তৃতীয় বর্ষ ।। পঞ্চম ওয়েব সংস্করণ ।। ৫ আষাঢ় ১৪২৯ ।। ২০ জুন ২০২২
সস্তার ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু হওয়ার পর কি গ্ৰাম কি শহর প্রতিটি জায়গার প্রতিটি মানুষের হাতে হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল। সেই মোবাইলের মাধ্যমে পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় পাওয়া। আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে অবাধ যাতায়াত। এবং সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে প্রায়শই কিছু কিছু বিষয়কে নানাভাবে ফরওয়ার্ড করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তার বিষয়বস্তু পড়ে, কখনো সম্পূর্ণ না পড়েও ফরওয়ার্ড করে থাকেন অনেকানেক মানুষ। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সুস্থ জীবনকে ব্যস্ত করে তোলার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
সামনের দু'লাইন পড়ে বা পোষ্টের ছবি দেখেই আমরা বিষয়টা অনুধাবন করে ওঠার ক্ষমতা রাখি না। সে বিষয়টা কতখানি সত্য বা মিথ্যা তাও বিচার করে দেখি না কখনো। অথচ ওই দু' লাইন পড়েই আন্দাজ করে নিই সেটা আমার পছন্দের বিষয় যা আমি চাই। সেটা কোনো প্রতিবাদী, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, যেকোনো বিষয় হতে পারে। ফরওয়ার্ড করে দিই। অথচ একটুও ভেবে দেখি না, সেটা আমার জীবনের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে কিনা।
আমাদের জীবনযাত্রা যেভাবে জটিল হয়ে উঠছে, চারপাশে যেভাবে সোনার হরিণ ছুটিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের সরল মনকে লোভাতুর করে তোলার লক্ষ্যে, তাতে করে আমরা একটুও জটিলভাবে না ভাবলে সীতাহরণ যে অনিবার্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই কোনো পোস্ট বা কোনো বিষয়কে ফরওয়ার্ড করার আগে তা সম্পূর্ণরূপে পড়ে দেখা, তাকে অনুধাবন করা, এক কথায় বলতে গেলে তার জটিল আবর্তনগুলোকে বুঝে নেওয়া একান্ত দরকার। যাতে পরবর্তী ক্ষেত্রে কোনো রকম সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয় ফরোয়ার্ডকারীকে।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
কালীকৃষ্ণ গুহ / পর্ণা দাশগুপ্ত মিত্র / পল্লব গোস্বামী / নিমাই জানা / সায়ন্তন ধর / পুষ্পেন সরকার / তপন পাত্র / শ্রীদাম কুমার
______________________________________________
জরাজীর্ণ
কালীকৃষ্ণ গুহ
আমি আর কিছু লিখি না।
মনে হয় না, আমার আর কিছু লেখার আছে।
তবু কেউ একজন আমার লেখার জন্য
অপেক্ষা করে।
আমি তাকে চিনি না।
কত যে সময় চলে গেল---
কত চোখের জল মুছে গেল।
কত জরাজীর্ণ শরীরে হাসি ফুটে উঠে মিলিয়ে গেল!
তবু কেউ একজন অপেক্ষা করছে।
জানি না কে!
আমি তার জন্য কিছু লিখছি...
বর্ষার পাঁচালী
পর্ণা দাশগুপ্ত মিত্র
সেদিন তুমুল বৃষ্টি ছিল।
অপুকে কোলে নিয়ে মা
চোখে সজল স্নেহ।
কোমরে লাল গামছা জড়িয়ে দুগ্গা
বৃষ্টিতে ভিজছিল।
আমিও ছিলাম আড়ালে
বৃষ্টি পায়ে পায়ে।
বাদল হাওয়ায়।
পল্লব গোস্বামীর দুটি কবিতা
১.
তিলাবনি
আমরা পাহাড়কে আমাদের মা ভাবতে পারি
আমরা পাহাড়ের তলায় বসাতে পারি
চড়কের মেলা
ভক্তার পিঠে কাঁটা ফুটলে,
ভালোবেসে মুছিয়ে দিতে পারি,
রক্ত
আমরা পাহাড়কে আশ্রয় করে,
পাহাড়ের পা কে
সন্তানের পা ভাবতে পারি
গুটি গুটি পায়ে
বানাতে পারি শ্মশান
এসব সবই, ভাবতে পারি আমরা
শুধু ভাবতে পারি না,
যখন পুঁজির কাছে, বিক্রি হয়ে যায়-
আস্ত একটা পাহাড়।
২.
জল তিতিরের বাসা
দুর্ভাগা শালিক পাখিটির মতো বসে আছি
দূরে বৃষ্টি পড়ছে,
বৃষ্টি পড়ছে বনবাদাড়ে একা
গোলাপখাস আম গাছটির নিচে, নিঃসীম এক আমি
আমার কোনো ঘর নেই
কাঁকড়াদের ঘরও বুজে যাচ্ছে,
জলে
লাজুক, লাল পিঁপড়েদের ডিম ধুয়ে কোথায় গেল !
খুঁজবো না আর, খুঁজবো না নিজেকেও
জল তিতিরের বাসায়, ভাসিয়ে দিয়েছি দেহ
এ দেহ ধানফুল হোক,
পরমজন্মে, সব মাঠ হোক-
পালক কুয়াশা...
নিমাই জানার তিনটি কবিতা
১.
অবশীর্ষ বিছানা ও কিছু ক্যাটায়নিক সাপ
অবশীর্ষ বিছানায় প্রতিদিন নীল রঙের সাপের খোলস পরে থাকি ভয়হীন প্রবৃদ্ধ কোণে , আমার মা ৩৬০° পছন্দ করত বলেই আমি একটা হারিকেনের নিচে একটা বৃত্তচাপ আজও খুঁজে পাইনি ঠিক ষোলতম চন্দ্রকলার মতো
আমি এখন কাশ্যপ গাছের কাছে দাঁড়িয়ে সনাতন গোস্বামীর মতোই নামাবলী আকাশের ক্ষত্রিয় মহাজাগতিক গোত্র নির্ণয় করছি মৃত মানুষের জীবাশ্ম দিয়ে ,
দধীচি কোনদিন তপোবনে একাই সিমেট্রিকক্যাল ছায়া গাছের কম্পাংক নির্ণয় করছেন না
কমন্ডুল আর কিছু নয় এক প্রাণায়াম ও আধার বিশেষজ্ঞ সাপ
প্রতিদিন নিজের আসনকে শুদ্ধিকরণ করে চলি এক গণ্ডুষ জল , ১১৩ টি আতব চালের দানা ও সাদা ফুলের সুগন্ধ ক্যাটায়নিক প্রিজম দিয়ে
রাতে আমিও কখনো হঠাৎ কামিনী হয়ে যাই শুধু লজ্জাবতী জানে এখানে আকাশ বলে কিছু নেই সবই ধর্মনগরের ধ্বংসাবশেষ করে রাখা আছে প্রাচীন স্নানাগারের নিচে
আকাশ সরোবর থেকে স্নান সেরে নেমে আসছে মৎস্যগন্ধার ছায়া , নিরাময় সাধন মাঠে অসংখ্য মিথাইল কোবালামিন ডায়াস্টোলিক নারীরা জানালার পাশ থেকে পর্ণমোচী পাথর ঝুলিয়ে দেয় , আমি তাদের শরীরে বেয়ে ওঠা এক একটা চিরহরিৎ পেন্ডুলাম
রাতের বেলায় শুধু পরজীবী হাওয়া খাই একটি হলুদ কাগজ মুড়ে
২.
অহিমোফিলিয়া ভ্রূণ ও কিছু মিথাইল কোবালামিন নারী
তিলোত্তমা তখনও কামার্ত হয়ে যায়নি চন্দ্রলোকের রিপু ক্রীড়ার জন্য , সাহসিক নিজের লিউকোপ্লাস্ট ঠোঁটে এক একটা হলুদ পাতাবাহারের লিপস্টিক ছায়ারোদ আঁকছে গভীর নোনতা জলে নেমে
আমার দেহ খন্ডক গুলো তরল কৌটোয় ভরে রাখি ঠিক রাত্রি দুটো পাঁচের দিকে , রাতের সব নক্ষত্র দরজার পাশে পাথরের আয়না থেকে লম্ব দৈর্ঘ্যের স্ট্রেচেবল অসদবিম্ব প্রতিদিন বের করছি মহানন্দে
আমি শুধু হিমোফিলিয়া রঙের ভ্রূণকে দেখেছি , নিজের জিভকে আত্মহত্যার জন্য দায়ী করছি রাতে
সকলেই পুংকেশর মাথায় নিয়ে হেঁটে বেড়ায় অভয় আলপথের ধারে , পালকের নিচে একটা ভূমধ্যসাগর লুকিয়ে রাখি
আমি ঈশ্বরের কাছে নীল রঙের ফার্ন গাছের চারা গাছ পুঁতেছি , বৈরাগ্য খোলস ত্যাগ করতেই কিছু শীঘ্রপতন জনিত মন্ত্র কুয়াশার মতো জড়িয়ে গেল মৃত পাতার নিচে থাকা শুষ্ক গহ্বরকে
কুরুক্ষেত্রের মাঠে মৃত মানুষদের সাথে যুদ্ধ করছেন অনন্ত ঈশ্বর , পাঞ্চজন্য ও সৌমিক শরীর ক্রোমোজোমের মৃত আত্মা থেকে একটা সজীব তুলসীপাতা লাগিয়েছে নিজেদের অ্যানাফেজ ঠোঁটের কাছে
রাতে সকলেই ভূগোল পড়তে ভালবাসে বলেই পৃথিবীর ক্ষত স্থানের উপর অসংখ্য ডিম্বাণুরা ভেঙে দিচ্ছে পানকৌড়ির ঠোঁট , ঈশ্বরী প্রতিদিন ড্রোটাভেরিন খাবেন বিমুগ্ধ পাতাবাহারের মতো
আমাদের সকলের সিফিলিস হয়েছে বোধহয়
৩.
তরুক্ষীর মাকড়সা ও সম্প্রদান কারকের অভেদ
সম্প্রদান কারকের মতো ত্রিকুট মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা লাল রঙের থকথকে গর্ভাশয় গুলো মৃত জানালার পাশ দিয়ে শীঘ্রপতন জড়িত সূক্ষ্মকোণের নুড়ি পাথর গুলো ঝুলিয়ে রাখা আছে নিশাচর পুরুষের ডান কাঁধে ,
আমি শুধু ছেঁড়া ছেঁড়া জীবন নিয়ে একটি তরুক্ষীর সমৃদ্ধ উদ্ভিদ খেয়ে ফেলেছি মাকড়সার দাঁত দিয়ে
সকলেই শব ব্যবচ্ছেদের পর সম্পাদ্য খাতার অভেদ তৃতীয় পদ্ধতিটিকে ভালোবেসে
বুক পকেট থেকে নীলাদ্রি রঙের নিশাদল চারা গাছ বের করে লাগাই , আরো নিচে থাকা অবশীর্ষ প্রতিবিম্বহীন পুরোহিতের সাথে হিমোসায়ানিনের পাথরকুচি পাতা থেকে এক একটি লৌহ বলয় বের করে প্রাচীন ঋষি মানুষ হয়ে যাচ্ছে
তাদের চোখ গুলো অনেক গভীরে থাকা ধাতব নারীর মতো সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চল খুঁজে বের করছে
আমি আজ তৃতীয় কপাটিকাকে ধ্বংস করেছি আর্থাইটিস ওষুধ খাওয়ার পর
রাতে সকলেই বেঞ্জাইলপেনিসিল্লিনের বিছানার কাছে নীল রঙের অন্তর্বাস পরে নেয়
রাতে সকলেই ঘোড়া চালাতে ভালোবাসে বলে একটা আস্তাবলের কাছে রঙিন মাছ খেলা করছে
আমি শুধু পবিত্র স্বরধ্বনির কাছে থাকা প্রাচীন বাক্সের অসংখ্য ক্রিমি কীট বের করে পরিপাটি করে শুইয়ে রেখেছি আমার সব পোশাকের অ্যাডিপোজ টিস্যুর উপর
যারা সকলেই বীনা বাদনরত সমুদ্রগুপ্তকে নিয়ে বাড়ির দরজার ওপরে বসায় আমি তাদের সাথে আজও কিছু আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সের তিনটি হর্মোনাল গ্রন্থি খুঁজে পেয়েছি , সকলেই বিষহীন তরোয়াল খেতে পছন্দ করে , আমি ধাতব অসুখ মাত্র
চকচক করছে ময়ূরের পিঠ , উত্থিত স্তন মালভূমি আর কিছু গভীর কশেরুকা ,
আজ প্রজাপতি ভক্ষণ করবার উপযুক্ত দিন আমি শুধু পাললিক নাভি থেকে ১১টি ময়ূরাক্ষী পাহাড় নিয়ে অধরোষ্ঠের কাছে অন্তর্লীন হয়ে যাব ঘুমহীন মায়া চোখে
জয়ন্তী
সায়ন্তন ধর
এক জংশন থেকে ছুটে এসেছি আরেক জংশনে
শুধু তোমাকে দেখবো বলে।
কাঞ্চনকন্যার চাকার শব্দের সাথে মিশে গেছে তোমার প্রাণস্পন্দন।
আমি কান পেতে শুনি।
নদীবিধৌত অরণ্যশোভিত ওয়েস্টার্ণ ডুয়ার্স পেরিয়ে চলেছি ....
সান্তালাবাড়ি থেকে জিরোপয়েন্ট,
ভিউপয়েন্টের নুড়িবিছানো পথে ঘন্টা দেড়েক
বিস্তীর্ণ প্লে গ্রাউন্ড, বক্সাফোর্ট
আমার যাত্রাপথে।
কত অজানা ইতিহাস ছুঁয়ে
অত্যাচারের কাহিনী পিছে ফেলে
তোমার কাছে ছুটে যেতে চাই
চিলৌনিফুলে ছাওয়া পথপ্রান্তে
ছোট্ট গ্রাম লেপচাখা
আমার বিশ্রামাগার।
তীরন্দাজেরা স্বাগত জানায়
উষ্ণ অভিনন্দনে নন্দিত এ মন
তোমাকে দেখার আগ্রহে চঞ্চল এ চোখ
হোমস্টের জানালায় এসে ভিড় করেছে
রোভার্স পয়েন্ট, রোপাং ভ্যালি, পামশা এক, দুই ...
রিনিকঝিনিক ট্যাম্বুরীণের ঝঙ্কার তুলে নাচতে নাচতে
নেমে আসছে আতিলুং ঝোরা,
মিশে যায় ছলছল তরঙ্গ তুলে শৈলশিরার আড়ালে লুকিয়ে থাকা তোমার তনুতে,
আজ সারাদিন কড়া রোদের সাথে হাওয়ার ককটেল
ভুটান শৈলশিরে মেঘেদের জটলা
সন্ধ্যা হবো হবো
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আলোছায়ার মোজাইক পথে
বৈপরীত্য উত্তাপের নিয়মে নামছে হিমেল বাতাস,
সাথে দলছুট মেঘ অলিন্দে হুটোপুটি
একপশলা বৃষ্টি শেষে
আকাশের কালো জমিন জুড়ে
তারাদের কাথাস্টিচ্
ব্যালকনিতে বসে তোমার কথাই ভাবছি যখন
চোখে ভেসে উঠলো সেই
ডুবে যাওয়া রেলব্রীজ,
বেঙ্গল ডুয়ার্স রেললাইনের অস্থিবন্ধনী।
আগামী রাতটা তোমার জন্য।
রিভার ক্যাম্পে শুয়ে তারাভরা আকাশের দিকে
চেয়ে থাকবো আমি,
একটানা ডেকে যাবে ঝিঁঝিঁ,
অরণ্যের রাতে
জল খেতে আসবে হরিণীর দল,
ভোর না হতেই ডেকে উঠবে মেল হর্ণবিল।
আদিম প্রকৃতি থেকে কৃত্রিম জগতে
ফেরার অ্যালার্ম যেন
বেজে ওঠে বিদায়ের বাঁশি
ডিজেল শকটে চেপে
মুখ রাখি জানালায়।
এক ক্যানভাস ছবি রয়ে যায় হৃদয়ে
ফেলে আসা সেই গ্রাম ভরে ওঠে কলরোলে
নতুনের পদচিহ্ন পড়ে,
কত স্রোত বয়ে যায়, বয়ে যাবে আরো
তোমার বুকের মাঝে আবহমানকাল ধরে।
পুষ্পেন সরকার
প্রেম, জন্ম থেকে জন্মান্তরে...
তোমাকে বুঝে নিতে চাই মন প্রাণ দিয়ে । তোমার সবকিছুই প্রিয় আমার । তুমি যখন একলা দুপুরে বৃষ্টি দেখছো , জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে ফেলছো বৃষ্টিকণাকে । সেই মুহূর্তে ঐ বৃষ্টিকণা আমার প্রিয় হয়ে উঠছে .....আমার তখন দেখতে ইচ্ছে করছে তোমার সুন্দর হাতে ধরে রাখা সেই বৃষ্টির জল ।
তুমি যখন ছাদে যাও , তোমাদের সেই আশ্চর্য্য ছাদ যেখানে সমুদ্রের হাওয়া এসে এলোমেলো করে দেয় তোমার খোলাচুল । আমি তখন কল্পনা করছি তুমি কি রঙের পোশাক পরেছো । এলো চুলে চাঁদের আলোয় পরীর মতো লাগছে তোমায় ।
তুমি যে পথ দিয়ে হেঁটে যাও সেই মেঠো পথ আমার বড় প্রিয় , পথের ধারে যে ছোট্ট গাছটি প্রতিদিন তোমার ওড়না টেনে ধরে , তাকে আদর করে আমি বলি পরের জন্মে আমি যেন এই গাছ হয়ে জন্মাই । হাঁসের দলকে নিয়ে যে কিশোরীটি ছুটে যাচ্ছে সরোবরের দিকে সে তো তুমিই ... আমার রাইকিশোরী ... আমি তোমার চলার ছন্দ হতে চাই ... তোমার পায়ের নুপুর হতে চাই ।
রোজ ভোরবেলায় যে মেয়েটি ফুল তুলতে যায় তুমিই কি সে ... তাহলে আমি শিউলি ফুল হয়ে ফুটবো । তোমার গলায় মালা হয়ে দুলবো ।
যে মেয়েটি নদীর কাছে গেল আর পায়ের পাতা ভিজিয়ে দাপিয়ে বেড়ালো পুরো একটা সকাল সেও তো তুমিই । আমি তো তোমার পাশেই ছিলাম ছায়ার মতো । তবু তুমি তোমার শান্ত দিঘীর মতো চোখদুটি তুলে আমাকে দ্যাখো নি ।
আমি তোমাকে অনুসরণ করে যাচ্ছি জন্ম থেকে জন্মান্তরে । হয়তো এ জন্মটা বিফলে যাবে । হয়তো পরের জন্মও , হয়তো আরও কয়েকটা জীবন । আমি জানি কোন এক জন্মে তুমি ঠিক দেখবে আমাকে ।
কোন একদিন ঠিক জিজ্ঞেস করবে তুমি কে বলোতো ? কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে !
অনেক গুলো জন্ম তোমার চোখে চোখ রাখতে চেয়ে দৃষ্টি তখন ঘোলাটে হয়ে গেছে । অনেকগুলো জন্ম ভালোবাসি বলতে গিয়ে জিহ্বা তখন জড় হয়ে গেছে । অনুসরণে অভ্যস্ত পা তখন উদ্ভিদের মতো স্থবির ।
অনেক জন্মের জমে থাকা কথা আর বলা হয় না ....আমার শরীর জুড়ে তখন অজস্র ডালপালা আর শিকড় । আমার অনুসরণের দিন বুঝি ফুরিয়ে এল ।
এরপর আপন খেয়ালে তুমি ফিরে গেছো নিজ জগতে । তোমার কোনো কাজেই মন লাগছে না । বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তুমি বৃষ্টির কণা গুলিকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারছো না । তুমি ছাদে গেছো কিন্তু আজ কেন জানি চাঁদের আলোটা ম্লান লাগছে , হাওয়াও বইছে না আর। পথের ধারের সেই ছোট্ট গাছটা কেউ যেন উপড়ে ফেলেছে । আর কোনদিন কেউ তোমার ওড়না ধরে টানবে না । ছুটে যাওয়া কিশোরীটির পায়ে আজ কোন শব্দ নেই । নুপুর তার হারিয়ে গেছে কোথায় । ভোরবেলায় ফুল তুলতে গিয়ে মেয়েটি দেখলো একটাও ফুল ফোটেনি গাছে । নদীর কাছে গিয়ে দেখলে ধু ধু মরুভূমি ...কোথাও জলের চিহ্ন মাত্র নেই
রহস্যময় ধাঁদা
তপন পাত্র
(আগের সংখ্যার পরের অংশ)
*গাছ-পাত, ফুল-ফল*:--
মহুল আবহমানকাল ধরেই মানভূমের মানুষের জীবনধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই এখানে যে সকল "ভাঙানি" বা "ধাঁধা"র প্রচলন আছে , সেই ভান্ডারে মহুলকে ঘিরে অনেক ধাঁধা রয়েছে । সর্বাধিক প্রচলিত ধাঁধাটি হল ---
"গাছটির নাম হীরা,
তায় ধ'রেচ্যা গুড়, বাগ'ন জিরা ।"
--- যার উত্তর হবে -"মহুল" বৃক্ষ । গুড় হলো মহুল ফুল, বাগ'ন অর্থাৎ বেগুন বলতে কচড়াকে বোঝাচ্ছে আর জিরা বলতে মহুল ফুলের পরাগ ।
তেমনি আর একটি ধাঁধা --
"মা বিটির একেই নাম,
ডুমকা ছঁড়ার ভিনু নাম"।
মা বিটি বলতে গাছ এবং ফুলকে বোঝানো হচ্ছে , একটাই নাম --মহুল আর 'ডুমকা ছঁড়া' হচ্ছে মায়ের ছেলেটি অর্থাৎ কচড়া । অন্য একটি ধাঁধা --"উপরে বাঁসা, তলে ডিম" তারও ভাঙানি সেই মহুল বা মহুয়া । এছাড়া "ঢাক-ঢোল ভিতরখোল নিংড়ালে পড়ে ঝোল" --এই ধাঁধারও উত্তর -"মহুল"।
আর একটি ধাঁদা --
" ভক্ত বড় শক্ত
পন্ডিত রইল ব'সে
গাছের ফল গাছে রইল
বঁকটি গেল খ'সে।"
এরও উত্তর "মহুল "। প্রথম দুটি চারণ ছন্দ সুষমা সৃষ্টির কারণেই চলে এসেছে । মূল রহস্য টি পরবর্তী অংশে । গাছের ফল অর্থাৎ কচড়াটি গাছেই রইলো, বঁক বলতে এখানে বোঁটা নয়, ফুলটিকে বোঝানো হয়েছে । ফুলটি অর্থাৎ মহুয়া ফুলটি ঝরে পড়লো। মতান্তরে এই ধাঁদার উত্তর অনেকেই "চরণচিহ্ন" বলে থাকেন । আবার এই ধাঁধাটির মধ্যে একটি ধর্মীয় তত্ত্ব লুকিয়ে আছে বলে অনেকেই মনে করেন । সে প্রসঙ্গ ভিন্ন ।
এখানকার সাঁওতাল সমাজের মধ্যে তাঁদের ভাষাতেও একটি ধাঁদা রয়েছে ।
" চটরে তুকা
অতরে বিলি
ঞেলতেরেহঁ আডি ভালি।"
--- এর অর্থ
"উপরে বাসা, নিচে ডিম,
দেখতে মনোহর।"
--- এই ভাঙ্গানিটিরও উত্তর - "মাতকম" বা "মহুল"।
মানভূম-পুরুলিয়ার একটি সুপরিচিত প্রবাদ --
"ল'টা-ঘ'টা আড়াইয়া
শ'নলা বার মাস।"
নটে বা লোটে শাক ঋতু বিশেষের সবজি হিসেবে ঘরে আসে কিন্তু সজনে শাক বারোমাসের তরকারি । এই শাক গৃহস্থ বারোমাসই খুশি মতো ব্যবহার করতে পারেন । যদিও সমাজ পারিবারিক জীবনে প্রবাদটির তাৎপর্য আরো গভীর ! সে যাই হোক, এমন একটি মূল্যবান গাছ কে নিয়ে ধাঁধা তো থাকবেই । যেমন ---
"আগে মুড়ি পরে খই ,
লম্বা দেখে অবাক হই।"
এই ধাঁদার ভাঙ্গানি হলো সজনে ফুলের কুঁড়ি ও সজনে ফুল এবং সজনে ডাঁটা । ধাঁধাটির নির্মাণ কৌশল চমকপ্রদ ।
আবার সজনে গাছকে "লালবিহারী" বলে চিহ্নিত করা হয়েছে একটি ভাঙ্গানীতে । সেই গাছে ধরে তিন তরকারি --সজনে ফুল, পাতা আর ডাঁটা ।
"গাছটির নাম লালবিহারী,
তায় ধ'রেচে তিন তরকারি।"
--- এর পূর্ববর্তী ধাঁদাটির মতোই অন্য আরেকটি ধাঁধা
"মুঢ়ি ছিল খই হ'ল ।
আস্তে আস্তে ল্যাজ বাইরা'ল।"
আগেরটিতে বলা হয়েছিল "লম্বা" আর এটিতে বলা হল "ল্যাজ"; এগুলো অঞ্চল ভেদে শব্দ প্রয়োগ এর অল্পস্বল্প এদিক-ওদিক ছাড়া আর কিছুই নয় , মূলভাবনাটি ও প্রকাশ ভঙ্গি প্রায় একই ।
এই অঞ্চলের আনারস চাষের বিশেষ কোনো প্রচলন নেই ,কিন্তু আনারসকে নিয়ে ধাঁদা রয়েছে ।
"বনের থা'কে বেরা'ল টিয়া,
সনার টপ'র মাথায় দিয়া।"
--- এর উত্তর "আনারস"।
উপরোক্ত ধাঁদাটির একটু শব্দ বদলে নিয়ে জন্ম হয়েছে আরেকটি নতুন ধাঁদার।
"বনের থা'কে বেরা'ল টিয়া,
লাল টুপিটি মাথায় দিয়া।"
এই ধাঁধায় রহস্য গড়ে তোলা হয়েছে ভালাই ফলকে নিয়ে, আঞ্চলিক ভাষায় ভ্যালা ফল ।
ভ্যালা বা ভালই কে নিয়ে খুবই প্রাণবন্ত লৌকিক আঙ্গিকে আরেকটি ধাঁদা রয়েছে ---
"কাকা হে কাকা,
বীচ বাহির ফল পাকা।"
ছোট্ট কথার মধ্যে এক অসাধারণ ব্যঞ্জনা । বিষয়টি প্রকাশে কাব্য সুষমামণ্ডিত সহজ-সরল শব্দ প্রয়োগ । ভ্যালা পাকার বীজটি থাকে বাইরে ফলটি পেকে টুকটুকে । দেখতেও ভারী সুন্দর।
আবার ইচড় বা কাঁঠাল যে সকল ভাঙ্গানীর উত্তর, সেগুলি হল ---
"এক যে আছে বুড়ি,
তার গোটা গায়ে ফুসকুড়ি।"
এবং
"এক বুড়ির নাই দোষ,
তার সারা গায়ে খোষ।"
এছাড়া অন্য ছড়া রূপ ধাঁধাটি হলো ---
"গাছে ছিল মুগুর
মুগুর দিল ডিম।
ভাঙ্গরে পন্ডিতের ব্যাটা দেখি কত দম।"
এখানে গৃহস্থালির কৃষিযন্ত্র মুগুরের সাথে কাঁঠালের এবং কাঁঠালের বীজ কে ডিমের রূপকে প্রকাশ করা হয়েছে । শেষের চরণটি নিছকই ছন্দ নির্মাণের খাতিরে এসে গেছে ।
সংসার জীবনে দুপুরের খাবার গ্রহণের পর বেশিরভাগ পরিবারেরই নর-নারীর পান খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে । সেই পানকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে ধাঁধা ।
" চার পয়সার চার রং
মিলে গে'লে এক রং।"
পান , সুপারি ,চুন ও খয়ের--- এই চারটি দ্রব্যের চারটি বর্ণ কিন্তু যখন এই চার বর্ণ মিলিয়ে পানের খিলি মুখে পুরে নেওয়া হয়, তখন তার পর উৎপাদিত হয় পৃথক একটি বর্ণ , সেই প্রান-পিক বর্ণ কেই এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
শিশিরে চাবুর চুবুর,
ঘরে অধিবাস ।
ফুল নাই ফল নাই ,
ফলে বারো মাস।"
---- এই ভাঙ্গানীর উত্তরও পান । এই ধাঁধা-ছড়াটির মধ্য দিয়ে পান চাষের কয়েকটি বিষয়কে ইঙ্গিত করা হয়েছে ।
পানের খিলি যখন মুখে পুরে নেওয়া হয় তখন তা সবুজ, আর চিবিয়ে চিবিয়ে খেলে তার পিক প্রায় লাল বর্ণ । সেকথা সুন্দর করে তুলে ধরেছেন ধাঁধা নির্মাতা ।
" ঢু'কলে সবুজ, বেরালে লাল,
এমনি ক'রেই কাটায় কাল।"
এখানে গ্রামাঞ্চলে যত্রতত্র বাঁশের ঝাড় । বাঁশ চাষের জন্য উপযুক্ত মাটিতে একবার একটি চারা স্থাপন করলেই হল, তারপর ক্রমশ তার বংশ বিস্তার ঘটতেই থাকে । তাই ধাঁধা কবি বলছেন --
" এক লক্ষ পুত
সুয়া লক্ষ লাতি,
লাজ নাইখ্যা বুঢ়ীর ,তবুও পুয়াতি।"
দিনের পর দিন তো বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ বাড়ছেই কতবার বৃদ্ধ হয়ে গেল তবুও আবার মাঝে মাঝেই নতুন ফোড় নিচ্ছে, সেই বিষয়টিকে বোঝানোর জন্যই এমন শব্দ প্রয়োগ "লাজ নাইখ বুঢ়ীর তবুও পঙয়াতি"।
এবার আসি ডাব, নারকেলের কথায় ---
"আকাশ বাহানি টাড়া
মিন কুমারের হাঁড়া ।
বিনা মেঘে জল ,
কে বলবি ? বল।"
এবং---
" শাঁক নদীর পাঁক নাই,
জল আছে ত মাছ নাই।"
উপরোক্ত দুটি ধাঁধার উত্তর --ডাব ও নারকেল ।
কদলী বা কলা কে নিয়ে প্রচলিত ধাঁধা ---
" গাছটি সবল পাতাটি কুজা,
তার ফলে হয় ঠাকুর পূজা।"
আবার ---
"বাপ চিকন চাকন
বেটা কাঁবড়ু।"---- সাঁওতালি ভাষার এই ধাঁধাটিরও উত্তর হবে কলা ।
মানভূম পুরুলিয়া তথা পশ্চিম সীমান্ত বঙ্গের অনেক গ্রামের নাম আছে পিঁড়রা । জানি না হয়তো এই গ্রামগুলি যে মাটিতে গড়ে উঠেছে সেখানে পিঁড়রা ফলের বাগান ছিল কোন এক সময় , সেই পিঁড়রা ফলকে ঘিরেও ধাঁধা রয়েছে ---
"পাতা চিকচিক
ফল গ্যাঁড়া ।
যে নাই জানে তার বাপ ভেঁড়া।"
মানভূম এলাকায় "ভাদর মাসে গাদর জনহার", মানে জুনুর বা ভুট্টা । এ সময় দিন দুঃখী মানুষের একবেলার আহার জনহার পুড়া বা জনহার সিজা । কাজেই ভুট্টা বা জনহার তো ধাঁধার বিষয় থেকে বাদ যেতে পারে না । মানুষ ভুট্টাকে ঘিরেও তৈরি করেছে রহস্যময়' ছড়া ---
"এ হে মটা দাড়কা কাটা
মছ্ ওয়ালা কাপড় ঢাকা।"
-- দুটি চরণের মধ্য দিয়ে ভুট্টার অবয়ব ও গঠনের বহিরাকৃতি ও অন্তরাকৃতির সুন্দর পরিচয় ফুটে উঠেছে ।
" পাতা ছেঁড়া
ফলটি গ্যাঁড়া
যে নাই জানে তার গুষ্টি ভেঁড়া।"
এই ধাঁধার উত্তর পেঁপে । পেঁপে এই এলাকার সাধারণ মানুষের একটি সহজলভ্য সস্তা দামের সবজি । এই সবজি বা ফলটিকে নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ভাঙ্গানি । এসব থেকে লোক সমাজের সমস্ত বিষয় থেকেই জীবনরস সংগ্রহের দিকটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ।
মানভূম পুরুলিয়ায় ভাদ্র মাসে যেমন ভুট্টার বাড়াবাড়ি ঠিক তেমনি তাল পিঠারও আয়োজন হয়। ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে মা মাসি ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের তাল কুড়াতে যাবার ধুম পড়ে । তালতলায় যদি একটি তাল পড়তে দেখে বা আগের থেকেই পড়ে আছে দেখে , তাহলে সেটি তুলে নিয়ে তার পিছনেরঘ্রাণ নেয় , শুঁকতে থাকে। লোকবিশ্বাস যে তালটি গাছ থেকে পড়লো তার পিছনে্য গন্ধ নিলে ধপাস্ করে আরো একটি তাল পড়বে । সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছে ধাঁধা ---
" উপর লে প'ড়ল ধুম,
ধুম বলে আমার পেছু শুং"
এ অঞ্চলে একটি প্রবাদ আছে "যদি হয় সুজন , তেঁতুল পাতায় ন'জন"। প্রবাদটির মর্মার্থ সুহৃদয়তার কারণে যেকোনো বিষয় আনন্দসুন্দর এবং সমবেদনাময় হতে পারে। সেই তেঁতুলের ডালকে ঘিরে কি অসাধারণ ধাঁদা ---
" এতোটুকু ডালে
কিষ্ট ঠাকুর দলে।"
তেঁতুলেই কী আর কুল অকুলেই বা কী ? আসলে "কানু ছাড়া যে গীত নাই" , তাই বুঝি রা'ত ক'হনিকর্তা শেষ পর্যন্ত কদমের ডাল ছেড়ে তেঁতুলের ডালে ভগবান কৃষ্ণকে দুলিয়ে ছাড়লেন।
( শেষ অংশ পরের সংখ্যায় )
দু' এক কণা শৈশব / দেবাশিস সাহা
'চিন্তা' প্রকাশন প্রকাশিত " দু' এক কনা শৈশব"।
কবি দেবাশিস সাহার আত্মজীবনীমূলক শৈশব স্মৃতিচারণার ফসল এটি।
বইটির প্রচ্ছদ অসাধারণ। হলুদ নীল কালো লাল রঙের সমাবেশে- অঙ্কনে শৈশবের হাসিকান্নার রূপময়তাকে শৈল্পিক দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। অয়ন চৌধুরীর অসংখ্য প্রশংসা প্রাপ্য।
মুদ্রণ বিন্যাস বোর্ডবাঁধাই সবকিছুই দৃষ্টিনন্দন।
বইটি পড়তে পড়তে চোখের সামনে শৈশবের রামধনু জেগে ওঠে। স্মৃতির আলপথ ধরে পৌঁছে দেয় ফেলে আসা শৈশবের বুকে। এটি একান্ত ভাবে কবি দেবাশিস সাহার শৈশবের স্মৃতিমেদুর আলেখ্য হলেও--ছেলেবেলার জলতরঙ্গ সুরেলা হয়ে বেজে ওঠে বইটির নিবিষ্ট পাঠকের মনে।
ঘুড়ি ওড়ানো, জোনাকি দিয়ে টর্চ বানানোর চেষ্টা এমনি আরো অনেক কিছু হয়ে উঠেছে শৈশব স্বপ্নের চিরকালীন গাথা।
বস্তুত: এ বইটি লেখার তাগিদ ও আন্তর প্রেরণাটি ব্যক্ত হয়েছে অনুপম ভাষায়--
" প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে চলল, এদের আমি ছেড়ে এসেছি। দু-একজন ছাড়া এদের কারো সঙ্গে কখনো আর দেখা হয়নি। তারা সকলেই রয়ে গেছে সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে। কিন্তু আমার শৈশব-স্মৃতির মধ্যে কোথাও তো নেই ভারত-বাংলাদেশের কাঁটাতার, নেই পাসপোর্ট দেখানোর ঝকমারি।সেখানে আমি স্বাধীন সম্রাটের মতো বিচরণ করি। আমার শৈশবের খেলার
সাথীদের সঙ্গে মাঠে মাঠে ঘুরি, পুকুরে ঝাঁপকাটি, জল-জঙ্গল তোলপাড় করি, গাছে গাছে গাব, কামরাঙা, নাটা ফল কুড়োই। গ্রীষ্ম-শীত ছিঁড়েখুঁড়ে
গোল্লা ছুট, হা-ডু-ডু, বাতাবি লেবুর ফুটবল খেলি। সেই খেলারই একটুখানি ধারাবিবরণ আমি রেখে যেতে চাই এই লেখায়, জীবনের এই পড়ন্তবেলায়। "
লেখকের পরিবারের সদস্যদের কথা বেশ উজ্জ্বল রঙে অল্প কথায় ফুটে উঠেছে। বাবা মা বড়দা বড়দি ছোড়দি মেজদা ছোড়দা ছোটবোন পারিবারিক বৃত্তের এঁরা সকলেই তাঁর শৈশবকে ঘিরে আছেন। যাঁদের বাদ দিলে শৈশবের পরিধি ও পরিসর কখনোই সম্পূর্ণ হতে পারে না।আরও পড়ুন
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলংকরণ : প্রকাশ কর্মকারের চিত্রশিল্প (আন্তর্জাল)
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com

খুব ভালো লাগলো 'অরন্ধন'পড়ে।
উত্তরমুছুন