তৃতীয় বর্ষ ।। একবিংশতি ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ মাঘ ১৪২৯ ।। ৩০ জানুয়ারি ২০২৩


মানুষ যখন নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারতে শুরু করেন তখনই প্রাইভেটাইজেশন শুরু হয়। মোদ্দা কথা হল প্রাইভেটাইজেশন শুরু হওয়ার পিছনে মূল দায়ী আমরাই।
      আমি সরকারি কর্মচারী। উচ্চমানের বেতন গ্রহণ করি প্রতি মাসে। অথচ যে কাজ করার কথা সেই কাজ করি না। বরং উল্টোটা করতে করতে এগিয়ে চলি।
            আট ঘন্টা ডিউটি করার পরিবর্তে তিন চার ঘন্টা করে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি করি গোড়া থেকেই। সেই প্রবণতা ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাকে বলবৎ করতে নানা পন্থা অবলম্বন করি। সেটা রাজনৈতিক বা নারকীয়ও হতে পারে।
            আমি শিক্ষক। দেরিতে স্কুলে এসে খানিক মোবাইল চালিয়ে ছেলেদের মিড ডে মিল খাইয়ে চেষ্টা করি আড়াইটা নাগাদ স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে। এর পিছনে আমার নানা হিসেব, গুন ভাগ যোগ থাকলেও ছেলেরা তা কখনোই শিখতে পারে না। পারে না রিডিং পড়তেও।
             স্কুলের উন্নয়নে কোনো স্কিম এলে তার থেকেও সামান্য রোজগার করে নেওয়ার সুযোগকে হাতছাড়া করি না কখনো। তার জন্য খারাপ গুণসম্পন্ন উপকরণ লাগাতে হলেও লাগিয়ে দিই।
             আমি রেলে চাকরি করি। ডিউটিতে গিয়ে মদ খেয়ে পড়ে থাকি রেল লাইনের ধারে। 
              যখন সাফাই ওয়ালার কাজ করি তখন স্টেশন চত্বর নোংরায় ভরে থাকলেও আমার চোখে নোংরা দেখা যায় না। কেবল মাসের শেষে নির্ধারিত ৩০-৪০ হাজার মাইনেটার দিকে এগিয়ে যাই ধীরে ধীরে।
              অথচ, আমি যখন নিজের ঘরে একটি লোক লাগাই। তখন কাছে বসে থেকে হিসেব করি, ক'টায় আসছে ক'টায় যাচ্ছে। বেতনটা যেমন নিচ্ছে তেমন কাজটাও করছে তো?
              আমার এই প্রবণতা থেকেই প্রাইভেটাইজেশনের শুরু। আর প্রাইভেটাইজেশন হয়ে যাওয়ার পর সরকারি বেতনের এক চতুর্থাংশ বেতন নিয়ে ঝাঁ চকচকে রাখি স্টেশনকে। 
               স্কুলে পড়ানোর সময় দশটায় ঢুকে চারটায় বেরোই। আমি নিজে গুন ভাগ যোগ বিয়োগ কষি না আর সময় নিয়ে, বেতন নিয়ে। ছেলেরা দিব্যি শেখে গুন ভাগ যোগ। শিখে যায় রিডিং পড়া থেকে প্রশ্ন উত্তর তৈরি করার কৌশলও।
              যে বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারি থাকার সময় সারাদিন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকত না, সেটাই প্রাইভেটাইজেশন হয়ে দিব্যি থাকে। পাঁচ মিনিটও লোডশেডিং হয় না। অথচ যাঁরা এই কাজে যুক্ত হয়েছেন এখন তাঁদের মাসিক বেতন সেই সময়কার সরকারি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীদের এক চতুর্থাংশও নয়।
              তাহলে কোন্ পথে এগোবে সরকার? এর উত্তর তো সবারই জানা। তারপরও চিৎকার করতে হবে প্রাইভেটাইজেশন বন্ধ করুক সরকার?


উত্তম মাহাত, সম্পাদক 


______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
দুর্গা দত্ত / দীপংকর রায় / সুজন পণ্ডা / প্রদীপ মৈত্র / রামকৃষ্ণ মাহাত / হামিদুল ইসলাম / ময়ূখ দত্ত
______________________________________________



দুর্গা দত্তের কবিতা 

হাতের পাঁচ : এক


তুমি যে আগুন আমি জানি

তুমি যে সমুদ্র আমি জানি

তুমি যে বিকেল জুড়ে
শালবনে ডুবে যাওয়া সূর্যাস্তের আভা
আমি জানি

তুমি যে সেই অলৌকিক তিরতিরে স্রোতে
কেঁপে ওঠা পুণ্ডরীক
আমি তা-ও জানি

আজ বালির ওপরে চেয়ে দেখি
আঁকি বুকি করে গেছি তোমার মুখের রেখা
রক্তাভ অক্ষরে

ভূর্জপত্রে

দিনরাত

সারাটা জীবন ...





হাতের পাঁচ : দুই


শব্দেরও কি রঙ থাকে ?
লাল ! নীল ! হলুদ ! সবুজ ! ...

শব্দেরও কি গোত্র থাকে ?
আদিম ! কৌমতন্ত্রী ! আলোকিত!
ইয়াহু সজীব !...

তোমাকে শীতের চিঠি লেখবার আগে
এই নিঝুম ঠাণ্ডায়
ভোররাতে
মাঝগঙ্গায় ডুব দিয়ে
সব শব্দ ঠুকে ঠুকে ধুয়ে মুছে চোখ বুজে
আসনে বসেছি...

শব্দের যদি কোনো প্রাণ তুমি
না-ই খুঁজে পাও
আমাকে দুষো না কোনোদিন --

জেনে রেখো
মন্ত্রাচারে আমি কোনো ফাঁকই রাখিনি --

চুপ করে সব কিছু দেখে শুনে মেনে নিয়ে
সাবলীল লালন করেছি

তাই বলে মনে কোরো না
আমি কখনও হাতে নিইনি
ভূর্জপত্র বেলকাঁটা তুলোট কাগজ --

মনে কোরো না যেন
আমার এই স্বরধ্বনি
বৃক্ষমূলে রৌদ্রস্নানে কখনও ডোবেনি !!    আরও পড়ুন






পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে

দীপংকর রায়


স্নায়ুর ভেতরে পাক খেয়ে ঘুরে শোবো যে 
তারও উপায় কোই ?

পড়শি আকশি বাঁধিয়ে বিঁধিয়ে দেয় বর্শা ----
যৌথ বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাবো যে
তারও উপায় কোই ?
তাই জুতো হাতে কুঁজো হই ,
গুড়ি মারি ,
উল্টে ঢাকি নিজেই নিজের মুখ ; 

লজ্জা হয় 
গ্লানি ,
ভেবে মরি সারাদিন যাকে
সে কি একান্ত প্রশান্তি আমার ?
নাকি দূরে আছো বলেই এত টান 
      কাছের ?

তুমিই আমার গোপন আনন্দ খানিক ,
একা একা খেলার আহ্লাদ ?

যদি সেটাই হয় 
তাহলে এমন কেন হয় , যেদিকেই পরিবর্তীত করি 
যেখানেই তোমার স্বজন খুঁজি ------
ঘুরে আসে হাজার বর্শা বল্লমের তীক্ষ্ণ ধার ----- 
চলে যায় শিরদাঁড়া ফুঁড়ে কথার ত্রিশুল যতো ------ 

আমাকে পরিত্রাণ
         বলো ,
ফেরাও আমার ঘুম 
   তোমার তন্দ্রা ছুঁয়ে ---- ;

ঘোরাও 
বাঁশি
ফেরাও ঢেউ
জল হয়ে বয়ে যাও স্নায়ুতে 
আয়ুতে 
বায়ুতে ....
ও আমার ভুলের সাগর
পূর্ণ হও তুমি ;
স্নানের প্রকৃত অবগাহন চেনাও -----








সুজন পণ্ডার কবিতা 

আকাশ অংশত মেঘলা ছিল


১.
একটি একটি করে শিশির বিন্দু
মাটিতে নামছে।
আরো হাজার বছরের শীত
আরো হাজার বছরের স্মৃতি।
বুকের মধ্যে জমানো 
পৌষের দীর্ঘ রাত্রি।

এই আঁধার বড়ো ব্যক্তিগত।
নিভৃত এক প্রশ্নের জন্ম দেয়
ঠিক কতখানি ব্যথা পেরোলে
মারা যায় বিশ্বাস?


২.
কি দেবো তোমাকে?
আমার নীরব শ্বাস?

আমার নিঃস্ব সময়ের কিছুই
তোমাকে দেওয়ার মতো না।
অণু দিন।
ভূমিহীন অস্পষ্টতা।
আমার সঞ্চয়
সাকুল্যে শূন্য বৈ তো নয়।

কি দেবো তোমাকে?
আমার ভঙ্গুর অভিমান?

আমার বিছানার পাশে
পড়ে থাকা নীরব আলো
অথবা যে ছোট্ট মহাকাশ গায়ে জড়িয়েছি?
কি দেবো তোমাকে? আরও পড়ুন








প্রদীপ মৈত্রের কবিতা 

১.
থাক ঋণ অন্তহীন


বহুদিন আসবো আসবো করে অবশেষে সে এসেছিল একদিন। ভাঙাচোরা ঘরে। এই খানে বসেছিল চুপচাপ সবুজ চাউনি মেলে,

কথা টুক টাক, তার পরে গিয়েছিল চলে। শ্বাসটুকু রেখে গেছে, নাকি গেছে ফেলে বুঝিনি নিশ্চিত, বুঝিনি ইঙ্গিত।

যাবার সময় হাসি ছিল মুখে?

নাকি পন্ডশ্রম ভেবে ভাঙা ঘর ছেড়ে

গিয়েছিল দূরে বিদ্রূপে, কৌতুকে?

বিষণ্ণতা যেন কুহেলি প্রান্তরে, তাও জানা নেই। আমি ভাবি ঠিকই, শুধু শুধু নষ্ট শ্রম,

নষ্ট অবকাশ এর চেয়ে চির সখা বৈশাখ আমার সাথে থাকুক একাকী,

যে বসন্ত দ্বিধা গ্রস্ত, তার চেয়ে ভালো -

থাকা ধার বাকী।




২.
প্রত্ন তত্ত্ব 


ওহে বিজ্ঞ, ওহে প্রত্নবিদ

খনন করেছ কটা পোড়ো জমি? বলে দিলে নিশ্চয় ভঙ্গীতে


কোনো কালে, কোনো দেবীমূর্তি ছিলনা এখানে, তবে স্বপ্নাদেশে কাকে দেখি, আমি ?

নিশি দিন অন্তহীন ফাগুন শ্রাবণে?

এসো এই খানে, চালাও খনিত্র।।
খুঁড়ে ফেলো ভিতের পাথর খুঁড়ে দেখো তুমি যত্রতত্র, সুড়ঙ্গ পথের প্রান্তে এই বুক জুড়ে অস্থি চূর্ণ, জীবাশ্ম যত হাড় ও পাঁজরে।

সব জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে

তুমি তো পাবে না

হৃদয়ের মূল্য দিয়ে সেই মূর্তি কেনা


ইতিহাস তার কাছে ঋণী 

আমি তাই নিশ্চিত জানি

আজও আলো জ্বলে,

বর্তমানের পোড়ামাটি ছেড়ে

গহন অতলে।







কবির সঙ্গে দেখা 

রামকৃষ্ণ মাহাত


কবিদের সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরি 
নিত্য নতুন শেখার জন্য । অভিজ্ঞ মানুষ হওয়ার জন্য। 
সবশেষে অবশ্য দু একটা সেলফি হলে ক্ষতি নেই 
ওটাও খুব জরুরি ।
রাস্তায় ঘাটে কে কখন কাজে লাগে কে জানে ? 

আমাদের তরুণ কবির এরকম একটা সখ ছিল । 
কবি সন্মেলনে যাবে , কবিতা পাঠ করবে , নামীদামী 
কবিদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করবে । ডুবে যাবে কবিতায় 
কবিতায় ...

এই যতবার কবিতায় ডুবে যেত 
সহৃদয় কোনো কবি তাকে ঠিক তুলে নিত 
সে ধীরে ধীরে কবিতা হয়ে উঠত 

তারপর আর কোনো তরুণ কবির জন্ম হত না ।






স্বপ্নের বালুচর
 
হামিদুল ইসলাম
                                

কবিতায় রাখি সোহাগ
একটু নরম ছোঁয়া
পাথর ক্ষয়ে যায়
জেগে ওঠে শীতে ভেজা হাজার সূর্যমুখী       ।।


কবিতা প্রতিদিন হয়ে ওঠে জীবন
হয়ে ওঠে ভালোবাসা
রোজনামচা ভাবনাগুলো ভাসে মরা গাঙে
স্বপ্নকে নিত্য করি সাথী       ।।


সব খতিয়ান এঁকে রাখি কবিতার পাতায়
ইচ্ছেগুলো করতোয়া
নিষ্ফল আবেদনে ভরে ওঠে কথার দুপুর
কখনো ঝড়ের সংকেত       ।।


ছায়া হয়ে জেগে থাকে আমার অবকাশ
কখনো সে নদী
কখনো এলোচুলে অনার্য নারী
কবিতা হয়ে ঘোরে আমার স্বপ্নের বালুচরে       ।।







ডায়রির এক পাতা

ময়ূখ দত্ত


ছোটোবেলা থেকে শিখে এসেছি সমার্থক আর বিপরীতার্থক শব্দমালা... ভাল-খারাপ, সোজা-উল্টো,  ন্যায়-অন্যায়...একটু বড় হয়ে লোপামুদ্রার একটা কবিতা গানে শুনলাম ".. সাদা আজকাল কালোর খুব কাছে চলে এসেছে..."। এর সাথে সাথে জীবনের প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে খেতে নিজেও আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলাম যে আসলে সাদা বা কালো বলে কিছু হয় না, সবটাই ধূসর!! প্রতি পদক্ষেপে আমরা এই ধূসর জীবন-যাপনই করি, কোনো সময়ে আমরা সেই ধূসরতার সাদাটে দিকে, আর কোনো সময়ে আমরা সেই একই ধূসরতার কালো দিকটায় থাকি। প্রায় সবাই আমরা সততাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, কিন্তু সততার মাপ বলে কিছু হয় কি? যে লোকটাকে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিলে সে সততার প্রতীক হয়ে হয়ত নিজের জীবন উপভোগ করল, কিন্তু সেই মানুষটাকেই যদি দশ লাখ টাকা দেওয়া হয়, কত শতাংশ মানুষ তখনো সৎ থাকতে পারবে? আবার যে দশ লাখে সৎ, সেই মানুষটাই হয়তো এক কোটিতে বিক্রি হয়ে যাবে। আবার যে টাকাতে বিক্রি হয় না, সে অন্য কিছুতে বিক্রি হয়ে যায় - যেমন আমরা 'জন অরন্য' তে পড়েছিলাম বা দেখেছিলাম..
এই চিন্তাটাতে একটা খুব নেতিবাচক দিক আছে, যা কিনা মানুষে বিশ্বাস হারাতে শেখায়, নিজেকে ভেঙে দেয় প্রতিমুহূর্তে...
"সদা সত্য কথা বলিব, কদাচ মিথ্যা বলিও না.." ছোটোবেলায় শেখা এই কথা কতটা বাস্তব? আমার ছেলের সাথে একদিন এই নিয়ে বেশ ঝামেলাই হয়ে গিয়েছিল!! চোদ্দ বছরের ছেলের সাফ কথা ছিল "..  আমি শুনেছি, তোমরাও অনেকসময়ে মিথ্যে কথা বল..", তাকে তখন "white lie" কনসেপ্টটা বোঝাতে হয়েছিল... যে মিথ্যে কথা বললে লোকের ভাল হয় বা ভাল করার উদ্দেশ্য নিয়ে মিথ্যে কথা বলার মধ্যে কোনো দোষ নেই!! মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকেও ডাক্তার হামেশাই মনোবল বাড়ানোর জন্যে বলেন " এই তো, পরের সপ্তাহেই আপনি নিজের পায়ে হেঁটে বাড়ি চলে যাবেন.."।  এই সব মিথ্যে কথা কি চিত্রগুপ্তের খাতায় লেখা হয় না? কে জানে, কে এই সবের হিসেব এইভাবে রাখছে... 

আবার বয়সের বা পরিনতবোধের সাথে সাথে সত্যটাও আস্তে আস্তে বদলে যায়...এক্কেবারে ছোটোবেলায় শিখেছিলাম পৃথিবীটা গোলাকার, একটু বড় হতে শিখলাম ঠিক গোলাকার নয়, অনেকটা কমলালেবুর মত, তারপরে আরো বড় হয়ে শিখলাম যে এই আকারটা অনেকটা ডিম্বাকার (ellipsoid), এখন বলা হচ্ছে এটা নাকি ঠিক ডিম্বাকারও নয়, পৃথিবীর আকার কে বলা হয় "জিওড" (Geoid), যার ওপরটা অনেক অসমতল। এত কিছু জানার পরে কি আমি বলব যে শিশুশ্রেণিতে আমার দিদিমনি আমাকে ভুল শিখিয়েছিলেন, যে পৃথিবী গোলাকার? না, তা কখনই নয়... ওই বয়সে ওটাই সত্যের সবথেকে কাছাকাছি ছিল। এবার সেই ভাবে দেখলে 'ঠিক' বা 'ভুল' / ভাল-মন্দ সব কিছুর মধ্যেই সম্ভবত সময় নামক একটা ডাইমেনশান আছে, যার মধ্যে দিয়ে আমরা সবাই চলি এবং এই সব শব্দের মানে হয়ত কিছুটা হলেও পাল্টে পাল্টে যায় এই যাত্রাপথে!! নদীও সময়ের সাথে সাথে তার যাত্রাপথ কত পরিবর্তন করে নেয় নিজের সুবিধেমত...এই সময়ের আধারে প্রতিটা মানুষ একটু একটু করে পাল্টে যায় হয়ত নিজের অজান্তেই... আদর্শবাদী বাম ভাবধারায় বিশ্বাসী কর্মীকে যখন আমরা দেখি ভোগসর্বস্ব সমাজের সাথে, সময়ের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যেতে, তখন অবশ্যই খারাপ লাগে একটা আবেগপ্রবণ অনুভুতির কোণাভাঙা খোঁচায়। কিন্তু তাকে যেন বেশী করে আমাদের কাছের লোক মনে হয়, যখন দেখি সেও আমাদের মতই বয়ে চলেছে মনুষ্যত্বহীনতার খাদ ধরে,  সত্য-মিথ্যার মাঝখান দিয়ে...  যে ছেলেটা সারাজীবনে কোনোদিন ঘুষ খায় নি, ঘুষ খেতে হবে বলে কোনোদিন পি ডবলিউ ডি-র চাকরী করে নি, তাকে দেখেছি ঘুষ দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে... আবার আরেক বন্ধুকে গর্ব করে বলতে শুনেছি যে ".. আরে, ঘুষ নিতে হলেও সাহস আর স্কিল লাগে..." সত্যি কথা বইকি!!  কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল? সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়... এ এক অদ্ভুত অনুভুতি। আমরা মনে মনে পৌঁছাতে চাই এক জায়গায়, কিন্তু জানি যে সেখানে পৌঁছানো খুব মুশকিল, অধিকাংশের কাছে হয়তো 'অবাস্তব' ও... তাই সহজ ধূসরতার রাস্তাটাই আমরা আপন করে নিই, সেটাকেই বাস্তব বলে মানি বা জানি, গায়ে কালি লাগলেও মনে মনে বলি, 'আমি তো অমুকের থেকে বেশী সাদা..'




______________________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া 
______________________________________________

১/ উত্তম, ভালো থেকো। আলোকচিত্রগুলি ভারি চমৎকার।-----কবি মনতোষ চক্রবর্তী 


২/ অরন্ধন ওয়েবসংস্করনের ১ লা মাঘ।১৬ জানুয়ারি সংখ্যায় মুকেশ মাহাতর ফটোগ্রাফি অসাধারণ। তার পর্যবেক্ষণ বা দৃষ্টিকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
কীটপতঙ্গ আমাদের সঙ্গেই থাকে,
আমরা ভুলে যাই তাদের দেখতে।
মুকেশ আমাদের দেখিয়ে দিলো,
এইসব পোকামাকড় এই পৃথিবীর
সন্তান।
এদের নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা।

মুকেশ উত্তমের কাছে নতুন একটি আবিষ্কার। আবিষ্কারের কাজে
উত্তম আরও এগিয়ে যাবে নতুন নতুন দিকে, আশা করতেই পারি।

উত্তম ভালো থাকুক।

মুকেশের কল্যাণ কামনা করে।

------কবি নির্মল হালদার 


৩/ খুব সুন্দর হয়েছে..       -------দেবমাল্য মাহাত 


৪/ আশ্চর্য হলাম। এমন ছবি আমাকে আপ্লুত করল।
------কবি তৈমুর খান 


৫/ খুব ভালো লাগলো দেখে। কতো কীটপতঙ্গকে যে কতো অন্যভাবে দেখতে পেলাম ! সুন্দর হয়েছে মুকেশ।------কবি ও সমাজসেবী দুর্গা দত্ত


৬/ তোমার পাঠানো পড়ি। ভালো লাগে।
তোমার নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার প্রশংসা করতেই হবে।
---------কবি পঙ্কজ মান্না


৭/ নামহীন , ২০ জানুয়ারী, ২০২৩ এ ১:৪৯ PM
কাব্য-সাহিত্যপাঠে মননে যে-বিক্রিয়া ঘটে তা' তো সামান্য মন্তব্য প্রকাশের অধীন নয়; তাৎক্ষণিক সুখবোধের উচ্ছ্বসিত ভালবাসা; স্বল্প পরিসরে তা'র রসায়ন ক্রমশ প্রকাশমান ঘটে; ভাল লাগা, এবং ভালবাসা যুগপৎ রসায়নাগারে মহাবিস্ময় ; বিমূঢ় হয়ে পুনশ্চ 'অরন্ধন'-এর অপেক্ষয় থাকা।

৮/নামহীন, ২২ জানুয়ারী, ২০২৩ এ ৭:২৭ AM
মুকেশ এর তোলা ফটোগুলোতে কিটপতঙ্গ গুলোকেও হট ও সেক্সী লাগে।

______________________________________________




                           আমাদের বই



সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ : প্রকাশ মাহাত-র পেন্টিং, আন্তর্জাল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com



মন্তব্যসমূহ

  1. পাঠ করেছি, ভাল লেগেছে; 'অরন্ধন' পত্রিকার কল্যাণ কামনা করি ; বসন্তের
    দখিনা বাতাস লাগুক প্রাণে; দরজা-জানালা ফাঁক-ফোঁকর সব খোলা থাকল।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪