। শুভবোধ থেকে যেন ছিটকে না পড়ি। আমি খেতে পেলে তুমিও পাবে।
অদ্ভুত এক আঁধার এসেছে পৃথিবীতে, এখানে এখন বিচ্ছিন্নতা কেবল বিচ্ছিন্নতা। কেউ কারুর মুখের দিকে চেয়ে বিষন্ন আলোর রেখা পড়ে না। পড়তে চায় না। কেউ কারুর গৌরবে গৌরব বোধ করে না। প্রেম ভালোবাসার মতো শব্দেরা অলীক হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আর আমার ভেতরে বসে থাকা যৌথতার কি হবে? আমি কেবল মার খেতে খেতে
দুহাতে বিলি করবো প্রেম?
একটা ঘর থেকে এখন আমার দুটো ঘর । ছাদ। আলো বাতাসের ছড়াছড়ি। পায়রা আসে। কুকুর আসে। আরো নানারকম মানুষজন আসে। সকলের মধ্যে থাকে না প্রেম ভালোবাসা প্রীতি। কেউ কেউ সময় কাটাতে আসে। কেউ কেউ বিনোদন করতে আসে। এ সমস্ত জেনেও দরজা বন্ধ করতে পারিনি। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি এবং আমার বয়স
দেখতে পাচ্ছি, আমার প্রশ্রয়কে আমার উদারতাকে ব্যবহার করে আমাকে মারতে চলেছে। এই মার, মনের ক্ষতি করে প্রভূত। অন্তরে রক্তক্ষরণ চলতেই থাকে। কোনো মর্যাদা নেই আমার, মানুষ হিসেবে মানুষের কাছ থেকে মর্যাদাটুকু দাবি করতেই পারি। আর তো কিছু চাই না। তারপরও দেখছি, হিংস্রতা হিংস্রতা। হিংস্রতা হিংস্রতা। হঠাৎ হঠাৎ কে কখন দাঁত নখ বের করে কামড়াবে, আমি জানি না। খুব ভয় করে খুব ভয় করে আমার। আমার সম্মানটুকু নিয়ে আমি বাঁচতে পারব তো? তাহলে, আমি আমার বোধ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবো আমার যৌথ ভাবনাকে?
সীমান্তহীন মাঠে দৌড়াদৌড়ি করছে অনেক শিশুরা-------সেই স্বপ্নের দিকে যাব না?
মুজিবর আনসারীর কবিতা
১.
ছায়ামেঘ
ছায়ামেঘ, এইখানে নামো
এইখানে দেখো কার প্রতারিত মুখ
জলস্তম্ভে জেগে আছে আজও
কোন দুঃখপাহাড়ের গোপন গহ্বরে
সূর্য ডুবে গেছে তার
কোন শর্তে বাঁধা মন, হৃদয় খুঁড়েছে শুধু
মাথা কুটে মরেছে চাতালে
জল নয়, মাটি নয়
আঁজলায় উঠেছে আগুন
ছায়ামেঘ,এখানেই নামো তুমি
দেখো তার চোখে শান্ত জ্বলে দীপশিখা
অতল সাগর মাঝে প্রেম তার
ফুটে আছে অমৃতকুসুম
২.
প্রত্যয়
তুমি আছো
ক্রমশ তোমারই দিকে বাড়িয়ে দিই হাত
বিকেলের লাল সূর্য খুঁড়ে আনি নিজস্ব
উত্তাপটুকু
সুরের আলাপ শুনি, সুরের প্রলাপও
খ্যাপামন খ্যাপার সান্নিধ্যে জ্বলে ওঠে
ক্রমশ তোমারই রঙে রাঙাই নিজেকে
তুমি আছো তাই আমি থাকি নির্বিকার
৩.
লেখা
সকল প্রশংসা তুমি
ছায়াময় লিখতে বলো গাছ
লিখে রাখতে বলো তার কাণ্ড মূল
পাতা কিংবা ফুলের সৌরভ
আমি তো লিখেছি শুধু নষ্টদিন
আর লিখি পুনরুজ্জাপন
আর যে মাতাল হাঁটে মাঝরাতে
তার কথা
চাঁদ আর আঁধারের মিলিত ক্ষরণ
কিছুই কাঙ্ক্ষিত নয় তুমি ছাড়া
এই দেশ পৃথিবীর
জীবনের যাপনের কথা
যা লিখি নিছক কথা ছায়াহীন কায়াহীন
তোমাকেই লিখতে দাও শুধু
বিশ্বম্ভর নারায়ণ দেবের কবিতা
১.
রহস্য
আমরা দুজনে দুদিক থেকে
নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে
অনর্গল কথা বলে যাই।
তোমার কথা আমি শুনতে পাই না
আমার কথা তুমি শুনতে পাও না
এ নিয়ে সারাদিন বড় অস্বস্তি
আমাদের দুই অস্তিত্বের।
আমাদের স্বপ্নচারী কথাগুলি
বৃষ্টি ফোঁটার মতো
কখনো রাস্তায় নেমে হাঁটে
কখনো বুদ্বুদ হয়ে মিলিয়ে যায়।
এই যে আমাদের
মিলতে না পারার বেদনা
মিলনের তরে এই যে
পরম আকুতি কাতরতা
এর কোনো বিভাজন হয় না।
আবার বলি শোনো
যে কোনো দুঃখের
যে কোনো বিরহের
উৎসস্থল একটাই ;
দুপাশে দুই অস্তিত্ব
নিয়ে আছি বলেই
এমন সব ভাবনা
মনে আসে আমাদের।
২.
সংগীতা তুই কেন বাজিস্
তোর নিজেরই সুরে
এমন নিঝুম দুপুরে
আমি মগ্ন হয়ে শুনি
তুই কি আমার শালুক শুশুনি
বাঁধ পুকুরে বাস
পদ্মপাতায় দেয় না ধরা
জলীয় উচ্ছ্বাস
দুচার লাইন লিখতে যাবো
উছলে পড়ে জলে
আমাকে তুই কবি সাজাস না
প্রাচীন বল্কলে
কী যে কামনা করি
ভেবে ভেবে মরি অহর্নিশ
সংগীতা তোর পেটের ভেতর
আমার জন্ম দিস।
দুর্গা দত্তের কবিতা
১.
উড়ো খৈ : সাত
সবাই যা জানে আর ইতিহাসও বলে সেই কথা
বালির ওপরে কেউ যত খুশি নাম লিখে যাক
কিছুই থাকে না, ঢেউ মুছে দেয় ধর্ম অনুসারে --
যেকথা জানেনা কেউ, ইতিহাসও নীরব থেকেছে
রাত ঘন হলে ধীর উঠে আসে নতমুখ ঝিনুক শরীর--
খুঁজে পেতে শুয়ে থাকে ঘোরলাগা বালির আখরে,
যে আখর ছিল বলে কারো আর মনেই থাকে না।
তারই সঙ্গত আলো মৃত ঝিনুকের হাড়ে, ধূপে
খুঁজে ফেরে সকালের রোদে আজও ইতিহাসমুখ...
২.
উড়ো খৈ : আট
যুদ্ধে যে জেতে তার জয়ধ্বজা উজ্জ্বল কিরীট
গর্বোদ্ধত মুখের আহ্লাদ
সবাই দেখেছে।
যুদ্ধে যে হেরে গিয়ে পড়ে থাকে কুরুক্ষেত্রে রোজ,
গৃধিনী শৃগাল যার শেষ অবধি নিকট পড়োশি --
সেও জেনো সংশপ্তক , বিজয়ীর শয়নে স্বপনে
প্রতিরাতে জেগে ওঠে যুদ্ধসাজে --
সে কখনো মরেও মরেনা ...
৩.
পৃথা
ভাসিয়ে দিয়েছি তোকে লোকলজ্জা বশে একদিন
ভাসিয়ে দিয়েছি আমি আমাকেই তোর সঙ্গে রোজ
তোর মুখ মনে নেই আজ
আমিই আমার মুখে তোকে দেখে গেছি দিনরাত
আমিই আমার স্তন্য মুখে নিয়ে প্রতিদিন
ভিজিয়েছি পাথরের ঠোঁট ...
সঞ্চিতা পাত্রের কবিতা
১.
ভোরাই
পৌষ-অঘ্রানের ভোর। পাটঝালদার শালুক পুকুরে ডুব দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে গান গেয়ে রোজ হেঁটে যাচ্ছে এক ছায়াচ্ছন্ন মানুষ। তার গলার আওয়াজেই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে আমার। কোয়ার্টারের চারপাশে পুটুসের ঝোপ থেকে কুয়াশা সরে আসছে। ক্রমশ লম্বা হয়ে আসছে স্টেশনরোড। আমি বেরিয়ে পড়েছি হিমেল মানুষটির পিছু পিছু। বাতাসে শীতের গাঢ় গন্ধটুকু এলে আজও আমি বেরিয়ে পড়ি সেই মানুষটির পিছু পিছু। আর ভোরের দরজা খুলে যায়। ভৈঁরো গেয়ে ওঠে আশরীর ডোবান শালুক, কুয়াশা জড়ানো আকাশ।
২.
স্বপ্ন
নিজস্ব ঘুমের ভিতর ডুবে গেলে
প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠি
এখানে কেউই রাজা নয়, অথবা ভিখিরী
স্বপ্ন যদিও সবসময় সুখকর নয়
মানুষ মানুষকে হত্যা করছে, এ রূঢ়
বাস্তবই, আর কিছু না।
সমুদ্রতটে শুয়ে আছে নিষ্পাপ শিশুর
লাশ, পরণের জামাটি তখনও উজ্জ্বল
আমার ঘুম পায়, ঘুমের মধ্যে জেগে উঠে
দেখি, অদ্ভুত নীল এক সমুদ্রের পাশে
কোথাও একটিও অস্ত্র নেই
৩.
মাহেন্দ্রক্ষণ
ত্বরা করো
আজ যজ্ঞ হবে।
ওই দ্যাখো বেদী প্রস্তুত।
ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের বেদী।
তুমিও প্রস্তুত হও।
ত্বরা করো।
এই মাহেন্দ্রক্ষণ যেন অতিবাহিত না হয়।
ত্বরা করো।
এসো
এসো অগনন সমুন্নত বীজ নিয়ে।
জগতের শ্রেষ্ঠ শিল্পী তুমি।
একমাত্র তুমিই জানো কীভাবে অরণি কাষ্ঠে ঘৃত নিয়ে অগ্নিসংযোগ করতে হয়।
ত্বরা করো।
বারংবার ঘৃত নিক্ষেপ কর যোণিতে
ফুঁসে উঠুক আগুন। লেলিহান শিখা তার
স্পর্শ করুক স্বর্গ।
এসো
আমাদের সমস্ত বীজ আহুতি দিই।
আমাদের সব কামনা আহুতি দিই।
আমাদের দ্বৈত অস্তিত্ব আহুতি দিই।
ওম স্বাহাঃ। ওম স্বাহাঃ। ওম স্বাহাঃ।
অগ্নিদেব সন্তুষ্ট হোন।
অগ্নিদেব সন্তুষ্ট হোন।
অগ্নিদেব সন্তুষ্ট হোন।
ওই দ্যাখো, প্রত্যক্ষ করো, ছাই থেকে সৃষ্টি হচ্ছে যজ্ঞের সন্তান।
আমাদের মোক্ষ।
ডরোথী দাশ বিশ্বাসের কবিতা
১.
পেয়েছি ছুটি...
এক পা দু'পা করে এগিয়ে এলাম
দেখি, গন্তব্য আর দূরে নয় ...
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের চেনা পথ ছেড়ে
পুরোপুরি গৃহবন্দী হতে হবে এবার...
আসবে অবরোহণের পালা
দায়িত্বকর্মবোধ থেকে অখন্ড অবসর
ক্রেনিয়ামে সংরক্ষিত মস্তিষ্কের কোশে বড় যত্নে
রেখে দিয়েছি ভালোবাসা ঘৃণা দুঃখ আনন্দ
মান অপমান জয় পরাজয়
এ সবই গুপ্তধন সম
লুকিয়ে রাখাই শ্রেয়
সব ভুলে প্রাণ খুলে এবার থেকে দেখবো
শিশুর হাসির মতো সূর্যোদয়
নিসর্গে ছড়িয়ে থাকা মেঘমালার রঙ
প্রাণ ভরে নেবো সবুজের ঘ্রাণ
আনন্দে মেতে উঠবো দৈনন্দিন সুচারু উৎসবে
ভাবাবেগ স্মৃতিস্বপ্নমালা বাস্তবের কথাকলি
সঙ্গীতের রাগিনী
কুড়িয়ে নেবো আঁচল পেতে
আর ভাববো
রাজকীয় মহিমায় বিরাজিত আমি এক
অনিঃশেষ প্রাণ ...
২.
রাত উঠোনে তোমার রূপকথা...
তোমার উদ্ধত তর্জনীতে
শাসন শুধু আমার জন্য
অথচ তোমারই দু'হাতে
দেখেছি হৃদয় জয়ের স্বপ্ন
টানটান রূপটানের আড়ালে
লুকিয়ে রাখা মরমী মন
রূপকথার গল্পের মাঝে মেঘমুক্তি
আর সুরুচির ধারাবর্ষণ
এ সবই তোমার শিল্প সংস্কৃতি
নিয়মের কঠোর অনুশাসন
আমার অগোছালো জীবনে
তাই তো তোমার বড় প্রয়োজন ...
৩.
তুমি...
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ শস্যক্ষেত্র
যেন তোমার হৃদয়
বৃক্ষের উদারতা
দু'কূল ছাপানো জলের কল্লোল
তোমার উচ্ছল প্রাণশক্তি
অসীম গভীরতা
পাখির মন উদাস কলতান
তোমার অবিচল প্রত্যয়
জানে না ভাঙতে
সূর্য অস্তমিত হলে সন্ধ্যা
তোমার নিভৃত যাপণ
শুধুই একান্তে ...
সুজয় দত্ত-র কবিতা
১.
খননকার্য
ঝগড়াঝামেলাঝঞ্ঝাট। বাকি যত হাটবাট
আছে আজ কার আঁজলায়
আমি জানি ক্লান্তিহীন, কত কথা রাত্রিদিন
আসে। আর হৃদয় পোড়ায়
রাশি রাশি অশ্রুপাত - ভাবনার পাঁচ -সাত
যে ছিল দুয়ারে ব'সে কাছে
নিয়তির বাঁধভাঙা, নতুন রঙেতে রাঙা
মনে আছে। আজও মনে আছে।
কোথায় লুকিয়ে ব্যাথা, উপশম একা একা
নিজেকেই খুঁড়েছি কেবল
ছাই শুধু প'ড়ে থাকে, অস্থি মজ্জা ফাঁকে ফাঁকে
কুড়ায় দু' হাত -- ধবল
আজও চাঁদ আকাশেতে - গণনার পূর্ণপাতে
জোছনা মাখিয়ে তবে বাঁচে
আমার নিয়তি লেখা, দূর হয়ে প'ড়ে থাকা
মনে আছে ? আজও মনে আছে?
২.
তুষার যুগ
সেটা ছিল তুষার যুগ, বরফসাদা প্রাণ
হাতগুলো শীতলসখা, অতলান্তিক হিম
তারপর সেই আলিঙ্গনে বরফ হল ধুলো
বোতল থেকে বেরিয়ে আসে আলাদিনের জিন
তিনটে বর। একটাতে তোর চোখের পাতা
মুড়ে দিয়েছি মুক্তো দিয়ে, কানের লতি সাজে
দ্বিতীয় বরে সোনার বরণ, এবার পালা কার
হীরকদ্যুতি চুমুর মাপে গ্রীবার গভীর খাঁজে
হাত দু'টোতো জড়িয়ে ছিল অঝোর ঝরণাধারা
বুকের পাশে পালিশ বোলায় দুরন্ত এক বুরুশ
আর তখনই দিনের শেষে ট্রেন ছেড়ে যায় স্টেশন
নীরব থেকেও কাঁদতে পারে হাহাকারের পুরুষ
ছুঁ মন্তর
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়
চোখের সামনে দাঁড়িয়ে ঝলমলে এক যাদুকর। হাতের মধ্যে মন্ত্রপূত জল। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড়। ছুঁ মন্তর। মুহূর্তেই মিরাক্যাল। চোখের সামনে থেকে উধাও আমার আবহমান। আমার অস্তিত্ব। চারিদিকে অস্পষ্ট ধোঁয়া। ধোঁয়ার ভেতর এক গ্রাম্য কিশোর। একহাতে হাফপ্যান্ট সামলাচ্ছে। অন্যহাতে শাঁকের গুলি। কে ও? আমি? আমার শৈশব? ধানপাতা রঙের স্বপ্ন? গেঁড়ি গুগলির মতো ছড়ানো ইতস্তত বন্ধুদের দল। পাঁচেন ছয়েনের গোভ বরাবর আমি হাঁড়ি খাটছি। হাঁড়ি খাটতে খাটতে পার হয়ে যাচ্ছি গ্রামের প্রান্তসীমা। কত কত তেপান্তর। বন্ধুদের উল্লাসধ্বনি। পরাজয়েও এত যে আনন্দ থাকে তখন কী আর বুঝতাম!
হাতছানি দিয়ে ডাকছে গাঁয়ের স্কুল। স্কুল বলব নাকি আনন্দ পাঠশালা? পড়াশোনা মাথায় তুলে শুধু পড়া পড়া খেলা। বিনুদাদুর গাছের কাঁচামিঠা আম। মুখুজ্জেদের বাড়ির কুলের টকমিষ্টি স্বাদ। ফলভারে মাথা ঝুঁকিয়ে দেওয়া বেলগাছ। তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ছুঁড়ে দেওয়া পাথরগুলো কি সব মাটিতে ফিরে আসতো? নাকি অভিকর্ষের মায়া কাটিয়ে কেউ কেউ উড়ে যেত অসীম অনন্তের দিকে? সাহস করে মাষ্টারমশাইদের শুধিয়ে উঠতে পারিনি কখনো।
মাঝেমাঝে বিকেলবেলায় দল বেঁধে নদীর ধার। আমি, বন্ধু (নটু),পাগলা, বাচ্চু, দয়া,ছোটকা, প্রভাস আরো কে কে! বর্ষাকালে আমাদের ছোট নদীর গরব দেখে কে! ঘোলা রঙের ঢেউ। মাটি মাটি গন্ধের এই নামহীন ছোট্ট নদীটাই তখন আমাদের কাছে গয়া গঙ্গা দামোদর। জামাপ্যান্ট খুলে রেখে সোজা ঝাঁপ নদীর জলে। নিরলস ভেসে যাচ্ছি আমি। আমার শৈশব। ভাসতে ভাসতে যদি পৌঁছে যাই একদিন মোহানায়? কী মজাই না হবে! পড়াশোনা নেই। বকুনি নেই। শাসন নেই। বারণ নেই। শুধু খেলা আর খেলা। খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে গেলে আবার উল্টোমুখে ফিরে আসা মা _মাটির বুকে। কল্পনার দাঁড় বাইতে বাইতে গলা ছেড়ে গান গেয়ে ওঠা _ 'অকূল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে। '
গ্রাম শব্দের অর্থ খুঁজতে গেলে আজ ভাবতে হয় বেশ কিছুক্ষণ। ছোটবেলায় দেখেছি ঘর থেকে কুলহিতে বেরোতে না বেরোতেই পায়ের নিচে আরব বেদুইন। ধূ ধূ বালির সাম্রাজ্য। বালিতেই চু _কিতকিত, ঝারলঝাঁপ, কুমিরডাঙা, লালডাঙ, বৌ পালাপালি, পাঁচেন ছয়েন, আতা পাতা আঁজির পাতা। কংক্রিটের চাঙড়ে আজ ঢেকে গিয়েছে সহজ সরল গাঁয়ের পথ। চোখধাঁধানো নাগরিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ শৈশব। প্রত্যন্ত গ্রামের বুকেও মাথা নেড়ে জেগে উঠছে মোবাইল টাওয়ার। জয়ধ্বনি করছে নাগরিক সভ্যতার। আজকের গ্রামের শিশুরা জানে না কচি রাহেড়পাতার রঙ। জানে না চুরিকরা খেজুররসের মিষ্টি স্বাদ। অঘ্রাণের হা হা খেত মনখারাপের শূন্য বাতাস ছড়িয়ে আজ কি আর কারো মন ছুঁয়ে যেতে পারে? কার্ত্তিকের আকাশপ্রদীপ কার ঘর আলো করে জ্বলে উঠে? 'রাই জাগো, রাই জাগো ' সুরে হেমন্তের শিশিরঝরা সকালের ঘুম ভাঙায় যে বৈরাগী _তার ঝুলি কি আজও ভরে ওঠে নূতন ধানের গন্ধে?
জগা বাউলের ছিঁড়ে যাওয়া একতারার সুর আমাকে ডাকছে। ডাকছে ভাদু টুসুর গীত। করমের ডালি। জাওয়া নাচের ছন্দ। আমার দুচোখ জুড়ে বিরিবাড়ির শ্যামলিমা। সারা গায়ে কাদা। ডবকা ঝিটে লুলহিমাছ ধরার সময় যে বয়ে যায়! আয় বন্ধু, আয়। পাগলা আয়। ছোটকা, বাচ্চু, দয়া, প্রভাস, কানাই কে কে যাবি আয়। নাগরিকতার সব পোশাক _আশাক খুলে রেখে সোজা ঝাঁপ দেবো সহজ সরল নদীর জলে। ভেসে যাক আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের বর্ত্তমান। আবহমান।
চিন্তাহীন, বাধাহীন উদাম ভেসে যেতে যেতে, আমরা সেই ছোটবেলার মতো ছড়া কেটে বলে উঠি _
"শালা শালা গাল দেয় শালতলে ঘর,
রাজার বিটির বিহা হবেক আমি যাব বর।
রাধুর বলদ
কল্পোত্তম
গরুর গাড়ি চালিয়ে জীবন কেটে গেল রাধু মড়লের।রাধু মড়ল বলতে পাঞ্জনবেড়া গ্ৰামের রাধানাথ মন্ডল। লোকটা যেমন সাধাসিধে তেমনি মজাদার। এই স্বভাবের জন্য আশপাশের লোকজন এক ডাকে চেনে তাকে। ছেলে বুড়ো যাকে খুশি জিঞ্জেস করলেই বলবে, ও পাঞ্জনবেড়ার ?
হাটের দিন বাদ দিয়ে ফাঁকা দিন গুলোতে হেঁটেই পার হয় মানুষটা। সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরে বগলে লম্বা একটা কালো ছাতা নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে যায় এক গ্ৰাম থেকে অন্য গ্ৰামে। বেড়াদা বড় উরমা কেঁদাডি ছোটো উরমা, কৌরাং কাঁটাডি, রঞ্জিতডি পুয়াড়া সোদপুয়াড়া চাকোলতোড়, দুবরাজপুর আদাবনা রায়গাড়া সজানডি। আশপাশের সমস্ত গ্ৰাম পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে সে। একমাত্র মেয়ের বাড়ি যাওয়ার সময় বেড়াদা থেকে বাস ধরে বাগমুন্ডীর।
কোন গ্ৰামে মেয়ের বাড়ি জানি না। তবে মেয়ের প্রতি তার টান মেয়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসার প্রমাণ দেয়। প্রায় প্রতি মাসে একবার করে মেয়ের বাড়ি ঘুরে আসে রাধু মড়ল। যাওয়া-আসার সময় চিৎকার করতে করতে পেরিয়ে যায় বেড়াদার বক-কুলি। ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের দেখতে পেলেই চিৎকার করে বলে, নুন খেলে গুণ গাহে, ভাত খেলে বড় হয়। আর বড় বড় পা করে এগিয়ে যায় পাঞ্জনবেড়ার দিকে। ছেলে মেয়েরা তখন চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে থাকে, আর মাছ খেলে ? বাসি ভাত খেলে ? চানাচুর খেলে ? ততক্ষণ অনেক দূর এগিয়ে যায় সে।
ছোটো উরমা আর কাঁটাডি হাটের দিন একটুও ফুরসৎ থাকে না তার। নিজের গরুর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় সাত সকালে। বেলা ঝিলমিল করতেই উপস্থিত হয় হাটে। দূরে দূরের পাইকার গুলো ছোটো গাড়িতে চেপে পৌঁছে যায় সকালেই। তাদের মাল বাছাই করে টুকরিতে সাজিয়ে দেয় রাধু মড়ল। তারপর গরুর গাড়িতে চাপিয়ে পৌঁছে দেয় স্টেশন। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে দূর দূরান্তরে চলে যায় মাল।
টাটা চাইবাসা চক্রধরপুর, বোকারো ধানবাদ পুরুলিয়া, এইসব সবজি বাজারের সবজি এই রকম ছোটো ছোটো হাট থেকেই হয়ে থাকে। কখনও ট্রেনে কখনও ছোটো বড়ো গাড়িতে করে পৌঁছে যায় সোজা।
মাল বেছে দেওয়া, টুকরিতে সাজিয়ে দেওয়ার আলাদা দাম পায় রাধু। আর গরুর গাড়িতে করে স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার আলাদা দাম। তখন টুকরি পিছু দাম দিতে হয় তাকে। এইভাবে সারাদিন হাট থেকে স্টেশনে যাতায়াত লেগে থাকে তার। লেগে থাকে তার বলদের গলায় ঝুলে থাকা ঘন্টির টুং টুং শব্দের ছড়িয়ে পড়া।
এই শব্দ প্রায় সকলেরই পরিচিত। এই শব্দ শুনেই জানা যায় তার গরুর গাড়ির উপস্থিতি। বোঝা যায় গাড়ি নিয়ে এগিয়ে আসছে রাধু মড়লের লম্বা লম্বা ধবধবে বলদ জোড়া। হাটের দিন হাট আর স্টেশনের মধ্যবর্তী রাস্তাতে কতবার যে এই শব্দ শোনা যায় তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
হাটে পৌঁছে বলদকে নির্দিষ্ট জায়গায় বেঁধে দিয়ে খড় দিয়ে দেওয়া, জল দিয়ে দেওয়া। আর পাইকারদের কেনা মালে গাড়ি ভরে এলে বলদকে জুড়ে হিঁ চল্, হিঁ চল্, হিঁ চল্ বাবা চল্ বলতে বলতে স্টেশনে নিয়ে যাওয়া।
টুকরি সাজানোর সময় আলাদা করে রাখা ছাঁট মালগুলো সেখানেই বিক্রি করে দেয় পাইকাররা। রাস্তায় নষ্ট হওয়ার থেকে যা পাওয়া যায় তাই লাভ। সেই ছাঁট মাল থেকেই যতটা সম্ভব ভালো গুলো বেছে বেছে নিজের বাড়ির জন্য নিয়ে নেয় রাধু। তা দিয়েই মিটে যায় পারিবারিক সবজির চাহিদা। আলাদা করে কিনতে হয় না তাকে। শুক্রবার আর সোমবারের হাট থেকে নিয়ে আসা ছাঁট মাল দিয়ে চলে যায় সপ্তাহের বাকি দিন গুলো।
সারাদিন স্টেশনে মাল পৌঁছানোর পর শেষ বিকেলে ঘরে ফেরে রাধু। বেলা ঝিলমিল করতেই বেরিয়ে যায় হাট থেকে। তখন ঘর ফেরতা হাটুরেদের কারো কাঠের বোঝা, কারো চালের বস্তা, কারো সবজির ব্যাগ তো কারো ধামা ঝুড়ি কু্লো আরও আরও সব জিনিসপত্র গরুর গাড়িতে চাপিয়ে ঘরে ফেরে সে। ছোটো উরমার হাট থেকে বেড়াদা পৌঁছাতে হয়ে যায় মাছি-আঁধরা। গরুর গলায় বাঁধা ঘন্টার আওয়াজ শুনে বেরিয়ে আসে জিনিসের মালিক। নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে নামিয়ে নেয় নিজের মাল। তারপর আবার ঘন্টা বাজিয়ে চলতে শুরু বলদের। তাদের নিজস্ব গোয়ালের দিকে। যেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত বিশ্রাম নেয় তাদের।
বলদ জোড়ার উপর নির্ভর করেই দিন চলে রাধুর। তাই, বলদ জোড়ার যত্ন আত্তিতে এতটুকু খামতি রাখে না সে। দু'বেলার নুন মেশানো মাড়-জল, মুদি দোকান থেকে কিনে আনা সরষের খইল, খেতের আইল থেকে কেটে আনা তরতাজা ঘাস আর চাষের সময় জোগানো খড় খাইয়ে শক্তিশালী করে তোলে তাদের। প্রতিদিন জল এনে ঘষে ঘষে ধোওয়ায়। গায়ের উকুন বেছে দেয়। ফাঁকা সময় পেলেই বসে বসে গলায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেয় তাদের। আর বলদ গুলোও নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে রাধুর দিকে। সেই তাদের গলা, সেই তাদের প্রভূ, তার কথা শোনায় পরম ধর্ম তাদের। তাই চেষ্টা করে রাধুর সমস্ত ভাষা বোঝার, তুচ্ছাতিতুচ্ছ ইংগিত বোঝার। যাতে তাদেরকে নিয়ে একটুও কষ্ট না পায় রাধু।
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
আয়োজক : অনিকেতের বন্ধুরা
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল- uttamklp@gmail.com
খুব ভালো হয়েছে।
উত্তরমুছুনকবিতার সঙ্গে এবার বাড়তি পাওনা নতুন নতুন ছবি আর গদ্য..
উত্তরমুছুনসুমনদার কবিতা আগেও পড়েছি..তবে গদ্য এই প্রথম..ছোটবেলার দিনগুলো সব চোখের সামনে ভেসে উঠলো..
নির্মলদার লেখা পড়ে মনে হলো যৌথতা তো অনেক খানি বৃষ্টির মতো একসঙ্গে থাকার এক মহান ব্রত , তা সেই বৃষ্টি তো আর এখন নেই তাই বুঝি যৌথতাও নেই!
উত্তরমুছুনসবশেষে কল্পোত্তমের মাটির মানুষ রাধানাথ মন্ডলের সঙ্গে একবারটি আলাপ করার ভীষণ ইচ্ছে রইলো ।
ভালো হয়েছে।
উত্তরমুছুনভালো লাগল পড়ে ।
উত্তরমুছুনলেখাগুলো ভাল । নির্মলদার গদ্য আম্মার খুবই ভাল লাগে । কিছুক্ষন আছন্ন থাকি । তাছাড়া রচনাসশৈলী অসাধারন । আরও নির্মলদার গদ্য লেখা চাই ।
উত্তরমুছুনসকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকুন সকলে।
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো পড়ে।
উত্তরমুছুন