সুরজিৎ পোদ্দারের কবিতা
নতুন বিপদসীমা
১.
শহর থেকে দূরে যেতে যেতে
ক্রমশ বদলাতে চাইছিলাম জল আলো আকাশ:
আমাকে ঘিরে রেখেছে যারা
আদতে যাদের চারিদিকে ঘুরছি আমি
একটা সৌরমণ্ডল অতিক্রম করে
আকাশের অন্যদিকে
যেতে যেতে বলছিলাম,
"একা থাকতে চাই
একদম একা"
যদিও প্রতিটি স্বমেহন আদতে সঙ্গম বাসনা
শহর থেকে দূরে যেতে যেতে
সীতার মতো শুধু
শহরের কথাই ভাবছিলাম
একা
সঙ্গে ছিল জল আলো আকাশ
২.
শুধুমাত্র বিদ্যুৎ ছিল না তাই
সে আঁধারে তোমার রং বুঝতে পারিনি
আমাদের মোলাকাত হল
ঘন ধোঁয়ায়, মৌতাতে
শব্দহীন এক জগৎ তখন বাস্তব
শুধুমাত্র বিড়ির আগুন ঘন হচ্ছে মাঝে মাঝে
আকাশ থেকে ঝুলে আছে স্লেটপাথরের মেঘ
তাতে আঁকিবুঁকি কাটছ তুমি
নতুন কোনো অক্ষরের জন্ম হচ্ছে
নতুন কিছু জন্মাচ্ছে
নতুন কিছু
নতুন
বিড়ির আগুন নিভে নিভে জ্বলে উঠছে...
৩.
তোমাদের গ্রাম ঝুলে আছে পাহাড়ের বুকে
তোমাদের বাড়ি ঝুলে আছে
তুমি ঝুলে আছো বারান্দা থেকে
আমি ঝুলে আছি ঐ চোয়ালে
এখন দিন
বিদ্যুৎ নেই,
তবু আমাদের চিনে নিতে সময় লাগল সারাবেলা
একে অপরের আবরণ অতিক্রম করে
নিঃশ্বাস-- শব্দ হল নতুন করে
তুমি ঝুলে আছো সহস্রারে
তোমাদের গ্রাম
বারান্দা
বাড়ি
সব ঝুলে আছে
আমি ঝুলে আছি ঐ চোয়ালে
৪.
গ্লেসিয়ার ফাটার শব্দে সম্বিৎ তরল হল
আরও কিছু পথ
সাদা
চারিদিকে সাদা
যেন সারি সারি মৃতদেহ
একটা কুঠার হাতে তুমি মহামায়া,
উৎসবের আয়োজনে মেতে
অতঃপর শব্দ
মুখোমুখি আমাদের মাঝে অলীক স্তব্ধতা,
আরও কয়েকটা নিঃশ্বাস
এইভাবে আমরা পেরিয়ে যাব
প্রাচীন পথ
অনায়াসে ভেড়া ছাগল ঘোড়া যা পেরিয়ে যায়
মানুষ তা পেরোতে পারে না
চৈতন্য এক অদ্ভুত দেওয়াল হয়ে থাকে
তুমি কুঠার হাতে
গুঁড়িয়ে দাও সমস্ত চেতনা
কি এক ঘোরের মধ্যে
একদল মানুষ কিংবা ভেড়া
পেরিয়ে যায় অন্তরের প্রাচীন পথ
সমস্ত গ্লেসিয়ার ফেটে ফেটে
একটা নদী তৈরি হয়
তরল চেতনা বয়ে যায় অবিরল
৫.
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে সোনালী ঘাস
হাওয়া গড়িয়ে যাচ্ছে ঘাস বেয়ে
কয়েকটা ঘোড়া আর গাধা
এতদূরে এই দুপুরে
একা
তুমি এই দৃশ্য গিলতে গিলতে
গিলে ফেলছ আমায়
বহুদূরে মানুষের হাতছানি
এইসব ভুলে গিয়ে
আমরা একে অপরের আবরণ অতিক্রম করছি
সমস্ত শরীরে ক্লান্তি
দূরে শহরের চিহ্ন
এইসব ভুলে গিয়ে
আমরা একে অপরের বুকে হাতড়ে দেখছি
নতুন বিপদসীমা
নতুন চাঁদ
নতুন পাহাড়
নতুন পাসওয়ার্ড:
আমাদের একমাত্র ব্যক্তিগত কথা
সমস্ত কথা গড়িয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে
সমস্ত কথা-
নিঃশব্দে মিশে যাচ্ছে হাওয়ায়
শুধু আমাদের অনুভূতি
অবিকল পশুর মতো সঙ্গমবাসনা
সঙ্গীত হয়ে ঝরে পড়ছে শরীরের ঢাল বেয়ে
আর আমাদের ব্যক্তিগত কথা
অন্ধকারে আলোর মতো
একে অপরকে আলোকিত করছে অবিরল।
কবি
সুরজিৎ পোদ্দার
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন