দ্বিতীয় বর্ষ ।। দ্বিতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ।। ১০ মে ২০২১



মন  ভালো নেই। কেন না মানুষ ভালো নেই আজ। অসংখ্য প্রিয় মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন একনাগাড়ে। আশঙ্কার মধ্যে বেঁচে আছেন বাকিরাও।
         কেবল করোনা নয়, আশঙ্কা অনেক কিছুর। কালোবাজারি মুনাফাখোরদের দখলে পুরো পৃথিবী। আমাদের বাঁচার জায়গা কোথায়? করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ। আরো বেশি ভীতসন্ত্রস্ত না খেয়ে মরার আশংকা থেকে। লকডাউন, আধা লকডাউন, স্থানীয়ভাবে লকডাউন, এসবের ফলে কর্মচ্যুত মানুষের কাছে আর্থিক যোগান একেবারে তলানিতে। তার উপর যোগ হয়েছে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। দু'মাস আগেও যে দ্রব্যের দাম নাগালের মধ্যে ছিল সেই দ্রব্যের দাম বর্তমানে চার গুণ বেড়ে সাধারণ এবং মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে একই দ্রব্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে বেশি বেশি অর্থ খসে যাওয়ার কারণে ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। সেই সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে মরসুমি অসুখ-বিসুখের পালা করে আসা যাওয়া।
            হসপিটালে ভর্তি হতে গেলে বেড নেই, ডাক্তার নেই, নার্স নেই, নেই ঔষধ। সরকারি সাধারণ চিকিৎসা একেবারে গোল্লায়। বেসরকারি হসপিটাল বা নার্সিং হোমে গেলে গাঁট কাটার কাঁচি নিয়ে বসে আছে তারা। রোগীকে সুস্থ করে তোলার নামে মানুষকে ফাঁদে ফেলে যে অবস্থায় ফেলা হচ্ছে তাতে ঐ রোগীর পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে সংকটময় হয়ে উঠছে। যাকে পূরণ করা সম্ভবত ৫ বছরেও অসম্ভব হয়ে পড়বে ঐ পরিবারের পক্ষে। তাই কখন কি হয়ে যায় এরকম একটা দোলাচলের মধ্যে বেঁচে আছে মানুষ। মানুষ ভালো নেই আজ। তাই মন ভালো নেই।


উত্তম মাহাত, সম্পাদক

________________________________________________



তবুও শিকার, শিকার অব্যাহত...


                            তপন পাত্র



                  
পুরুলিয়া তথা সমগ্র মানভূম এলাকায় যে আদিবাসী সাঁওতাল জীবন, তার ছন্দ অপরূপ নৃত্য ভঙ্গিমায় সমৃদ্ধ । যেন উল্লম্ফন ! এমনিতেই তাঁদের হৃদয় নাচে বিনে বাজনাতে, আর বাজনা পেলে তো কথাই নেই । অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনযাপনটাই আনন্দ-উন্মত্ততায় ভরপুর আর ছুতো পেলে তো সোনায় সোহাগা । তাঁদের জীবন-জিজ্ঞাসার জটিল তত্ত্বের আলো-ছায়ায় লুকিয়ে আছে  আনন্দমুখর জীবন দর্শনের অমল আবেশ । একদা তাঁদের জীবনদর্শন ছিল অনেকটাই ---"নাচো ,গাও, খাও ,পিও; জিও -জিও -যুগ যুগ জিও ।" এখন সেই ছন্দে অংশিক পরিবর্তন ঘটেছে, রচিত হয়েছে জীবনের নব প্রকরণ । তবু তাঁরা এখনো একথা বলে আনন্দ পান যে, আমাদের "সিনালেই সাঁকরাত আর খা'লেই পরব" , অর্থাৎ তাঁদের জীবনে এই পরম সত্যটি বর্ণে বর্ণে প্রতিধ্বনিত যে "আনন্দই ব্রহ্ম", তাইতো তাঁদের ভাবসত্য ---"রড়গে সেরেঞ, তাড়াম্ গে এনেচ্" অর্থাৎ " বললেই গান আর চললেই নাচ" । আদিবাসী জীবন নদীর কিণারে আজও কান পাতলে শোনা যায় ----
      " জম আবোন ঞুয় আবোন
         রৌস্কৌ'রে বোন তাঁহেনা
        জিয়ৌন খাবারে --
        দাঃ বোনঞুয়া ।"
----অর্থাৎ "খাবো দাবো মকমকাবো , জীবন নদীর জল পান করবো ।"


              ---এই যাঁদের ভাবধারা ও চিন্তাপ্রবাহ, তাঁদের বারো মাসে তেরো পার্বণ , তের না হলেও বারো মাসে তো বারো পার্বণ অবধারিত । মাসে মাসে "গাদা বঙ্গা, গাদা বুরু , গাদা গাদা বঙ্গা-বুরু" । নানান দেব-দেবীর , প্রকৃতির পূজা অর্চনা । আর সেই উপলক্ষে মাংস ও হাঁড়িয়া , দাকা আর  ভালো-মন্দ বেসাতি । ধমসা মাদলের সুরে সুরে দিনরাত "এনেচ-সিরিঞ" , নাচ-গান । সব সময় যেন আত্মহারা ।

          সাঁওতালদের নববর্ষের প্রথম মাস "মাঘ মাস" । মাঘ মাসে ভানসিঞ্-মানসিঞ্ অর্থাৎ সূর্য উপাসনা এবং জাতরা অর্থাৎ আ'খ্যান যাত্রা উদযাপিত হয় । দ্বিতীয় মাস ফাগুন মাসে উদযাপিত হয় বাহা বা সারহুল বা সারুল উৎসব । চৈত্র মাসে বারৌণী , বৈশাখ মাসে সেঁদরা কারকা অর্থাৎ শিকার উৎসব । জ্যৈষ্ঠ মাসে রহনি, আষাঢ় মাসে আম্বাবতী, শ্রাবণ মাসে হাড়য়ার সিম , ভাদ্রমাসে ছাতা পরব , আশ্বিন মাসে দাঁসায় পরব ও কারাম পরব ইত্যাদি । 
আর কার্তিক মাসে তাঁদের শ্রেষ্ঠ পরব সহরায় , অগ্রহায়ণ মাসে জান্থাড় এবং পৌষ মাসে সহরায়-সকরাত ইত্যাদি । এক কথায় উৎসব পরব-পা'ল, পালা-পার্বণের শেষ নেই ।

                   এখন যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তা হল সাঁওতালদের বৈশাখ মাসের শিকার উৎসব ।

                    শিকার উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি-অযোধ্যা পাহাড় । সহস্রাধিক বছরের প্রাচীন এই উৎসবের আজ প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে । শুধু পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষ নয় সারা পৃথিবীতেই বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমছে । যতো কমছে ততো তার কুপ্রভাব পড়ছে মনুষ্য প্রজাতির ওপর । সাম্প্রতিককালের করোনা সমস্যা তার একটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । এই কারণে যাতে দিকে দিকে পাহাড়ে জঙ্গলে পশু শিকার না হয়,  তার জন্য সুস্থ-সুন্দরভাবে মানুষকে সচেতন করার নানান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । এটি একটি শুভ লক্ষণ । মানবজাতির শুভচিন্তার সুন্দর বহিঃপ্রকাশ । সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো অযোধ্যা পাহাড়েও যাতে আর পশুহত্যা না হয় তার জন্য বনদপ্তর, প্রশাসন এবং নানান বেসরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কর্মকান্ড নিয়ে এগিয়ে এসেছে, আসছে ।

               অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন গ্রামগুলিতে ঢোল পিটিয়ে, মাইক বাজিয়ে বনদপ্তর প্রচার চালাচ্ছেন যাতে আর পশু শিকার না হয় । নাটকের মাধ্যমে রোড শো করে, আদিবাসী সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে ছো পালা পরিবেশন করে, দেওয়াল লিখনের মধ্য দিয়ে, হাজার হাজার প্রচারপত্র বিলি করে মানুষকে সচেতন করে তোলা হচ্ছে । পাহাড়-জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় দেওয়ালে দেওয়ালে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি এঁকে তার পাশে লিখে দেওয়া হচ্ছে "আমাদের মেরো না, আমাদের বাঁচতে দাও", "এই পৃথিবীতে আমারও বাঁচার অধিকার রয়েছে","বন্যেরা বনে সুন্দর , শিশুরা মাতৃক্রোড়ে", "আমাকে প্রাণে মেরো না , আমি বাঁচতে চাই" ইত্যাদি ইত্যাদি নানান উদ্ধৃতি । কোথাও লেখা হচ্ছে ছড়া ---
        "করো না মোদের বন্দী
         নিও না মোদের প্রাণ
         শখের জন্য গেও না তুমি
         পশু হত্যার গান ।"

           দেওয়াল লিখন, নাটক ও ছো নাচের মধ্য দিয়ে প্রচার, ঢোল পিটিয়ে ঢেড়া দিয়ে, ডেংরা পিটিয়ে, প্রচারপত্র বিলি করে , সমবেত জনতার মাঝে বক্তৃতা রেখে কিছুতেই কিছু কাজের কাজ হয় না । তীরন্দাজী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিজয়ী শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করেও কোন লাভ হয় না । পুলিশ প্রশাসন, বনদপ্তর, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, নানান সামাজিক সংস্থা সকলের প্রচেষ্টাই সম্পূর্ণ ব্যর্থ ।

                    প্রতিবছর বুদ্ধপূর্ণিমা এলে বাংলা, ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম সহ বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের তীর্থভূমি মানভূমের অযোধ্যা পাহাড়ে আসবেনই , শিকার উৎসবে মাতবেনই ‌। হাজার হাজার বছর ধরে পালিত হয়ে আসা এই সম্প্রদায়ের মানুষের আবেগ ও ঐতিহ্যকে প্রকৃতপক্ষে আঘাত করতে চায় না কেউ, শুধু কিছু সচেনতার বার্তা দিতে চায় ।

               পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকার মতো ভারতবর্ষেও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবস্থান লক্ষ্য করা যায় । আমাদের দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতালরা অন্যতম প্রধান বলেই মনে হয় । এবং সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে এঁদের সংখ্যাধিক্য । 

            হিন্দু সমাজের যেমন পঞ্জিকা নির্ভর উৎসব উদযাপিত হয় এঁদের উৎসব কিন্তু পঞ্জিকা নির্ভর নয় ,  প্রকৃতি কেন্দ্রিক । প্রকৃতি তাদের আরাধ্য দেবী , ভিন্ন ঋতুতে ঋতুতে চলে প্রকৃতির আরাধনা, পূজা । 

               প্রতি  বুদ্ধ পূর্ণিমায় আদিবাসীদের শিকার উৎসব তেমনি একটি প্রকৃতি কেন্দ্রিক ঐতিহ্যমন্ডিত উৎসব । আদিবাসী রামায়ণে যে রামচন্দ্রের কথা আছে , আদিবাসীরা মনে করেন সেই  শ্রী রামচন্দ্র এবং সীতাদেবী তাঁদের পরিবারেরই নর-নারী ‌ । যদিও স্থানভেদে কাহিনীগত এবং বিশ্বাসগত বেশকিছু প্রভেদ রয়েছে । থাকাটাও স্বাভাবিক । কারণ তাঁদের রামায়ণ রচিত রামায়ণ নয়, বংশপরম্পরায় মুখে মুখে শুনে আশা শ্রুতি রামায়ণ । তাঁদের মনে এখনও বিশ্বাস পুরুলিয়ার অযোধ্যাই হচ্ছে শ্রীরামচন্দ্রের জন্মভূমি । সহস্রাধিক বছর আগে না কি সমস্ত আদিবাসী সমাজের বীর যোদ্ধা জড়ো হয়েছিল অযোধ্যা পাহাড়ের চূড়ায় ।  তাঁদের হাতে ছিল বাদ্যযন্ত্র কাড়া-নাকড়া , সিঙ্গা । আর তীর ধনুক ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র । দিকে দিকে ঘোষিত হয়েছিল শ্রী রামচন্দ্রের সমর্থনে আদিবাসী যুবকেরা যুদ্ধে রওনা দেবে , রাজা রামচন্দ্রের সমর্থনে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য । তখন থেকেই শিকার উৎসব আদিবাসী সাঁওতাল যুবকদের শৌর্য-বীর্য-বীরত্ব ও পৌরুষের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে । সেদিন অস্ত্রসস্ত্র ও নানান বাদ্যযন্ত্রের প্রচন্ড শব্দে গড়ন জঙ্গল থেকে বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ার বেরিয়ে এসেছিল । তাদের আক্রমণের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য বধ করতে হয়েছিল সেই সমস্ত প্রাণীদের । এই বিশেষ পরিস্থিতিতে যে ঘটনা ঘটেছিল পরবর্তীকালে তা প্রথাতে পরিণত হয়েছিল, ক্রমে তা প্রায় আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়ে  গেল ।

          এখন প্রতি বৎসর বুদ্ধপূর্ণিমার আগের রাতে পিতলের কলসীতে জল ভরে শালডাল ডুবিয়ে রাখা হয় । ভোরবেলা শালডালগুলির রং দেখে শিকার সম্পর্কে নানা বিষয় অনুমান করা হয় । সাঁওতাল পুরুষেরা শিকারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন, মহিলারা পুরুষদের জন্য মহুয়ার মোয়া ভাত তরকারি তৈরি করেন । শিকার থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত মহিলারা কোনরকম প্রসাধন ব্যবহার করেন না । কোন কোন এলাকার সাঁওতাল যুবক শিকারে যাবার সময় স্ত্রীর হাতের নোয়া ও শাঁখা খুলে সঙ্গে নিয়ে যায় । বীরত্বের সঙ্গে ফিরে এলে সেই শাঁখা ও নোয়া পুনরায় স্ত্রীর হাতে ওঠে । শিকারে কোনো রকম বিপদ হলে তিনবার ঘন্টা বাজানো হয় । ঘন্টার শব্দ পেয়ে সকল শিকারী সেখানে গিয়ে পৌঁছায় । শিকার বিষয়ক আলোচনা হয়। শিকার করা জীবজন্তুর ভাগবাটোয়ারা নিয়েও নির্দিষ্ট নিয়ম আছে , সেই নিয়ম আজও মেনে চলা হয়।

       শিকারের দিন দিনভর শিকারের পর সন্ধ্যায় সামাজিক বিচারসভা অনুষ্ঠিত হয় । এর নাম "ল-বীর-বাইসি" । সমাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম ‌। এটি সাঁওতাল সমাজের সুপ্রীম কোর্ট । এই সভা কেউ কেউ মনে করে শতশত বছরের পুরোনো, কারো কারো মতে হাজার হাজার বছরের পুরোনো ‌। শিকারের পাশাপাশি বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন অযোধ্যা পাহাড়ের গড়ধাম বুরুমেলায় প্রকৃতির পূজা-অর্চনাও হয় । এখনো সমাজের বিচারসভা বসে পাহাড়ের চূড়ায় ।

                অনেক সময় প্রশ্ন ওঠে,  বুদ্ধ পূর্ণিমার মতো শান্তিপূর্ণ ও অহিংস তিথিতে পশু শিকার কেন ? বয়স্ক সাঁওতালদের উত্তর ---এই শিকার উৎসব এর প্রচলন বুদ্ধের জন্মেরও অনেক আগে । ভগবান বুদ্ধের জন্মের দিনে শিকার উৎসব নয় , কিন্তু শিকার উৎসবের দিনে যদি বুদ্ধদেবের আবির্ভাব ঘটে তাতে তো একটি সমাজের সংস্কারের বদল হতে পারে না , ঐতিহ্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে না । আমাদের সমাজে একটি কথার প্রচলন আছে "রাম না জন্মাতেই রামায়ণ", সাঁওতাল পন্ডিত এর ব্যাখ্যা আসলে এর অর্থ রামায়ণ রচিত হবার বহু পূর্বেই তাঁদের বংশে শ্রী রামচন্দ্র ও সীতা দেবীর জন্ম। শিকারে সোনার হরিণ শিকারের প্রসঙ্গ রয়েছে । কিন্তু কোথায় সোনার হরিণ ? সমাজের একশ্রেণীর মানুষের বক্তব্য , তাঁদের মধ্যে মূর্মু সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন, যারা মনে করেন হরিণ থেকেই তাদের জন্ম তাই সোনার হরিণ এর পরিবর্তে পাহাড় থেকে তারা সংগ্রহ করেন স্বর্ণচাঁপা  বা চাঁপা ফুল । শিকারে যাবার সময় যুবকেরা বাড়ির মহিলাদের বলে যান দু'দিন তারা যেন বাইরে না বেরোয় । এ যেন লক্ষণের গণ্ডি এঁকে দিয়ে যাওয়া । মহর্ষি বাল্মীকির রামায়ণ নয়, কৃত্তিবাসী বাংলা রামায়ণও নয়,  আর তুলসী দাসের রামচরিত মানসও নয় আদিবাসী সাঁওতাল সমাজ তাদের নিজস্ব বংশপরম্পরায় শুনে আসা রামায়ণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও পালন করে চলেছেন শিকার উৎসব । আজও যেন তাঁদের মনের কথা ---"তোরা যে যা বলিস ভাই , আমার সোনার হরিণ চাই " । এই সোনার হরিণ স্বর্ণ চম্পা , যা তাঁরা অরণ্য থেকে সংগ্রহ করে এনে স্ত্রী বা প্রেমিকাকে উপহার দেয় । বীরত্বের প্রতীক হিসাবে তুলে ধরেন ।  তাই শিকার আজও ওদের মনন চিন্তনে হত্যা নয়, বিজয় উৎসব । সীমন্তিনী সতী সীতা উদ্ধারের অমল উল্লাস ।


                            _________


কবিতা

(প্রতিমা ঘোষের প্রয়াণে)

নির্মল হালদার


একই পথে কী দুজনের যাওয়া?
একই খুশিতে যাওয়া?
কানাকানি করছিল গাছেরা।
মাটিতেও মেঘ এসে জানতে চাইছিল।

হাত ছেড়েও হাত ছাড়লোনা দুজনেই।

একটা শোক
আরেকটা শোকের আবহ রচনা করে।




২১ শে এপ্রিল, ২০২১

পারমিতা ভট্টাচার্য


কেউ ভালো নেই,
মাথার উপর মেঘের চাদর―
চোখের পাতায় দৃশ্য ভেজা, ভোরের খবর...

শঙ্খবাবু, একটু দাঁড়ান !

দিন কেটেছে অবজ্ঞাতে,
শাকান্ন কি মাংস ভাতে―
ভাবছি না আর ;
কোনোক্রমে কাটিয়ে দিচ্ছি একটা জীবন !
বই এর তাকে শঙ্খ ঘোষ আর গীতবিতান
পথ দেখাচ্ছে ঝড়ে, জলে
গুমোট রাতে...

খুব কি তাড়া? 
একটু না হয় থাকত আলো,
শহর জুড়ে সন্ধ্যা হত একটু পরে...
ভাসত আজান, দুঃসময়ে জানু পেতে
বসবে কে আর ?

শঙ্খবাবু , সত্যি বুঝি একলা গেলেন?
ধাবমান এই জলের টিলায়
শূন্য হাতে,
থাকবো তবে কার প্রহরায়!

শঙ্খবাবু ,
ময়দান নয়, আ-সমুদ্র-হিমাচল আজ 
ঢাকছে দেখুন
ঘোর কুয়াশায়!!





সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা


১.
উজবুক


অনেক হলাে সেন্টুমুখর দিনের কারসাজি,
অনেক দেওয়ালে মূত্রত্যাগী সােশাল মিডিয়া।
অনেক হলাে গিটারে মােমবাতির মিছিলে
শিথিল পেশী ফ্ল্যাশ-মব সব মাতাল ও উজবুক।

এই না হলে সুশীল সমাজ! সুশ্লীলতার দায়ে
গন্ধ মেখে মৌলবাদের, বাঁচবার আক্কেলে,
সমবাদী এই পেঁচো মাতালের যকৃৎ ফুলে ঢোল,
পোঁদে ছাপ দিয়ে চুমু দেবে বলে ওঠাচ্ছে চিবুক!

অতীত এখন গড্ডালিকায় স্বপ্নযানে আসীন।
ভবিষ্যতের অট্টালিকায় আর দেবাে না হত্যে।
বর্তমানে জমছে খবর, ভ্যাকসিন টকঝাল।
অশ্রুভেজা আয়না এখন সদাই হাস্যমুখ...।




২.
পরিনাম


কথামুখ অন্তে গিয়ে ভাবি
বলা কথা আরবার পাড়া
পকেটে ঘরের বুড়ো চাবি
মাসে মাস গুণে যায় ভাড়া

পংক্তি ‌অন্ত্যমিলে গাঁথা
বাঁচার গদ্যে নেই মিল
কত দড়ি আছে ফাঁসবাঁধা
কত দোর আসলে নিখিল

লাক্ষা জ্বললে জতুগৃহে
পোড়ে কাঠ পোড়ে না তো মাটি
জামা তো আঁটে না এই দেহে
আমিই জামার নিচে আঁটি

সিঁড়িতে গড়িয়ে গেলে ঘটি
ভস্মভার স্রোতে গিয়ে মেশে
নদীতে ভাসতে থাকে চটি
যদিতে জোয়ার এলো শেষে



৩.
কবির জন্য


জলের বুকে রং, তুলি, ছবি। 
ক্যানভাসে বানভাসে কবি। 
রক্তিম মরীচিকা জলে দিনান্তরেখায়। 
কবির নাম জ্বলে দিগন্তলেখায়। 
ডুবে যায় সূর্য, ডোবে ঘট, দিনাঙ্ক। 
ধুলোয় মেশে ঘুমিয়ে পড়া শঙ্খ।।





কুমারেশ তেওয়ারীর কবিতা


১.
এখানে আমার বাড়ি


ইচ্ছে হলেই চলে আসতে পার  
খুব খোলামেলা স্পষ্ট এই বাড়ি 
                                বেড়া নেই এবং কুয়াশা
রাতসূর্য ঝুলে থাকে ছাদের উপর

আমার তো ঘোড়া নেই কোনও
গ্যালপের কাছে নেই পেতে রাখা তুমুল বিভ্রম 
পরানবঁধুয়া এক সেতার রয়েছে তার
                                             সোহাগের ঝালা

বাজালেই দেয়াল টিকটিকি শ্রোতা হয়ে আসে 
চোখের ভেতরে তার ধ্যানস্থ ঈশ্বরী
সুরের প্রার্থনা রাখি, অনন্ত রাগিণী

চোখ খুলে গেলে তার দেখি 
চোখের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে  
                                               সাদা কবুতর
আমার সঙ্গেই চলে নিত্য বকমবকম
তোমার কথাই বলি মধুবাতা কথা

এখানে তো ঘটনা ঘটে না কোনও 
পায়রা হয়েই উড়ে যায়, টিকটিকিও 
জিভ চাটতে চাটতে ফিরে যায় 
নিজস্ব ঘুলঘুলিতে তার         
                                      বাসার দিকেই

ঘরের দেয়ালগুলি শুধু আরও 
                                           সাদা হয়ে ওঠে

   


২.
মন্থন


দুধ ফুটিয়ে ফুটিয়ে সর তুলে রাখতো মা। সরের উপরে সর জমে জমে যখন তা মন্থন উন্মুখ,বাবা মাঠনায় শুরু করতেন সরের মাঠন। বাবা যখন মাঠনা ঘোরাতেন সরের হাঁড়িতে, পুরাণের পাতা থেকে উঠে আসতো সমুদ্র মন্থন। 

হাঁড়িটি সমুদ্র হলে মাঠনাটি মন্দার পর্বত। 
আবার মাঠনাটিকে বেড় দিয়ে রাখা বন্ধন দড়িটি যেন অনন্ত বাসুকী।  

মন্থনের শেষে ননী ভেসে উঠলে মা ননী ছেঁকে কড়াইতে রেখে উনুনে চাপাতেই ঘি গন্ধে ম ম ঘর। থালায় থালায় বাড়া ভাতফুলের উপরে ঘিয়ের সংরাগ এসে পড়তেই সপ্তমের ঘরে পৌঁছে যাওয়া আমাদের খিদে, ধীরে ধীরে ফিরে আসতো সমে। 

বাবা বলতেন মন্থনই আসল। ঠিকঠাক হলে সরের গোপন ছেড়ে উঠে আসে ননী ভাসন্ত মুদ্রায়। আবার ননীরও দহনের মাপকাঠি আছে। যথার্থ দহনে ননী ঘৃত রূপ পায়। 

বাবাকে কখনও দেখিনি ঘি খেতে। ঘোলের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে খেতেন বাবা।





সুপ্রিয় দেওঘরিয়ার কবিতা


১.
আরোগ্যের ঠিকানা


মুক্তির ডানা লুকানো রয়েছে
অসুস্থতার পৃথিবী,
বন্ধনে-বন্ধনে আড়ষ্ট সব
ভয়ে ভয়ে দিনলিপি!

কাটিয়ে চলেছি দিনকাল ভার
আবার হয়ত দেখব বলে
পদ্মপাতায় জমেছে শিশির
তার ওপরে ভ্রমর খেলে।

পড়তে চলেছে ছেলেরা সব
সারি সারি দু'পথ দিয়ে
ভোরের বাতাসে কৃষ্ণচূড়ায়
দোয়েল উঠছে গান গেয়ে।

কমলা রঙের পূব আকাশে
ভোরবেলার আলো
বলে, সবুজ মাঠের প্রাণবায়ু
হৃদয়ে পুরে চলো।



২.
দাঁড়াও সবে


প্রতিক্ষণে চিনছি নিজেদের
মাটি জল হাওয়া
করবীর ডালে দেখে রয়েছি
ফুলে-ফুলে ভরে যাওয়া

হাতগুলো যে বাড়িয়ে দেব
সে সাহস আজ নেই
মানের জোরে বাঁচালাম তোমায়
ভয় পেলে তুমি যেই

মানুষকে ভয় পাইনি কখনো
মানুষের মাঝে মানুষ হয়
নিজেকে আঁকড়ে বাঁচার স্বপ্ন
সংগোপনে বলছে জয়

কষ্ট-দুঃখ-কাজ-যোগ-অভাব
মানে না কোনো সময়
তাদের পাশে দাঁড়াও সবে
যেন সবাই টিকে রয়




দেবাশিস মন্ডলের কবিতা


১.
পথের অনুভূতি


নগ্ন-পা ফেলে পথের বুকে
হেঁটে যায় পথিক
গন্তব্যের দিকে ...
যেখান থেকে শুরু হয়েছিল
পথিকের পথচলা, অদৃশ্যমানতায়
হয়ে আসে ফিকে ...
দৃষ্টি যায় অচেনা সমুখে ।
গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই পথিক
বুঝে নেয় পথের ভালোবাসা,
আর যা কিছু ইতি-উতি ..
শুধু বুঝি না আমি
পথিকের নগ্ন পায়ের ছোঁয়ায়
পথের অনুভূতি !


২.
রুটি


রোজ সন্ধ্যায় আমরা রুটিনমাফিক
রান্নাঘরের এক কোণায়
রুটির মতো গোল হয়ে বসে
অপেক্ষা করতাম।
কাঠের উনুনে মা রুটি সেঁকত,
যেন একাদশীর চাঁদ !
বাবা বারান্দায় দড়ির খাটে শুয়ে
আকাশের দিকে চেয়ে থাকত ।
ওই বারান্দা থেকে চাঁদ দেখা যায়।
একবার পূর্ণিমায় আমাকে ডেকে
বাবা বলেছিল- চাঁদটা কেমন রুটির মত
গোল হয়েছে দেখেছিস !
বাবার চাঁদকে দেখে রুটির কথা মনে হত ।
আমরা তখন বুঝতে পারতাম না
চাঁদকে বাবার কেন রুটি মনে হয় !
এখন সব বুঝি।
আকাশের চাঁদ আর গরিবের রুটি
দুটোরই সমদূরত্বে অবস্থান।
আসলে , বাবা পরদিনের রুজির কথা ভাবত।
যে রুজি মায়ের হাত দিয়ে রুটি হয়ে,
রুটির মতো গোল হয়ে বসে থাকা
আমাদের টিনের থালায় এসে পড়ত ।




সুজন পণ্ডার কবিতা


১.
নিম ফুল


ছুঁয়েছি গভীর রাত, 
আর বারবার
ফিরে গেছি আগুনের পাশে।
নিম ফুল ফুটেছে কি, 
ঝিঁঝিঁ পোকা জোনাকির দেশে? 
ঘুম ভেঙ্গে গেলে
মাঝরাতে, শিয়রে বসেছে তারা নেমে এসে।

এখনো কি প্রতীক্ষায় আছো;
সেই নদী তীরে? 
উঠে এস, 
যেভাবে উঠেছে চাঁদ, 
মাছের আঁশের আলোয়... 
দেখ নিম ফুল ফুটেছে কি 
জোনাকির দেশে? 
আমাদের অতীত হয়ে...


২.
দাগ


জল ছাপ ছেড়ে গেছ
সারাটি উঠোন
আর ছাদময়...
বয়স রেখেছে দাগ পাখির পায়ের মত
ছাই উড়ে ঢেকে দেয়
আগুনের দাগ...
পাওয়া আর না পাওয়া যা কিছু

আমার অস্তিত্ব মহাকাশের ধুলোয়
আমার নাভি মূলে ফুটে ওঠে
দুটি তারার স্পর্শ
আমার জন্মদাগ হয়ে




সৌরভ লায়েকের কবিতা


১.
শিরোনামহীন কবিতা


অভিমানী ডানা থেকে ঝরেছে পালক
বাঁশটিয়া মিশে গেছে সবুজ সবুজে সারাদিন

এতো আলো ! স্বাদ হীন 
                                   গন্ধ হীন

হিতৈষী রাজার কাছে আমাদের আয়ু
                                   গচ্ছিত রাখতে গিয়ে

ভুল বশে নাম গেছে গুপ্ত চিত্রের খাতায়

জেনেছি যখন 
                      আমাদের দেরি হয়ে গেছে 




২.
বিলোচন বসে আছে ঘরে


যতোটা সহজ হতে চাইছো আমার কাছে
আমি তার চে' জটিল অঙ্ক শিখছি

একটি বাউন্সার ডাক করে
পরের বলটা আপার কাট মারবো তাই

বিলোচন সেদিনের থেকে
                          ঘরে বসে আছে

পদ্যের জটিল অঙ্ক নিয়ে
                     তার সাথে খেলা খেলি

২.৫ ঘর এগিয়ে যায় ঘোড়া
চেকে মেট বলে এগিয়ে আসে মন্ত্রী আমার ঘরে

এতোটা সহজ হতে চাইছো
আমি তার চে' জটিল অঙ্ক শিখছি

সেদিনের থেকে
             বিলোচন বসে আছে ঘরে 



৩.
ফিরে গেছে বিলোচন


ভ্রান্তির কাছে ভয়ানক সঁপে দিয়ে
ফিরে গেছে বিলোচন

আলেয়া-জাহাজ চোখের সমুদ্রে
টিমটিম জ্বলে 
                   নিভে গেছে কতকাল

শেষ ফাল্গুনে বৃষ্টি হয়েছিল এখানে
তারপর মরুবুক
                    তারপর লম্বা লাইনে
প্রতিদিন ঝগড়া দেখে দেখে
           অ্যা'লে গেছে ফচকা যুবক 

এখন শুধুই ঘুমায়
                   গাঁজা খায়
                           কাজ নাই 
তাই
ভ্রান্তির কাছে আমাদের ভয়ানক সঁপে দিয়ে
ফিরে গেছে বিলোচন





লাঠি যখন বিচারক 

পলাশ মাহাত


বেশ কিছু দিন ধরে সুবোধ রায় আর মিনতি রায়ের বনিবনা হচ্ছে না । যদিও এরা দুজন স্বামী স্ত্রী । বয়েস পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে । যৌবনের শেষ লগ্নটি এখন বিদায়ের অপেক্ষায় । ছেলে নেই তাদের , একটি মেয়ে আছে , তবে তার বিয়ে হয়ে গেছে সেই কস্মিন কালে । এখন এরা মাত্র দুজন , স্বামী আর স্ত্রী। তার চেয়েও বলা ভাল বুড়ো আর বুড়ি । সুখের সংসার হওয়ার কথা  কিন্তু হয় না । হবে কি করে ? এখন যে বনিবনা হচ্ছে না দুজনের । একজন আর এক জনের চোখের বিষ । দেখতে পারে  না কেউ কাউকে ।
 এমন হচ্ছে এই  তিন মাস যাবৎ ।   আগে কিন্তু বেশ ভাল ছিল । আদর্শ দম্পতির মত জীবনযাপন করত । দাম্পত্য প্রেমও ছিল চোখে পড়ার মত ।  দেখে শিখত লোকে। তারপর কোনদিক থেকে কি হল ভগবান জানে , আর বনছে না কিছুতেই ।
 প্রথম প্রথম  একে অপরকে দোষারোপ করে ঝগড়া ঝাটি করত তারা  । কিন্তু  মারামারি নয় । সুবোধ রায় আজ অবধি কোন দিন বউয়ের উপর হাত তুলেনি ।  সে আক্কেল আছে তার । ঝগড়া বেশি হলে দুজনই রেগে মেগে দু দিকে মুখ করে থাকে । যেন এই জীবনে কেউ আর কারও মুখ দেখবে না এমনি করে ফুসতে থাকে দুজন ।  তবু এক সঙ্গে এক ঘরে ঘুমাত । সারা রাত  কথা বলত না কেউ কাউকে ।
এমনি করে মাস খানেক চলে । তার পর হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় দোষারোপ করা । এমন কি দোষ দেখলেও কেউ আর মনের রাগ ঝাড়ে না । জুলজুল চোখে চেয়ে থাকে। চুপচাপ ।  যেন সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে আপনাআপনি । দুজনের মন গুমরে থাকে । মনের দূরত্ব বাড়ে , বাড়তেই থাকে । মিনতি রায় রান্না করলে সুবোধ রায় সেই রান্না জিভে ছোঁয়ায় না। মুদির দোকান থেকে চিড়ে মুড়ি যা হোক কিছু কিনে এনে খায় । তা দেখে  বুড়িও রান্না করা  বন্ধ করে দেয় । আর নিজেও দোকানের খাবার জিনিস খেয়ে পেট ভরায় ।
 দুদিন যায় । কিন্তু ভাত না খেলে কি আর পেট ভরে ?  বুড়ি কষ্টেসৃষ্টে থাকতে পারে বটে , মুশকিল হয় বুড়োর । ভাত চাই , ভাতের জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে । তবু বুড়িকে কিছু বলে না আত্মগরিমায় । বলা মানে তো নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করা ,  হার স্বীকার করা  ,যা সুবোধ রায় এই জীবনে  করতে পারবে না । এদিকে পেটে যেন ইঁদুর ডন মারছে । কি  করা যায় ভাবতে ভাবতে শেষমেশ নিজেই রান্না শুরু করে দেয় । হবিস্য করার মত যৎসামান্য চাল ফুটিয়ে খায় । বুড়ি চেয়ে চেয়ে বুড়োর কান্ড কারখানা দেখে , তা দেখে  বুড়ো তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় বুড়ির দিকে ।  বুড়িরও মন জ্বলে ওঠে তখন । আবার  দয়াও আসে স্বামীর কষ্ট দেখে। ভাবে , কি দরকার অত কষ্ট করার ? আমাকে বললে কি রেঁধে দিতাম না ? হাজার হোক আমি তো তার বিয়ে করা বউ । একটু তো জোর দেখাতেই পারত ? কিন্তু দেখায় না , মিনসের কি ফুটানি । আমিও দেখছি এই ফুটানি কত দিন থাকে তার ? সেই তো শেষে আমাকেই খোসামুদি করতে হবে । আমি ছাড়া তার গতি নেই  ।
বুড়িও নিজের অভিমানে অনড় , আগ  বাড়িয়ে সে- ও কথা বলবে না।  নিজের অতটা ভাত রান্না করে সে- ও খায় । এক কথায় বুড়ি বুড়ো পৃথক হয়ে যায় । এখন আর একটা ঘরে ঘুমাই না পর্যন্ত ।  
সুবোধ রায় একটু ডাগর ধরনের  চাষী । বছর দিন যাওয়ার মত ধান চাল হয় ।  বিকে কিনে নিশ্চিন্তে চলে যায় । কিন্তু মুশকিল দেখা দেয় এইবার , আগে যে পরিমান চাল বিক্রি করা হত এখন পৃথক হওয়ার দরুন তার ডবল বিক্রি  হচ্ছে । এমনি  কিছু দিন চললে পথে বসতে  বেশি দেরি নেই , বুড়ো বুড়ি দুজনেই বোঝে । কিন্তু ওই যে অভিমান ! কেউ কাউকে কথা বলে না । রেষারেষি করে ধান বিক্রিটা দিনকে দিন বাড়ে ।
বুড়ি মনে মনে হিসাব কষে ,  বড় জোর আর তিন মাস । তার পর কী করে চলবে , কী হবে ? 
বুড়ো ভাবে , শেষটায় কি ভিক্ষে করায় হবে এক মাত্র পথ ।
দুশ্চিন্তা বেশি সুবোধ রায়ের চেয়ে মিনতি রায়ের । তাই একদিন সে গেল চৌকিদার সুবলের কাছে । সুবলেরও বয়েস মিনতি রায়ের মত , পঞ্চান্ন ।  মিনতি রায় সুবলের সম্পর্কে কাকিমা হয় ।
মিনতি রায় সুবলকে  নিজের সাংসারিক ঝামেলার কথা বলার পর বলে , গাঁয়ের পাঁচজন লোককে জড়ো করে দাও সুবল । আমাদের বিচার হোক ।
এক সময় গ্রাম বাংলায়  চৌকিদারের চল ছিল । গাঁয়ে যারই কোন ঝুট ঝামেলা হোক চৌকিদারকে জানালে চৌকিদার সঙ্গে সঙ্গে গাঁয়ের পাঁচ জন লোক ডেকে বিচার সভা বসাত । সেটাই কাজ ছিল চৌকিদারের ।
সুবল বলে , কাকি গো এটা তোমাদের স্বামী স্ত্রী’র মান অভিমানের ঝগড়া । গাঁয়ের পাঁচ জন এর বিচার কি করবে ? আপসে মিটমাট করে নিতে পারলেই ভাল  হত ।
মিনতি রায় শশব্যস্ত হয়ে বলে , না  বাবা না ।  নিজেদের মধ্যে আর কোন মিটমাট হবে না , হলে আজ পর্যন্ত হয়ে যেত। আমার  কথা কানে নেয় না তোমার কাকু । এই বয়েসেও বড্ড তেজ গো । তাকে বলে বলে আমার জীবন জল হয়ে গেছে , আমি আর পারব না বাবা । আমি মুক্তি চাই । গাঁয়ের পাঁচজন যা হোক কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিলে আমি বাঁচি । এমন লোকের সঙ্গে বাস করা আর আমার দ্বারা হবে না ।
অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করার পর  সুবল বলে , ঠিক আছে, তুমি যখন এত করে বলছ তখন  আমি না হয় ডেকে দেব । তবে কাকি ওই হরিমন্দিরেই বসবে সবাই । আজ সন্ধের পর তুমিও আসবে । তারপর মিনতি রায়ের মুখের দিকে চেয়ে বলে ,  তুমি এখন ঘর যাও ।
 
                                 ( ২)
সেই দিন সন্ধ্যের সময় হরি মন্দিরে একা  বসে আছে চৌকিদার । কিছুক্ষণ পরে আসে  সুবোধ রায় । তারপর আসে মিনতি রায় । তখনও গাঁয়ের পাঁচ জন কেউ আসেননি । যদিও ততক্ষণে আসার কথা । কোন কারনে দেরি হচ্ছে হয়ত ভেবে বুড়োবুড়ি আর চৌকিদার বসে থাকে । এখনই হয়ত বিচারকগন এসে পড়বেন ?
আধা ঘন্টা পেরিয়ে এক ঘন্টা হয় হয় , তবু কেউ আসেননি । চিন্তা হয় সুবোধ রায়ের , চিন্তা হয় মিনতি রায়ের । কেন কেউ আসছেন না । চিন্তা হয় চৌকিদারেরও । এমন ত হওয়ার কথা নয় ? এতক্ষণে সবার আসা উচিত ছিল ।
মিনতি রায় জিগ্যেস করে চৌকিদারকে , হ্যাঁ বেটা সুবল , গাঁয়ের লোককে ঠিক ঠিক খবর দিয়েছিস তো ?
সুবল শ্রদ্ধা বিনীত গলায় বলে , দিয়েছি কাকি । কিন্তু কেন এত দেরি করছে বুঝতে পারছি না । আর এমনি কত ঝুট ঝামেলার মীমাংসা হয়েছে , তখন তো এত দেরি হয় না ।
-যদি কেউ না আসে তবে কি করবি সুবল ?
- না গো কাকি , ও রকম মনে করার কিছু নেই । আসার আসবেই । হয়ত কোন কারনে দেরি হচ্ছে ।
মিনতি রায় চুপ হয়ে যায় ।
সুবোধ রায় মনে মনে গুমরে থাকে । এসে অবধি সে একটি কথাও বলেনি । আষাঢ়ের মেঘের মত তার মুখ ভারি ।
আরও কিছু সময় পেরিয়ে যায় । কিন্তু কেউ আসেননি । তিন জনই এবার হতাশ হতে শুরু করে । বুড়ি অধৈর্য হয়ে বলে , সুবল বোধহয় কেউ আসবে না। গরীবের কেউ নেই বাবা ।
- কাকি , তাঁরা না এলেও এই সুবল তাঁদের সহজেই ছাড়বে না । বিচার  হোক বা না হোক তাঁদের তো আসা উচিত  ছিল । আর যদি না আসতেন তবে সেটাও   তো আগেই বলার দরকার ছিল  , আমরা কখন থেকে অপেক্ষা করছি ? এটা কী মানুষের কাজ ?
একটু থেমে আবার বলে , আর কেনই বা আসবেন না ? ভেলকি না কি ?  তাঁদের আসতেই হবে ।
মিনতির বুকে আশা জাগে ।  বিচার পাবে সে । গাঁয়ের পাঁচজন মানুষ তাকে ন্যায় দেবে , দেবে মুক্তি পাওয়ার অধিকার । বাঁচার আনন্দ ।
- কাকি গো , তোমরা বোসো । আমি তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে আনছি । আজ বিচার সভা হবেই হবে । তোমার কোন চিন্তা নেই কাকি , যতক্ষণ এই সুবল আছে ।
বলে লাঠি নিয়ে যাচ্ছিল সুবল । হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় । তারপর মিনতি রায়ের দিকে চেয়ে বলে , লাঠিটা থাকুক । না হলে আমার দেরি দেখলে ভাববে আমিও হয়ত ফিরে আসছি না । ভাববে সুবলটাও মিছে বলে পালাল । “ এই বলে সুবল লাঠি রেখে দিয়ে চলে যায় গাঁয়ের বিচারকদের ডাকতে  ।
হরি মন্দিরে এখন বুড়ো বুড়ি । চুপচাপ । কেউ কাউকে কথা বলে না । সময় সময় শুধু একজন আর একজনের দিকে তাকায় । চোখের দৃষ্টি এক হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কেউ একজন দৃষ্টি গুটিয়ে নেয় ।
আরও কিছু সময় পেরিয়ে যায় । সুবল ডাকতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি ।
বুড়ো বুড়ি ক্রমশই অধৈর্য ও বিরক্ত হয়ে ওঠে । সুবলটাও কেন ফিরছে না । তার কেন এত দেরি হচ্ছে ? তবে কি সুবলও আর ফিরবে না । সুবলও মিছে কথা বলে পালাল ? কিন্তু তার যে লাঠিটা আছে ? তাকে আসতেই হবে । না এসে উপায় নেই । 
আশায় আশায় থাকে । কিন্তু সুবলও আসে নাই । শেষে তারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলে ।  সুবল যে আসবে না আর সেটাও বুঝে গেছে বুড়ো বুড়ি।
দুজন কতক্ষণই বা চুপ করে বসে থাকবে ? শেষে বুড়ি কথা বলে , বোধহয় আসবে না ?
বুড়ো বলে , কেন আসবে ? লোকের তো আর কোন কাজ নেই ?
বুড়ি বলে , তবে ঘরেই চল ।
বুড়ো বলে , সেই ভাল হবে ।
বুড়ি সুবলের লাঠির দিকে চেয়ে বলে , সুবলের লাঠিটা যে আছে ? সে নিশ্চয় আসবে । আর এসে যদি দেখে আমরা নেই তবে কি ভাববে বল তো ?  
- ভাববে গুষ্টির টাক । ‘ বুড়ো একটু জোর দিয়ে বলে ।  তারপর গলার স্বর নরম করে বলে , তোর মাথায় একেবারে গোবর ঢোকা আছে । সুবল লাঠিটা না রেখে গেলে আমাদের বিশ্বাস করাত কি করে যে সে আসবে । চল , ঘর চল , তারা আর কেউ আসবে না । সবাই মিলে আমাদের বোকা বানাল আর আমরা এটাও বুঝতে পারলাম না ।
বুড়ি খানিক আশ্চর্য হয়ে বলে , এ কি বলছ তুমি ? সুবল ওই ধরনের মানুষ নয় ।
বূড়ো আবার গুমরে ওঠে , ওই ধরনের মানুষ না হলে এখনও আসছে না কেন ? মানুষ চিনতে ভুল করা স্বভাবটা এখনও তোর গেল না । এ জন্যই তোকে – 
 কথা শেষ করে না , তার আগেই জিভ বন্ধ করে দেয় সুবোধ রায় । একটু থেমে বলে , তোকে কে বুদ্ধি দিয়েছিল ষোলোয়ানা ডাকার ?
-কে দেবে  , কেউ না । ‘ বুড়ি এইবার একটু অভিমান নিয়ে কথা বলে । - আমি নিজের বুদ্ধিতে ডেকেছি ।
-নিজের বুদ্ধিতে ডেকেছি । ' বুড়ো ভেংচিয়ে ওঠে । - ডেকে কি লাভটা হল  শুনি ? কেউ এল তোর ডাকে ?
-না আসুক । তুমি যে রকম করো তাতে আমি আরও ডাকব ।
- আমি কি রকম করি ? বুড়ো ধমকাতে শুরু করে । - সব তোর জন্য । তুই সব সময় রাগের রাগের ছাড়া কথায় বলবি না । আগে কত ভালবাসতিস আমাকে । আর এখন আমাকে তোর সহ্য হয় না , কোন বললেই তো তিড়কে উঠিস ।
- শুধু আমার দোষ ? আর তোমার কোন দোষ নেই বুঝি ? আগে আমি অভিমান করলে সেই অভিমান ভাঙার জন্য রাত দিন এক করে দিতে । আর এখন কেঁদে কেঁদে চোখের জল শুকিয়ে গেলেও ফিরে তাকাওনি । ছাতিটা ফেটে যায় তখন আমার , কত যে  দুঃখ হয় । ‘ বুড়ির চোখ দিয়ে জল আসার উপক্রম হয় ।  
- আচ্ছা , চল । ঘর চল । আর দুঃখ করতে হবে না । অনেক রাত হয়েছে । দেখতে পাচ্ছিস কেউ জেগে আছে ? চারদিকটা কেমন শুনশান করছে ।
তাই চল ।
বুড়োবুড়ি এক অভূত পূর্ব আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরে যায় ।
 তার একটু পরেই হরি মন্দিরে আসে সুবল । সে কাউকে ডাকতে যায়নি । বুড়োবুড়ির বিচার হবে এ খবরটা পর্যন্ত গাঁয়ের কাউকে দেয়নি । সে নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছিল বুড়োবুড়িকে নিজেদের মধ্যে কথা বলাতে পারলেই নিজেদের বিচার নিজেরাই করে নেবে । সে গাঁয়ের লোক ডাকতে যাবার অছিলায়  এক জায়গায় লুকিয়ে ছিল । আর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল বুড়োবুড়ি কি করে ? বুড়োবুড়ির ভাব হয়ে গেলে সে আবার আসে এই হরি মন্দিরে । নিজের লাঠিটা সযত্নে কুড়োয় , আর সেই লাঠিকে উদ্দেশ্য করে বলে , তুই আসল বিচারক । তারপর গড় হয়ে প্রনাম করে হরি ঠাকুরকে । আর মনে মনে বলে , ঠাকুর তুমি আছ ।  
 
                 


আন্তরিকতা

কল্পোত্তম


নীলকমলের সেগুনবাগান পড়ে থাকল। আমাদের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে শুকনো পাতার উপর পাখির বিষ্ঠা নিয়ে থেকে গেল নীলকমলের যত্নের সেগুন বাগান। অথচ সে নিজেই চলে গেল ফিরে না আসার দেশে। বেশ কয়েক মাস অসুস্থ থাকার পর হঠাৎ করে চলে গেল কয়েক দিন আগে।
             তার বাবা ঝরি মাহাতোর আমল থেকে শূন্য পড়ে থাকতো জায়গাটা। কোনোদিন চাষ বাস করতো না। দখলে রাখার জন্য দু'তিন বছর পরপর একবার করে লাঙ্গল দিত কোনমতে। পুটুস, ভুতাং, আরো কত আগাছা ঘিরে ধরতো জায়গাটাকে। এখন সেটা সেগুন বাগান। উঁচু উঁচু গাছের ফাঁকে চোরা পথে ঢুকতে হয় আলোদের। কোনোদিন পারে। কোনো কোনো দিন ঢুকতেই পারে না ভেতরে। গাছের পাতায় ঠিকরে বেরিয়ে যায় বাইরে।
              বাদল দিনের আকাশটা কালো হয়ে এলে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেগুন বাগান। বকের ডানায় আলো পড়ে ঠিকরে বেরোয় বাইরে। অন্ধকারে সাপের মাথায় মানিক জ্বলে ওঠার মতো জ্বলে ওঠে কালো আকাশটার একপাশে দিগন্ত রেখার ওপরে।
            নীলকমলের সঙ্গে বড্ড বেশি ভাব ছিল আমার বাবার। দু'জন সাইকেল নিয়ে কত কত গ্ৰাম যে ঘুরেছে তার কোনো হিসেব নেই। কুড়মি সমাজের ডাকে বার বার যেতে হতো তাদের। জেলার বিভিন্ন গ্ৰামে যেতে হতো সামাজিক অনুষ্ঠানে। কখনো কখনো জেলা ছাড়িয়ে, রাজ্য ছাড়িয়ে ঝাড়খন্ডে।
              গ্ৰামের অন্য কাউকে ডাকে না। চিঠি আসে না তাদের নামে। কোনোদিন না বেরোলে জানবে কি করে লোকে।
              আমার দাদু যেতেন। তারপর বাবা। দাদুর অবর্তমানে চিঠি আসতো বাবার নামে। একা একা যেতে হতো বাবাকে। সেই থেকে নীলকমলের নামটা কমিটির খাতায় তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে বাবা। যাতে করে দু'জন হয়। গল্প করে যাওয়া যায় রাস্তাটা। সেই নীলকমল অন্য রাস্তায় চলে গেল এবার। সামাজিক অনুষ্ঠান, সেগুন বাগান, ছেলে-বউ, নাতি- নাতনি, কুমারী নদীর তীরে সবজির ক্ষেত ছেড়ে চলে গেল অজানা দেশে।
              সবজি ক্ষেতে তার ছেলেরা গেলে মনে হবে, "বাবা বসে আছে।" ঘরের ভিতর বিছিয়ে রাখা খাটের দিকে নজর গেলে নীলকমলের বউ বলে উঠবে, "হ্যাঁ গো খাবার খেয়েছো? এসো খেয়ে নাও।" আর আমার বাবার কাছে সামাজিক অনুষ্ঠানের চিঠি এলে তারও মনে হবে,"নীলকমল তো আছে, বিরক্তিকর মনে হবে না রাস্তাটা।" কিন্তু কারো ডাকেই সাড়া দেবে না নীলকমল। তার সাইকেলের চাকা দাগ কাটবে না আর রাস্তাতে। কেবল হাওয়া বইবে। তার সেগুন বাগানের পাতাগুলো কেঁপে কেঁপে উঠে বলবে, "নীলকমল, নীলকমল।"
            
                                

                  আমাদের বই








সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
ছবি : তপন পাত্র
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪