জলশ্যাওলার বিরহকথা
জলশ্যাওলার বিরহকথা
দীপংকর রায়
৮ম পর্ব
সাতাশে কার্তিক, বারোই নভেম্বর :
সন্ধ্যা লাগিয়ে কি এক বিষণ্ণতা নিয়ে সেই যে নবগঙ্গার পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছিলাম খেয়ার জন্যে ------ এই বিষণ্ণ বিমূর্ততার দেবীকে সত্যিই আমি বর্ণনা করে ধরে রাখতে পারি না কোনো রকমভাবে। তাঁর স্বরূপ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন থাকি অবচেতন মনে। চাক্ষুষ তো তাকে করা যায় না, তার অন্তরালের প্রেরণা অনুভব করি। এখানে থাকতে তার সঙ্গেই তো ছিল আমার যত কথা ! কোনোদিন না ধরা দিলেও সেই আমার অনুভবের সকল প্রেরণা। কতভাবে যে তাকে অনুভবে গড়েছি, তা তো ভাষা দিয়ে বলতে পারবো না ! আর এক প্রস্থ সেসব টুকরো টুকরো কথা কোনো সময়ে বলার ইচ্ছা রইলো ------
ভোরবেলায় উঠে অনেকদিন পরে আবার এখানকার অন্ধকার জড়ানো সকালবেলা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করলাম। মামীমা ডেকে দিয়ে বললো, উপবাসের জন্য চিনির সরবত খেতে। এটা খেলে সমস্ত দিন উপবাসে নাকি জল পিপাসা পায় না।
ঠিক বছর দশ আগের এরকম সব ভোরবেলাগুলোর কথা মনে পড়ছিল। সেইসব সকাল আর আজ এই সকালের মধ্যে কতো পার্থক্য ! সে নেই আর সবই তো আছে ! মাঝের বছরগুলোই শুধু কারো অনুপস্থিতি দিয়ে সবকিছু পালটে দিয়েছে যেন। যেমন এসে পর্যন্ত একবারও ওদিকে যাইনি। যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করিনি। অথচ সেই সব দিনগুলি কীরকম ছিল, তা ভাবলে ভীষণ কষ্ট হয়। হাসি পায়। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে এই পরিচিত অপরিচিত অন্ধকারের দিকেই। সময় কি অদ্ভূত ! কি শিক্ষা নিয়ে যে দাঁড়িয়ে থাকে, তাই ভাবি । সময়ই আমাদের শিক্ষক। সব চাইতে বড় শিক্ষক। তার চাইতে বড় শিক্ষক আর কেউ নেই। কাঁদতে চাইলেও কাঁদা যায় না। হাসতে চাইলেও হাসা যায় না। তার এই ঠাট্টার অদৃশ্য কৌতুহলী পরম্পরার মধ্যে দিয়ে চলতে চলতেই জীবন একদিন ফুরিয়ে যায় কীভাবে ! যেমনভাবে সময় পারে সে সব নিভৃতে দেখাতে তেমন আর কেউ পারে না । আচ্ছা, আমার মতো সে কি আর ভাবছে , এই দিনগুলোর কথা এত করে ?
পুজোপাঠ শেষ হতে রাত তিনটে বাজলো। একইরকম ভাবে প্রতিবছরের মতো মাথায় প্রতিমা বরণের কুলো তুলে নিয়ে ঘরে বাস্তু খুঁটির সামনে রেখে প্রণাম করে এই বারের মতো পুজোর লোকাচার শেষ হলো। এই কাজটি করা হলে পুজো সংক্রান্ত রাতের কাজকর্ম শেষ করা হয়। অন্যান্য বারের থেকে অন্যরকম হলো না কিছুই। এ যেন অনন্তকালের একইরকম সব কিছু। শুধু মনটা খারাপ হলো, আবারও যদি দিদিমাকে সঙ্গে আনতে পারতাম, তাহলে যেন আরো ভালো লাগতো ।
বারবারই মনে করলাম এখন লিখবো। এই লিখবো। এই লিখি। এই করে করে যা হয়, হলোই না আর।
আসার সময়ও যে চাপ ছিল লিখবার, সে যেন যেকোনো কিছু লিখবার, আজ এই মুহূর্তে তার সবটাই উধাও।
এইটুকু যা লিখলাম, তা যেন ঠেলে ঠেলে এগোনো যাকে বলে, এ যেন ঠিক তাই। সেই উদ্বেগটা ,যা থেকে লেখার জন্ম হয়, তা কোথায় ?
কবে যে আবার লিখতে পারবো ! অথচ অদ্ভূত, যখন সময় থাকে না মোটেই, তখন হাজার ব্যস্ততার মধ্যেই সে এসে চাপ দেয়। সে চাপ থেকে কখনো কখনো খুব দ্রুত লিখিও, তবু মনের মধ্যে সেই উৎকণ্ঠা থেকে যায়, সত্যিই কি এত ব্যস্ততায় খাটি লেখাটি লেখা যায় ?
আবার যখন অফুরন্ত অবকাশ থাকে, তাকে তখন জোর করে টেনে আনা যায় না। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছায় তার কিছুই যায় আসে না। সে যখন আসবে, তার খেয়াল খুশিতেই আসবে, কোনো কিছুই বলে কয়ে হবে না। সে হঠাৎই আসে হঠাৎই যায়। ইচ্ছে হলে বারবার আসে। ঠেকিয়ে রাখা যায় না। অথচ আমি যে তারই অপেক্ষায় থাকি, অন্য কোনো কিছুতেই তো শান্তি নেই ! অন্য কোনো কিছুতেই কি শান্তি পেতে চেয়েছিলাম কখনো ?
উনত্রিশে কার্তিক, তেরোই নভেম্বর :
এত প্রতীক্ষার পুজো এবারের মতো হয়ে গেল । প্রতিমা বিসর্জন হয়নি এখনো। যদিও বিসর্জন তো পুরোহিত ঘটেই সেরে দিয়ে গেছেন। এরা না হয় তাকে অমাবস্যা, হাট, এইসব করে বিষয়টিকে রবিবার পর্যন্ত টানতে চাইছে।
রাতে বেশ ঠান্ডা লাগলো। নিয়রের শব্দ আর আগের মতো পাই না টিনের চালে। যা আছে তা অনেক ধীরে। সকালের দিকে কুয়াশার বহরও সেরকম একটা নেই। মাঠের দিকে কি আছে ,তা তো জানি না। এখনো সে দিকে যাওয়া হয়নি। আজ একবার নদীর ওপারে গিয়েছিলাম অনেকদিন পর। তা প্রায় বছর আট তো হবেই। একই রকম দেখতে পেলাম যেন। ঠিক আগে যে রকম ছিল। মানুষ-জনের আপ্যায়ন একইরকম আজও । শুধু তাদের ব্যবসা বানিজ্যের ধরনটা কিছুটা পাল্টে ফেলেছে এই যা। বাড়ি ঘর-দুয়ার গুলো পাকা -পোক্তা হয়েছে। এই পাল্টানোটা একটু চোখে লাগলো। যা ওপারের সঙ্গে একটু বেমানান গোছের। ব্যবহার আচার-বিচারে সে জিনিসের প্রভাব নেই। কিছু সরলতা আছে এখনো অবশিষ্ট।
যদিও ঘুরছি ফিরছি ঠিকই, কিন্তু ভেতরে ভেতরে কিছুর যে তাড়না, তা সঙ্গে সঙ্গেই চলেছে। তখন সব কিছুতেই বিরক্তি লাগে। মনে হয়, যে ভাবনা মাথায় নিয়ে এসেছিলাম, এ করবো, ও করবো ; কিন্তু কই, এখনো পর্যন্ত কিছুই তো করতে পারিনি ! তাহলে এই এত আয়োজন করে এত দূরে পালিয়ে এসে কী হলো অষ্টরম্ভা ? একটি লাইনও সঠিক অর্থে বসাতে পারিনি। পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি, দেখি ফিরে গিয়ে চিঠিগুলি অন্তত ধরা যায় কিনা।
একটা কিছু এই অকাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে না পারলে মনে হয়, বেঁচে আছি যে এ কথাটাই যেন সত্যি না। অথচ, সত্যিই কি বেঁচে আছি আদৌ ? সত্যিই কি বেঁচে থাকা বলে একে ?
কোথা থেকে যে শুরু করবো ! কি মনে হলো বাজারে গেলাম। এরপর কাজ কী ? ভাবতে থাকলাম। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ টিটুকে ফোন করলাম। শুনলাম সে নোয়াখালীতে যাচ্ছে। নিজেকে একটুখানি বেহায়া করে ফেললাম। ওই ওর মোবাইল নম্বরটা দিল। ফোন করলাম। দুই হাজারে শেষ দেখা হয়েছিল বরিশালে। গত এক বছর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। কথা বলতে বলতে প্রায় চোদ্দো মিনিট ফুরিয়ে ফেললাম। দেখলাম মনে আছে। তবে এখনো সেই একই পদ্ধতি, আমি যাতে বেশি আবেগপ্রবণ না হয়ে পড়ি, তার জন্যে প্রাণপণ প্রচেষ্টা প্রত্যেকটা কথা বলার মধ্যে। তার মধ্যে একটি কথা বলেই বার বার নিজেকে আড়াল করতে চাইলো যে, তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম, বললো, ' আপনি তো অসাধারণ, আর আমরা যে সাধারণ, আমরা কি আপনার মতো পারি ? '
মনে হলো আবেগে উচ্ছ্বাসে ওকে একটা প্রণাম জানাই। কী মূল্যায়ন করলো কি করলো না, সেটা ঠিক ভাবছি না, ভাবছি, এই যে শ্রদ্ধা, সমীহ, অকপট স্বীকারোক্তি, এ তো কম মানুষের কাছ থেকেই পাওয়া যায় ! আমি তো ভেবেছিলাম ভুলেই গেছে ! যার সমস্তটা ছড়িয়ে আছে অন্য এক জগতে। যার অবদান আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার না করে পারি না ! যাকে জীবনে বস্তুর মধ্যে দিয়ে কিছুই উপহার করতে পারিনি কোনদিন কোনকিছুই ,যে শুধু হৃদয়ের অদ্ভুত এক বিকারটুকুকে মাথায় নিয়েই একদিন ফিরে গিয়েছিল। যেভাবে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে এসেছিল সে, দুহাত ভরে কিছু ভোরের শিউলি ফুল দিতে, তাই দিয়েই সে সেই যে অন্ধকার, সেই অন্ধকারেই মিলিয়ে গেল। তাতেই যেন তার অসীম প্রাপ্তি। আর কিছুই যেন তার কাছে কিছু না।
বারবার জিজ্ঞাসা করলো, 'অসমাপ্ত ছোঁয়ার' কথা। ওর হয়তো মনে নেই সে গ্রন্থখানি তো চার বছর আগেই, না তারপর, যাইহোক কবেই তো তা আমি ওর মায়ের হাতে ওকে পৌঁছে দেবার জন্যে দিয়েছিলাম !
নানাভাবে নানা পাপবোধে ভুগি। আমি কি এভাবেই বিভক্ত এক দ্বিসত্তায় নিজেকে ভাগ করে ফেলেছি ? আমি কি এসব ঘটনার সম্পূর্ণটা সাথিকে বলতে পারবো ? কেনই বা বলতে পারবো না ! যদি তা না বলতে পারি তাহলে তো বুঝতে হবে আমার ভেতরে আরো বেশি পাপ আছে ! আমি তো তার দিক থেকে তাকে কোনভাবে ছোটো করিনি ! কিন্তু এটাই বা ভুলে যাই কী করে, একদিন যা কিছু গভীর আবেগে গ্রহণ করেছিলাম, শ্রদ্ধায়, কাব্যময়তায়, আমি কি অন্তরালে তার কাছে ঋণী হলাম না ? সে ঋণ পরিশোধ করা যাইনি যে ! যা থেকে এই পার্থিব জগৎ-সংসারের সুখ- দুঃখের এইসব খেলা চলে ------- তাই তোমাকে আমি প্রণাম জানাই। যে তুমি আজও আমাকে সবসময় নানা আবেগে দ্বিধায় ফেলেও যেন কত কিছু দিয়ে চলেছ অন্তরালে, গভীর মুগ্ধতায়। বিচিত্র উতকণ্ঠায় পড়েও সেই খেলা তোমার প্রেরণাতেই যেন আজও চলেছে নানা শাখাপ্রশাখায় ডানা মেলে। বহু দূর পর্যন্ত যেন তার বিস্তৃতি।
তিরিশে কার্তিক, চোদ্দোই নভেম্বর :
আর আজ সেখানে এসেও নিশ্চিন্তে নেই কেন? কিসের উদ্বেগ ?
গতকাল তো এক আশ্চর্য অবস্থার মুখোমুখি হলো মন। মনে মনে কি ইচ্ছা ছিল না, ছিল। তীব্রভাবেই ছিল হয়তো। যদিও তাতেই তো কিছুক্ষণ অন্তত, একটা সময় কেটে যাবার কথা ছিল। কিন্তু তাই বা হলো কই ? তাও তো হলো না ---- এত কিছু আছে তবু যেন কিছুই নেই। কেমন একটা শূন্যতার খেলা চলছে। কোথাও কোনো আশার সঞ্চার নেই, কোনো আবেদন নেই বাতাসে। এই যে কামনাকে এত গাল দিই, কিন্তু সেই তো বাঁচিয়ে রেখেছে এই মায়াময় সৃষ্টির গভীর সেই খেলাকে ! অনন্তের হাতে তার সব আবেদন নিবেদনই তো উৎসর্গীকৃত হয়ে চলেছে ! তাই সেখানে তার টান না থাকলে কোনো কিছু কি তৈরি হতে পারে ? না। লেখা আসছে না সেই জন্যেই, কারণ কোথাও কোনো টান নেই। আবেদন নেই। যা আছে তা আমাকে স্পর্শ করছে না। আর সেই জন্যেই এই ছটফটানি। মনে হচ্ছে সময় গেল, কই কিছুই তো হয়ে উঠল না !
ভোর ভোর উঠে আমতলার মাঠের দিকে গেলাম। মনে পড়ছিল জয়দ্বীপের তোলা ছবিটার কথা। সেই সকাল । আলো- আঁধারি । কুয়াশা। সূর্যের উঁকি মারা মায়াময় কুয়াশা ছড়ানো । নতুন চারা গাছের এলোমেলো অবস্থান। ছোটো ছোটো বুনো গাছেদের কার্পেট রূপ নেওয়া। এইসব, সবই জয়ের তোলা সেই ছবিটির কথাই মনে করালো বারবার। কিন্তু কী অদ্ভূত, একবারও সে এলো না, আমি এদেশে আসছি জেনেও ! আসলে ধরে রাখা, বিগত স্মৃতির ভেতর সকলেই কি হাঁটতে চায় চিরকাল ?
আজ প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে গেল। সব নিয়ম মেনেই। যদিও একটি বিভ্রাট অসাবধানতার জন্যই ঘটে গেল, প্রতিমা নামানোর সময় অপরিণত হাতের জন্যই হবে হয়তো, পায়ে লেগে বিসর্জনের ঘটটি পড়ে গেল।
আগে যারা এই সব কাজগুলো করতো, এখন তাদের মধ্যে পুরোনো মানুষগুলো একরকম নেই বললেই চলে, তাদের আবেগ, সংস্কার, ধারাবাহিকতা বোধ, নানা ভাবে ( যারা এখনো আছে) তাদেরও যেন আজ আর সেই টান নেই। এখন যারা নতুনের দল, আঠেরো কুড়ি বছরের এই ছেলে মেয়েদের আর কতটুকু ক্ষমতা পুরোনো সংস্কারগুলোকে ধরে রেখে সমস্ত কিছু করে যাওয়ার ? যাদের বলে দেওয়ার কথা ছিল, তারাও শেখাইনি যেমন, তেমন তারাও শিখে নেয়নি। তাই এই নিয়ে আর জটিলতা না বাড়িয়ে নৌকা ছাড়তে বললাম বিসর্জনের। কিন্তু মনটা প্রতি বছরই একটু একটু করে খারাপ হয়ে যাচ্ছে এই জন্য, যখন দেখি আজ আর বিসর্জনের নৌকোয় উঠবার জন্য সেরকম মানুষই যেন নেই আর ! অথচ একসময় কতো মানুষের হুড়োহুড়ি ছিল বিসর্জনের নৌকোয় উঠবার জন্যে। তাদের কত আনন্দ, ছুটোছুটি করে বেড়াতো নদীর চর দিয়ে তারা। কত মানুষের এই নৌকোয় চড়ে মেলায় যাওয়া ! কে কার আগে জামাকাপড় বগলদাবা করে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়াবে তারই যেন একটা হড়োহুড়ি ! তার মধ্যে যে যার প্রিয় পাত্রের, প্রিয়জনের সঙ্গ সুখ পাবার জন্যই ব্যাকুল হয়ে থাকতো। তাদের মধ্যে আরও একটু অন্যরকম তৎপরতা নজরে আসতো। সে সব যে সবই কোথায় হারিয়ে গেল দেখতে দেখতে তাই ভাবছিলাম। তারা সব কোন্ পথে এই সব গ্রাম ছেড়ে কোথায় যে চলে গেল ! তারা কি নক্ষত্রলোক থেকে এতকাল এসে এই বিসর্জনের নৌকোয় উঠত ?
ভীষণ মনখারাপ হয়ে যায়। মনে পড়ে আশি-বিরাশি-চুরাশি এমনকি নব্বই-বিরানব্বই-চুরানব্বই কি তার পরেও তো এমনটা ছিল না !
সময় এরকমই ---- সময় এইভাবেই আমাদের প্রতিমুহূর্তে শিক্ষা দিয়ে চলেছে। আজ যা হচ্ছে সেটাই যেন ভালো। সময়ের এই পাল্টে যাওয়াই নাকি নিয়ম !
আজ পাঁচদিন এখানে। এবার হাঁপিয়ে উঠছি। অথচ এখানে আসার জন্যে সারা বছরের কী আকুলিবিকুলি। মনটাকে কতভাবে না বেঁধে রাখি নানা কাজের মধ্যে দিয়ে। একদম ছুটতে দিই না। তবে যে সেদিন, ওখানে থাকতে বসে বসে ভাবলাম, শেষ জীবনটা কাটাবো এদেশের এই বাড়িতেই ! তাহলে সেই ভাবনার কী হবে ?
প্রকৃতি যেমন মানুষের প্রয়োজনের একটি দিক । ঠিক তেমনই প্রকৃতিরও প্রয়োজন মানুষকে । যে তাকে কথায় অন্তরে কামনায় বাসনায় প্রতিমুহূর্তে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
এসব না হলে সকলেই কি ক্লান্ত হয়ে পড়ে ? এই বিষয়টি, আকাঙ্ক্ষিত বিষয়টির কাছে গেলে ধরা পড়ে যেন অন্যভাবে সব।
মানুষের প্রয়োজনে আর কী কী দরকার হয় ?
কয়েকবার চেষ্টা করলাম নতুন করে সঙ্গসুখ পাওয়া যায় কি না। কিন্তু কী দেখলাম ?দেখলাম, এদের সঙ্গে আমার মনের দূরত্ব এতটাই ঘটে গেছে ইতিমধ্যে যে, সেটা ডিঙ্গোনো আর সম্ভব না। আর ঠিক তখনই এই সময়, বয়সের এই নিয়মে বাঁধা পড়ার কথা ভেবে ভীষণ কষ্ট হতে লাগলো।
ইতিমধ্যেই যে আমার ভেতরে কত পরিবর্তন ঘটে গেছে, তাকে অস্বীকার করবো কীভাবে ? কিন্তু আর একটি মন যে এখনো পাল্টায়নি ! তাকে নিয়ে কী করি ! তার যে বয়স হয় না ! সে যে আজও নবীন, এবং বড়ই কাঁচা, অবুঝও বটে ; সে কি চির কিশোর আজও ?
তাকে নিয়ে কি যে করি , সেটাই ভেবে মরছি আজও ----
চলবে…..
একান্ত অভিনিবেশ দরকার হয় এই ধারাবাহিক উপন্যাস পাঠে। খুব মরমে স্পর্শ করে। হারিয়ে যাই ভাবনার মধ্যে।
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর ভাবে এগোচ্ছে
উত্তরমুছুন