জলশ্যাওলার বিরহকথা
মানুষের কোনো কাজের ঠিকঠাক উত্তর পাওয়া ভার, কিন্তু এখন কেন সে এলো ? আগে কেন যেতে চেয়েছিলো না ?
এসব কথা অনেক কথার মধ্যে তলিয়ে ভূত হয়ে থাকলেও সে জানে কেন তার মন দশ বছর আগের সেই সব রোমাঞ্চকর মুহূর্তেই ফিরে যেতে চাইছে ! কিন্তু কিই বা সাযুজ্য আছে তার সঙ্গে এর ?
এই একরত্তি মেয়েটির কী এমন আচার-আচরণ দেখে তার মধ্যে এমন মুগ্ধতা প্রবেশ করলো ? কেনই বা মেয়েটি, এই ধেড়েকেষ্ট ননদে-জামাই-এর সঙ্গে এমন ভাবে, এতটা গদগদ হয়ে যাচ্ছে আজ ?
মোহিত হবার মতন এমন তো কোনো বিষয় নেই তার মধ্যে। যার জন্যে এতটা আবেগে থরথর হয়ে উঠতে পারে ! তবু কীভাবে যেন এই দুটি দিন সে তার সমস্তটা সময় কেড়ে নিয়েছে। সে যতটা না ভাবছে, মেয়েটি কি বউ হয়েও ততটা ভাবনায় তলিয়ে দেখছে এইসব ? একবারও কি জীবনের সেইসব অসহায়ত্বের দিকে তাকিয়ে দেখেছে সে ?
জ্যেঠতুত ননদের স্বামী, যে কিনা প্রায় তারই বয়সী একটি সন্তানের পিতা, তার সঙ্গে মনের এই নৈকট্য কী করে সম্ভব হতে পারে ?
আর একজন, যতবার ফিরে তাকিয়েছে ততবারই এই মেয়েটি এমনই এক অতীতের মধ্যে নিয়ে গিয়ে তাকে এমনই একটি মুখ তুলে ধরে আছাড়িপিছাড়ি খাইয়াছে , যাতে কোনোরকমেই যেন তাকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই তার। যদিও সেসব সম্পর্কের সমস্ত গল্প গত দশ বছর আগের হাওয়া-বাতাসে মিলিয়ে হারিয়ে ফুরিয়ে গেছে । এই তো, অক্টোবরের চব্বিশ তারিখের আগেই তো তার সঙ্গে কথা হল মোবাইলে, কই একবারও তো সে সব সম্পর্কের আগের কোনো আলোড়ন তাকে আর দিশেহারা করে দিলো না ! কিন্তু সেই সম্পর্কের বাসি খড়-কুটো মুখে করে এই মেয়েটি কেন যে পাখি হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে চারপাশে আজ ! কেন নানা কথার অনুসঙ্গে তার স্বভাবে, হাবে ভাবে, আচার আচরণের মধ্য দিয়ে এক একবার তাকে এতটাই আঁকড়ে ধরতে চাইছে, যেখানে আর সব সম্পর্ককেও এই সম্পর্ক ছাপিয়ে যেতে চাইছে যেন । তবু সে ভেতরে ভেতরে এতটাই সংযত; এতটাই সংযত কথাটি বললেও এক ধরণের অপরাধ বোধ কাজ করে, তাও ভাবছে সে। কিন্তু কেন আজ হৃদয়-মন যে এর সঙ্গ চাইছে তা কে জানে ! সেই বা কেন এই মানুষটিকে চোখে হারাচ্ছে , তাও তো বুঝে উঠতে পারছে না কিছুতেই। আশ্চর্য, সে কথা বলেও ফেলছে মাঝে মাঝে।
এই সময় সে একটি সিগারেট পাঞ্জাবির পকেট থেকে বের করে খস্ করে দেশলাই কাটি জ্বালালো। অতি সুখে একটি টান দেবার পরেই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঊর্মি এসে তার ঠোঁট থেকে টান মেরে ফেলে দিল সেই সুখটানের বস্তুটি। তারপরেই সে ভাবলো হয়তো পথিক অসন্তুষ্ট হয়েছে ; এই ভেবে, সে তার গালটা টিপে ধরে জিজ্ঞাসা করল, সত্যিই সে রাগ করেছে কি না।
উত্তরে সে বলল, "তা একটু করেছি বইকি।"
সেও বলল, "তাই তো ! না, জামাইবাবু, এটা এত খাবেন না। দিনে তিনটেতেই সারবার চেষ্টা করবেন।"
----- গুনে হয় নাকি?
----- কেন হতে পারে না !
----- ও তুই বুঝবি না। এইরকম একটি অন্ধকার ছাদের রাত্রির নক্ষত্র-ভরতি আকাশ, শুক্লাচতুর্দশীর চাঁদ মাথার উপর, আর কাছে এই রকম একজন যুবতী শালা বউ, আর তাতে সিগারেট থাকবে না, তা কি হয় ?
----- কিন্তু সিগারেট যে যুবতীটি পছন্দ করে না !
তার উত্তরে সেও বলে, "তুমি না করলেও আমি তো পছন্দ করি।"
----- কেন, এটা না খেলে কি চলেই না একেবারে ? আমার মতন একজন মানুষ কাছে রয়েছে তাতে কি নেশা মিটছে না আপনার?
----- নেশা কি দেখে দেখে মেটে ?
----- তাহলে কি কাছে আসতে হয় ?
----- তা তো কিছুটা হয়ই…
----- এতটা কাছে রয়েছি তাতেও হচ্ছে না !
----- ও-কাছ কি সেই কাছ ?
----- ও বাবা, শখ তো মন্দ না !
----- না ভাই, শখ করে কাজ নেই। চলো এবার ওঠা যাক।
----- না, যাবো না। আর একটু বসুন। আমি এখন আপনার কোলে মাথা রেখে শোবো একটু, ভীষণ ইচ্ছে করছে…. ।
এই বলে সত্যি সত্যি সে বসে থাকা পথিকের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। সে, না, হ্যাঁ, কোনো কিছু বলে ওঠার আগেই শুয়ে পড়লো।
এর পরের ভাবনা সবই যেন অন্য কারো। সে ভাবছে আর মনে মনে নিজের কাছে নিজেই জিজ্ঞাসা করছে, এর সঙ্গে এখন কী আচরণ করা ঠিক হবে ? তাকে কি উঠে যেতে বলবে সে ?
ঠান্ডাও মন্দ নয়। এক্ষুনি গৌতম আসবে দোকান থেকে। সে এসে এই অবস্থায় যদি দেখে তো কী ভাববে ? সব চাইতে বড় কথা সে নিজে কী ভাবছে ? সে কি ভাবছে এই মেয়েটি এখন কে তার ?
এই যে মনের ভেতরের ভাঙাগড়া, কতটুকু টের পাচ্ছে সে, তা বোঝা গেল না তো !
সে পথিকের একটি হাত টেনে ধরে বলল, "জামাইবাবু, আমার মাথাটা একটু টিপে দেবেন ?"
পথিকও আস্তে করে তার কোলের উপরের মাথাটি একটু তুলে ধরে শুধু বলল, "ঘরে চল, দিচ্ছি।"
অতি সরল অভিব্যক্তিতে সেও কিরকম সহজ সরল ভাবে বলল, "তাই চলুন, আপনি আমাকে কিছুক্ষণ দেবেন, তারপর আমিও আপনাকে দেব, চলেন চলেন …. "
এই বলে সে যেন মনের আনন্দে ঘরের দিকে পা বাড়াল।
পথিক বলল, তুই এগো, আমি একটু পরে আসছি।
সে যেতে না যেতেই আলো জ্বলে উঠলো। ছাদে তবুও অন্ধকার। সে বেশ কিছুক্ষণ ছাদে একা একা বসে থাকলো। তারপর এক পা দু' পা করে ঊর্মির ঘরের দিকে না গিয়ে ডান দিকের সিঁড়ি ধরলো। এরপর সে রাত্রে তাদের আর দেখা হলো না।
সে নিচে নামার কয়েক মিনিট পরেই গৌতম বাজার থেকে এল। উপরে যাবার সময় দরজাটা একটুখানি আলগা করে জানান দিয়ে গেল যে সে এই এলো। এবং উপরে যেতেও বলে গেল তাকে। তার উত্তরে পথিক বলল, "ঠিক আছে, তুই তো এই মাত্রই এলি ভাই, যা তুই, আমি পরে যাবো।"
রাতের খাবার নিচের এই ঘরেই চলে এলো। "ঠাণ্ডার মধ্যে আর বাইরে গিয়ে দরকার নেই," এই বলে মেজ কাকিশাশুড়ি রাতের খাবার দিয়ে গেলেন কয়েক পদে। ছোটো মাছ এখন নাকি সুবিধেমতো পাওয়া যায়, যা কলকাতায় চোখে দেখাই মুশকিল ; কিন্তু তাই বলে কি পাঁচ পদে এখন তাই গিলতে হবে ? বাকি আরো নানা পদের বর্ণনা নাই বা করা গেল।
এভাবেই সময়গুলো কাটছে তার।
এখন যে যার ঘরে যার যার মতো চলে গেছে। রাতও বেশ হয়েছে। এখানে রাত এগারোটা মানে বেশ রাত। চারদিকে একটা নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। গৌতমের ডাকে সাড়া দিয়ে তার আর উপরেও যাওয়া হয়নি। ঘটনা আর কিছু না, মনে মনে ভেবে নেওয়া, সমস্ত দিন পরে ছেলেটা ঘরে এল, থাক না ওরা ওদের মতো করে, তার চাইতে আমি বরঞ্চ একটু সময় নিয়ে আজকের দিনলিপিটা লিখতে পারি কিনা দেখি।
জানলা আধ পাল্লা খুলে দিয়েছে সে। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এই ঘরের পিছন দিয়ে একটি পায়ে চলা সরু পথ রয়েছে। এ বাড়ি ও বাড়ি চলাচলের জন্যে সে পথটি ব্যবহার হয়। অথচ এখন পরিষ্কার করে সে সবের কিছুই বোঝার উপায় নেই। সে সিগারেট ধরায় যথেষ্ট সন্তর্পণে। মনে মনে কোথাও একটা দ্বিধা আছে, পাশের বারান্দার দিকের ঘরে তার শ্বশুর শাশুড়ি আছেন তো। ঘুলঘুলি দিয়ে যদি সিগারেটের গন্ধ চলে যায় !
একটা মন বলছে, আর কবে বড় হবে তুমি, এসবের সাথে এত সম্ভ্রমের কিই বা সম্পর্ক ! সমীহ কি শুধু এ সবের মধ্যেই ধরে রাখা আছে? তাই যদি থাকতো তাহলে তোমার আনপড় দিদিমা তোমায় বলত না, "তুই বিড়ি যদি খাস আমার সামনেই খাস, লুকিয়ে চুরিয়ে বাগানে বা জঙ্গলে যাবার দরকার নেই।"
তাহলে, তুমি কি সত্যিই নেলাভোলা , না এখন একটু বড়ো হয়েছো ? নাকি তোমার অনেকটাই বড়ো হওয়া এরা দেখে ফেলেছে? আর সে জন্যই রুনি তার নির্দেশ মতো মাঝখানের দরজার শিকল টেনে দিলো ? তুমি খুব অপমানিত বোধ করেছো তাই না ! কিন্তু এদের চেতনা বোধে এই সচেতনতা কোথায় ? এদের এটাই রেওয়াজ। ভাবনার অক্ষমতা। হতেও তো পারে মাঝরাতে তোমার যদি কামনা জাগে ! যদি তুমি কারো ঘাড়ে চড়ে বসো! হতেও তো পারে, মন না মতিভ্রম!
পথিকের সমস্ত অবস্থাটা একটি আধকাটা জবাই মুরগির মতো। যেন খানিকটা ছটফট করে নিল।
তাহলে কি ঊর্মির এইসব সারল্য আচার আচরণ তাদেরকে অন্য কোথাও চালান করেছিল ? নাকি এসব মেয়েদের সহজাত ধর্ম ? একটি পরশ্রীকাতর মন এই সব চিন্তা ভাবনায় সায় দেয়, কোনটা ?
থাক, দিক না, কী হয়েছে দিলে ? এত না-বুঝ অপমান গায়ে মাখছো কেন ? এতদিন এখানে এলে তোমার রাতের সঙ্গী তো গৌতমই হতো; এখন তো তার বিবাহ হয়েছে, সে কি তার স্ত্রী-সঙ্গ ছেড়ে তোমার মতো ধেড়েকেষ্ট জামাইবাবুকে পাহারা দিতে নিচে নেমে আসবে ? তবু তো উর্মি বলেছিল, "আপনার একা থাকতে কেমন লাগে জামাইবাবু, আপনি আমাদের কাছেই রাতে থাকুন না ।"
সেও কি কথার কথা, নাকি ছুতো খুঁজছো তুমি কাহিনী বানানোর ?
এভাবে কি গল্প বানানো যায় ? নাকি ভালোবাসা, আন্তরিকতা জোরের জিনিস ? সবকিছুর গতিময়তাকে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক করে দেখাই ঠিক। তা না হলে বেদনায়, গ্লানিতে এভাবে দুমড়েমুচড়ে টেবিলের সামনে বসে সাদা খাতা নিয়েই সময় কেটে যাবে ওই জানলার ওপাশের নিকষ অন্ধকারে যেভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঠিক তেমন ভাবেই। একটার পরে একটা সিগারেট পুড়বে। লাইট জ্বলবে ঘরের ভেতরে। কলম চিৎ হয়ে পড়ে থাকবে খাতার ওপরে। একটি শব্দও বের হয়ে আসবে না।
তার চাইতে একটা কাজ করো, এ ক'দিনের করা কাজের একটা হিসাব নাও ওই দিনলিপি খাতা থেকেই, দেখতে পাবে কাজের কাজ কী করেছো এখানে এসে !
সে তাই একেবারে এগারো তারিখ থেকেই দেখা আরম্ভ করলো :
২৪শে কার্তিক, ১১ই অক্টোবর, বৃহস্পতিবার : খুব সকালে উঠে প্রতিবারের মতো ট্যাক্সি, শিয়ালদহ স্টেশন। লোকাল ট্রেন ধরে সীমান্তে পৌঁছানো। হরিদাশপুর। পার্থক্য একটাই, যা বেদনার। যা এতটাই খারাপ লাগে প্রথমটায়, যেন বাকরুদ্ধ করে ফেলে, তা হলো, এক দিকে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমদের লাগামছাড়া ঔদ্ধত্য আর অন্য দিকে সাথির কাকাদের সঙ্গে একসঙ্গে হওয়া বনগাঁয় এসে। কারণ মনোজকাকু এখন গাঙনাপুরের বাসিন্দা হয়েছে সম্প্রতি দু'য়েক বছর হলো।
নানা ফন্দিফিকির করে তার দাদারা তাকে গাঙনাপুরের শেকড় ধরিয়েছে। আর সেও ধরে নিলো! পিছনে ফিরে তাকালো না তের বছর। নানাভাবে বিরক্ত হয়েও কখনো চাইনি যে সে এই অঞ্চল ছেড়ে বা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাক। প্রতিটা মুহুর্তে চেয়েছিলাম, সে কিছু করুক। নিজের পায়ে দাঁড়াক। অথচ সে কথা সে নিজেও বুঝলো না যেমন, তেমনই অন্য যারা তার জটিল দিকটি বুঝলো, সেটা যে কতটা হৃদয়হীন বা শেকড়শুন্য এই মানুষগুলোর অনুভূতিতে তা আশা করাও উচিৎ না। কারণ তাদের কাছে নিজের দেশটাকেই তারা নিজের বলে ভাবতে পারলো না। কেন না সেখানে শুধু অত্যাচারী আর অত্যাচারকের প্রশ্নটিই বড়ো না, বড়ো হলো স্মৃতিকে অবলম্বন করে একটি জাতির এই যে শেকড়-শুন্য হয়ে যাবার কাহিনী, তার অন্তরালে কত হৃদয়হীন ঘটনার সুযোগসন্ধানী মনের পরিচয়টিই বড়ো হচ্ছে, সে কথা ভাবতে গেলে জীবনের কঠিন এই বাস্তবতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। সে কথা ভেবেই তারা কেবল এই ছোট্ট জীবনটায় কতবার যে নির্দিধায় বাড়ি বানায় এবং বাড়ি ভেঙে ফেলে, পরিজন বানায় এবং পরিজন পরিত্যাগও করে অবলীলায় ------ তার কোনো ঠিক নেই। অন্তরালে কোথাও এক ফোঁটা চোখের জলও পড়ে না তাদের ! যা দেখা যায় তা শুধুই হাহুতাশ। হাহাকার।
গতকাল এসবই ভাবছিলাম, এবং এই বেদনাটাই তীব্র হলো, যখন মনোজকাকু আমাদের বর্ডার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গাঙনাপুরে ফিরে গেল। আর এর আগে, এর আগে এইরকমই আবার সে আমাকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে গেছে সেই টালিগঞ্জে !
তখন এরাও কেউ বেশিদিন এখানে ওখানে থাকতে পারতো না। এক কথায় মানুষের এই নিরাসক্তভাবে শেকড় ছিঁড়ে অবস্থান পাল্টানোটাকে কোনোভাবেই মানতে পারিনি।
এতকালের মতো সেই একই ভাবে মানুষের তৈরি সীমানা ডিঙ্গিয়ে সরকারি ছাড়পত্র দেখাদেখির পালা সারা হলো যখন তখন এপারে এসে পৌঁছোতে না পৌঁছোতে মাথার ওপর দিয়ে গোটাকয়েক বুনো টিয়া ডাকতে ডাকতে ওপার থেকে এপারে উড়ে এসে এপারের মেহগনি শিরীষ গাছের ডালে পাতার সঙ্গে মিশে গেল যেন এই বলে, দেখলে তো, দেখলে তো, আমাদের কোনো সিলমোহর লাগে না। আমরা তো সারাদিন এপার ওপার করি। তুমি আমাদের মতো পাখি হতে পারো না ? তাহলে তো এতো ঠেলা পোহাতে হতো না। আহাম্মক কোথাকার….!
কিছুক্ষণ এই ভাবাবেগে ঘুরতে না ঘুরতে বলাই-এর আগমন। তারপরের গল্প আর কী বলবো….. !
সন্ধ্যার কিছু আগে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ালাম। আজও সে যেন আমার অতি পরিচিত নিজের জন। অথচ আজ আমি তার কতো দূরের ! আজ আমাকে কতো অপরিচিত মনে হচ্ছে তার ! মনে হচ্ছে, কই আমি তো তার কেউ না !
পার হলাম সেই ছোট্ট বাজারটি। দিন দিন সে তার পরিসর বাড়িয়ে চলেছে ! বাজারে বেশ কিছু মানুষজনকে নানা কথার উত্তর দিতে দিতে, কুশল জানাতে জানাতে বারবার মনে হচ্ছিল, এরাও আরো কত কাছের ছিল একদিন। আজ যেন আমি এদেরও কাছে কত সমীহের পাত্র হয়ে গেছি ! আজ আর আমি সেই কাছের কেউ নই ,অতিথি ? যদিও জানি, কোথাও কেউ আমরা চিরকালীন নিজের নই ।
সব শেষে আর একটি জিনিস অনুভব করছি, কেন দিদিমাকে নিয়ে এলাম না ? মা একটু জোর দিলেই সমস্ত বিষয়টা হালকা হয়ে যেত। নিজের কিছু অক্ষমতার থেকে মুক্তি পাই না কিছুতেই। একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না কেন যে ! অথচ এই দিদিমাকে আমি একাই তো আনা নেওয়া করেছি। দশ বছর কেন, এই তো বছর পাঁচ আগেও, না কি চার ? আর আজ, এই অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে আমিও এতটাই অক্ষম হয়ে গেলাম ! বুঝি, তখন যে মনের জোর ছিল আজ তা নেই ? আজ সব শক্তি কোথায় হারিয়ে গেল ?
এ জীবনে যেন তার ছোঁয়া আর পাবো না….!
চলবে…….
খুব জীবন্ত বর্ণনা। মরমে প্রবেশ করে।
উত্তরমুছুন