চতুর্থ বর্ষ ।। ত্রয়োদশ ওয়েব সংস্করণ ।। ২৮ আশ্বিন ১৪৩০ ।। ১৬ অক্টোবর ২০২৩
সিনেমা শিল্পে কাল্পনিক বিষয়ের ছড়াছড়ি থাকলেও আমাদের জীবন যাপনেরই নানা কথা, নানা অভিজ্ঞতা, নানা নির্যাস উঠে আসে বিভিন্নভাবে। কোন এক হিন্দি সিনেমার এমনই একটি কথা হলো,"পেয়ার মে অর জং মে সব চলতা হে ইয়ার।" অর্থাৎ ভালোবাসা আর যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাঁধাধরা কোন নিয়ম নীতি নেই। এক্ষেত্রে জয়লাভ করাটাই মুখ্য বিষয়। যেভাবেই হোক জয়লাভ করতেই হবে নিজেকে। তাই, কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে কোন গোষ্ঠীর বা কোন দেশের সঙ্গে কোন দেশের যুদ্ধ লেগে যাওয়ার পর নীতির কথা আওড়ানোটা নিতান্তই বেমানান বা ভন্ডামি ছাড়া কিছু না।
পৃথিবীকে সুন্দর সুস্থ রাখতে হলে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার আগেই কীভাবে তাকে থামানো যায় সেই বিষয়টা নিয়েই ভাবতে হবে আমাদের।
এবার আপনি বলবেন, এটাও কি সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। যদি আমরা স্ব-সুরক্ষার নামে বিপুল পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করে তা রপ্তানি করার কথা না ভাবি বা অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করেই দিনপাত চালানোর কথা না ভাবি।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলো, যারা কিনা যুদ্ধ বেধে যাওয়াকে আটকানোর ক্ষমতা রাখে, তারাই আজ অস্ত্র ব্যবসায়ী। যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা রোজগার করছে অনায়াসে। ফলে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাস্ত্র নষ্ট করা বা ক্ষয় করাটাও তাদের একটা লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আসল কথা হল, বিভিন্ন দেশের স্বনির্মিত বা আমদানিকৃত মজুত অস্ত্র কোন না কোনভাবে ধ্বংস করতে না পারলে সেইসব দেশ আর নতুন করে অস্ত্রশস্ত্র আমদানি করার কথা ভাববে না। এমতাবস্থায় তাদের নির্মিত অস্ত্র বিক্রিও হবে না। টাকাও আসবে না হাতে। অস্ত্র বিক্রির উপর নির্ভর করে বেড়ে ওঠা জিডিপি গড় গড় করে নেমে আসবে তলানিতে। সে কারণেই যুদ্ধ হয়। দেশে দেশে যুদ্ধ। সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে যুদ্ধ। যুদ্ধ হয় ভাইয়ে ভাইয়ে। গাঁয়ে গাঁয়ে। যুদ্ধ লাগানোর জন্য বপন করা হয় বীজ নিভৃতে।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
বিপুল চক্রবর্তী / দুর্গা দত্ত /রামকুমার আচার্য / ভাগ্য / সুশান্ত সেন / রূপক চট্টোপাধ্যায় / সুজন পণ্ডা / রামানুজ মুখোপাধ্যায় /
_____________________________________________
দু'টি লেখা : বিপুল চক্রবর্তী
১.
আমাদের ভাষাচর্চা
'অ্যাটেন বোরো'-কে আমি 'অতীন বুড়ো'-ই বলব, শুনে
তুমি হো হো ক'রে হেসে ওঠো
আমাকে আনপড় ভাব মনে মনে, ভাব
ইংরিজি জানি না
অথচ সেবারে সেই রাঁচিতে বেড়াতে গিয়ে, মনে পড়ে
টেগোর হিলের কথা তুমি বলেছিলে
টেগোর, এ উচ্চারণে, কী আশ্চর্য, লক্ষ্য করি
তোমার অস্বস্তি নেই, কোনও লজ্জা নেই
ভাবি, কতকাল হ'ল স্বাধীন হয়েছি ---
আমাদের ভাষাচর্চা তবু আজও ইংরিজির কঠিন নিগড়ে
২.
স্মার্ট ওয়াচ এবং
পাড়ার 'মা দূর্গা স্টোর্স' কিংবা 'আদি গণেশ' পেরিয়ে
হেঁটে যাই যদি নীল-পুকুরের দিকে
গুগুল সে সব কথা, দেখো, ব'লে দিচ্ছে
এমনকী ক'পা হাঁটছি, বা, হাঁটার সময়ে হার্ট-বিট
কখন কেমন
সে কথাও ব'লে দিচ্ছে আমার হাতের স্মার্ট ওয়াচ
যে কোন অচেনা গাছ ফুল পাখি, তাদের নামধাম
যে কোন অচেনা সাইনবোর্ড
সব সব সবকিছু প'ড়ে ফেলছে গুগুল ক্যামেরা
তথাপি দুঃখের কথা এই যে, কোথাও কোনওভাবে
ধর্ষণকারীরা কেউই ধরা পড়ছে না
বরং গ্রেফতার হন অসুস্থ অশীতিপর একজন কবি
দুর্গা দত্তের কবিতা
ভাদরিয়া গান : এক
তোমাকে বলবার মতো
কোনো ভাষাই আমার আর অধিগত নয়।
আমি জানি । সমস্ত অক্ষর নিংড়ে জানি।
তবু এই গন্ধপুষ্পে সমস্ত দরজা খুলে
জ্বালিয়েছি ধুনোজাল, খুলে গেছে অশেষ সৈকত ...
তোমার কি কোনো ভাষা, কোনো ধ্বনি,
কোনো শব্দ, অক্ষরমালা কোনো কিছু
কোথাও রাখোনি বলে ভেবেও দেখোনি!
নাকি নিজেই নিজের জালে
স্বনির্মিত বাঘবন্দী ছকে
স্বয়ংক্রিয় চিত্রনাট্য রচনা করেছো !
তোমাকে বলবার মতো আজ
নিজেই নিজের মতো পাঁজরের ভাঁজে
ভাষাহীন এই দীর্ঘশ্বাসটুকু ছাড়া
হাতের মুঠোয় আর আত্মনেপদী কিছু আছে বলে
বুঝতেই পারি না কেন
সেটাও তো বুঝতে পারি না।
ভাদরিয়া গান : দুই
আমার সমস্ত আলো অন্ধকারে ডুবে গিয়ে
তোমাকেই খোঁজে
তোমার নিপুণ হাত , আলপনা এঁকে যায়
পথে ও বিপথে
দিকচক্রবালে খোঁজে খেজুরের কাঁটা থেকে
অমেয় সুপেয়
আমি শুধু দেখি দূরে কাশবন জেগে ওঠে
তোমার সুবাসে
আমার সমস্ত আলো , দুহাতের ভাঁজে থাকা
সব অন্ধকার
চাও বা না-চাও তুমি,
বোঝো না-ই বোঝো তার কিছু
ইতিহাস জুড়ে সেই সব
তোমার দিকেই ধাবমান
ভাদরিয়া গান : তিন
কোনো কথা বলবোনা বলে
সব কিছু ছেড়ে এসে দাঁড়িয়েছি
স্তব্ধ এই জলের কিনারে
জলের ভাষার মতো অতল-ছোঁয়ার আলো
অনায়াসে নয়, গাঢ় মেঘের ছবিটি
শ্রমসাধ্য দুচোখে দুলিয়ে
ঘাই মেরে চলে গেল প্রবীণ রোহিত ...
দু-একটি জলজ গুল্মও
ঈষৎ শিহরিত , কেন্দ্র থেকে সুর তুলে
ছুঁয়ে গেল কম্পনের দ্যুতি
প্রেক্ষাপট শুধুমাত্র এই -
চিরাচরিত ওই ভাষা টুকু বুঝে নিতে
সবকিছু ছেড়েছুড়ে
এতটা বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি শুধু
তোমার এই নীলকান্ত জলের কিনারে
ভাদরিয়া গান : চার
জল হাঁটে।
ছপ ছপ করে জল হেঁটে যায় পায়ে পায়ে
ধুলোওড়া ডাঙা ও ডহরে
হু হু শ্বাস মাঠভাঙা দূরের জমিতে।
জল নামে।
ঝুপ ঝুপ করে সন্ধে নামার মতো
ডালপালা ভেদ করে
জোনাকিকে গায়ে মেখে
নেমে আসে কারও বা উঠোনে
জল নাচে।
যদি কেউ শ্রাবণগাথার কোনো ধ্বনিমূল
বিকেল সন্ধে জুড়ে
হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতে পারে
জল ডোবে।
শুকনো মাটির বুকে মুথাঘাস খুঁজে খুঁজে
যে মানুষ শ্বাস নেয়, শীতলতা চায়
তার হাতের তালুতে
কখনোবা ঐশ্বরিক ঢেউ তুলে
ডুবে যায় জল
জলেরও তৃষ্ণা থাকে।
ঢেউ তুলে তৃষাতুর জল
জলেরই ভেতরে ডুবে যায় ।
আদিঅন্তহীন এই জলকরতলে
অবিরাম ডুবে যায় আকণ্ঠ তৃষ্ণিকা ...
কাশের বাসা
রামকুমার আচার্য
কাশ ফুল
অবহেলায় বেড়ে উঠছে
নদীর চরে।
একা একা নয়,
একসঙ্গে বন্ধুতায় বাঁচে ওরা
নদীর জল শুকিয়ে এলে
একসাথে মিশে যায় মাটিতে
বাগানে ফুটছে জবা ফুল
রক্ত জবা
রোজ বাগানে আসছে পাখিটি
একটি দুটি কাশ জড়ো করে
বানাচ্ছে ঘর
জবা গাছে কাশের বাসা
ভাগ্য-র কবিতা
১.
বিপন্ন অস্তিত্ব
আমার মাথার ওপর ছাদ নেই
তাই খোলা আকাশের দিকেই তাকিয়ে থাকি—
যে টুকু আলো এসে অন্ধকার ঘরে।
বসবাসের ঘরটি ছোটো, দরজাও একটাই
জানালা টানালা কিচ্ছু নেই,
তবে একটা ছোট্টো কুলুঙ্গির মতন ফাঁক আছে—
বাড়তি অক্সিজেনের লোভে।
উনান বাইরেই, স্বভাবত রান্নাও বাইরেই হয়ে থাকে;
রান্নাঘর নেই তবে গোয়াল ঘর আছে; চারটে অবলা জীবও আছে—
ওটারই একপাশে হয়ে যায় আর কি।
তবুও আগুন জ্বলে কই?
কেবল বিপন্ন বিস্ময়
কিছু পরিচিতি হীন-পরিচয়
আর চোখের জল অপচয়।
আকাশ আজকাল আর পরিস্কার নেই
তবু বৃষ্টিও আর আসেনা।
ও বলল ”দুটি বাসীভাত আছে খেয়ে নিস বাবা।"
চাঁদ উঠল তিনদিন পর
এতদিন কি বাতাস ধরে রাখা যায়!
ধোঁয়া উড়ে গেল;
আমার আমিত্বের বিপন্ন অস্তিত্ব।
২.
ব্রাত্য আমি
তুমি শীতের মত এসেছিলে চুপি সারে গোপনে
কেউ জানে নি সেকথা।
হয়তো কিছু কথা কানাকানি হয়েছিল;
টের পায়নি তেমন করে।
নীরবে এসেছিলে গভীর নিশুতি রাতের মতোই অন্ধকারে,
দিনের আলোয় ছিল অন্য পরিচিতি।
জানি অন্তমিল নেই,
ছিল কিনা জানি না
মিলের কোনো সম্ভাবনাও দেখি না যে,
কেবল পাখি ডাকে ভোর হয়ে আসে,
আলো ফুটে ওঠে দূরত্ব বাড়ে অনায়াসে,
সে সুযোগ আমরাই তো দিয়েছিলাম তাকে।
দূরত্ব আসে; যোগাযোগ কমে; তৃতীয়ের হাতছানি বাড়ে,
বারে বারে ডাকে, অপর মেরুর আকর্ষণ অনুভব করো তুমি।
ক্ষণে ক্ষণে আনমনা হও, বুঝি আমার প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে!
কালো ছোটো ছায়াটি কালো বড়ো ছায়াটির পাশাপাশি তেমন আসে না আর
বিরহ দুর্বার – আন্দোলনের ইতিহাস জানে না কেউ।
তুমি হটাৎ করে জানালে "আমাদের কোনো ভবিষ্যত নেই।"
আলো যেমন এসেছিল আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে
আরও যেন বেশি অন্ধকার ঘনিয়ে এলো দুচোখ জুড়ে।
তারপর অনেকটা সময় নিঃশব্দ যেন অন্ধকার,
তুমি ছায়ার মায়া হয়ে এলে
প্রশ্ন জাগালে উত্তর সন্ধানে।
ভোরের শুক তারা মুছে যাওয়ার আগে তুমি কি মুছিবে!
সুশান্ত সেনের কবিতা
১.
মেঘ
আকাশে মেঘ জমে আছে , পাতলা পাতলা, ভ্যাপসা ভ্যাপসা , যেন জীবনের রস সব শুষে নিয়ে ছানিপড়া চোখে এক বৃদ্ধ ।
কোনো উদ্দ্যম নেই , কোনো নড়াচড়া নেই ,বাংলার আকাশে যা নিশ্চিত করছে ভগ্ন জীবনের ।
অনেক দিন আশায় আশায় থাকার পর যখন বৃষ্টি আসেনা অথচ আকাশ থাকে মেঘে ঢাকা , তখন আশাহীন চাষী যেমন মনে মনে গুমড়ে গুমড়ে ওঠে ,সেই ভাবে এই প্রজন্ম মাথা নিচু করে বসে আছে , তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে বিগত কাল তাদের জন্য ধুলিমুঠি ছাড়া কিছুই রাখেনি ।
কখন ওরা উঠে দাড়াবে ? কি করেই বা দাঁড়াবে?
২.
তুমি
তুমি জানো বানিয়ে কথা বলতে পারিনা
পারিনা কথা বলতে সাজিয়ে গুছিয়ে
তাই কথা গুলো ছোট ছোট হয়
কারো মনে দাগ কাটেনা ।
একদিন সন্ধ্যার আকাশে ধ্রুবতারা দেখে পাগল
হয়েছিলাম
তোমাকে ডেকে দেখিয়েছিলাম
সন্ধ্যার আকাশ
না বলতে পারা কথা গুলো তখন মূর্ত হয়ে
উঠেছিল,
আকাশে
তুমি কি অনুভব করেছিলে !
এখন রাত্রি এসেছে , স্তব্ধ রাত্রি
তাই কথা গুলি আরো ঘুমিয়ে পড়েছে
আর তো কথাগুলো শোনা যাবে না।
কোনদিনও না।
নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ও ধূর্ত কিশোর
রূপক চট্টোপাধ্যায়
১.
ধীরে ধীরে বশ্যতা স্বীকার করেছি তোমার।
একদিন নয়। সুকৌশলে জাল ফেলেছো,
বুঝতেই দিলেনা তুমি কি
নয়ণ জোড়া ধুরন্ধর!
পৃথিবীর এককোনায় ভিক্ষা লব্ধফল নিয়ে
সাজানো অহমিকা চূড়ায় গেঁথেছি আমার
মেঘলা পতাকা। ভেবেছিলাম এই তো
সুবর্ণ বিজয়। এই তো জামার কলার তুলে
বেঁচে থাকা। খিস্তি উড়িয়ে উড়েযাওয়া মনুষ্য সন্তান!
বুঝতে পারনি তুমিও চতুর শ্যামল কিশোর!
আহীর ভৈরবে টেনে আনো সুরের শেকল দিয়ে
আমার আহত মনুষ্যজন্মের তীব্র চৈত্র তাপ!
তাই নতজানু হয়েছি নক্ষত্র বন্দিত চরণের কাছে,
দাও যত মেঘ মন্ত্রে জল আছে
দাও স্নাপ্ত করে তোমার কৃতদাসে!
২.
তুমি তো কুলঙ্গি গোপাল।
বিবর্ণ দোওয়ার মাঝে এক খন্ড চন্দ্রকলাভাস!
বাতাসের শরীরে যখন নিম সন্ধ্যা মাখা,
ধূপের সুবাসিনী এসে
শঙ্খ ধ্বনিতে জানায় দিবাবসান। কেতকী জ্বলে!
ঘরে ফের হাসের দলে কিশোরী উচ্ছলিত,
দিন মন্থন শেষে হকারদের খুচরো গোনা, শ্রমস্নান,
চায়ের দোকানে শ্রেণীবিন্যাস ভেঙে
জটলা আরো জটিল হয়ে ওঠে।
আমি তোমার কাছে বসি,
গভীর নদীর জল পত্রিকায় মনে মনে
তোমার জন্য লিখে ফেলি গীতগোবিন্দম্!
৩.
স্নানের আগে সমুদ্র এঁকেছি
প্রণামের আগে তোমার দু'খানি চরণ।
আমায় যেমন খুশি সাজিয়ে দাও
ভবঘুরে, চাঁড়াল
অথবা তোমার অরুপে কৃষ্ণ কালো বরণ!
৪.
একদিন মৃত্যুর মুখোমুখি চা চক্রে বসতে চাই।
সম্ভবত বিকেলের দিকটায়। সবুজ ঘাসের নরমে
মাঠে বসে সস্তা সিগারেট ধরাবো। ফুঁ দেবো।
ধোঁয়ার ভেতর বন্ধুর মতো অস্পষ্ট মুখশ্রী তার
মোহন বাঁশিতে আরো স্বর্গীয় লাগবে হয়তো!
৫.
তোমার আমার বন্ধুত্বের মাঝে কোন ঈশ্বর
থাকতে নেই। তুমি রাখিও নি তাই।
রোজ দেখি মাথায় সংসারের
অদৃশ্য গোবর্ধন পাহাড় নিয়ে
কিশোর টোটো চালক সন্ধ্যাবেলা বাঁশিতে
ঠোঁট ছোয়ায়, আর সমস্ত শহর কেমন করে
নির্জন যমুন বয় একূল ওকূল!
৬.
আমি তোমার ব্রজ সুন্দরীকে চিনি,
হলুদ শাড়ি পড়ে
বেনী দুলিয়ে কলেজে যায়। হৃদয় ঘটিত
যমুনা পুলিনে কোথাও ডেকে ওঠে সুকসারি।
কোথাও হাঁটু জলে ভেসে যায় তাম্বূল খন্ড।
আড়ালে আড়ালে আমিও হাঁটি
খগের কলমটি নিয়ে, নিঝুম তমালের বন।
সব লিখতে হবে আমায়। অবন্তিকা জানে
আমিও অধম চাঁড়াল, আমিও পাপিষ্ঠ যবন!
ফিনিক ফোটা জোছনা
নিশিডাক
সুজন পণ্ডা
গভীর রাতে পর পর তিন বার সেই ডাক শোনা যায়। প্রথম দুই ডাকের মধ্যে ব্যবধান থাকে পনেরো সেকেন্ড, শেষ দুই ডাকের মধ্যে ত্রিশ সেকেন্ড মতো। রাত্রি দুই প্রহর পেরোলে নাম ধরে ডাকে কেউ। খুব চেনা গলা অথচ মনে করতে পারা যায় না কে সে।
সেই ডাকে সাড়া দিয়ে, একবার বেরোলে আর নিস্তার নেই। ফেরার সব পথ বন্ধ। মাথা হয়ে যায় আউল বাউল।
লোকে একে বলে নিশি ডাক। আমি জানি ওই ডাক চাঁদের।
ওই ডাকে পুরুষ আকুল হয়।
সদ্য পঁচিশ পার করা যুবক গভীর বিশ্বাসে আমাকে বলছিল সেই সব কথা।
রাত্রির শেষ ট্রেন মিস করে, আমি তখন আটকা পড়েছি এক নির্জন স্টেশনে। ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ জঙ্গলের মধ্যে পাণ্ডববর্জিত সেই ছোট্ট স্টেশন। কাছেই কোথাও ঝর্ণা আছে, অবিরাম জলের স্রোত আছড়ে পড়ার শব্দ আসছে।
মানুষের অচেনা কোনো শাদা ফুল ফুটেছে... কি আরাম তার গন্ধে। চোখ বুজে আসে।
আজই বুঝি চাঁদের জন্মদিন, না হলে এই সুন্দর সাজ?
রূপো ঝরে পড়ছে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে।
এই রাত্রে, অনেক অবিশ্বাস্য গল্প সত্যি মনে হয়। এই মায়াবী রাতে নিশি ডাক মনে হয় দিন দৈনিকের ঘটনা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কখনো শুনেছেন সেই ডাক?
সে বললো, আমার পূর্বপুরুষ শুনেছে, বহুবার।
তারা সাড়া দিয়েছে?
না দিয়ে উপায় নেই যে।
আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি কি? সম্পূর্ণ অবিশ্বাস করতে পারছি না নিশ্চিত। কোনো অপার্থিব মাদকতা কাজ করছে যেন।
উপায় নেই?
না... সৃষ্টিকর্তা সেই ক্ষমতা দেয়নি।
তাহলে?
তাহলে আর কি? তারা ঘর ছেড়েছে।
আর ফেরেনি?
না।
তাদের খোঁজ করেনি কেউ?
করেছে, সবাইকে পাওয়া যায়নি, কাউকে কাউকে পাওয়াও গেছে....
ফেরেনি কেউই।
যুবকের কথা গুলি কখনো কখনো অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কখনো তীক্ষ্ণ হচ্ছে।
কেমন এক অলস ভঙ্গিতে কিন্তু স্থির বিশ্বাসে যুবক কথা বলে চলেছে। প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে তার চোখ নেমে গেছে বনভূমির আলো ছায়ায়।
দেখতে পেয়েও ফিরিয়ে আনতে পারেনি কেউ?
না... আর ফেরানো যায় না। ওইরকম অনেকের সাথে মিশে তারা হারিয়ে যায় ওইরকম অনেকের মাঝে।
যুবকটি চুপ করে একটু। নিস্তব্ধ প্রকৃতি। বাতাস চলাও যেন থেমে যায় কয়েক মুহূর্ত। পূর্ণ চন্দ্রের ওপর দিয়ে এক খণ্ড মেঘ হেঁটে যায়।
এরপর আবার শুরু করে, এই মায়া একবার যাকে ছুঁয়ে যায়, তার রক্তে চন্দ্র কণিকা আসে, ভাঙা জ্যোৎস্নার গুঁড়ো ছুটে বেড়ায় শিরা উপশিরায়। প্রকৃতি তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়... নিজের কোলে তুলে ঘুমপাড়ানী গান শোনায়।
যুবক অদ্ভূত টেনে টেনে গাইতে থাকে...
আয় আয় আয় রে বাছা
ঘুম পাড়াবো তোকে,
মনজুড়ানো শান্তি নামুক
চন্দ্রাহত চোখে...
আয় আয় আয় রে বাছা
ঘুম পাড়াবো তোকে,
কাল সকালে উঠবি সেজে
পাখির ডাকে ডাকে...
আহা কি সুন্দর, কি বিষাদ সেই সুরে... কোন মা এই গান গায়? কার ক্ষমতা আছে এই মা কে ফিরিয়ে দেওয়ার?
আমারও বিশ্বাস হচ্ছে ক্রমশ।
নিশি নয়, চাঁদ নয়... ওই ডাক এই মায়ের। পুরুষ মা কে ফিরিয়ে দিতে পারে না কখনো।
আমি একটু ব্যস্ত হয়ে বললাম, কোথায় তোমার সেই সব হারিয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষেরা? তুমি দেখেছ তাদের কাউকে?
যুবক বললো দেখেছি, তবে এখন আর আলাদা করে চিনতে পারিনা, এখন সবাই এক সাথে এক হয়ে থাকেন।
তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো সম্বোধন নেই, সম্পর্কের কোনো নাম নেই।
কোথায় তাঁরা?
এই অরণ্যে। ওই শাল আর বহেড়ার বৃক্ষ হয়ে... চাঁদের রূপোলী আলোতে তাদের মাথা ধুয়ে যাচ্ছে। দেখুন।
দেখুন, ওরা সবাই আমার পূর্বপুরুষ। আমার আত্মীয়। ওদের কারোর নিজের ছায়া পড়ে না, সমগ্র অরণ্যের ছায়া হয়। কিন্তু একেকটি গাছ আলাদা আলাদা ভাবে ছায়া দিতে পারে না। চাঁদের আলোয় কারোর একা থাকতে নেই।
অখণ্ড আকাশ জুড়ে চাঁদ একা ঘুরে বেড়ায়, তার একাকীত্ব সে কাউকে বুঝতে দিতে চায় না।
যুবক মাথা উঁচু করে তাকায় আকাশে, ফিনিক ফোটা জোছনা তাকে আঘাত করে।
যুবকের চোখের কোণে জল চিকচিক করে...
আমার মনে হয়, কেউ ডাকছে আমার নাম ধরে, কিছুক্ষন চুপচাপ সব...
ওই আবার শুনতে পাই...
আবার সব নিস্তব্ধ নির্বাক...
সেকেন্ড ত্রিশ পর আরেকবার..।
আমার বুকের ভেতর তেপান্তরের শূন্যতা। পা ঢুকে যেতে থাকে মাটিতে...
যুবকটি একটি ডাল বাড়িয়ে আমাকে ছুঁয়ে থাকে। আমি একটি ছোট্ট ডাল বাড়িয়ে দিই তার দিকে, দুজনের চোখেই জল...
আমাদের পায়ের কাছে বাঁধানো সিমেন্টের বেদীতে হিম জমা হয়।
নির্মল হালদারের ‘করোনা ডায়েরি’ এই দুঃসময়ের মহাকাব্য
রামানুজ মুখোপাধ্যায়
দিন যত এগিয়েছে, প্রযুক্তি যত উন্নত হয়েছে, আমাদের ব্যস্ততা তত বেড়েছে। প্রত্যেক দিন নিয়ম করে দিনলিপি লেখার সময় কই আমাদের হাতে! লিখলেও তো প্রত্যেক দিনের নিত্যনৈমিত্তিক কাজের পুনরাবৃত্তির ক্লান্তিকর বিবরণেই ভরে থাকত আমাদের দিনলিপিগুলি। দিনানুদৈনিকের জীবনকে শিল্পের নান্দনিকতায় মণ্ডিত করে তুলতে আর ক-জন পারেন। শুধু ব্যস্ততা নয়, হয়তো এই আশঙ্কা থেকেও দিনলিপি প্রকাশের ব্যাপারে আমাদের মনে তৈরি হয় একরকমের অনাগ্রহ। লেখেন হয়তো কেউ-কেউ, তাঁরা আর ছাপার অক্ষরে প্রকাশ্যে আনতে চান না সে-সব। দিনলিপি তাই প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল সাহিত্যের আঙিনা থেকে।
চিত্রটি ঈষৎ বদলে গেল সাম্প্রতিক মহামারির সময়ে। করোনা আমাদের জীবনে নিয়ে এলো এক অপ্রত্যাশিত আতঙ্ক। পায়ে-পায়ে ভয়। চারদিকে শুধু নিষেধের গণ্ডী। লকডাউন। বাধ্যতামূলক ঘরবন্দি। বন্ধ দোকান-বাজার, পথ-ঘাট, স্কুল-কলেজ। বিপন্ন শৈশব। সংবাদ মাধ্যমেও ক্লান্তিকর হতাশার সারি। পরস্পরের থেকে দূরে-দূরে, বিচ্ছিন্ন থাকতে-থাকতে, আমাদের মধ্যে কি তবে নতুন করে জেগে উঠল নিজেকে, এবং চারপাশকেও নতুন করে ফিরে দেখার আগ্রহ? এরই মধ্যে ফিরে এলো দিনলিপি লেখার একটা প্রবণতা।
আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, ২০২০-র মার্চে শুরু হয়েছিল কোভিড-১৯-এর সংকট। সমকালীনতার উত্তাপ অনেক সময় আমাদের স্পর্শ করে। এমন ক্রান্তিকালে তো সে-কথা আরও বেশি করে সত্য। উত্তাপ কমে এলে পাঠক সে-লেখাগুলির ভিতরে সন্ধান করেন চিরকালীন আবেদন। ২০২০-র মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের রাজ্যে শুরু হয়েছিল লকডাউন। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে 'সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম' পত্রিকার কলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল কবি নির্মল হালদারের 'পৃথিবী গ্রহের পুরুলিয়া'-র লেখাগুলি। ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে সেই লেখাগুলি প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থাকারে। এই বইটির উপশিরোনাম ‘করোনা ডায়েরি’। এর লেখাগুলি আসলে দিনলিপি। ১৪২৭-এর ১ বৈশাখ থেকে ১ জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন লেখা হয়েছিল দিনলিপিগুলি। আমাদের দেশের নগরে-বন্দরে যখন মৃত্যু আতঙ্কের হাহাকার দুয়ারে-দুয়ারে, তখন কেমন ছিল গ্রাম-ভারতবর্ষ? কবি নির্মল হালদার লিখেছেন সেই বিষাদের দিনলিপি।
বাংলা কবিতার আকাশে নির্মল পরিচিত নাম। বিশ শতকের সত্তরের উত্তাল দিনগুলিতে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন সুদূর পুরুলিয়া থেকে। রুখু লালমাটির বুকে ফুটে থাকা পলাশের মতো তাঁর কবিতাগুলি প্রাণের প্রাচুর্যে উদ্ভাসিত। অবহেলিত অন্ত্যজ জীবন, মাটির গভীরে লুকিয়ে থাকা শিকড়ের মতো আমাদের লোকজ সংস্কৃতি বারবার ভাস্বর হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায়। 'অস্ত্রের নীরবতা' (১৯৮০) বইটি দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর যাত্রা। এখন তাঁর কবিতা বইয়ের সংখ্যা তিরিশ ছাড়িয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু গদ্য, উপন্যাস, চিঠিপত্রও। তাঁর প্রথম বইয়ের এই চরণগুলি হয়তো এখনও আমরা ভুলিনি: ‘বাবুমশাই আমি নির্মল হালদার/ এখনও আমার কথায় কথায় গরুর শিং ঢুকিয়ে/ হো হো করে হেসে উঠছে রাখাল বালক’। এই প্রান্তজনের মহাকবি নির্মল হালদার তাঁর ‘করোনা ডায়েরি’-তে তুলে আনলেন সেইসব দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষদের সংকট ও স্বপ্নের ছবি। শহর পুরুলিয়া ও আশেপাশের গাঁ-গঞ্জের সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষের জীবনে যে এই করোনাকালে নেমে এসেছে কী ভয়াবহ ও অসহায় অনিশ্চয়তার মেঘ, নির্মলের লেখায় তার বাস্তব চিত্র দেখে আমরা শিউরে উঠি।
শুধু সমকালের সংকটকে চিত্রিত করেই তাঁর লেখাগুলি ফুরিয়ে যায়নি। ধামসা-মাদল তৈরি করে যে নন্দলাল রুহিদাস, গাঁয়ের হাটে শাক বিক্রি করে যে কৃষ্ণপদ গোপ, চা-দোকানে কাপ ধুচ্ছে যে রজনী হেমব্রম, তাঁরা নির্মলের দরদ ভরা কবিকল্পনায় হয়ে উঠেছে সমগ্র পৃথিবীরই শ্রমজীবী মানুষের সংকটের মুখ। মোহিনী হেমব্রমের ছেলে রজনী হেমব্রমের বসত রুক্ষ পুরুলিয়ার পাহাড়-কোলের অখ্যাত কোনো গ্রামে। মারধর করেও বাবা তাকে ইস্কুলে পাঠাতে পারেনি বেশিদিন। সামান্য মাড়ভাত খেয়ে সকাল থেকে সঙ্গীদের নিয়ে সে ঘুরে বেড়াত জঙ্গলে জঙ্গলে। ‘রজনী মাথা তুলেই বলে দিতে পারে কোন গাছে কোন পাখি আছে।’ তার গুলটির নিশানা ছিল অব্যর্থ। সঙ্গে থাকত কাঁড়-বাঁশও। শিকার করে। এই অংশটুকু পড়ুন আপনারা:
‘রজনীর জল তেষ্টা পেয়েছে। সে জানে, ঝোরা কোথায়। উঁচু-নিচু পা ফেলে জলের কাছে পৌঁছে যায় রজনী। ঝোরার জলে খেলা করছে সূর্যের রঙ। মাছেরা উঠছে নামছে। তার মনে হল, মাছ ধরতেই হবে তাকে।’
পেটের টানে সেই রজনীই একদিন কাজ করতে এসেছিল পুরুলিয়া শহরে, একটি চায়ের দোকানে। গ্লাস ধোবে, দোকান ঝাঁট দেবে। দৈনিক দশ টাকা করে পাবে। খাওয়াদাওয়াও পাবে। রাতে শোবে দোকানের মধ্যে। কোনো জানলা-দরজা নেই, খোলা একটি ঘর। রাতভোর থেকে উঠে গ্লাস ধোয়, মুখ তুলবার সময় পায় না রজনী। সেই সামান্য একটুখানি দোকানও একদিন রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেল লকডাউনে। এবার কেমন করে রজনী ফিরবে তার পাহাড়তলির গাঁয়ে? কবি নির্মল হালদারের এই লিখনের সামনে, আমি এক সামান্য পাঠক, মুখ নিচু করে বসে থাকি একরাশ মনখারাপ নিয়ে:
‘চা দোকানের মালিকও বলে, রজনী ঘর চলে যা রে . . . সে চুপচাপ থাকে। রাতটা কোনও ভাবে কাটিয়ে, যদি পায় বাস। এই ভেবে স্ট্যান্ডে যায়। বাস চলছে না। সে হাঁটতে থাকে . . . হাঁটতে থাকে . . .। ঘরের দিকে হাঁটতে থাকে . . .। পিছন ফিরে দেখেও না, কে আসছে কে আসছে না। এই তো এসে গেল জঙ্গল পাহাড় নদী। ওই তো মা বাবার মুখ। ওই তো রজনীর মুখে এসে পড়ে আকাশের আলো।’
ছোটোখাটো ভোজকাজে রান্নাবান্না করত আকলু তন্তুবায়। তাদের পারিবারিক তাঁতের কাজ উঠে গিয়েছে কবেই। লোকের মুখে-মুখে তার নামটি হয়ে গিয়েছিল ‘আকলু ঠাকুর’। বিয়েসাদি, শ্রাদ্ধ-মুখেভাত --- বন্ধ হয়ে গেল মহামারির দিনে। কী খাবে আকলু? কী খাওয়াবে পরিবারকে, ছোটো-ছোটো দুই পুত্র এক কন্যাকে? কত সরল তার ক্রোধ আর আক্ষেপের প্রকাশ:
‘আমার খুন্তিটা ঢের বড়। যদি খুন্তিটাতে মারি, ভাইরাসটা মরবেক নাই? মরলে আমি শ্রাদ্ধ করব। লোক ডেকে খাওয়াব। আমি আমার ডাবু লিয়ে খুন্তি লিয়ে লাচব রে লাচব . . .’
এইখানেই নির্মল হালদারের 'পৃথিবী গ্রহের পুরুলিয়া' বইটি গদ্যে লেখা দিনলিপি হয়েও আত্মরতিময় দৈনন্দিনের গণ্ডীতে আটকে থাকেনি, এনে দিয়েছে চিরকালীন কাব্যের আস্বাদ। চিরকাল কবির হাতেই তো আছে সেই ব্রহ্মবিদ্যা!
আমাদের এই দুঃসময়ের মহাকবি নির্মল হালদারকে এই ধুলোমাটির নগণ্য পাঠকের বিনীত প্রণাম জানিয়ে রাখি।
পছন্দের বই: 'পৃথিবী গ্রহের পুরুলিয়া'। নির্মল হালদার। বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা: কবিতা আশ্রম। ২০২১।
______________________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া
______________________________________________
১/ গৌতম দত্ত এবং ডরোথী দাস বিশ্বাসের মিষ্টি দুটি কবিতা খুব ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা জানাই গৌতম বাবুকে আর শুভকামনা ও ভালোবাসা জানাই ডরোথীকে ।
------------দুর্গাপদ মণ্ডল
২/ কাশ ফুলের হাওয়া ফিরিয়ে নিয়ে গেল শৈশবে। এখন থিম পুজোর এই সময়ে মায়ের চক্ষুদান নিয়ে সেই আবেগ আর জাগে কি?
কবিতা গুলি অসাধারণ।
যথাযথ সম্পাদকীয়। বিভাজনের রাজনীতির তো শেষ নেই কোথাও। আজ হিন্দু মুসলিম আদিবাসী কাল হবে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়... তারপর চতুর্বেদী, ত্রিবেদী, দ্বীবেদী এভাবেই চলবে... বিভেদ মুক্ত পৃথিবী আদতে সোনার পাথরবাটি।
-----------কবি সুজন পণ্ডা
৩/ সবগুলি পড়লাম ভাই, দুর্দান্ত।
-----------কবি ডরোথী দাশ বিশ্বাস
৪/ "শুধুমাত্র পুরুলিয়া বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারাদেশেই জাতি বিবাদ এবং ধর্ম বিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা এই জাতি বিবাদ এবং ধর্ম বিবাদের কোন্ ভয়ংকর আগুনে নিক্ষেপ করে যাচ্ছি, তা ভাবলেও গা শিহরিত হয়ে ওঠে। আমরা কি সত্যি সত্যিই তাদেরকে সুরক্ষিত করে যাচ্ছি? নাকি সুরক্ষিত করার নামে আরও বেশি করে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছি?" এইসব কথা আমারও! ভালো লাগলো। ভালো থাকুন সতত।
----------কবি ফজলুর রহমান এনার
৫/ ভালো লাগলো।
অনেকগুলো কবিতাই পড়ে নিলাম, তোমার, তৈমুর খান এর গীতশ্রী দিদির।
--------------নূপুর রায়
৬/ সন্দীপ কুমারের ছবি সবগুলি সুন্দর।
---------আলোকচিত্রী শুভাশীষ গুহ নিয়োগী
______________________________________________
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ : দুর্গার পেন্টিং, আন্তর্জাল
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন