দীপংকর রায়ের কবিতা
দীপংকর রায়ের কবিতা
১.
চুন খসা দেওয়ালে কেউ আঁকতে চাইছে একটি মুখ ;
মেঘেরা পারদ ছুঁড়ছে--
মাঠে ভেঙেচুরে পড়ে আছে ছায়া-শরীরের রং।
কেউ আহুতি আঁকার পরিকল্পনায় ধাক্কা দিচ্ছে--
ধ্যানমগ্ন যেখানে এক গভীর সত্য ;
সে যখন দাঁড়ায় দেয়ালে
দেয়ালও কথা বলে ওঠে জীর্ণতা ধুয়ে,
ধ্যান ভেঙ্গে ছুটিয়ে দেবার হৃদয় কি অল্প কিছুতে থামতে চায়?
একটি একটি করে গাছ-পাতারা ঢেউ ভেঙে ছুটে আসছে প্রকাশিত হবার তাড়নায় ;
আড়াল ঠেলছে যতই, ততই
বর্নময় হচ্ছে জঙ্গল ঘেঁষা নদীর উপরে মাঘীপূর্ণমার চাঁদ---
ছুটে যাবার চেষ্টায় বারবার সেই আলোকে কোষ কেড়ে ধরতে চাইছে বিনম্র আহ্লাদ-
বর্নময় হয়ে উঠছে সমস্ত আঙুলে, শুভেচ্ছা-প্রাপ্ত আলো-অন্ধকারের চিত্রপট
চুন খসা দেওয়াল কাঁদছে তবুও।
কেন যে নিজেকে প্রসারিত করে একাত্ম হতে চাইছে জীবন
যেন আর কোনো বিভাজন নেই
দেওয়াল সচিত্র প্রকাশে বিস্তীর্ণ পূর্ণিমা
তবু এই রূপ কি আলাদা হয়?
সমস্ত দেওয়াল জুড়ে আজ তুমি ক্যানভাসে কত রং লাগিয়ে দিলে ---- !
২.
সমর্পণে কোথাও তো পাপের অস্তিত্ব খুঁজে পাই না!
অন্তরাত্মার আলিঙ্গনে লজ্জার প্রসঙ্গ আসলে, ঘাবড়ে যাই
তবে কি সুদূর বলে কিছুতেই আর স্বপ্ন নেই ?
স্বপ্নে তো কেউ কাউকে ছুঁয়ে যেতেই পারে জ্যোস্না রাত
তবে কি হাতটি রাখতে পারা অন্তরাত্মার উৎসমূলে?
ভাসতে ভাসতে কেউ যদি প্রত্যক্ষ করে কারো গভীর তৃষ্ণা
ভাসতে ভাসতে কেউ যদি জল-চাঁদ মেখে গড়াগড়ি খায় বাদাবনের নোনা জলে
গান শোনাতে চায় কাউকে,
তাতে এত পাপ খুঁজে মরছ কেন?
সে যে এত ছবি পাঠালো খামে
ছটফট করতে করতে শব্দের গ্লাসে দিল চুমুক
তুমি কি তাকে পাঠাবে না
প্রতিবন্ধকতা ভেঙে স্তব্ধতার আলিঙ্গনাবদ্ধ মূর্তিখানি একবারও ?
বাতাসে তো বারুদের রং
বাতাসে তো বিচ্ছিন্ন হানাহানির মৃত শরীর
বাতাসে তো লোভ আর লালসার আশাবাদী প্রলাপ
এসময় কেউ যদি দেখে ফেলেই অসম আনন্দের ছবি,
প্রলাপে ভেসে যেতে চায় মাঘীপূর্ণিমার নোনা জলে
একটি চাঁদের ভেতর প্রত্যক্ষ করে লক্ষ কোটি চাঁদের তরঙ্গ ;
তুমি সেই জলরেখা ভেঙে মুহূর্তের উচ্ছ্বাসে দাঁড়াবে না কেন
রাধানামের কলঙ্কে একবারও ?
সমর্পণে কোথাও তো লজ্জার অস্তিত্ব খুঁজে পাই না!
৩.
গান তো আমি গাই না
গান তো গায় নির্জন রাতের আকাশ--
সেও সেই সুরে সমস্ত জুড়ে বিভঙ্গ মুদ্রা ;
বধ-জঙ্গল পাহাড় মেঘ একাকার করে হৃদয়ে কান পাতো
শুনতে পাবে তাঁর পায়ের কান্নায় ছড়িয়ে পড়ল কতটা রাতের শিশির....
আমি কচুপাতায় চোখের জল তুলি দুহাতে রোজ ---
আমি তো কাটা ফসলের মোথায় গড়াগড়ি খেতে দেখি
তাঁর সমস্ত রাতের কথাদের ;
গান তো আমি গাই না
গান তো গায় সে আমার গলায় ;
গান তো আমাদের জন্মের অন্ধকার থেকে আলো খুঁজে হন্যে হয় জীবনের সুরে ---
কেউ কেউ পায়
কেউ কেউ পায় সেই মহার্ঘ ;
জন্ম তো জন্মে জন্মে কতোবার এলো আর গেল --
কেউ কেউ জানে
কেউ কেউ জানতে পায় সেই কথা ?
তবু সবটা নয়,
তাঁকে পেতে সবটা দিয়ে দাঁড়াতে হয় সুরের মূর্ছনায় ;
সমস্তটাই চলেছে ভেসে মুক্ত বিভঙ্গে ....!
৪.
কোন নামে ডাকবো?
সাতচল্লিশ থেকে বাহাত্তর
সাতষট্টি থেকে নব্বই
ছয় থেকে একুশ
একই বিচ্ছিন্নতায় নদী-পাহাড়-ঘাসজঙ্গল ভেঙ্গে চলেছে ছুটে.....
চাতালে আকাশ টুকরো পড়ে আছে।
পুবে পশ্চিমে কেবলই অস্তাচল
পশ্চিমে পুবে অসম আকাশের ছবি
খণ্ড মেঘের কারুকার্যে ক্লান্ত, ধ্বস্ত --
একটি মুখেই সমস্ত মুখ !
রাতের জানলায় অন্ধকার চলেছে ছুটে অন্ধকারের পিঠে।
মনকেমন জানে না, পথের পাশে কারা এসে দাঁড়িয়েছিল চুপচাপ ;
পর্যটন পর্যটন না
ঠিকানা যেমন ঠিকানায় নেই স্থির
ঘরকে কে যেন ঘরের মতন দেখতে এসেছিল বলেই,
বাড়ি ফেরা ভুল হয় রোজ!
মিথ্যে জোস্নায় তোমাকে আর দাঁড়াতে হবে না
কারো গালের স্পর্শ পেতে;----
.
উত্তরমুছুন"গান তো আমি গাই না
গান তো গায় নির্জন রাতের আকাশ-- "
প্রকৃতির কাছে দাঁড়ালে আপনারই দীর্ঘশ্বাস টের পাই। এত অনন্তময়ী প্রজ্ঞায় আপনার বিস্তৃতি যে, দৃশ্য এবং অদৃশ্যের মধ্যেও আপনি স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠেনি। কবিতায় এমন নিরীহ স্বর এবং নীরব অভিযাপন কেবল আপনি পারেন।