ছবি প্রদর্শ-শালা ।। চিত্রশিল্প ।। আশীষ নন্দী
৪ মাঘ ১৪২৭ / ১৮ জানুয়ারি ২০২১
চিত্রশিল্পীর নিজের ভাষায় নিজের শিল্প জীবন
শিল্প নিয়ে কি আর বলি ,আসলে আমি প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত নই ,আমি অনেকটা সেই আদিম শিল্পীর মতো , যে আপনমনে তার ঘরের দেওয়ালে ছবি আঁকতো।।।।।।।।।।।।।আমার দাদু ছোটো ছোটো মাটির পুতুল গড়তো,দাদু কে পাইনি।কিন্তু তাঁর পুতুল গুলো পেয়েছিলাম।আর সেগুলো ভেঙ্গে ভেঙেই ----------।অবশ্য একটু বড় হওয়ার পরে, অনেকপরে মাটির কাজ করেছি, আমলাপাড়ার বুবুন আর আমি মূর্তি গড়তাম।আমার মাটির কাজ ওর কাছেই শেখা। পরে আর মাটির কাজ করিনি।তবে ছবিটা আঁকতাম,মনের আনন্দেই আঁকতাম, সে অর্থে আমার আঁকার কোনো গুরু নেই। কিভাবে কি করতে হয় জানতাম না। অবশ্য আজও যে জানি সে দাবি করিনা আমি।আমি যেটুকু শিখেছি তা সময়ের পাঠশালায়। জীবনের চলারপথে যখন যা পেয়েছি আমি কুড়িয়ে নিয়েছি। ।।।।।।।।।জীবন জীবিকার সন্ধানে একসময় পুরুলিয়ার মাঠেঘাটে ,গ্ৰামে গঞ্জে অনেক ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে ,তাই পুরুলিয়ার প্রকৃতির সাথে আমার গভীর বন্ধুত্ব। আমার জন্মভূমির প্রাকৃতিক বৈচিত্র ,শিল্পকলা ,পরব পার্বণ ই আমাকে শিল্পী তৈরি করেছে। আমি পুরুলিয়ার দেওয়ালচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার মুগ্ধ হয়ছি।তেমনি ধূধূ প্রান্তরের ঐ দূউউউউর থেকে ভেসে আসা ঝুমুরের সুরে আমার মন উদাস হয়েছে ।আমি পু্রুলিয়ার গ্ৰামীন মেলা গুলোতে ছুটে গেছি রংএর টানে। পুরুলিয়ার মেলাগুলো ভীষন রঙিন, রংএর মেলাও বলা চলে। পুরুলিয়ার ধূসর প্রকৃতিতে এই মেলা গুলোই রঙের পরিপূরক বলা চলে।এখানকার সরল সদাহাস্যময় মানুষ গুলোর মতোই তাদের পোষাক ও ভীষন রঙিন। আমরা সারাবছর কোনোও না কোনোও পরব নিয়ে মেতে থাকি।অতি অল্প আয়োজনে আমরা আনন্দ করি। আসলে আমরা আনন্দের সুযোগ খুঁজি, দেওয়াল চিত্রের পরব ,গাছ লাগাবো তার পরব , পরব আর মেলার দেশ এই পুরুলিয়া।আমাদের অভাব আছে অভিযোগ নেই। ।।।।আসলে আমরা জানি যে আনন্দ ছাড়া সৃষ্টি হয়না।।।।।।।।।।।আমি ভাগ্যবান যে আমি পুরুলিয়ায় জন্মেছি, নাহলে প্রকৃতির এত বৈচিত্রময় রূপকে অনুভব করার সৌভাগ্য হয়তো হতোনা। এখানে প্রতিটা ঋতু কে প্রবল ভাবে অনুভব করা যায়।পুরুলিয়ার গ্ৰীষ্ম যেমন নির্মম , তেমনি বসন্তে আমরা মনেপ্রাণে রঙিন হয়ে উঠি। আবার শরতের মেঘেরদল যখন কাশফুলের সাথে গল্প করতে নদীতে নেমেআসে ,আমরা সে মিলন ও লুকিয়ে লুকিয়ে উপভোগ করি।জোছ্না রাতে পাহাড়ের ঐ পার থেকে ভেসে আসা মাদলের দ্রিমদ্রিম শব্দ মনকে মাতাল করে তোলে। এখানে মাঠেঘাটে রাখালের দল অবলীলায় বাঁশিতে সুর তোলে।।।।।।।।না না আমি কবি নই ।আসলে এটাকে বলে ধানভানতে শিবের গাজন । আমি বলতে চাইছি যে--- আমি যাকিছু শিখেছি সব এই জন্মভূমি থেকেই।।।।।।।।খুব সাধারণ পরিবারে অনেকগুলো ভাইবোন আর অভাবের সাথে বড় হয়েছি, তাই বেশি পড়াশোনা করাটা একসময় বিলাসিতা মনে হয়েছিল। ভাতের জোগাড় করতে তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম ।আর সেটাই আমার শাপে বর হয়ছিল। ঘরের চারদেওয়ালের বাইরের নির্মম জগৎটা আমাকে কানধরে অনেক কিছুই শিখিয়ে নিয়েছিল। যাক্ সে অনেক কথা।।।।।।।।।।কবি নির্মল হালদারের সূত্রে ভারত বিখ্যাত শিল্পী প্রকাশ কর্মকারের সঙ্গে যোগাযোগ আমাকে সমৃদ্ধ করে। পরবর্তী কালে ভারতের বিভিন্নপ্রান্তে প্রদর্শনীর কারনেও বহু শিল্পীদের সাথে পরিচিতি ঘটেছে।আমি সমৃদ্ধ হয়েছি। ।।।।।।শিল্প জগৎটাকে আমি কি দিতে পেরেছি জানিনা,তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিল্পের পথে চলার জন্য উৎসাহিত করতে পেরেছি ,এটাই আমার শান্তি। ।।।।।।।।।।।।।আমার শিল্পচর্চার ধারক ও বাহক আমার ছেলে "আকাশ" আমার এই পথ অনুসরণ করবে এই আশা রাখি।
___________________________________________________________
পুরুলিয়ার চিত্রশিল্পের ইতিহাস ঘাঁটলে জ্বল জ্বল করে উঠে আসে যে নাম সেই নাম হলো আশীষ নন্দী। উনি না থাকলে পুরুলিয়ার চিত্র চর্চার ইতিহাস সেইভাবে উঠে আসতো না বলেই মনে হয় আমার। শুধু তাই নয়, পুরুলিয়ার চিত্রশিল্পীদের মধ্যে উনিই সব থেকে সক্রিয় এবং সব থেকে শক্তিশালী বলেও মনে হয় আমার।
উনার এক একটা সিরিজ দেখলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। ছবিগুলো তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে সময় পেরিয়ে যায় বোঝা যায় না। তাছাড়া একই বিষয়কে উনি আমাদের থেকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার ক্ষমতা রাখেন বলেই এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে চিত্রায়িত করতে পারেন বিষয়গুলিকে। বিশেষ করে রামায়ণ মহাভারতের কাহিনী নিয়ে নির্মিত সিরিজ গুলো অনবদ্য।
উনার জন্ম ১৯৬২ সালের ৮ ই জুন। বাবা- --ব্রজমোহন নন্দী। দাদু ------রামকীঙ্কর নন্দী। মা ---মাধবী নন্দী, স্ত্রী---জয়শ্রী নন্দী, ছেলে----আকাশ নন্দী(চিত্রশিল্পী), মেয়ে ----বৈশালী নন্দী। পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে উনার বাসস্থান ও স্টুডিও। অনেকগুলো প্রর্দশনীও করেছেন ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে। উনার ছবি দক্ষিণ ভারত সহ বিভিন্ন প্রান্তের সংগ্রহ শালায় সংগ্ৰহও করা হয়েছে। সোজা কথায় বলতে গেলে চিত্রশিল্পী আশীষ নন্দী শুধু মাত্র আমাদের পুরুলিয়ার নয়, আমাদের রাজ্যের তথা দেশের গর্ব।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
Amazing art & artist. Very much soft but witty. He is clear in expressing himself
উত্তরমুছুনRare art and amazing artist.Very much appreciated
উত্তরমুছুনসব ছবিগুলো দুর্দান্ত। আমার প্রিয় শিল্পী। শ্রদ্ধা জানাই।
উত্তরমুছুনখুব ভালো।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ সব ছবি..
উত্তরমুছুনভাল লাগল ছবিগুলো। শিল্পীর নিজের কলমে তাঁর শিল্পী-জীবনের কথা থেকেও জানলাম অনেক কিছু। ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনধন্যবাদ
মুছুনসবকাজ গুলিই অনবদ্য৷ ছবিগুলি আশীষ দার নিজস্ব ঘরানা ও স্বাতন্ত্র্য বহন করছে ৷ দেখতে দেখতে তন্ময় ও বিভোর হয়ে পড়ি
উত্তরমুছুন---- শ্রীদাম কুমার