তৃতীয় বর্ষ ।। সপ্তম ওয়েব সংস্করণ ।। ১ শ্রাবন ১৪২৯ ।। ১৮ জুলাই ২০২২
কেবলমাত্র পুরুলিয়া নয়, ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত প্রতিটি জায়গার ধান চাষ নির্ভর করে কেবলমাত্র বৃষ্টির জলের উপর। এখানে চাষের জমিতে সেচ দেওয়ার অন্য কোনো বিকল্প গড়ে ওঠেনি। গড়ে ওঠা সম্ভবও নয় খুব সহজে। তাই ধান চাষের জন্য চেয়ে থাকতে হয় আকাশের দিকে।
যে বছর বৃষ্টিপাত পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়, সে বছর চাষবাসের ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না চাষিদের। সাবলীলভাবে পেরিয়ে যায় চাষবাসের কাজ। কিন্তু সেই সৌভাগ্য প্রায় সময়ই হয়ে ওঠে না। তখন পড়তে হয় মহা ফাঁপরে। চেয়ে থাকতে হয় হা পিত্যেস করে। আর চাষ না হলেই চরম বিপদের মধ্য দিয়ে দিন গুজরান। অন্য কোনো কর্মসংস্থান নেই এলাকাতে। শিল্পনগরী জামসেদপুর এবং রাঁচি সংলগ্ন বেশ কিছু অঞ্চল ব্যতীত প্রায় সমস্ত এলাকার মানুষ নির্ভরশীল চাষের জমি থেকে পাওয়া সামান্য ফসলের উপর।
এখন শ্রাবণ মাস। ১ লা শ্রাবণ। এখনও খুব একটা ভালো নয় চাষবাসের লক্ষণ। অর্থাৎ এ বছরও লক্ষণ ভালো নেই এই অঞ্চলের অর্থনীতির। চিন্তিত মানুষ। চাষবাস না হলে কিভাবে দিন গুজরান করবেন? এই ভাবনায় ভাবিত। সরকার কি এই ভাবনায় ভাবিত? খাতায় কলমে বাদ দিয়ে বাস্তবে? ভাবিত হলে কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারতো না? পারতো না একটু নিশ্চিন্তের জীবন দিতে এই এলাকার মানুষদের?
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
দুর্গা দত্ত / পারমিতা ভট্টাচার্য / অয়ন জোয়ারদার / রূপক চট্টোপাধ্যায় / সত্যম কুড়মি / সুনীতি গাঁতাইত / সৌরভ লায়েক / ব্রততী পরামাণিক / মধুপর্ণা / তপন পাত্র
______________________________________________
দুর্গা দত্তের কবিতা
রামরাজ্য
১
এই তবে সেই চিহ্ন অশ্বক্ষুরাকৃতি !
এই তবে রথচক্র দাগ !
কোনদিকে গেছে তবে লুণ্ঠনের ইতিবৃত্ত
সূর্য সাক্ষী করে ?
যোজন যোজন ব্যাপী পড়ে আছে জীবন্ত ভূষণ,
কিঙ্কিনীর ভগ্ন অবশেষ, কোথাও রক্তের চিহ্ন,
শুকনো পাতায় ছেঁড়া বাকলের সুগন্ধি সংবাদ।
কোনদিকে গেছে তবে ভরদুপুরে জঙ্গল মাড়িয়ে !
২
যত যুদ্ধ জেতো আর যত ডঙ্কা বাজাও ভূপতি
লোকচক্ষু বলে তুমি যাকে স্নেহে লালন করেছো
সেসব স্থাপত্যবোধ কোনো অর্থ বহন করে না।
লোক তো লোকের মতো --
দিনের আলোয় শুধু মরীচিকা দেখে, আর
সন্ধের আগেই রাতকানা --
৩
যে যাই বলুক , আর যত সাক্ষ্য প্রমাণ-ই থাকুক
জেনে রাখো নরেন্দ্রসুন্দর
লোকে শুধু বিনোদন চায় ।
লোকে শুধু মুখশুদ্ধি চিবোতে চিবোতে
যুদ্ধতৃষ্ণা , রক্তের লাঞ্ছনা আর
ধর্ষণের ইতিকথা, বলাৎকার , বিনোদন চায় ...
৪
জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে ধূলায় লুণ্ঠিত হয়ে
লজ্জায় ঘৃণায় ক্ষোভে পাতালে প্রবেশ ছাড়া
কাহিনির অন্তিম অধ্যায়ে
জনমদুখিনির হাতে
কীই-বা আর তুলে দিতে পারো নরাধিপ !
স্বস্তিগুহা
পারমিতা ভট্টাচার্য
এই উজ্জ্বল শহরে আমি বেমানান।
এত বেশি কোলাহল,
ছোট চিন্তার গায়ে হ্যালোজেন আলো
উপচানো হাসির পর্দা , দরজায় এমন অপচয় ―
নিঃসাড়ে পাতালে নেমে আসি!
আধো আলো, কম শব্দ , ঢালু হওয়া রাস্তায়
ধাক্কাধাক্কি নেই ...
স্বস্তিগুহার গায়ে নির্বিষ বাসুকি ,তার চিত্র আঁকতে স্বেচ্ছায়
সহস্র বছর পিছে হাঁটি !
আমরা যারা মণি'র খোঁজ রাখিনি, তাদের হাতেই
অনায়াসে স্বর্গ ধরা দেয় !
অয়ন জোয়ারদার
এপিটাফ - ১
যেভাবে আছি, অত্যন্ত খারাপ হয়ে সামাজিক ব্যাধি
হয়ে, অন্যের মনহন্তারক হয়ে বেঁচে তো আছি!
যেদিন থাকব না সেদিন তোমরা যত না শ্রান্তি পাও
শান্তি পাব আমি।
ইচ্ছে মতন জ্বালাতে পারব আমার হাত-পা-নখ
আমার লোমশ বুক।
অচ্ছর অশ্রু কি পড়বে কয়েকের অধরে?
পরলেও অধিকাংশই দেখান হবে।
মনে মনে বলবে---লোকটা চোর ছিল, মাতাল ছিল
প্রতিহিংসা পরায়ণ ছিল।
'অর্যমন' বলবে সব মিলিয়ে লোকটা আমার বাবা ছিল।
তার রক্ত আমার শিরায় উপশিরায় অন্য রক্তের সঙ্গে অভিবাসী।
ভালবাসা কাঙাল লোকটা একটা সুর চেয়েছিল, একটা
বাক্য চেয়েছিল, নিজের মতন ঘুমানোর একটা বিছানা।
ডাল সিদ্ধ ঘি ভাত প্রিয় ছিল।
উত্তেজনা ছিল। ভ্রমৎ ছিল।
সংসারি ছিল না সামাজিক রীতি-নীতির দোটানায় কষ্ট পেত।
লোকটা ঈশ্বর দেখতে পেয়েছিল। দান করতে পারতো সব।
রূপক চট্টোপাধ্যায়ের এক গুচ্ছ কবিতা
১.
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী
তোমার ভ্রমণ দাগ লেগে আছে।
দৃষ্টিপাত জনিত লবন সরিয়ে নিলে
হয়তো এখনো নীল দেখা যায় বিন্ধ্যাচল!
আমার এই জীবন সিঁড়ি দিয়ে উঠে
আবার সাপের মুখ বেয়ে নেমে যাওয়া।
চলতেই থাকে। ডালে ভাতে কাঁসার
বাসনে অপূর্ণ ত্রিতাপ লহরী!
এভাবেই একটি বন্ধ্যা আমগাছ। করগেট
চালা। আদি অনন্ত গ্রাম।
বিকেলের লাল চায়ে
ডুবিয়ে রাখি পর্যটন বিলাসিতা!
২.
বেদনা বাহিনী তুমি,
একটু বৃষ্টি থামলেই, ছাতা খুলে
পেরিয়ে যাও ঝুঁকি না নেওয়া দুর্যোগ!
আধার কার্ডে প্রাগৈতিহাসিক ছবি থেকে
তোমাকে চিনতে চিনতে শ্রাবণ শ্রমিকেরা
সব মেঘ নিয়ে গেলো পাহাড়ের দিকে!
আমিও মফস্বলি, আহ্লাদে আটখানা বারান্দায়
বসে বসে লাউলতে লুকিয়ে রাখি
কিছু বৈদিক সন্ধ্যার জোনাকি প্রজ্জ্বলণ!
৩.
পুড়তে পুড়তে একদিন
শরীর ও দহন রপ্ত করে নেয়।
তারপর, স্কুল ছেড়ে
দুম করে টোটো কিনে
টলটলে সংসারকে জাপটে ধরে বুকের কুলুঙ্গিতে।
সেখানে চিলেকোঠা বা ধনেশ পাখির গর্বিত ঠোঁট
নেই। চুম্বন বা চরকায় সুতো কাটা স্বদেশে নেই
শিরায় জড়ানো হাত ও অন্ধকার কেটে
কেটে স্রোতের বিপরীতে হাঁটা ভোঁতা করাত
আছে মাত্র!
৪.
স্মৃতির খয়েরী চাতালে বেলা পড়ে এলে,
রাধা গোবিন্দ জিউ, এসে বসেন। পাশেই
বেত্রাবতী, ওপারে প্রাচীন বনজ বিস্তার!
মালসা ভোগ, নগর কীর্তন, অগুর গন্ধে
ডুবে যাওয়া জোৎস্না বরণ রাত!
বুলডোজারের ইস্পাত কঠিনে
এখনো এসব ফসিলের মতো বেঁচে আছে।
৫.
আত্মীয় বলতে
দূর সম্পর্কের ঈশ্বর এসে
মাঝে মধ্যে গল্প গুজব করে যান। গোলমরিচ
চায়ে চুমুক দিতে দিতে সন্ধ্যা নামে। ছটা দশের
লোকাল ঢুকলেই তিনি শরীর থেকে জ্বর খুলে
নিয়ে, একরোখা হাঁটা দেন নিজের দিকে
আবার শূন্যে অঙ্ক মেলায়। মাথায় আকাশ,
আকাশে নক্ষত্র আলোচনা, প্লেনের রেখাচিত্র
যে যার মতে নিস্তব্ধতা মুড়ে রাত নামিয়ে দেয়
মুখোমুখি।
প্রহেলিকা আলোলিকা
সত্যম কুড়মি
অবেলার বৃষ্টিতে সোঁদা আমেজ নিখোঁজ
প্রহেলিকা ছিল, সবুজও ছিল পানের বরোজ
সালোকসংশ্লেষের শিরায় গ্লুকোজ
জমে মন, ওড়ে স্বপন, বেলুনের মতো রোজ
নিদারুণ চপলতায় ভিজে বিশ্বাস
সময়ে-অসময়ে এই শহরে আসিস
বলবোনা আমি অসাধ্য আবদার
যেখানে টান ,এলোপাথাড়ি অভিযোগ সবার
তবুও বাসস্টপে গাড়ি ছাড়ে, বাজারে সন্ধ্যে নামে
কর্মসংস্থানে নিভু মোমবাতি জমে
এলোমেলো চুলে কবেকার সুঘ্রাণ
ক্ষুদে ক্ষুদে অক্ষরে অহেতুক নিমন্ত্রণ
কলমহীন
সুনীতি গাঁতাইত
ছেলেটা আগুন খায় নি,খেয়েছে মোড়লের মাথা,গাঁ গঞ্জে এমন ইঁচড় পক্ক কিছু ছেলে জন্মায় যেমন শরতের ইন্দ্র,ভীতুদের বাহাদুরি হাস্যকর।
একটাই নদী,রচনা যতরকম লেখা যায়,কখনো কোভিড, কখনো নো এন্ট্রি,যমরাজকেও হার মানায়।হাসি হাসি ছোটোরা অভিমানী, অতিমানী লোকেরা মগজ পোড়ায় গোপনে গোপনে ঈশারা এক দুই তিন।
গ্রহদোষ
সৌরভ লায়েক
আমাদের কপালের দোষে
হয়তো বা আমাদের কর্মের দোষে
আমাদের সাথে হেঁটে যায়
সকালের কামড়ানো চাঁদ
গ্রহের ফেরে পুড়ে , সাপুড়ের
অমোঘ বিনের টানে
সেও ঘুরে মরে অবাক সম্মোহনে
পৃথিবীর চারদিকে আজন্মকাল
আমাদের হতভাগ্যের মতো ।
পালাবদল
ব্রততী পরামাণিক
দীর্ঘদিনের অপেক্ষায় সময় যায়
অকারণে বারবার আসে বিচ্ছেদ
বৃথা অপ্রলাপে কেটেছে দিন-
সত্য সুন্দর বোঝে না সকলে,
তাই তো অসুন্দরের ছাপ পড়ে
কালোছায়া ঢেকে দেয় মুখ-
অপেক্ষা শুধু অপেক্ষা পালাবদলের
আসবে, নতুন ভোরের আলো!
‘নেই বাড়ির মেয়েরা’; নারীর ‘বাড়িবোধ’ এর এক আশ্চর্য উপাখ্যান।
মধুপর্ণা
অঙ্কন রায়ের উপন্যাস ‘নেই বাড়ির মেয়েরা’ প্রকাশিত হয় পৌষমেলা, ২০১৯ সালে। প্রকাশক বই ওয়ালা বুক ক্যাফে, রতনপল্লী, প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন অর্চিতা মুন্সী। লেখক বিহারের পূর্ণিয়া থেকে শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্রসংগীতকে নিত্যসঙ্গী করে এখানেই রয়েছেন শান্তিনিকেতনের একাত্ম হয়ে। পিতৃতান্তিক সমাজে, পরিবারে নির্যাতিত মেয়েদের নিজেদের জীবনের আত্মবিশ্লেষণ এবং তাদের আশ্রয়স্থল ‘আলোকবর্তিকা’ নামে একটি বাড়ীর অন্দরমহল – এই উপন্যাসটির উপজীব্য। এই উপন্যাসটি তিনি উৎসর্গ করেছেন টিঙ্কু খান্নাকে, যিনি ‘ঘর হারা’ মেয়েদের নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। লেখকের আরো অন্যান্য বই – ‘কিছু পলাশের নেশা’, ‘রাংতাকুচির ভোর’, ‘বন্ধ বাড়ির রহস্য’ ইত্যাদি।
এই উপন্যাসটির নাম “নেই বাড়ীর মেয়েরা” আশ্চর্যভাবে তাৎপর্যময়। নির্যাতিত, পরিত্যক্ত মেয়েরা যাদের ‘বাড়ী’ বলে কিছু ‘নেই’ তারা বাস করে একটা জায়গায় সেটিও একটি বাড়ী অথবা সেটি কি তাদের বাড়ী? বাড়ী বলতে আসলে আমরা কি বুঝি? এবং বিশেষ আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে বদলে যায় ‘বাড়ি’র সংজ্ঞা। নিরাপত্তা, আশ্রয়, ভরসা, ভালোবাসার সমন্বয়ে যেখানে স্বজনদের নিয়ে বসবাস করে এবং প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে চলে তাকে যদি বাড়ী বলা যায়, তাহলে এই মেয়েদের কাছে বাড়ীর সংজ্ঞা ভিন্ন। না, তাদের জন্য বাড়ী কোনো সদর্থক পরিষেবা নিয়ে আসে নি। এই উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন কিভাবে বাড়ি হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর, কিভাবে ‘স্বজন’ হয়ে ওঠে অত্যাচারী। পিতৃতান্ত্রিক পরিবার কাঠামোয় পরিবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘নিজের’ হয়ে উঠতে পারে না। কারো কারো বাড়ি নেই, কারো থেকেও নেই, তারা আইনী সাহায্যে এবং ঘটনাচক্রে এসে পড়েছে ‘আলোকবর্তিকা’য় যেটা তাদের স্থায়ী বাড়ী নয়, কিন্তু এখানে তারা ভালোবাসায়, স্নেহে , সাহচর্যে পেয়েছে বাড়ীর স্বাদ। ‘বাড়ি’ তাদের কাছে স্থায়ী বিষয় হিসাবে প্রতিভাত হয় নি, প্রথমত তাদের হারিয়ে যাওয়া বাড়ী, সেই বাড়ীর সঙ্গে তাদের মানসিক বিচ্ছিন্নতা অন্যদিকে আশ্রয়স্থল ‘আলোকবর্তিকা’য় তাদের অস্থায়ী বসবাস অথচ নিশ্চিন্ত আশ্রয়। এই বিচিত্র মাত্রার ভিতর ‘বাড়ী’ তাদের কাছে স্থানিক নয়, বায়বীয় অনুভূতি। তাই লেখক যখন উপন্যাসের নাম দেন ‘নেই বাড়ীর মেয়েরা’ তখন পরিসর হিসাবে বাড়ীর ধারণা হয়ে ওঠে বিমূর্ত।। আরও পড়ুন
রহস্যময় ধাঁদা
তপন পাত্র
(আগের সংখ্যার পর )
প্রকৃতি বিষয়ক ধাঁদা :--'আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্ব ভরা প্রাণ'তার মাঝে আমাদের অবস্থান। অজানাকে জানার,অচেনাকে চেনার, দূরের বস্তুকে নিয়ে রহস্য এবং সেই রহস্যকে উদ্ধার করার বাসনা মানুষের অনন্তকালের। গ্রহ, তারকা, রবি,শশী, আকাশ, বাতাস, শিশির, কুয়াশা, মেঘ ও বৃষ্টি বত্র শিলা ঘূর্ণিঝড় কোন কিছুই মানুষের দৃষ্টি এড়ায় নি। বিষয়গুলি নিয়ে যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা শাখায় নানাবিধ আলোচনা তেমনি বিষয়গুলি ধাঁদা নির্মাণের ক্ষেত্রেও উপজীব্য হয়ে উঠেছে সময়ের প্রবহমানতায়।
একটি ধাঁদার ভাষা ---
"আশমানে থাকে দু'জন
করে ডাকাডাকি ।
একজন বাঁচা লয়,
অন্য জন পাখি।"
কত সহজ শব্দ প্রয়োগে , কত সরল ভাষায়, কী সুন্দর ছন্দ প্রয়োগে গড়ে উঠেছে এই ভাঙানী । এখানে বুদ্ধিমত্তারও দীপ্ত প্রকাশ আছে বৈকি। আশমান অর্থাৎ আকাশে দু'জনেরই অবস্থান । উভয়েরই ডাক ছাড়ার ক্ষমতা রয়েছে , তাদের মধ্যে একজন "বাঁচা লয়" অর্থাৎ তার প্রাণ নেই আর অন্যজন পাখি বিশেষ । সহজ উত্তর --"বাজ"। একার্থে বজ্র আর অন্যার্থে বাজপাখি ।
আবার তারকা, চন্দ্র এবং আকাশকে নিয়ে একটি সুন্দর রা'ত ক'হনি , যেটি শুধুমাত্র ধাঁধা নয় মানভূমের লোকভাষার ধ্বনিগত মাধুর্যের বিশেষ দ্যোতকএবং কাব্য সুষমা মান্ডিত ।
"সুফল ফু'টে আছে, তুলইয়া নাই।
সুমড়া ম'রে আছে, কাঁদইয়া নাই।
সুবিছনা প'ড়ে আছে ,শুয়ইয়া নাই।
এখানে তারকাকে তুলনা করা হয়েছে সুন্দর ফুলের সঙ্গে, বলা হয়েছে সেই ফুল তোলার লোক নেই। চন্দ্রকে বলা হয়েছে একটি মৃতদেহ, কিন্তু তাকে ঘিরে শোক করে কান্নাকাটি করার লোক নেই। আবার বিস্তৃত আকাশ এখানে সুবিছানা। সেই সুন্দর বিছানা ব্যর্থ, কারণ সেখানে শয়ন করার মতো লোক নেই । "তুলইয়া", "কাঁদইয়া","শুয়ইয়া"শব্দগুলি লক্ষণীয়। শব্দগুলির মধ্যে এক গুঢ় ভাষাতাত্ত্বিক মর্যাদা রয়েছে। মান্য বাংলায় বা অন্যান্য বাংলা উপভাষায় এই জাতীয় প্রয়োগ নেই বললেই চলে । নামপদের এই রূপ বাংলা ভাষা সাহিত্যে প্রায় বিরল। "শুয়ইয়া"শব্দটিকে ঘিরে সম অর্থ প্রকাশক আরেকটি শব্দ মনে আসে --"শঁয়া"।এই শব্দের প্রয়োগ আছে অহীরা গানে। অহিরা গান দোহার সহযোগে সমবেতভাবে গীত হলেও প্রশ্নোত্তরের ভঙ্গিমায় গাওয়া হয় । গানটি হয়তো একজনই ধরেছেন এবং তার সঙ্গে অন্যরা কণ্ঠ মিলাচ্ছেন । কিন্তু একই কন্ঠ থেকে প্রশ্ন আসছে আবার উত্তরও আসছে ।প্রশ্নকর্তার মুখের ভাষা "কিয়া বিনু শয়ন আঁধার ? আর উত্তর কর্তার মুখের ভাষা "শঁয়া বিনু শয়ন আঁধার।।"সঙ্গে শোবার মানুষ ছাড়া শয়ন অন্ধকার। গানের কথা এবং সুরমূর্ছনা বৈষ্ণব পদাবলীর বিরহ সংগীতের সঙ্গে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখে।
" মস্ত বড় বীর,
চ'খে যায় নাই দেখা ।
ব'লতে পারবি কে,
বল ন রে পেঁকা ।"
ভাঙানীটির প্রশ্নকর্তা উত্তরদাতাকে প্রশ্ন করছে যে এক মহাবীর আছে, কিন্তু তাকে চোখে দেখতে পাওয়া যায় না । তুই কি তার কথা জানিস ? বল সে কে ? 'পেঁকা' আর কিছু নয় একটি নামপদরূপে ব্যবহৃত। ধাঁধাতে এই নাম পদগুলি নানাভাবে এসেছে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পদগুলিকে ঘিরে একটা রহস্য সৃষ্টি হয় , সেই রহস্য আর কিছুই নয় শুধুমাত্র ছন্দের খাতিরে ব্যবহার, কিছু অযৌক্তিক, কিছুটা বেমানান, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তিসম্মত শব্দ প্রয়োগ মাত্র। আলোচ্য ধাঁদাটির উত্তর আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এখানে মহান ব্যক্তিটি হলো হাওয়া বা বাতাস , বায়ু ।
শুধু বাতাস নয় , কুয়াশাকে ঘিরেও ধাঁদা রয়েছে। মাঝে মাঝে কুয়াশা ভোর থেকে সকালের দিকে চারদিক ঢেকে ফেলে । দুচোখ দিয়ে বেশি দূর দেখা যায় না। এই দৃশ্যের সুন্দর বর্ণনা আছে কুয়াশা কেন্দ্রিক একটি ধাঁদাতে ---
"আঁচির ডু'বল, পাঁচির ডু'বল
ডু'বল ডাগর মুঢ়া ।
স'রষা ডু'বতে জল নাই ,
ডু'বল রথের চূড়া।।"
সকল স্থানের মতো মানভূমেও মাঝে মাঝে শিলাবৃষ্টি হয় । শিলাকে এখানকার মানুষ বলে হুল । হুলকে ভাবে দেবরাজ ইন্দ্রের পুষ্পোদ্যানে প্রস্ফুটিত ফুল এবং সেই ফুল মাঝে মাঝে পৃথিবীর মাটিতে ঝরে পড়ে । হুল ফুলকে নিয়েও ধাঁধা রয়েছে ।
(১) ঘি চপ চপ মাধব লতা ,
এই ফুলটি পা'লে কুথা ?
রাজার ভাঁড়ারে নাই,
কড়ি দিলেও মিলা দায়।।"
(২) ঝিক্ ঝিক্ মানিকের ফঁটা
ওই ফুলটি পালি কুথা?
বা'নার দকানে নাই ,
রাজার ভাঁড়ারেও নাই।।"
এক সময় প্রকৃতি বিষয়ক এরকম অনেক অনেক ধাঁধা মানভূম-পুরুলিয়াবাসীর মুখে মুখে ফিরত । সেগুলি এখন অবলুপ্তির পথে । গ্রামে গঞ্জের দাওয়াই দাওয়াই , আটচালায় , ধারীতে, শিব মন্দিরের চাতালে কান পাতলে কোথাও শোনা যায় না ।
জীবজন্তু পোকামাকড় বিষয়ক ধাঁদা :--আমাদের বারো মাসের দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্ত জীবজন্তু, পোকামাকড়কে নিয়ে ঘর সংসার , প্রাত্যহিক জীবন, সেই সমস্ত বিষয়গুলিও ধাঁদাতে ঠাঁই পেয়েছে । কারণ মানুষ কিছু কিছু জীবজন্তুকে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করার জন্য , আরামদায়ক করার জন্য,নিজেদের সুখ ভোগের জন্য পোষ মানায় , ব্যবহার করে আবার নানান কীটপতঙ্গের নানা কর্মকাণ্ড, স্বভাবধর্ম, আচার আচরণ লক্ষ্য করে আনন্দ-কৌতুক উপভোগ করে।
গৃহপালিত জন্তুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গরু । কেননা কৃষিসভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই চাষবাস ও পশুপালন ছিল আমাদের জীবিকা, আর চাষবাসের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লাঙ্গল, সেই লাঙ্গল টানার বিশেষ সহযোগী গরু ও মোষ ।
লাঙ্গলকে ঘিরে ধাঁদা ---
"তিন মুড় দশ পায়
খেটে খায়, খেতে পায়।"
---উত্তরটি অবশ্যই জোড়া বলদ বা জোড়া-মোষ এবং হলকর্ষক। আবার গাই বাছুর ও দুগ্ধদোহনকারী বা দহন কারিণীকে ঘিরে ভাঙানি ---
"সাঁই-সুঁই-শটকা
তিন মুড় দশ পা।"
গৃহপালিত পক্ষী 'হাঁস'কে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে --" ভর্তি জলে, ট্যাক্সি চলে"_বল ত কী ?
তেমনি আবার সাপ ও কচ্ছপ --উভয়ের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে একটি ধাঁধা গড়ে উঠেছে।
"কথা যাছিস রে এঁকা বেঁকা?
তর কী রে খাপরি ঢাকা ?"
কচ্ছপকে ঘিরে আরও দু'টি ধাঁধা পাওয়া যায়। একটি হলো ---
"ভর্তি পখ'রে কাড়ার লাদ ।"
উচ্চারণের সাথে সাথে একটি বিস্ময় জন্ম নেয়! কারণ পুকুরের জলে কখনো কাড়া অর্থাৎ মোষের লাদ বা পায়খানা ভাসতে পারে না । পুকুরের স্বচ্ছ জলে ভাসমান পদ্মা-শালুকের পাতার উপর বসে আছে কচ্ছপ , সেই দৃশ্য দেখেই হয়তো এই হেঁয়ালি র জন্ম ।
আর কচ্ছপকে ঘিরে অপর ধাঁদাটি হল ---
"বনের থেকে বেরা'ল কুকুর,
ল্যাজ নাই তার ফাকুর ফুকুর।"
এক সময় ঘোড়া এবং ঘোড়সওয়ারেরর ভূমিকা ছিল মানুষের দৈনন্দিন জীবনে , যুদ্ধবিগ্রহে ; তাই ঘোড়া এবং ঘোড়সওয়ারের প্রসঙ্গটিও এসে গেছে রাত কহনীর মধ্যে ।
"ছ'টা পা , তার চারটায় চলে ।
দুটা মুখ , তার একটায় বলে ।
একটা ল্যাজ , চারটা চোখ ।
বললে তুমি আচ্ছা লোক ।"
বর্ষাকালে শ্রাবণ ভাদ্র মাসে এই তল্লাটে সাপ ও কাঁকড়ার বিশেষ আমদানি। সেই সাপ ও কাঁকড়াকে ঘিরে বলা হয়েছে --
"যে চলে তার ঠ্যাং নাই,
যে ভালে তার ঘাড় নাই।"
শুধু সাপ কাঁকড়াই নয় বর্ষাকালে সাধারণত এক পশলা বৃষ্টির পর সন্ধ্যেবেলা বাবলা গাছের ডালে ডালে ফুটে ওঠে জোনাকীর আলো । সেই একটি দু'টি পাতার পরে একটু মৃদু আলো দেখে হেঁয়ালি কর্তা হেঁয়ালি করলেন ---
"জলে পদীপ না পুড়ে ত্যাল
পন্ডিতে পন্ডিতে লা'গে গেল খ্যাল।"
এখানকার মানুষ গেঁড়ি গুগলিকে অন্যতম আমিষ তরকারি মাংস হিসেবে গ্রহণ করে । বিভিন্নভাবে বাঁধ-পুকুর, ডোবা থেকে শামুক গুগলি সংগ্রহ করে এনে তার মাংস ছাড়িয়ে পুড়িয়ে অথবা রান্না করে খায়। অনেক পরিশ্রমের পর খুবই স্বল্প পরিমাণ মাংস পাওয়া যায় এই বিষয়টিকেই সরস দৃষ্টিভঙ্গিতে মজা করে বলেছেন ---
"ইয়া বড় হাঁস ,
তার এক কু'টা মাস।"
ঘরের কোণে যে মাকড়সারা দিনরাত জাল বুনছে, সেই মাকড়সাও বিষয় হয়ে এসেছে ধাঁদাতে।
"আট পা ষোল হাঁটু
মাছ ধরতে যায় লাঠু ।
শু'কনা বাঁধে ফে'লে জাল ,
মাছ ধ'রে খায় চিরকাল।"
দারিদ্র লাঞ্ছিত হাভাতে ঘরে ময়লা জামা কাপড় আর ছেঁড়া কাঁথা সম্বল করে দিন পেরিয়ে যায়। সেই সমস্ত সংসারের ছেঁড়া বিছানায় ছারপোকা টোকা টোকা কামড়ায় কুটকাট দিনরাত ।সেই ছারপোকাকে ঘিরে তাই এখানকার মানুষ ধাঁধা বানিয়েছেন।
"কুত্থির মতন জিনিসটা ,
ঢেঁকির মতন আহার করে।"
সাধারণত এখানকার ঘরবাড়ি মাটির দেয়ালে খড়ের অথবা টিনের ছাউনিযুক্ত । ঘর গুলি নির্মাণের ক্ষেত্রে কাঠ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । সেই কাঠ দিনরাত খেয়ে চলে ঘুনপোকা । দুর্বল কাঠ, কাঁচা কাঠ হলে ঘুনে খেয়ে ফেলে । সেই খুনকে ঘিরে বলা হয়েছে ---
" আঁকাবাঁকা নদীটি দিক চরণে যায়,
সাত রাজার কপাট খু'লে কাঠকলাই খায়।"
গ্রামাঞ্চলে এ গাছে ও গাছের ডালে মধুমাছি বাসা বাঁধে । মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে পল্লী বাংলার দূঃসাহসী যুবক । চাক ভাঙা মধুর উপকারিতা শেষ নেই। মৌমাছি র জীবনবৃত্তান্ত পড়লে আমরা জানতে পারি কিছুই কিন্তু দুই চরণের হেঁয়ালিতেও কম কথা বলা নেই।
"গাই ত গোপী লয়
দুধ বড় মিঠা ।
ষোল শ সতীনের
একটাই পিঠা ।
মানব শরীর বা দেহতত্ত্ব বিষয়ক ধাঁধা :--বাংলা সাহিত্যে বাউল গনে দেহতত্ত্বের প্রসঙ্গ রয়েছে । দেহতত্ত্ব বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল চর্যাপদেও । আর মানভূম পুরুলিয়ার ধাঁদায় দেহতত্ত্ব এবং মানবদেহের নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশেষ বিষয় হয়ে উঠেছে । চরণ বন্দনা দিয়ে সে সব কথা শুরু করা যেতে পারে ।
"গাছটা গেল চ'লে ,
পাতটা রইল ব'সে।"
উত্তরটি হল "পায়ের ছাপ" । পা থেকে যদি মাথায় যাই তাহলে পাই "চুল"। চুলকে ইঙ্গিত করে বলা হলো "নুয়াতে পারি , ভা'ঙতে লারি।"
চুল থেকে নেমে এলে ভুরু, চোখ, নাক ও মুখ।
এই চার অঙ্গ যে ভাঙানীর উত্তর, সেই ভাঙানিটি হল ---
"ঝুড় তলে মুটুর মুটুর,
মুটুর তলে ফ্যাঁ
ফেঁ তলে ফ্যাদেড় ফ্যাদেড় ,
বল তো ভায়া ক্যা ?"
মুখের ভিতর জিভ । জীবকে ইঙ্গিত করছে দু'টি হেঁয়ালি
(১) "এইটুকু কানি ,
শুকা'তে না জানি।"
(২) উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম ছাঁচা
কন ফলটি কাঁচা ?"
এ ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ঘিরে আরো কিছু ধাঁধা রয়েছে। জিহ্বাকে ঘিরে বলা হয়েছে---
" উপরে পাটা তলে পাটা
তার ভিতরে নাচছে কে টা ?
যে বলব্যাক সে বাপের বেটা।"
চুলকে ঘিরে প্রশ্ন --
"সময় হলে পাকে,
উপর তলে থাকে।"
আর চোখকে উদ্দেশ্য করে বলা হয় ---
"বাও নাই বাতাস নাই
পাত কেনে লড়ে?
মেঘ নাই, পানি নাই ,
জল টলটল করে।"
মানব শরীরের মূল্যবান অঙ্গ দাঁত । দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্ম বোঝে না । কিন্তু সে চলে গেলে বেশ টের পায়, কী ধন আমি হারিয়েছি! তাই দাঁতের উদ্দেশ্যে মানব বা মানব শরীর প্রশ্ন করছে ---
আমি আল'ম যখন,
তুমি আ'লে নাই তখন।
যখন তুমি আ'লে ,
সর্বস্ব খালে,
এমন কী দুখ পা'লে,
যে আমাক ছা'ড়ে গেলে?"
বেদনাতুর চিত্তে উচ্চারণ করছে ---
"আমি আলম আগে ,
তুমি পরে আ'লে।
অসময়ে ছা'ড়ে
কুথা গেলে চলে !"
দাঁত চলে গেলে মানুষ বুঝতে পারে আমি কী মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছি ! কিন্তু সহজ সরল লোকজীবন থেকে লোকসাহিত্য, লোকসংস্কৃতি লোকযান,কথকতা যখন চলে যাচ্ছে, চলে গেছে আমরা কিন্তু তখনও বুঝতে পারছি না, বোঝার চেষ্টা করছি না আমাদের জীবন থেকে আমরা প্রাণ সত্তাই আমরা হারাতে বসেছি, হারাতে বসেছি আমাদের মনের মানভোমরা ।
(সমাপ্ত)
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণের চিত্রশিল্প : পাপিয়া ঘোষাল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
একদম ঠিক কথা বলেছেন ।
উত্তরমুছুনআমরা চাষ করি কিন্তু সেটা যে পুরোপুরি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।
সত্যি খুব আকর্ষণীয় 🙏🏼
উত্তরমুছুন