তৃতীয় বর্ষ ।। ষড়বিংশতি ওয়েব সংস্করণ ।। ২৬ চৈত্র ১৪২৯ ।। ১০ এপ্রিল ২০২৩
কবি হয়ে উঠতে গেলে লেজ দরকার। তেল দরকার। দরকার চরণ ধোয়া জল। যেমন দেবতার কাছে মানত পূরণ করার জন্য দরকার বলিদান। দরকার বেলপাতা। আতপ চাল। তেমনি কবি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও বলিদান দরকার! ঠিক পশু না। তার বিপরীতে থাকা বস্তুগুলোকেই বলিদান দিতে হবে এখানে। এমনই কথা ভেবে বেড়ায়। ভেসে বেড়ায় অলিগলি। ঠিক যে সকল পথে কবিদের যাতায়াত চোরাগোপ্তাভাবে।
অনেকেই আবার কবি সাজার কথা বলেন। কিন্তু কবি সাজব কীভাবে এই বিভ্রান্ত বিষয়টি বুঝে উঠলাম না এখনও।
শরীরকে সাজানো যায়। যেমন খুশি সাজানো যায় যে কোনো সময়। তার জন্য কবি হওয়ার দরকার পড়ে না। তাহলে কবি হওয়ার জন্য বিশেষভাবে সাজতে হবে কেন? বুঝতে পারি না।
অনেকগুলো রাত পেরিয়ে গেল। পেরিয়ে গেল অনেকগুলো দিনও। আমার হিতিকা হসপিটাল থেকে ফিরে বর্তিকা দিদির কাছে পৌঁছালো। আকাশের দিকে তাকাতে শুরু করলো। কিন্তু আমি তো একটাও কবিতার জন্ম দিতে পারলাম না। কত রকম সেজেও পারলাম না। তবে কি শারীরিক সাজার সঙ্গে কবিতার কোনো সম্পর্ক নেই। কেবলমাত্র মানষিক সাজার সঙ্গেই তার গভীর সম্পর্ক?
কবি হতেই হবে আমাকে এমন ভেবে কবিতা ভাবতে ভাবতে জঙ্গলের ধারে ঘোরাঘুরি করছিল একটা শৃগাল। পেটে তখন প্রচন্ড খিদে। একটু একটু করে কবিতার লাইনগুলো সেজে উঠছিল তার মনে। একটু পরেই গিয়ে লিখে ফেলবে সে। এমন সময় একটি বন-মুরগি উড়ে এসে বসলো সামনে। শৃগালকে লক্ষ করেনি সে। শৃগাল ভাবে কবিতা লিখে তারপর শিকার! কিন্তু বন-মুরগিটা দানা খুঁটতে খুঁটতে একটু একটু করে এগিয়ে শৃগালের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলো। শৃগাল ঝপ করে লাফিয়ে পড়লো তখন। বন-মুরগিটা শোঁ করে উড়ে চলে গেল। আর শৃগালের কবিতার লাইনগুলো হয়ে গেল এলোমেলো। শৃগালের আর কবি হয়ে ওঠা হলো না। আমরাও হয়তো সেভাবেই কবি হয়ে উঠবো না কখনও।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
________________________________________
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া / সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় / ডরোথী দাশ বিশ্বাস / সুনীতি গাঁতাইত / অয়ন জোয়ারদার / সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় / কল্পোত্তম
________________________________________
অন্ধ প্রনামী
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া
লোভের সন্তান আমি
পিদিমের চারধারে সামা পোকাদের ভুল
ভয় আর আকাঙ্ক্ষার দোটানা আঙুল
আমাকে ছুঁড়ে ফ্যালে বাঁধানো চাতালে
সুতো বাঁধা মানতের টানে
ভরে উঠি পেতলের থালে
ধবধবে শাদা ক্রুশগাছ শোনে
ঘন্টা বাজছে সবখানে
ইচ্ছে পূরণ হবে বলে
ডুবে যাচ্ছি ধাতু চাকতি উইশিং ওয়েলে
খুঁজে খুঁজে পাহাড়ের ঢালে
গোম্ফার ধুপ আর
মাজারের মোম জ্বেলে জ্বেলে
দানবাক্সে ঢুকে যাচ্ছি উরসের দোয়া মাহফিলে
পাঁচ প্রদীপের শিখা দ্যাখো থানের মেঝেতে মাথা খুঁড়ে
উঠে দাঁড়ালাম মাত্র এই জিজ্ঞাসা নিয়ে
পাথর না পুরোহিত কে নেবে আমায় ?
দিনের চাতালে কারা খুঁটে তোলে বলো
কত হাত ঘুরে ফের অন্ধ প্রণামী
পেতলের বারকোষে ঝনঝন হেসে উঠি আমি...!
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
১.
স্মৃতিজল
বিষাদ ছায়ায় বসে আছো, এটুকুই পাখিরূপ। ভাঙা পাতাদের কথা থেকে গান খুলে খুলে পড়ে। সন্ধার বাজিকর এসে ঝুলি খুলে দেয়। তোমার দুচোখে সামান্য ভিক্ষালব্ধ আলো। গোপন পাপের মতো এই শাকান্ন তোমাকে মনোহারী করে। উদাস দিগন্তের আড়ালটুকু সরে গেলে _এ সবই গতজন্মের ব্রতকথা।
আয়োজন ভারী হয়। শিকার থেকে ফিরে আসে স্বাস্থ্যবতী তির। পুরানো রক্তের কাছে পড়ে থাকা অস্থিপালক কুড়াতে কুড়াতে _নিভে যায় সমস্ত আমিষ গন্ধ। কাঁসার ঘটির মতো চকচক করে ওঠে সেইসব স্মৃতিজল, দূরের নীরবতা।
২.
অনারোগ্য
ঘাসপাতাদের মতো এই জন্ম বুকে নিয়ে শুয়ে আছি অধিক কথার কাছে। ক্ষত ছিল _তবু বলতে পারিনি অন্ধ হাসপাতাল আর ততোধিক গোপন শল্য। সারি সারি ওষুধের মৃত মুখ। অভিমানের কাছে উড়ে আসছে সাদা তুলো। ভাঙা ভাঙা বিকেলের বিষাদ।
যথারীতি মেঘ এল। বৃষ্টি এল। ভিজে গেল দূর সর্ম্পকের ব্যবধান। অথচ আমাদের আরোগ্যের দিকে বেজে উঠলো না একটি অশ্বত্থপাতার বাঁশি।
ডরোথী দাশ বিশ্বাসের কবিতা
১.
কষ্ট
খুব সাধারণ তুমি
সহজলভ্যও
অথচ সবাই তোমাকে এড়িয়ে যেতে চায়।
আমি কিন্তু মাথায় করে রাখি
সব সময় সাজিয়ে গুছিয়ে হাজির করি সভামাঝে
তবুও সবাই এক নিমেষে তোমায় চিনে নিতে পারে
ভাবে, এ আর এমন কি!
কেউ কেউ অন্তরে লুকিয়ে রাখে তোমায়
একান্তে অনুভব করে তোমার সাহচর্য
হয় তো কোন অতীতচারী মন তোমায় স্মরণ করে বিব্রত হয় সেই মুহুর্তে
তোমার উপস্থিতিকে কটাক্ষ করে
কেউ হয় তো বলেই ফেলে
'এতো আয়োজন----এরও কি প্রয়োজন ছিলো'
আছে, আছে---
অস্তিত্বসঙ্কটে কেউ পড়তে চায় না
এ পৃথিবীতে
শুধু সুখ নয়, দুখও আছে
'সুখী' 'দুখী' দুই বোন
যখন সুখীকে নিয়ে ঘর করি
দুঃখ তখন সুখ-কে ঘিরে আবর্তিত হয়
আর দুখীকে নিয়ে ঘর করলে
তাকে ঘিরে আবর্তিত হয় সুখ---
বহু আলোকবর্ষ পেরিয়ে
সুখ দুঃখের ঊর্ধ্বে ওঠো মন
কষ্টেরও আছে প্রয়োজন।
২.
অকালবর্ষণ
পারুলবনের আগুন রঙটি পড়ছে গলে বৃষ্টিধারায়,
ঝিরঝির ঐ বাতাস ঠেলে দূরের পানে দৃষ্টি হারায়।
কোথায় গেলো চৈত্রদিনের স্তব্ধ দুপুর ধুলোর আবীর,
মুক্তি কোথায় আলোয় আলোয়, মনখারাপের অতল গভীর।
ছায়াবৃত্তের রঙ মাখা সব ভাবনাগুলো ছট্ হিং টিং,
বসছে পেতে আসনপিঁড়ি জলজলতায় জলফড়িং,
শ্যাওলামেদুর মাটির ছোঁওয়ায় জলের কাঁপন তির তির তির---
যা ছুঁয়ে যা মেঘের ছায়া মন খারাপের অতল গভীর।
একটুখানি দেখতে চাওয়া বর্ষাভেদী দৃষ্টি মেলে---
পাতায় কেমন ঝিলিক দিয়ে চরকতেজী রোদটি খেলে।
তেল সিঁদূরের পরিচর্যায় মৃত্তিকার ঐ রুক্ষ শরীর
ভিজবে না আর, ঘুচবেও না মনখারাপের অতল গভীর।
এই পথ
সুনীতি গাঁতাইত
রোজ পা দৌড়ায়,দিন শেষে ক্লান্তির মুকুট মাথায়, কেউ জানে ঘামের দাম কত পাউন্ড? দরাদরি আকাশকুসুম। হাইটেক দুনিয়া কেয়ার করে না কিছুই।নিংড়ে যাওয়া সময় ক্রমশঃ বেদখল। একটু নুন ভাত শাক পরমান্ন যার, সেই মুখে এলায়িত চাঁদের হাট,পাগলের প্রলাপেই থাকে কিছু মন কি বাত।
বুক জোড়া সেতু
অয়ন জোয়ারদার
১.
দুই সেতু দিনান্তের পারে
দুই মেরু সীমান্তের অশনি
তিন প্রহর বিদ্যুৎ বুকে,
আমরা সেদিন অসংযমি।
বক্র কিন্তু সহজ সরল
কথা বলা সমুদ্দুর ঢেউ
ভর দুপুরে কালো মেঘা মন
সেদিন থেকেই বর বউ
ওই দেখো সব ভেঙে যাচ্ছে
বজ্রচেরা সম্পর্ক সব
ঘরবাড়ি পাহাড় ঘাস
আমার তখন শারদোৎসব
যেদিন আমি হিংস্র,বদ্ধমূল ছিন্ন কাপাস
ক্ষতয় শুধু বুলিয়েছিলাম কাশফুলের দীর্ঘশ্বাস ;
আজন্ম লালন ইচ্ছেরা সব,বছর শেষের চৈত্র মাস
এভাবেই গড়তে গিয়ে সানুদেশের সমুদ্র মন্থন-
দেবকুল দুধ লভিল থাকিল ধরা মাতৃকার শীর্ণ স্তন।।
২.
বেদনঘর বেদীভূষণ লুটিয়ে রুদালী,
স্মৃতিসুখ একলা দ্বীপের শিখায় ছায়াজ
জ্যান্ত চলচ্চিত্র স্বপ্নে পিশাচের ঠোঁট চেপে হাসি;
রাত্রি নীল তুচ্ছ অবজ্ঞা যদি ভুলে যাওয়া যেত !
ভয় পায় বড় ভয় পাই বিচ্ছেদকে।
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
১.
বলার
বলার ছিল অনেক কথা,
থমকে আছে মুখে;
তোমার ছোঁয়া রইলো লেগে
অসহায় চিবুকে।
স্পর্শ ছিল, কর্ষ ছিল,
জমিনজোড়া ধান;
ধানের শিষে আদর-মোড়া
হাভাত অভিমান।
অভিমানেই কাঁপলে দুচোখ,
কাঁপলো আনখভূমি;
স্পর্শের দাগ ফিরিয়ে দেবার
পত্র দিলে তুমি।
ফিরিয়ে দিলাম, বিলিয়ে দিলাম
জমাট বুকের রাগ;
আর যা ছিল ছিনিয়ে নিলো
বুকচেরা দেশভাগ।
বলার ছিল অনেক শব্দ
ব্যক্ত ও অব্যক্ত;
নগ্ন শরীর রাঙিয়ে দিলো
স্মৃতির অঝোর রক্ত।
২.
বিশল্যতায়
মাঝখানে তো পথের চলা
ফুরিয়ে যেতোই সবকিছু
তোমার বলা আমার বলা
কথার আগু আর পিছু
প্রগলভতায়
তারপরে যেই সন্ধে হলো
নিভলো আলো সঙ্গোপনে
পলাতকার নটে মুড়োলো
অকিঞ্চিতের বীজ রোপণে
বিপন্নতায়
কিন্তু সেদিন হঠাৎ করে
ঘুম ভাঙালে, ঘুম ভাঙালে
অশালীন এক রাতের ভোরে
স্বপ্ন দিয়ে মেঘ রাঙালে
অজস্রতায়
সেদিন থেকে আজ বুঝেছি
যেখানেই যাও থাকবে তুমি
এদিক ওদিক পথ খুঁজেছি
তুমিই আমার জন্মভূমি
বিশল্যতায়
৩.
বৃষ্টি যদি
বৃষ্টি যদি তোমার মত
জল হতো সেই সাঁঝের কালে,
জল হতো সেই অগ্নিহত
বিন্দুবিন্দু তোমার গালে…
কেমন হতো?
বৃষ্টি যদি আমার হতো
শহরতলীর শেষ ঠিকানা,
তোমার বিফল চিঠির মত,
অন্ধগলির মতই কানা…
যেমন হতো?
বৃষ্টি যদি আমাদের এই
দ্বৈতহীনের দ্বৈত পথে
গানই হতো, সুর মেলালেই
হাত ধরতাম এক শপথে…
এমন হতো?
বৃষ্টি যদি এ দুই হাতে
পত্রপুটে টলটলিয়ে
অগ্নিসাক্ষী এ ভোররাতে
আগুন হতো ঝলমলিয়ে…?
তেমন হতো।
গ্ৰন্থ আলোচনা
কবি অনিমেষ মন্ডলের "আলোপৃথিবী" প্রকাশন থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হওয়া কাব্যগ্রন্থ "গাছের পাতারা জানে" একটি এক ফর্মার বই। এই কাব্যগ্রন্থে কেবলমাত্র ১২ টি কবিতা জায়গা করে নিতে পেরেছে। কিন্তু সেই কবিতাগুলো পাঠ করতে করতে কবির ভাবনার গভীরে হারিয়ে গিয়ে জীবনকে অন্য একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং তাকে পর্যালোচনা করার একটা সুযোগ হয়ে ওঠে।
এই কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাতেই কবির মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগে,"বৃষ্টির পরে লেবুগাছ কি / ফলবতী হয়ে ওঠে?" ঠিক যেরকমভাবে সে উজ্জ্বল সবুজ হয়ে উঠতে চায় "সমস্ত মালিন্যের স্তর সরিয়ে"? যেরকম অনিন্দ্য হয়ে উঠতে চায় সে? মনে হয় 'না'। এখন আর লেবুগাছের নিজের মতো করে প্রাকৃতিকভাবে ফলবতী হয়ে ওঠার সুযোগ নেই। অনেক জটিলতা ঘিরে ধরেছে তাকে। তাই তার ফলবতী হয়ে ওঠার জন্য কেবলমাত্র বৃষ্টিই যথেষ্ট নয়। তার সাথে সাথে আরও অনেককিছু কৃত্রিম যোজনার প্রয়োজন। যে যোজনাগুলো ছাড়া গর্ভবতী হয়ে ওঠা যাবে না। তাই সে "যেন আজ প্রথম সন্তানের জননীর মতো / জানালার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে..." । ভাবতে বাধ্য হচ্ছে আরও গর্ভবতী হয়ে উঠবে কিনা, আরও সন্তান ধারণ করবে কিনা।
"গোধূলি এসে দাঁড়িয়েছে আমার সন্নিধানে
তার ছায়া পড়ছে শরীরের ওপর
সে শুষে নিচ্ছে আমার সবটুকু নির্যাস"
কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতার এই লাইনগুলো থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সমস্যা কেমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে আমাদের। নানারকম সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক সমস্যাগুলো একসাথে এমনভাবে এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের সন্নিধানে যে, মনে হচ্ছে গোধূলি এসে দাঁড়িয়েছে। খানিক পরেই সূর্যাস্ত হবে। আর এইসব সমস্যাগুলো আমাদের বেঁচে থাকার সমস্ত রকম রসদ বা নির্যাস শুষে নিয়ে ছিবড়া করে দিচ্ছে আমাদের। আমোদ-শূন্য, রস-শূন্য হয়ে পড়ছি আমরা। হারিয়ে ফেলছি বাঁচার রসদ। তাই কবির ভাষায়, "আমার সুখের দিন অনালোকিত থেকে যায়"। অর্থাৎ মানুষের বা আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত সুখের দিন থেকে যাচ্ছে অনালোকিত। অনালোচিত। আলোকিত হয়ে ওঠার সুযোগই পাচ্ছে না।
তৃতীয় কবিতা তথা "জন্মভূমি" কবিতাতে কবি লিখছেন,"কোথাও যেন জন্মেছিলাম আমি / খুঁজতে খুঁজতে দেখি মেঘের ভিতর / বহু দূরে চলে গেছে সেই দ্রাঘিমা" অর্থাৎ আমরা জন্মভূমি হারা হয়ে পড়ছি দিনের পর দিন। শেকড় ছিঁড়ে যাচ্ছে আমাদের। হারিয়ে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে সম্পর্ক। সাধের জন্মভূমি যেন ঢেকে যাচ্ছে ঘন কুয়াশার চাদরে। তাই কবি কুয়াশার চাদর সরিয়ে দেখেছেন,"মাটির বাড়ি, ধানের গোলা / তৃণের শীর্ষে শিশিরের শৌর্য"। যে সকল বিষয়গুলো স্মৃতি বিজড়িত জন্মভূমির চিহ্ন বহন করে। যেখানে ছুঁয়ে আছে তাঁর আনত শিকড়।
"এই বেঁচে থাকা" কবিতায় আমাদের এই বেঁচে থাকাকে সত্যিকারের বেঁচে থাকা মনে হয়নি কবির। তাঁর মনে হয়েছে আমাদের এই বেঁচে থাকা "শুধু ছায়াই রচনা করে"। আর ছায়ারা হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে যেতে যেতে "ভেঙে যায় যাবতীয় লিপি"। যে লিপি নির্মাণ করে সাময়িক অমর হওয়ার চেষ্টা করি আমরা। চেষ্টা করি মানুষের মনের মধ্যে জায়গা করে নিতে। আর লিপি ভেঙ্গে যাওয়ার পর "নতুন করে জন্ম নেয় কবিতার স্বর" আমাদের অন্তর্দহনের প্রকাশ থেকে।
কবির হৃদয়কে উপলব্ধি করার মানুষ বোধহয় কমই আছে। কিন্তু গাছের পাতারা জানে কবির হৃদয় ঠিক কতটা সবুজ, কতটা রোমাঞ্চকর। গাছের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এখনও সজাগ থাকায় পাখিদের ভাষাও বোঝে। এবং তার পাতার জালিকাতে শিরার বিন্যাসের মাধ্যমে লিখে রাখে পাখিদের ভাষা। তাদের যাবতীয় বার্তালাপ। অন্যদিকে কবি লিখে রাখেন আলোর কাঁপন এবং আঁধারের পরাজয়। এক কথায় বলতে গেলে কবি লিখে রাখেন সামাজিক অবক্ষয় এবং শেষ পর্যন্ত সংঘটিত হওয়া অশুভ শক্তির পরাজয়ের কথা "কবির উচ্চারণ" কবিতার মধ্য দিয়ে।
"ভিটে" কবিতায় কবি এক একটি রাতে, চাঁদের আলোয় ভূতগ্ৰস্ত হয়ে পড়েন এবং খুঁজে বেড়ান ঠাকুমার ব্যবহার করা লণ্ঠন। অর্থাৎ বাল্যকালের স্মৃতিকে হাঁতড়ে বেড়ান। যে স্মৃতিতে অম্লান সুখের বিচরণ এখনও স্পষ্ট। কিন্তু ঠাকুমার সেই লণ্ঠন কোথায়? তাকে খুঁজে পাওয়া কি সম্ভব? তাই কবির কল্পনায় আকাশের এক একটি তারা ঠাকুমার ব্যবহার করা লণ্ঠনের আলো হয়ে ওঠে। কবি ফিরে যেতে সক্ষম হন তাঁর ছোটবেলায়। খুঁজে পান তাঁর সঙ্গে সারারাত গল্প করার মতো জোনাকিদের। যে সব জোনাকিরা ছোটবেলা থেকেই তাঁর পরিচিত। তাঁর খেলার সঙ্গী।
কবির এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটা কবিতাতেই গভীর ভাবব্যঞ্জনা পাঠককে নিয়ে যায় অন্য এক মায়াময় জগতে। যেখানে জেগে ওঠে অসংখ্য সুখস্মৃতি। জেগে ওঠে ছেড়ে আসা ভিটেমাটির প্রতি অসম্ভব টান। জেগে ওঠে প্রাকৃতিক শক্তির অক্ষয় বার্তা। তাই কবির এই কাব্যগ্রন্থ পাঠ করে মুগ্ধ হতেই হয় পাঠককে।
কল্পোত্তম
________________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া
________________________________________
১/ ভাল লাগল দুর্গা দত্ত আর ময়ূখ দত্তের লেখা... ওঁদের তুমি একটু জানিয়ে দিয়ো ভাই... ছবিগুলো যতই সুপরিচিত হোক্, কোনটা কার ছবি, সেসব উল্লিখিত নেই কেন?... থাকা দরকার কিন্তু!... ...
------------কবি অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র
২/মনোমুগ্ধকর আয়োজন...একরাশ মুগ্ধতা! ❤️❤️
----------কবি হাবিবুর রহমান এনার
৩/উত্তম 'অরন্ধ'নে তোমার সম্পাদকীয় পড়ে যারপরনাই
কষ্ট অনুভব করলাম ।
কেন করলাম ?
বলতে পারবো না ।
ছবি প্রদর্শনসালা অধ্যায়ে
এবারের ছবিগুলি দেখে শিউরে উঠি
----------কবি দীপংকর রায়
৪/অসাধারণ সম্পাদকীয়।👌👌👌
সব কটি কবিতা সুন্দর। বিশেষ করে দুর্গা দত্তের কবিতা কটি অসাধারণ।।
গলপটিও এক বিচিত্র সমাজচিত্র দর্শন করালো।
তনুশ্রী চন্দ্রের আলোকচিত্র সব কটিই চমকপ্রদ।
সর্বোপরি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন ছবির অলঙ্করণে এবারের অরন্ধন সর্বাঙ্গসুন্দর।
--------------কবি সুনৃতা রায়চৌধুরী
৫/সম্পাদকীয় অসাধারণ লাগল।
------------চিত্রশিল্পী দেবাশীষ সাহা
৬/লেখা এবং ছবি অসাধারণ।
--------------কবি সন্দীপ মুখোপাধ্যায়
৭/গল্পটি বাদে (সময় নিয়ে পড়তে হবে) সম্পাদকীয় ও কবিতাগুলি পড়লাম। সম্পাদকীয় বাস্তববোধ ও মননের মিলমিশ, এমনই হওয়া উচিৎ, তাই স্যালুট। কবিদের শ্রদ্ধা। আর হ্যাঁ, অরন্ধনের সুচারু সাজসজ্জা মনোমুগ্ধকর, ভালো থেকো।
------------কবি মিনাক্ষী লায়েক
৮/লেখা ও ছবি খুব সুন্দর ---------চিত্রশিল্পী দীপাংশু মাহাত
৯/কয়েকটি ছবি চমৎকার। সুষমামণ্ডিত।
------------গল্পকার স্বপন চক্রবর্তী
১০/খুব ভাল হয়েছে লেখাগুলো। তোমার সম্পাদকীয় অনন্য। এগিয়ে চলার শুভেচ্ছা রইলো।
------------- গণপতি মাহাত
১১/একফালি, দাগ, কার্ড- এই তিনটি কবিতা ভালো লাগল।
------------কবি শর্বরী চৌধুরী
১২/আহা অনবদ্য একটি সংখ্যা হয়েছে।
কবিতা গুলি চমৎকার। দুর্গা দত্তের উনুনের পাশে আঁচ উপভোগ করেছি যেমন তেমনি অজন্তার ছবিও দেখলাম। দারুণ।
এই সংখ্যার অংশ হতে পারাটা গৌরবের।
--------------কবি সুজন পণ্ডা
______________________________________________
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ : চিত্রশিল্পী রোঁদার পেন্টিং, আন্তর্জাল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
বাহ!! পড়ে ফেললাম প্রায় একদমে... খুব ভাল, এগিয়ে চলুক এই প্রচেষ্টা...সম্পাদকীয় টা পড়ে ঋত্বিক ঘটকের একটা ইন্টারভিউ মনে পড়ে গেল, প্রশ্ন টা ছিল "আপনি সিনেমা কেন করেন"। তার উত্তরটা অনেকটা এরকম ছিল -.." যেদিন সিনেমার থেকে শক্তিশালী মাধ্যম আমি পাব, যেখানে আমার কথা আমি বলতে পারব, সিনেমার পেছনে লাথি মেরে আমি সেখানে চলে যাব.." লেখালেখি টাও সেরকমই
উত্তরমুছুন