দ্বিতীয় বর্ষ ।। ঊনবিংশতি ওয়েব সংস্করণ ।। ১৮ পৌষ ১৪২৮ ।। ৩ জানুয়ারি ২০২২



গত বছরের ভয়ঙ্কর স্মৃতি আমাদের মন থেকে মুছে যেতে না যেতেই করোনা পরিস্থিতি আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক নানা খেলা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলার মতো নানা বোকা বোকা সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করা হচ্ছে সরকারিভাবে। আসলে, এই এক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক খেলার গেঁড়াকলে ফেলে মানুষকে শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।
     মুখে অনলাইন ক্লাসের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে না। ইন্টারনেট সংযোগ, তার ডাটা প্যাকেজের দাম বাড়লেও সঠিক পরিসেবা দেওয়া হচ্ছে না। দেশে ফাইভ জি পরিসেবা চালু করার স্বপ্ন দেখালেও এখনও পর্যন্ত ফোর জি পরিসেবা দিতেই ব্যর্থ টেলিকম কোম্পানিগুলো।
             আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নিয়ে সংগ্ৰাম করে যাচ্ছেন সবসময়। ফলে ডিজিটাল গেজেট কেনার বা তাতে ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই তাঁদের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা। আর সব থেকে বড় কথা শিক্ষকদেরই অনেকাংশ ডিজিটাল পরিসেবা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই বর্তমানে। এবং যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সেই পরিসেবা সুষ্ঠুভাবে দেওয়াতে অনিহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস না করিয়ে নিজের খুশিমতো সময় বেছে নিচ্ছেন। যার ফলে সাধারণ পরিবারের ছেলে মেয়েরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তাদেরকে অনেক কাজও করতে হয় বাড়িতে। আর পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে ক্লাস শুরু করে দিলে ক্লাসে যোগ দিতে পারছে না তারা। যার ফলে অনলাইন পড়াশোনা করানোর যে প্রচেষ্টা তা একেবারেই মাঠে মারা যাচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে, আমাদেরকে সমস্ত দিক থেকে বঞ্চিত করে শ্রমিকের যোগ্য করে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে শ্রমশক্তির প্রয়োজন মেটাতে কাজে লাগানো সম্ভব হয়। আর এর জন্য দায়ী অনেকাংশে আমরাও। এখনও সজাগ না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে খুব একটা সুখের হবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।



উত্তম মাহাত, সম্পাদক




______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
বিশ্বম্ভর নারায়ন দেব / বিশ্বজিৎ লায়েক / অনিন্দিতা চৌধুরী / হাবিবুর রহমান এনার / সায়ন্তন ধর / পল্লব গোস্বামী /  কল্পোত্তম / সৌরভ লায়েক /  দীপংকর রায় / তপন পাত্র
______________________________________________



বিশ্বম্ভর নারায়ন দেবের কবিতা

১.
শ্রীময়ী


খালপাড়ে ব্যক্তিগত চাঁদ ওঠে
ঠিক চাঁদেরই মতন
লোকালয়ের বাইরে যেতেই
প্রকাশিত সে সংবেদন।

ভাবি বলব না আর
সময়-অতিরিক্ত কথা
আমাকেও যে কবি সাজায়
পল্লবিত আকুলতা।

কী আশা কামনা করে
ছায়াপথ করেছে রচনা
একাকী ফুটেছে গভীরে
শরীরের দানাশস্যকণা।

তাহারই স্বরের ভেতর
বেমালুম করি বসবাস
মুখোশের ভিড়ে মুখ খোঁজে
শ্রীময়ী সুজাতা দাস।


২.
প্রদোষকালে


নতুন ভেষজে ভরা
বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসে
প্রাণভরে শ্বাস নিই।
সজনে ফুলে গাঁথা
যে হারছড়াখানি
আলো করে রাখে
উপত্যকাদেশ।
আহা এ তো
আমারই বিভুঁই
আমারই স্বদেশ।
নিজেকে মেলাই সেই স্থিরচিত্রে
হরিচন্দনে প্রেমচিহ্ন লেপে
সর্ব অঙ্গ কাঁপে থরো থরো।

নাভীর গভীরে ছায়াহীন সে পটভূমি
ব্রহ্মকমলটী ফোটাবে বলে 
জাগো রাই জাগো প্রদোষকালে।






বিশ্বজিৎ লায়েকের কবিতা

১.
অপদেবতা


ঘর থেকে বাইরে বাইরে থেকে ঘরে ঘ্রাণ থেকে অঘ্রাণে 
                                 লেগে ছিল অভিতাপ
                    গল্পের মুড়ো এখানেই এসে ফাটল 
                                         লিঙ্গ শরীরে
 
         মৃত অন্ধকারের মতো অভেদ কাম, গন্ধ ও রস  
                  তোমার ক্লান্ত বেহুশ মাধ্যাকর্ষণে আজ 
                                            ব্রহ্মকমল 
                 নাভিমূলে আজ মোহন-মোহিনী রসায়ন

     এইসব আঁকা ঝাঁকি শূন্যে রাক্ষসীর ওয়াশিং মেশিন
                   ষোলকলা মুছে দিল ভ্রমণের আরাম  
          মুছে দিল চিড়িয়াখানা পার্ক অরণ্য সমুদ্র শহর 

লিখতে লিখতে ভিড়ে বাজারে লোকালয়ে ভুল লিখল সব 
                     সিঁড়ি ধরে নেমে গেল কে কোথায়
          চ্যানেল পালটে পালটে তোমার রুগ্ন হাত ছুঁয়ে 
                          আচম্বিতে জাগল মৃত অতীত
                                        বিপন্ন ভ্রূণেরা 




২.
লঘু সম্ভাষণ


কিছুটা নিয়েছি অব্যয় লিপি বৃক্ষ ও পাথর কি বুঝছেন প্রভু
                      আমার এই ইষ্ট জপ প্রীতি-সম্ভাষণ 
                                    এই সব লঘু বেঁহুশ 

   আমি তাহলে সাইকেল নিয়ে চলে যাই অফিসে ও মাঠে
                              এই শরীর তো আনন্দতার
                             জীর্ণ মসৃণ, হোম ও দুরাচার

                                 হে ঈশ্বর ও আড়তদার  
ব্যক্তিগত হিম নিয়ে একটু নেচে উঠব জন্ম কাঙালের মতো
               বাকিটুকু ছড়িয়ে ছিটিয়ে জলের দরে লিখব 
                     ফড়ের ইচ্ছা, বন্ধুদের লম্বা-লম্বা শ্বাস  

                 তারপর সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ওই এক গল্প
                                 আনন্দ, মোচন ও পতন
                    বাকি সব গল্প মাংস আর মাংসপিন্ডের 

        ভোর ভোর উঠে তুমি স্নানঘরে খল খল হেসে উঠছ 
      বেচারা ঈশ্বর ভাবছেন আমার চাওয়াকে কচুকাটা করে 
                   গণ্ডুষে ভরে পান করবেন পাপ ও শর্করা 
                খেয়াল গাইবেন বসন্তে বসন্তে ডাক দেবেন 
            একটি একটি করে সব মানুষ নিরাময়ে ফিরবে
                                        ফিরবে বিনির্মাণে






অনিন্দিতা চৌধুরীর কবিতা


১.
উপলব্ধি


মাঝে মাঝে বাক্যালাপও ভাঙে, কণ্ঠ হয় রুদ্ধ 
যা কিছু অবাধ্য, তা বিবেকের প্রতিপক্ষ,
কুণ্ঠাবোধে জীবন থামলে, অভ্যাস ছেড়ে 
অভিনয়ে মাতো, হও আরও একটু দক্ষ ।

আজকে জেনো, কাঁটাতারের মার্গই সমিচীন 
পুস্পরথ? সীতার ভাগ্য তো অগ্নিপথেই লীন।



২.
মোহ


'শেষ' শব্দটা নির্বাক একটা অগ্নিশেলের মতো 
বয়ে গেলো দেহের মধ্যে—
অন্তরত্মার মধ্যেও স্ফুলিঙ্গের ঝাপড়া 
প্রতিটি কোষে দীর্ঘায়িত আবেগ 
হঠাৎ ভিসুভিয়াস হয়ে ওঠে দীর্ঘসুপ্তের সমাপ্তিতে;
উর্বী তটে প্রলয় প্লাবন। 

বেলাশেষের সূর্যে এ এক অবাক গ্রহণ, 
চক্রাকারে বেষ্টিত কলঙ্ক রেখা নাকি কোনো মুক্তাহার?

বসন্ত বাতাস যখন ঘুমের দেশে রঙ মেশায়–
তখনই কানে আসে শেষ বসন্তের অমোঘ ধ্বনি।







হাবিবুর রহমান এনারের কবিতা


১.
বড় বিক্ষুব্ধ


তুমি কেমন নির্দিধায় বললে--কবিতা না-কি ছাইপাঁশ...
যত্তসব অকর্মণ্য...

কবিতা লিখে কি কালেভদ্রে হয়েছে...অন্নবস্ত্র জোগাড়?

এ বাঙলায়-- কাকের চাইতে কবিরা অতিশয় শুমারিতে।

বিগত কালে প্রকৃতির যত্রতত্র না-কি দৃশ্যত হতো কাক হাজারে হাজার।

অধুনা অদৃশ্য কাকেরা, দেখা যায় না এমনকি বিয়েবাড়ি কিম্বা জিয়াফতে।

যদ্যপি কবিতা আমার দেহ খাঁচায় বন্দী পরানের পরান

শুনো সুনাই...
বড় বিক্ষুব্ধ...আজ হতে কবিতার গলা চেপে হত্যা করে,
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে নিক্ষেপ করিলাম।



২.
জীবনের বাড়ি


মধুকালের হাওয়া খেয়ে খেয়ে গল্প করে চৈতালি।
দ্যাখো--
কতো অনায়াসে ভুলে যায়... স্বৈরশাসনের স্মৃতি।

রাতের বুকে মাথা রেখে...কখন ঘুমিয়ে পড়েছে
অর্ধ-পৃথিবী; কিন্তু হৃদয়-দরজা তার খোলা।

তারুণ্যমন আজ এক চিলতে নিষ্প্রভ আসমান;
যেনো গহন অরণ্যে দলছুট মৃগ।

নির্বাক মানুষ...হস্তরেখায় মানুষের বয়স ফুরিয়ে
আসছে। রাত বিরেতে হাতছানি দেয়... অন্ধকার কবর!

বড়ই--
ইচ্ছে ছিল, স্বপ্নের সুবর্ণ কণা দিয়ে নির্মাণ করবে;
জীবনের বাড়ি।





নো ম্যান্স ল্যান্ড

সায়ন্তন ধর


"এক পশলা বৃষ্টি শেষে হেমন্তে পাতা ঝরে যায়,
আমি একা দাঁড়িয়ে এপারে"
ম্যাস্টিক রাস্তায় জল জমে
আকাশকে টেনে নামায় প্রতিফলন
নয়ানজুলিতে জলতরঙ্গের খেলা
দৃষ্টি আটকে যায় কাঁটাতারে।

তুমিও দাঁড়িয়ে আছো ওই ওপারে
একই ভাবে ভিজছো বৃষ্টিতে
অদেখাকে দেখার নিরন্তর প্রচেষ্টা
হয়তো কিছুটা কৌতুহলে
তোমার গ্রাম আর আমার গ্রামে কতটুকু তফাৎ
এ জীবনে উত্তর নেই জানি।

তাই মৃত্যুর পরে ঐ নো ম্যান্স ল্যান্ডে এসো
আমরা চিনবো দু'জন দু'জনকে
আর পাড়ি দেবো মাইলের পর মাইল
মেঘালয় মালভূমি থেকে সুন্দরবন
"বৃষ্টি ঝরতে ঝরতে চলে যায় দূর ওপারে
কিছুই হয় না শেষ সীমান্তের শূন্যরেখায়।"






এমন পিতামহী আমার

পল্লব গোস্বামী


শিয়ালকাঁটা ফুলের হলুদ পাঁপড়ি দিয়ে,ভাই এখন গভীর রাতে বাঁশি বাজায় - 
পলকা বাঁশির সুরে,ঠাকুমার কান্নার রোল ভেসে আসে সামান্য বাতাসে.... 
বিকারগ্রস্ত কান্না,ভোরের খালাসির ডাক -
এরই মাঝে আমি অসামান্য সব ঝরা পাতাদের কথা ভাবি 
মহাসুন্দরের টান - ভালোবেসে,আমার মেয়েকেই ফোটাই আমি
আবহে কত আবহমান গান বেজে চলে ...
মাতৃ মর্মে বুঝি, 
           ঠাকুমা ঠিক শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি 
যিনি কিনা,যেকোনো ঋতুকে 
বদলে দিতে পারেন বর্ষায়। 





যদি ঋণ করেও ভালো বাসতে পারি তোকে

কল্পোত্তম


২৫.
অহেতুক কল্পনা, জল্পনা উড়িয়ে
এগিয়ে চলো। শুনিয়ে চলো পাখিদের গান
ছায়া নিবিড় যত লোকালয়ে। একদিন
আমাদের পূর্বজের পদধূলি পড়েছিল
যে সকল পথে গ্ৰাম-দেবতার ঘোড়া ছুটেছিল
বেজেছিল ঘুঙুরের বোল
রাতের অন্ধকারে ঝরে পড়া পাতাদের গায়ে।
সমস্ত পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে
তোমার শরীরে খুঁজি পথ
তোমার শরীরে খুঁজি 
ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকা রথ, কর্ণের।

বেলা বেড়ে এলে খুলে যায়
সন্ধ্যার আগমনে একে একে রুদ্ধ হয় পথ।
তখন ভরসা শুরু অনুভব
বৈভবের বিপুলতা ছেড়ে
ছুটে চলা, ডুবে যাওয়া
অনন্ত অপেক্ষায় থাকা
অন্য এক শরীরের আলিঙ্গনে।





ঝুমুর জগতের বিস্মৃত জগৎ

সৌরভ লায়েক


" হারমোনিয়ামের যেমন গত তেমনি কবি জগৎ " । অথচ পুরুলিয়ার ঝুমুর সাহিত্যে ভবপিতানন্দ ওঝা , পীতাম্বর দাস , রামকৃষ্ণ গাঙ্গুলী , গঙ্গাধর ঘোষ , ঢিমা ঠাকুর প্রভৃতি এর নাম যেভাবে আলোচিত হয় সেভাবে কবিরাজ জগৎ চন্দ্র সেনগুপ্ত কে দেখতে পাই না। তাই ঝুমুর জগতে ' বিস্মৃত জগৎ ' বলতে দ্বিধা নেই । মানভূম মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ তপন কুমার পাত্র সংকলিত মানবাজারের কবি ও কবিতা সংকলন "কুটুস" এ লিখেছেন - জগত কবিরাজের বাড়ি রামনগর বারমেশ্যা অঞ্চলের ' পলমা ' গ্রামে । কিন্তু এই অঞ্চলে ' পলমা ' নামে কোনো গ্রামের অস্তিত্ব নেই । আবার খাতড়ার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জগৎকবিরাজের গ্রামের উল্লেখ পোলমী বললেও থানা বলেছেন মানবাজার । যদিও তা নয় । কবিরাজ জগৎচন্দ্র সেনগুপ্ত বা জগৎকবিরাজ - এর নিবাস ছিল অধুনা পুরুলিয়া জেলার পুঞ্চা থানার অন্তর্গত চাঁদড়া পায়রাচালী অঞ্চলের পোলমী গ্রামের হরিমন্দিরের একেবারে উত্তর দিকে । আরও পড়ুন
 





________________________________________________

ঔপন্যাসিক দীপংকর রায়ের ধারাবাহিক উপন্যাস---
"জলশ্যাওলার বিরহকথা" --- এবার দশম পর্ব
________________________________

জলশ্যাওলার বিরহকথা

দীপংকর রায়


 অঘ্রাণ, বাইশে নভেম্বর 

            আজ বুঝি তাঁর কৃপা পেলাম ! একেবারে সকালে উঠেই একটি গল্প------ লেখা হয়ে গেলে পড়ে শোনাবার ইচ্ছে জাগে মনে মনে। কাকে শোনাবো ? কে শোনে এইসব কলাকৌশল ?  সত্যিই কি বোঝাতে পারবো ? সবটা বোঝানোরই বা কী আছে ? যদিও মনে হলো, সে কিছুটা বুঝতে চায় হয়তো। কিন্তু আজ কি সময় আছে তার ? আজ যে শ্যালিকার বাড়ির ভাড়াটে  ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেটি এসে উপস্থিত হয়েছে। সে রাতে কার্তায়নী মণ্ডবে যার গলা জড়িয়ে তাক করেছিল বেলুন ফুটো করতে বন্দুকের নল। সে যে এখন তাকে নিয়েই আটখানা হচ্ছে আহ্লাদে উচ্ছাসে । এখন কি আর এই ধেড়েকেষ্টর কী আবেগ ঘন হলো, সেদিকে নজর আছে তার ? সে যে একেবারে মামি মামি করে আহ্লাদে গড়িয়ে পড়ছে দু'হাত ধরে !   
             যদিও তার এই আগমন হেতু টিপ্পনী কেটে জানিয়েও গেছে, বলেছে চোখ টিপে, দেখেছেন তো, দেখেছেন তো, ভাগ্নে কেমন ভাবরসে ডুবে ছুটে এসেছে চল্লিশ কিলো ঠেঙ্গিয়ে ----?   
             ভেতরে ভেতরে মেয়েদের এই বৈচিত্রের স্বাদ নেওয়া নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ নিজেকেও জড়িয়ে উদাস হয়ে পড়ে রইলাম জানলার পাল্লাটি খুলে বাইরের দিকে চেয়ে।   
              মনে মনে বললাম, তুমিও একই বেলাল্লাপনায় দুষ্ট নও কি ? ------ তা না হলে এই ঈর্ষা জাগছে কেন ভেতরে ? হতেও তো পারে সহজ মেলামেশা। কেন তাহলে অমন মুখ ঘুরিয়ে চলে এলে ?   
             একটি মন যেন অভিমানে রাগে আটখানা হয়ে বলছে, আর নয়, আর নয়, অপাত্রে  অনেক দান করেছ। আবার এও বলছে, সত্যিই কি করেছ কিছু দান ? কই, কিছুই তো ছাড়নি একচুলও------ তাহলে এসব ভাবনা মাথায় আসছেই বা কেন ?   
              এবার ভেতর থেকে কেউ যেন সত্যি সত্যি বিদ্রোহ করে উঠতে চাইছে। তাহলে আবার পরমুহূর্তেই মেনিমুখো ধেড়েকেষ্ট হয়ে গড়িয়ে পড়তে চাইল কেন আবেগে --- ? আরও পড়ুন






স্বনামধন্য অধ্যাপক ও কবি লী তজু ফেং ( Lee Tzu Pheng ) -এর দু'টি কবিতার বাংলায় ভাবানুবাদ




              (1)


Sip your Tea
Nice and Slow
No one Ever knows
when it’s Time to Go,
There’ll be no Time
to enjoy the Glow,
So sip your Tea
Nice and Slow.

Life is too Short but
feels pretty Long,
There’s too Much to do, 
 so much going Wrong,
And Most of the Time
  You Struggle to be Strong,
Before it’s too Late
and it’s time to Go,
Sip your Tea
Nice and Slow.

Some Friends stay,
others Go away,
Loved ones are Cherished
 but not all will Stay.
Kids will Grow up
and Fly away.
There’s really no Saying how
 Things will Go,
So sip your Tea
Nice and Slow.

In the End it’s really
all about understanding Love 
For this World  
and in the Stars above,
Appreciate and Value 
 who truly Cares,
Smile and Breathe
and let your Worries go,
So Just Sip your Tea
Nice and Slow."


              (2)


When I'm dead.
Your tears will flow
But I won't know
Cry with me now instead.

You will send flowers, 
But I won't see
Send them now instead

You'll say words of praise 
But I won't hear.
Praise me now instead

You'll forget my faults,
But I won't know.....
Forget them now instead.

You'll miss me then,
But I won't feel.
Miss me now, instead.

You'll wish You could have
 spent more time with me,
Spend it now instead

When you hear I'm gone,
 you'll find your way 
 to my house to pay condolence 
  but we haven't even spoken
 in years.
Look for me now.



                            (১)

জীবনসুধায় আলতো আলতো চুমুক ,
মাধুরী মাখানো ধীরে ।
গমন কালের লগন আসবে কখন
 সে কথা জানিস কি রে ?
সময়ে পাবি না ,
সৌরভ আভা আঁকা ।
জীবনসুধায় আলতো আলতো চুমিস ,
 ধীর মধুরিমা মাখা ।

জীবন বড়োই ছোট ,
 মহা মনোরম অনুভবে ।
জয়ের জন্য বহুত রয়েছে বাকি ,
  শুধু পঙ্কে জড়ায় সবে ।
 সময়ের শিরোভাগ 
হায় , অপচয় অকারণ !
বড়ো বেশি দেরি হয়ে গেল,
 আসে বিদায়ের সে লগন ।
  জীবনসুধায় আলতো আলতো চুমুক ,
 মাধুরী মাখানো ধীরে ।
বিদায় কালের ঘণ্টা ওই অদূরে ,
সে কথা বুঝিস কিরে ?

বন্ধু-মিত্র থাকবে দু'চারজন ,
 বাকি সব যাবে ঝরে ।
 সেই প্রেম বড়ো পরম মূল্যবান,
    থেকে যাবে চিরতরে ।
 কতো কুঁড়ি হয় ফুল ,
ধীরে ধীরে যায় উড়ে ।
 তারা কি বলে না হায় ,
 কী ধন যাচ্ছে পুড়ে ?
 তাই ---এ শুধায় 
 আলতো আলতো চুমুক ,
 মাধুরী মাখানো ধীরে ।
 বিদায় কালের ঘন্টা ওই অদূরে ,
    সে কথা বুঝিস কি রে ?

ঘনিয়ে আসে যে সন্ধ‍্যা ,
 দ‍্যাখো, পূজা ছাড়া কিছু নেই ।
 ভূমানন্দেরে খোঁজো ,
আহা ! মাটিতে , তারায় সেই ।
  আনন্দে ও নিঃশ্বাসে যার সতত আশীর্বাদ ,
বন্দনা করো তারে ।
জীবনের যতো আবর্জনা --
সব যাবে সরে সরে ।
জীবনসুধায় আলতো আলতো চুমুক ,
 মাধুরী মাখানো ধীরে । 
গমনকালের লগন আসবে কখন
 সে কথা জানিস কি রে ?

               

                      (২)

যখন আমি মেলবো না চোখ আর 
 অশ্রু তোমার ঝরবে আমার বুকে,
  আমি তো আর জানবো না সে কথা 
পারলে আজ-ই কাঁদো আমার দুখে ।

আমার জন্য থরে থরে সাজিয়ে দেবে ফুল ,
আমি কি তা দেখবো দু'চোখ মেলে ?
 পারলে আজ-ই একটি কুঁড়ি দিও
  ভালোবাসায় নাই বা হোল, নিছক অবহেলে ।

জানি আমার গুণগানে হবেই পঞ্চমুখ ,
আমি তো তা শুনবো না গো কানে ।
  এখন একটি মিষ্টি কথা বলো,
  খুশির জোয়ার আসুক আমার প্রাণে ।

ভুলে যাবে ,জানি -- আমার সকল দোষ ,
কেমন করে বুঝবো আমি তা ---
পারলে ক্ষমো সকল অপরাধ ,
শান্ত মনে ফিরবো নিজের গাঁ ।

সেদিন আমার অভাব বুঝবে তুমি,
 থাকবে না তা আমার অনুভবে ।
 যাবার পরে কে আর বুঝতে পারে , 
 কার অভাবে কে কেঁদেছে কবে ?

ভাববে সেদিন অনেক সময় কাটুক,
  আমার সাথে নিতান্ত নির্জনে ।
পারলে আজ-ই এসো, পাশে বসো ;
 মনের কথা কইবো গো দুইজনে ।

যখন শুনবে, চিরতরে চলে গেছি,
 পথে পথে ফিরে , গাইবে শোকের গান ;
হাজার বছর হবে নাকো তবু কথা,
এখনই বরং উপহার দাও হাসি আর কলতান ।


অনুবাদক - তপন পাত্র



কবি পরিচিতি






লি তজু ফেং ১৩ মে, ১৯৪৬ সালে সিঙ্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তিনি সিঙ্গাপুরের একজন বিশিষ্ট কবি । একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক । তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সংকলন এবং জার্নালে প্রকাশ করেছেন । তাঁর তিনটি কাব্যগ্রন্থ "প্রসপেক্ট অফ এ ড্রোনিং" (১৯৮০), "এগেইনস্ট দ্য নেক্সট ওয়েভ" (১৯৮৮) ) এবং "The Brink of an Amen" (১৯৯১), সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল বুক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের পুরষ্কার লাভ করেছে । ১৯৮৫ সালে সাহিত্যের জন্য সাংস্কৃতিক পদক এবং অন্যান্য পুরস্কার যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রাইটিং অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৭), গ্যাব্রিয়েলা মিস্ট্রাল অ্যাওয়ার্ড (চিলি, ১৯৯৫) এবং মন্টব্ল্যাঙ্ক জয় করেছেন । এছাড়াও ১৯৯৬ -এ পেয়েছেন NUS সেন্টার ফর দ্য আর্টস লিটারারি অ্যাওয়ার্ড ।





                       আমাদের বই









সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণের ছবি : চিত্রশিল্পী মুক্তা গুপ্তা, জামশেদপুর
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪