দ্বিতীয় বর্ষ ।। চতুর্থ ওয়েব সংস্করণ ।। ২৩ জৈষ্ঠ্য ১৪২৮ ।। ৭ জুন ২০২১
প্রথম ঢেউ এল, দ্বিতীয় ঢেউ এল, তৃতীয় ঢেউয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে মানুষ। নিচ্ছে নিজের মতো করে প্রস্তুতিও। এই পোড়া দেশে এ ছাড়া আর উপায় কি?
কতজন চলে গেল, কতজন চলে যাবে, কে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা জানানোর মতো আয়না তৈরি হয়নি এখনও। রাজনীতির গেঁড়াকলে পাক খেতে খেতে অথৈ জলে সমস্ত পরিকল্পনা। করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ আমরা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি করোনারই দ্বারা। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কলকারখানা, গাড়ি-ঘোড়া সব কিছু বন্ধ রেখে নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করছি সংক্রমণ কমে আসার। আর নিজের সংসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ আমি দিনরাত স্বপ্ন দেখছি বিশ্বগুরু হওয়ার।
দাড়ি রেখে রবীন্দ্রনাথ হলে আমার বাবাও রবীন্দ্রনাথ। টুপি পরে নেতাজি হলে আমার পাড়ার টাকলু সুবোধ সহিসও নেতাজি।
আমরা বিজ্ঞান মনস্ক হয়েছি। সাদা মনের অধিকারী হয়নি এখনও। ঢঙ দেখানো উপকারী হয়ে কাউকে সামান্য কিছু দিয়ে অসামান্য অনেক ছবি তুলে প্রচার করি ঘরে ঘরে। আর ভাবি নিজের ঢাক তো নিজেকেই পেটাতে হবে। কেউ কারোর ঢাক পেটায় না আজকাল। এইভাবে চলতে চলতে অভ্যস্ত আমরা কারোর প্রিয়জন হারিয়ে গেলেও ঢাক পেটাই, কারোর প্রিয়জন মারা গেলেও ঢাক পেটাই। বড়ো সিমপ্যাথি প্রিয় হয়ে উঠেছি আমরা। তাই কান্না না এলেও চোখে জল নিয়ে ছবি তুলি কোনোমতে।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
তন্ময় মৃধা
৭ মে ২০১৯
আমি জানি মহেশ গল্পটা তোমার মনে নেই।
অভাগীর স্বর্গ - তাও মনে নেই। মন না দেওয়া
থেকে মনে না থাকার সেই মেঠো পথ পেরিয়ে
আজ এই মহাসড়কের যাত্রী তুমি - পলকে
পেরিয়ে যাচ্ছো দিন আর রাত্রির ব্যবধান, বাহান্নটা
বছর তুমি বেমালুম হজম করে ফেলেছো কোনো
মহাকাব্যিক চরিত্রের মতোন।হাসি কান্নার একটা
গড় হিসাব তোমার আছে বটে তবে হীরা পান্নার
কোনো হিসাব তুমি মেলাতে পারবে না। কোনো
অলক চূর্ণ, কোনো ত্বক, কোনো স্পর্শ, কোনো
ধুলি ধূসর পথের পরিমিতি, আলোকিত জলের
গভীরতা, ছায়া গুলো, একটা নৌকো, মেটে
লোক, মাটির উঠোন, ঘরবাড়ি - সবই কি
নিশীথ বাতাসের মতো কালো? সবই কি নরকের মতো
অপুষ্পক, অভিশপ্ত, অবয়বহীন?
৯ মে ২০১৯
তোমার দেওয়া নীল খাতায় আমি অন্যকে নিয়ে
যে সব কবিতা লিখি সে সব তোমার সানন্দ না হোক
অন্তত নীরব অনুমোদন পেয়ে যায়। মন্দ লাগে না
এ জন্মের এক একটা বৈশাখ অতিক্রম করে
যেতে, ক্রুরতম উষ্ণতার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আমি
ফেরি করি বিভিন্ন কোমলতা। তুমি কোনো দিন
তার প্রকৃত মূল্য নিরূপণ করে দিও!
মহিউদ্দিন সাইফের কবিতা
১.
জীবন
যেদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছি সেদিকে আমার ছায়াও দেখি না।
অথচ দাউদাউ একটি সর্বগ্রাসী শব্দ আমায় আজীবন পাগল করেছে।
কত যে বৃষ্টি দু'পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে,
কত যে বৃক্ষ মৃতসঞ্জীবনীর মতো ছুঁয়ে গেছে যুল্ফে-খাম।
আমি কৃতজ্ঞতায় মিশে গেছি মাটির সাথে।
মাটি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে অবশিষ্ট অহংকার।
বাকিটুকু নিয়ে গাছের পাতায় গিয়ে চিকন হয়েছি রোদে-জলে।
২.
মৃতজীবী
মৃত্যুকে বিশ্বাস করো তুমি, জীবন কে নয়।
এ জীবন তোমার আঁশতোলা মাছের মতো মৃত, ভাসমান।
উতল সাগরে ঘুরে দূরে দূরে মূক ঝিনুকেরা মুক্তো ফলায়, বাহ্যজ্ঞানহীন।
তুমি বোঝ মহেঞ্জোদাড়ো
শুচির নিয়ম আর তার ব্যবহার,
বোঝো কি জীবনানন্দ তবু?
ছায়াপথ পোড়ার গন্ধ নাকে আসে।
বল, তোমার আমার লড়াইয়ে
কার ঘুম ভাঙল, কার!
দাহক
সন্দীপ বাউরী
হামরা যে গাঁয়ের লোক হে , হামরা লকডাউন নাই বুঝি।
দিন আনি দিন খাঁই , তাতেই হামাদের দিন পাইরায়।।
হামাদের খবর রাখে নাই সবাই হে , রাখে নাই সবাই।
শুধু ভাব রাইখতে জানে বাসিমাড় আর কাঁচা লঙ্কাই।।
গাড়ি - ঘড়া সব বন্ধ হইল , বাবুরা সব কানে আঙ্গুইল দিল।
আর খিদার জ্বালায় আমার নুনিটার জীবনটা গেইল।।
শীর্ষার কবিতা
১.
স্বর্গাদপি
মায়ের হাতে বৈচিত্র্যের পৃথিবী –
মায়ের হাতে
কড়ার
পাহাড়,
কিংবা মায়ের হাতে
নদীর
ফাটা
বুক ..
সূর্য আখার পাশে বসা মা সারাদিনের এঁটোকাঁটা দিয়ে
নদীর গভীরতা বাড়াতে ব্যস্ত,
আবার আঁচ ফুরোলেই নদীতে ঢেলে দেন
বোরোলিনের আশ্চর্য !
অন্ধকারের আলোয় আমরা ভাইবোনেরা দেখি –
বোরোলিনের থকথকে সাদা
নদীর স্নিগ্ধতা সেজে ঘুমহাতে এগিয়ে আসছে
আমাদের
দিকে –
সেই বৃক্ষরোপণ থেকে!
২.
যাতায়াত
এই যে প্রতিদিন তোমার কাছে যাওয়া,
তারপর আবার ফেরা – এর মধ্যে কি
ফুরিয়ে যাচ্ছি আমি? আমার আয়ু?
করতল ছোট হচ্ছে? চামড়া কুঁচকে আসছে?
যেভাবে শালের ফুলের পাপড়ি অভিমানে
চোখমুখ বুজে ফেলে, মহুয়ার বীজ হেলায়
মুখ গুঁজে পড়ে থাকে মাটিতে–
আদিবাসী ছেলেগুলো আসে, গায়ে গামছার কোমরবন্ধ
কিংবা উদোম শরীর জুড়ে চিকন সাপের ঘুম – কুড়িয়ে নিয়ে যায়
মহুয়ার বীজ, গুঁড়ো করে আটায় মিশিয়ে আহার সারবে,
আর প্রেমিকার চুলে গুঁজে দেবে ঝরে পড়া শালফুলের
বাসি গন্ধটুকু। আমার যাতায়াতের পথে ফেলে রাখা
তিল তিল আয়ু এভাবেই কুড়িয়ে নেয় আদিবাসী ছেলেটির সাপ –
সলতের শিখা নিবু নিবু হয়ে আসে;
দ্বিতীয় প্রান্তে কোন দ্বিতীয় পুরুষের ঘরে
প্রদীপ জ্বালাবে বলে
চঞ্চল দুবের কবিতা
১.
যৎসামান্য প্রগাঢ়তার তীব্র অপচয়
অহেতুক এই কষ্ট, অহেতুক উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া,
সুদীর্ঘ আলাপন শেষে শ্রুত কন্ঠস্বর কেন বারংবার
অপচয় করে দেয় প্রতীক্ষার নিঃশর্ত অনুমোদন !
কেন নষ্ট হতে চেয়ে দু'হাতে সুগন্ধি ঢেলে স্পর্শ করা
কীটদষ্ট শরীর !
অধিগ্রহণ বিষয়ক ব্যর্থতার জ্বালা নিষ্প্রভ হয়ে এলে
তোমার দ্বিধাপীড়িত সমর্থনের চক্রব্যুহে আমি লক্ষিন্দর।
আমার উপবাসের শুদ্ধতায় আলোকিত হয় যে যাপন
তার বিষাদ-ভার
তৃণ শীর্ষে শিশির বিন্দুর নম্রতায় স্পর্শকাতর।
২.
আত্মবিস্মৃত মেঘের ঘুমঘোর
তাপদগ্ধ ওই নির্লিপ্তি শ্রমোপজীবীর ঘামে ভেজা কপালের
স্বনির্ভরতায় আত্মস্থ ;
এই দ্বিপ্রহর প্রকৃতপক্ষে ভোরের প্রত্যাশা ও রাত্রির
আত্মপ্রতারণার মধ্যবর্তী দোলাচল।
সমূহ শরীর জুড়ে আহত অহং কন্টক হয়ে
প্রত্যাঘাতের অপেক্ষায় ধৈর্যশীল ঔদ্ধত্যে মৌন গম্ভীর।
হে পিপাসা তোমার হাত ধরে এতটাই অতলে নেমে যাওয়া
যেখানে অচরিতার্থতার সঙ্গে ভিন্ন কোনও অস্তিত্ব
নিরূপিত হবে না কখনও।
অপ্রকাশ্য দহনের ভুল ব্যাখ্যা বুকে ধরে রূপান্ধ সংবর্ধক
স্বর্ণ পিঞ্জর নিয়ে অপেক্ষমান থাকে আবহমান কাল।
৩.
পুড়ে যাই তবু ছুঁয়ে যাই
রহস্য ঘনিয়ে আসে
দুটি মানুষের গল্পে এত রহস্য !
এত অক্ষর এক জন্মে লেখা হবে না
এত রঙ এক জন্মে মেখে নেওয়ার জন্য
রোমাঞ্চকর বসন্ত সন্ধ্যা আমার সামনে এসে
দাঁড়ালো না কখনও !
সুমিষ্ট গান গাওয়া বিহঙ্গ হবো ভেবে
যে ভূমিখন্ড লালন করেছে, আমি শকুন হয়ে
তার গোচারণ ভূমির দিকে
অভিসম্পাতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করি।
আমি ক্রন্দন বুঝি না, কীর্তন বুঝি না
আমি লাবণ্য ছিঁড়ে খাই।
মুছে দেওয়া স্লেটের রিক্ত স্মৃতিপট নিয়ে যেন
রহস্যময় এক অন্ধকার নদী ;
অত্যুগ্র আত্মঘৃণার সিন্দুক খুলে তীব্র হাহাকার
ভাসিয়ে দিই জ্যোৎস্নালোকিত রাতের
পরিমার্জনাহীন আত্মনিবেদনে।
ভিতরে কে
সুজন পণ্ডা
ভিতরে কে?
বুকের ভিতরে উঁকি মেরে খুঁজি,
কে আছে বুকের ভিতরে
নিভৃত এক দুঃখের মতো?
আশার কথা
আগুন আছে
দু এক দানা ভাত
আর কে?
বুকের ভেতরে কেউ কি আছে?
জড়িয়ে ধরতে চাইলে
নখ বসে যায়... বুকের নরমে..
আদরে অথবা বিদ্বেষে
বুকের মধ্যে কেউ কেউ আছে
স্বপ্ন ভাঙন
সুনীতি গাঁতাইত
আজকের অমাবস্যা ঘিরে পৃথিবীর ঘুম নেই,বনবন ঘুরতে ঘুরতে থমকে যাচ্ছে ক্রমশঃ দোষারোপে পরস্পর
অসুস্থ দেখছি মায়ের মুখ।
গাছছায়া বাকলে আঘাতের ক্ষত,কতদিন কষ্টের রস জমে কঠিন পাথর,স্বপ্নের দেউলিয়া মন মাথা কুটে মরে এখন বেনিয়ম, চলছেই হায়!নদীর ভাঙন,অশ্রু ফুটে আছে ফুলে।
আকাশ খেয়াল খুশি মেঘে লুকিয়ে রাখছে বৃষ্টি,চুপিচুপি সৃজন সন্ধ্যায় আসতে পারে
একটা রঙিন চিঠি,নুতন তাজা
ভোর মুখ দেখতে কত আলোক বর্ষ দূরে দাঁড়িয়ে আছি, অগণন এই অদৃশ্য সংখ্যাগুলি অপেক্ষমান।
উৎপল দাসের কবিতা
১.
কর্মরত
সাবাশ!
এইভাবেই ছল চাতুরীতে কাজ হয়ে গেলে,
পিঠ চাপড়ানোটা ভালোই লাগে, বলো?
আসলে, ঐদিকের লোকটা এদিকের
অন্ধকার দেখে না! এইদিকের লোকটা
ঐদিকের আলো!
দু'জনের মাঝে আমি কর্মরত।
অবিচল হেঁটে যাই আলো অন্ধকারে...
২.
মহামারী
একদিকে আমি
অন্যদিকে কোটি কোটি মহামারী কণা
রাস্তা ঘাটে শরীরে শরীরে
অসুরক্ষিত দেশ যেন নিভৃত কারাবাস
নিষ্ঠুর সংসারে আসে না কেউ কাছে
বাচার লড়াইয়ে যোদ্ধা
একা তুমি।
তোমার মৃত্যুদিন
অগ্নি রায়
তোমার মৃত্যুদিনগুলো দু হাতে লিখে রাখি
ক্ষণিক বিষন্নতা, ভোরের ভুল,
শবের অনুগত, উড়ুক খড়কুটো
শ্মশানে জেগে থাক মায়া হরিণ।
লতার মতো ছিলো জড়িয়ে নিঃশ্বাস,
পড়ছে কিনা তার বিচার হোক,
আমারও কাজ বাকি, ও তা জানেনা কী?
পোকায় কাটে প্রিয় প্রুফের দাগ।
এখন সময়যান পাঁচিলে ধাক্কা খায়,
গোপন ইচ্ছা আর কাল-সড়ক,
খোঁপায় বেলিফুল, নিয়তি হেসে ফ্যালে
ট্রাফিক বেড়ে যায় অপেক্ষায়।
ট্রেনের ছেড়ে যাওয়া শব্দটুকু বুকে
একলা বেঞ্চ আজও স্পর্শময়,
স্বপ্ন কিছু তার এখনও জমা আছে?
কাঠের আঁচড়ে, ভুল তর্জমায়..
গোপনে বেড়েছিল মৃত্যুদিন, তবু
ছলনা করেছে ফুল, কেকের ঘ্রাণ,
এখন দুপুরবেলা নামলো ঘন রাত
কখন যেতে হবে, রাস্তা দূর
ওখানে পাওয়া যাবে চার্মিনার?
মাস্ক
কুমারেশ তেওয়ারী
মাস্ক পরে গিয়েছিলে শিশুটির কাছে
সে তােমাকে চিনতে পারেনি
ভেবেছিল অন্ধকার, গিলে নিতে চায়
কোথাও কি চমকে ছিল কড়ি ও কোমল!
দুটি ছােটো হাত মুহূর্তেই বাঘের নখর
আঁচড়ের দাগে যখন যন্তণা কিছুমাত্র নীল
চাঁদ এসে রেখেছিল বাকি কাজটুকু
দুহাতে মুখােশ ছিঁড়ে ফেলে
বের করে এনেছিল তুমিকে তােমার
মুখের পাথরে তখন কী আলাে!
শিশুটি চিনতে পেরে ছােটো ছােটো দুহাতে জড়ালাে
করোনা পরিস্থিতি ও নারী - অবস্থা ও অবস্থান
মধুপর্ণা
বিশ্বজুড়ে গত দেড় বছর যাবত অতিমারী আমাদেরকে পর্যুদস্ত করে রেখেছে , এ নিয়ে আলাপ আলােচনা বিশ্লেষণও আমরা রোজ পড়ছি, শুনছি। সমাজ জীবনের বিচিত্র ক্ষেত্রে করােনা পরিস্থিতি, লকডাউন , ইত্যাদির প্রভাব সম্পর্কিত আলােচনায় আমাদের মন আর মগজকে ক্রমাগত খাদ্য জুগিয়ে চলেছে সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম কখনও প্রয়ােজনীয় ভাবে কখনও অপ্রয়ােজনীয় ভাবে। বহুল আলােচিত এই বিষয়ের ভিতরে নিজেদের ইচ্ছা ও
চাহিদামত আমাদের খুঁজে নিতে হচ্ছে রসদ। করোনা পরিস্থিতিতে নারীরা কেমন আছেন ? সমাজের বিচিত্র স্তরের নারীরা ? “ আমাদের সমাজের নারী" এই ভাবে এক গােত্রে ফেলা যায় নারীদের ? যায় না। শ্রেনী, বর্ণ, জাতি, ধর্ম ভেদে বদলে যায় নারীদের অবস্থা ও অবস্থান। বিভিন্ন অবস্থানের নারী বিভিন্ন বিষয়ে আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাবিত হন। এই সহজ সত্য বুঝতে আমাদের সময় লেগেছে বহুদিন কিন্তু সমাজে - নারীর সমস্যা" আসলে বিচ্ছিন্ন ভাবে নয় , সমাজের স্তর বিভাজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমস্যার সঙ্গে পাল্টায়, ভোল বদল করে , মাত্রায় হয় তারতম্য। সমাজের ভিন্ন অবস্থানের নারী ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত হয়, বিভিন্ন ঘটনার সংঘাতে ভিন্ন ভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়।
এই করােনা পরিস্থিতিতে সামাজিক বিভিন্ন স্তরে মানুষের বিচিত্র সমস্যা ইত্যাদির আড়ালে ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যাচ্ছে সমাজের বিভিন্ন অবস্থানের মেয়েরা কেমন আছেন তার খোঁজ। তথাকথিত “ বড় আর গুরুত্বপূর্ণ" ইস্যুর আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে মেয়েদের সমস্যা। এই চাপা পড়ে যাবার গল্প নেহাত পুরােনাে নয়, এই ধারা বহমান। পিতৃতান্ত্রিক মানস গঠন ঠিক করে দেয় কোনটা বড় ইস্যু , কোনটা প্রাসঙ্গিক আর কোনটা নয়। কি নিয়ে আলােচনা
হবে, কোন বিষয় প্রচার করা হবে, কোন কোন বিষয় পুনঃ পুনঃ প্রচার করে মানুষের মস্তিষ্কের কোণায় কোণায় পৌঁছে দেওয়া হবে, কোন ঘটনার কোন বিশেষ ব্যখ্যাটি মানুষের কাছে গ্রহনযােগ্য করে তােলা হবে তা খুব সূক্ষ্ম ভাবে নির্ধারণ করে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। এই নির্বাচনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাদ পড়ে নারীদের সমস্যা। কারন তা ব্যবস্থার কাছে অস্বস্তিকর।
করোনাকালে লকডাউন হবার পর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাই যখন গৃহবন্দী হল তারপর মেয়েদের সমস্যা শুরু হল তুমুল ভাবে। প্রথমত আমাদের কাছে একটা মিথ্যা ভীতি তৈরি করা হল যে বাড়ি হল সব থেকে সুরক্ষিত জায়গা। এখানে মেয়েরা সব থেকে নিরাপদ। কিন্তু বাইরের মত ঘরের মধ্যেও পিতৃতন্ত্রের থাবা জাল বিস্তার করে আছে। এখানেও রয়েছে পুরুষতন্ত্রের দাঁত, নখ। পরিবারের কাঠামো আর সামাজিক স্তর ভেদে পরিবারের মেয়েরা শােষিত বা নিপীড়িত। নিরাপত্তার নামে, সুরক্ষার নামে কখনো কোন ছদ্মবেশ ছাড়াই পরিবার মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে রাখতে চায়। সেই সময় থেকে নানা সূত্রে বাড়ির বাইরে যেতে পারলে কিছুক্ষনের জন্য হলেও হাঁপ ছেড়ে বাঁচে তারা। বাইরে কাজের সূত্রে বা বন্ধু বান্ধবীর কাছে গিয়ে নিজেদের কথা বলার অবকাশ বা নিজের মনের শুশ্রষা করার সুযােগ পায়। লকডাউনে সে সব সুযােগ বন্ধ। তার ফলে মানসিক ভাবে তারা গেঁজিয়ে
উঠেছে অনেক ক্ষেত্রেই। অন্যদিকে গার্হস্থ্য হিংসা বেড়েছে উল্লেখযােগ্য ভাবেই। বাড়ির ছেলের বাইরে কাজ বন্ধ তাই বাড়িতে রয়েছে কিন্তু তারা কত অংশে পরিবারের কাজে সাহায্য করেন সে কথা আমরা কিছুটা অনুমান করতে পারি। নিজের হেনস্থাকারীর সঙ্গে বিরতি ছাড়াই অনেক নারী থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক নারী কাজ হারিয়েছেন তার ফলে অনটন উঠেছে চরমে। একটি সামাজিক সত্য নগ্নভাবে উঠে এসেছে পরিবার নারীদের জন্য প্রশ্নাতীত নিরাপদ
জায়গা নয়। এবং যাবতীয় সামাজিক বা জাতীয় সমস্যার একটি স্বতন্ত্র মুখ রয়েছে। সব সমসার সাধারণীকরন নারীর সমস্যাকে তুলে আনতে পারে না তা এই মহামারীর পরিস্থতি আরও আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
সৃজনের অন্বেষণে
দেবাশিস সাহা
" কেন যে এত কালোতে
দাঁড়ালে?
সমস্ত রেখার ওপারে
তোমাকে খুঁজি.... "
------ দীপংকর রায়।
' সমস্ত রেখার ওপারে ' একজন শিল্পীর জীবনভর চলে এই খোঁজ। ' খুঁজতে খুঁজতে এতদূর ' একেই বুঝি বলেন কবি অরুণ মিত্র। ' know yourself' বলেন সক্রেটিস। রবীন্দ্রনাথ গেয়ে ওঠেন ' আমি কোথায় পাব তারে ' একতারার তারে তারে লালন খোঁজেন ' মনের মানুষ '। ' সুন্দর মেখেছে এত ছাই ভস্ম ' সুনীল অবশ্য আঁতকে ওঠেন, তবু ক্লেদাক্ত সময়ের দগদগে ঘা সরিয়ে সরিয়ে, সেই সুন্দরকেই যেন খুঁজে চলেছে ' তালতলের হাট ' (তৃতীয় বর্ষ।। চৈত্র ১৪২৭।। এপ্রিল ২০২১) তার ৫২ পাতার অবয়ব জুড়ে।
শিল্পী রাজীব মন্ডলকৃত অনুপম প্রচ্ছদচিত্রের মধ্য দিয়ে শুরু সেই খোঁজ, শেষত, যা আশ্রয় খুঁজেছে প্রয়াত কবি স্বপন বিশ্বাসের প্রতি কবি অশোক দত্তের অশ্রুসজল স্মৃতিচারণায়।
মাঝখানের পথটুকু পরিক্রমায় নামি...
'পথে নেমেছি,আরেকটি জীবনের খোঁজে।'
দীপ্তিশিখা দাসের অন্বেষণ হাত ধরে কল্পোত্তমের ---' উত্তরায়ন শুরু হলে
দক্ষিণায়নের আশায় বসে থাকি আমরা '
কীসের আশা?সেই খোঁজ, সেই অন্বেষণ। উত্তর পেয়ে যাই পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ে ----
' ঘাসকে বলাৎকার করে শুয়ে আছে ইট,
সে আর লোষ্ট্রমাত্র নয়
জেদি কৃতঘ্ন স্থবির সে
নিজেরই ভগ্নাংশের আমানত আগলে পড়ে আছে বহুদিন '
তেমনই দর্শনে পৌঁছোন বিশ্বনাথ পাল----
' তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের প্রতিক্রিয়ায় মন
যখন চূড়ান্ত হেমলক,ঘাড় উঁচু করে
যখন তোমাকে দেখি, চেনাও কাকে
বলে বিশালতা, তুচ্ছজ্ঞানের তুচ্ছতা
হে শরতের আকাশ '
' পাথরের মৃত্যুদিন
পাথরের চেয়েও ভারী '
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর উপলব্ধি ছুঁয়ে পৌঁছে যাই অতনু ভট্টাচার্যের নিরীক্ষণে -----
' নীল বিদ্রোহ স্মরণ হয় মনে
দিল্লি আবার কৃষক আন্দোলনে '
আন্দোলনের উত্তাপ স্তিমিত হতেই শুনি স্বপ্না সাহার উদাত্ত আহ্বান----
' ঐ দেখ বাতাসে ভেসে ভেসে উড়ে উড়ে
যাচ্ছে যোজন-যোজন ভালোবাসার ঢেউ '
ততক্ষণে শাশ্বতবোধে পৌঁছলেন শিমুল আজাদ--- ' আজ যে সৌন্দর্য থাকে, কাল তা থাকে না! '
তবু যেন সুন্দরকে ছোঁয়ার অন্বেষণ থামেনা। ফজলুররহমান বাবুলের উচ্চারণে উঠে আসে সেই সুর ----
হৃদয়ে তুমি অজস্র সূর্য থেকে
ঝরে পড়া অগ্নিশিখা। তোমাকে
ভাবতে ভাবতে কেটে গেল
কতশত বছর।'
তারই সুরে যেন সুর মেলান নীলকমল ----
' আমি গাছের সবুজ রঙে লিখেছি
নদীর লাজুক গালে একটি গোপন চিঠি
সে চিঠি আজও ভেসে চলেছে অনন্ত পথ। '
' আনন্দের কাছে গোপন রেখেছি উচ্ছ্বলতা ক্ষমতার কাছে আস্ফালন '
সুপ্রিয় দেওঘরিয়ার অমল স্বীকারোক্তি ছুঁয়ে পৌঁছোই সুজন পন্ডা-য় -----
' বুড়ি ঠাকুমা বলেছিল
বসন্তের প্রতি রাত্রে
পূর্বপুরুষদের দুঃখ মিশে থাকে
তাদের কান্নায় তৈরি হয় হিম। '
তারই অনুষঙ্গে যেন আসেন প্রবীর ভট্টাচার্য---- 'মধ্যরাতে বসে আছে একাকী কাক
ঘূর্ণায়মান নক্ষত্রমালা।'
' সীমান্ত বঙ্গের হাট 'এ পৌঁছে দেখি তপন পাত্র কী বিচিত্র পসার জমিয়েছেন বাংলার কৃষ্টি ঐতিহ্যের। হাট শেষে শুনতে পেলাম অতনু ভট্টাচার্য বলছেন -- ' খোঁজো। খোঁজাই আত্মপাঠ। '
তেমনই এক আত্মপাঠে পৌঁছে যাই কবি নির্মল হালদারের মগ্নতায় --- ' দু-চারটে গাছে বাসা বাঁধতে চাইলেও আমার ঠোঁটে ধরে না খড়-কুটো। '
অবশেষে দেখি ' অতসীমঞ্জরী ' হাতে দাঁড়িয়ে স্বপন চক্রবর্তীর নিরুচ্চার উপলব্ধি ' সমস্ত জীবন শৈশবের কথা ছাড়া আর কিছু নয়। '
এই যে পরিভ্রমণ, সুন্দরের খোঁজে, শেষে কে কোথায় পৌঁছলেন বড় কথা নয়, বড় কথা সবাই পথে নেমেছেন, সুন্দরেরই অন্বেষণে...
____________________________________
পশ্চিম সীমান্ত বাংলার লোকপ্রবাদের উৎস ও উদ্ভব নির্ণায়ক একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধে ঠিক কীভাবে, কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ গুলির জন্ম হলো তার সুলুক সন্ধানের প্রয়াস করেছেন ---
তপন পাত্র ।
____________________________________
"কথা"র অন্তরালে
""""""""""''''''''''''''''''''"""""""""""""""""""""""
ব্যষ্টি অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত উচ্চারণ যখন সমষ্টির অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তখন তা প্রবাদে পরিণত হয় । সঙ্গীত বাদ্য সাহিত্য শিল্প সৃজন যেমন স্রষ্টার সচেতন মনের আয়াসলব্ধ ফসল প্রবাদ কিন্তু ঠিক তা নয় । তাৎক্ষণিক কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে কোন মানুষের সহজ সুন্দর অনুভূতির সরল সরস প্রকাশ যখন প্রায় সর্বজনগ্রাহ্য রূপ লাভ করে তখন তা প্রবাদে পরিণত হয়ে যায় । পরম্পরাক্রমে এই বাক্যগুলি চলে আসে , কিংবদন্তিতে পরিণত হয়ে যায় ; কেউ বলে প্রবচন , কেউ বলে লোকশ্রুতি , ডাক পুরুষের কথাও বলেন কেউ কেউ । সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়েই প্রচলন আছে এই শব্দসমষ্টির , প্রবাদের । পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম সীমান্ত বাংলা তো তার ব্যতিক্রম হতে পারে না । তবে এতদঞ্চলে প্রবাদের ডাকনামটি আলাদা । এখনকার আদিবাসী ও অধিবাসী মানুষ বলে "দাঁত কথা" অথবা শুধু "কথা" । মানভূম, পুরুলিয়া তথা পশ্চিম সীমান্ত বাংলা বা ঝাড়খণ্ডের জনগণ প্রসঙ্গক্রমে প্রবাদ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন , "সেই বলে না কথায় আছে" অথবা "ঐ যে হে কথায় বলে" । কাজেই এখানে প্রবাদ "কথা" নামেই সমধিক পরিচিত। তাতে কিছু যায় আসে না । গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক সে গোলাপ , তাতে তার প্রকৃতির, মাধুর্য , সৌন্দর্য , সুবাস ও সৌরভের রূপান্তর ঘটে না ; গুণগত মান বদলে যায় না ।
তবে প্রবাদ প্রবচনের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট বিভাজন লক্ষ্য করা যায় । বৃহত্তর নাগরিক জীবনযাপন থেকে যে সমস্ত প্রবাদগুলি উঠে এসেছে , যেগুলি উচ্চতর বাংলায় সর্বজনবিদিত, সর্বজনস্বীকৃত সেগুলির চেয়ে গ্রামীণ লোকসমাজ থেকে উত্থিত প্রবাদগুলি অধিকতর জীবন্ত , প্রাণবন্ত ও তাৎপর্যমন্ডিত । এবং অবশ্যই আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল । পশ্চিম সীমান্ত বাংলার প্রবাদ মানে "কথা"গুলির অধিকাংশেরই জন্মভূমি কৃষি পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ।
প্রবাদের যেমন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ণয় প্রায় অসম্ভব তেমনি এগুলির উৎপত্তির ইতিবোধক ইতিবৃত্ত রচনাও বেশ দুরূহ । তবুও মানভুঞা "কথা"র বিশাল ধনভান্ডার থেকে কয়েকটি তুলে এনে সেগুলির উৎস ও উদ্ভবের সুলুক সন্ধান করা যেতেই পারে ।
প্রথমে কৃষিনির্ভর পশ্চিম সীমান্ত বাংলার কৃষিকথার আসর থেকে কয়েকটি "কথা" তুলে এনে তার উৎপত্তির কুল-কিনারা নির্ণয়ের চেষ্টা করা যাক । এই ভৌগোলিক সীমারেখায় কৃষি উৎপাদনের জন্য আজও তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সরকারী বা বেসরকারী বিকল্প ব্যবস্থা গৃহীত হয় নি । কৃষিকাজ এখনো সেই আকাশের প্রসন্ন দাক্ষিণ্যের উপরেই নির্ভরশীল । সন্ধ্যেবেলায় বৃষ্টি হলেও পরের সকালে মাঠে জল থাকে না , কৃষিভূমি এতোটাই অসমতল এবং মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতা এতোখানিই দু্র্বল । তাই এখানে "চাষ নাই বাস, টুরুই ব্যাঙের আশ" প্রবাদটির জন্ম হয়েছে । একটানা পাঁচ-সাত দিন অঝোরে বৃষ্টি ঝরলে তবে টুরুই ব্যাঙ ডাকে, তবে এখানে কৃষি কাজের শুভ সূচনা ।
প্রকৃতিগত দিক থেকে এখানে ধানের চাষ দু'টি ভাগে বিভক্ত --আউশ আর আমন । আমনে মেহনত বেশি, আউশ ধানে তুলনায় কম । আউশ ধান চাষের ক্ষেত্রে উগাল, সামাল, জাবট, কাদা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে চাষ জমিকে ধানের চারা বসানোর উপযোগী করে তুলতে হয় না ; মাটিকে মোটামুটিভাবে তৈরি করে ধানের বীজ ছড়িয়ে দিলেই হয় । আউশ ধান কে এখানকার মানুষ বলেন ডাহি বা ডাঙা জমির ধান । মাটিতে প্রথম লাঙ্গল দেওয়াকে বলে উগাল যার আর এক নাম কাড়ান্ , দ্বিতীয়বার লাঙ্গল দেওয়াকে বলে সামাল এর অন্য নাম দহরান্ । আউশের চাষের ক্ষেত্রে এতোটা আড়ম্বরের প্রয়োজন হয় না । এই ভাবনা থেকেই উঠে এসেছে একটি প্রবাদ "ডাহি ধানের আবার কাড়ান্ দহরান্ " । তুচ্ছ বা সাধারণ বিষয়ে বিরাট আড়ম্বরের প্রয়োজন নেই --একথা বোঝাতেই লোকসমাজে আলোচ্য প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে । অনেকটাই বাংলা মান্য ভাষার "মশা মারতে কামান দাগা" প্রবাদটির মতো ।
কৃষি পরিবেশ থেকে উঠে আসা আর একটি প্রবাদ "কম পয়সার গরু ভিতা পায় না" । 'ভিতা' হল জমির সীমারেখা চিহ্নিত করার যে আল , সেই আলের নিকটবর্তী অংশ । চাষের মাটি তৈরি করার সময় ভিতা অংশে লাঙ্গল দিতে গরু হালের উপর বেশি চাপ পড়ে । কম দামে কেনা অক্ষম গরুর দ্বারা এই কাজে সাফল্য আসে না । এই ভাবনা থেকে আলোচ্য "কথা"টি উঠে এলেও ভালো মজুরি না দিলে যে ভালো কাজ আশা করা যায় না এ কথা বোঝানোর জন্যই পশ্চিম সীমান্ত বঙ্গে এটি আজও ব্যবহৃত হয়ে আসছে । প্রায় সমধর্মী চিন্তাভাবনা থেকে আর একটি কথার উদ্ভব ঘটেছে , কথাটি হলো --"কী ক'রবেক বেতনে, মা'রে দিব খ্যাটনে " । অর্থাৎ শ্রমজীবী দিনমজুর, খেতমজুর গলা বা মনিবের কাছে সারাদিনের কাজের জন্য যে মজুরি দাবি করে মনিব যদি সেই নাহ্য মজুরি না দেয় তাহলে মজুর মনে মনে ঠিক করে সেও প্রাণ দিয়ে যথাযথ কাজ করবে না, সীমিত শ্রম দেবে, ধীরে সুস্থে কাজ করে কেন্দ পাতার বিড়ি কিংবা শালপাতার চুটি টেনে রয়ে বসে কাজের সময় পার করে দেবে ।
সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা নিজের উন্নতি চাওয়া এবং পরশ্রীকাতরতা । সীমান্ত বঙ্গের সাধারণ কৃষিজীবী মানুষও এই প্রবৃত্তির ব্যতিক্রম নয় । আশ্বিন মাসের সংক্রান্তির দিন মা লক্ষ্মীকে সাধ অন্ন খাওয়ানোর একটি লৌকিক উৎসব রয়েছে । এখানকার মানুষ একে বলে জিহুড় । সাধ অন্নের নানা সামগ্রী সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে মাঠে নিজের জমির এক প্রান্তে মান পাতায় সেই সমস্ত নৈবেদ্য সাজিয়ে দিয়ে মা লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে কৃষক বলেন ---"
"ওল গোল গোল মানের পাত,
ভোজ মা লক্ষ্মী দুদু ভাত ।
লোকের ধান আল থাল,
আমার ধানে শুধুই চাল ।"
----এই ধরণের চিন্তা ভাবনা থেকেই জন্ম নিয়েছিল একটি প্রবাদ --"আপনার চুল বাঢ়ুক , আর পরের চুল পড়ুক।" জন্ম তো নেবেই ,কারণ "আপন কোলে ঝোল টানা" যে মানুষের চিরন্তন স্বভাব ।
যারা কৃষিকাজ করেন , শাক সবজি উৎপাদনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে তাঁরা জানেন চারা গাছকে বড়ো করে তোলার সময় গরু ছাগল ভেড়া কাড়ার অত্যাচার কতখানি অসহ্যকর । হয়তো সবেমাত্র চারাগাছগুলি লকলক করে উঠছে , আর সেইমাত্র তা খেয়ে মুড়িয়ে দিল কারো কোন গহপালিত জন্তু । সবজির সমূহ সম্ভাবনা তো বিপর্যস্ত হলোই সাথে সাথে আবার প্রতিবেশীর সাথে বিবাদ কলহ বেড়ে গেল । তখন আর সাত-পাঁচ ভেবেও কিছু লাভ হয় না । হৃত সম্পদ ফিরে আসে না । তাই এখানকার মানুষ বলেন "আগে রঁদ পরে খঁদ"। শাকসবজির চাষবাস করতে হলে আগে রঁদ অর্থাৎ বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারপর চাষে মনোনিবেশ । কৃষিভাবনা থেকে কথাটি উঠে এলেও জীবনের প্রত্যেকটি স্তরে এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান সাবধান বাণী ।
বছরের পর বছর , দীর্ঘকাল ধরে মানভূমের মানুষ দেখেছে বর্ষাকালে যদি সকালের দিকে আকাশে মেঘ দেখা যায়, দেখা যায় আলোর ঝলকানি আর শোনা যায় বিদ্যুতের গর্জন , তাহলে ওই তর্জন-গর্জনই সার , "যতখানি গর্জায় ততখানি বর্ষায় না", তাই আরও একটি লোকশ্রুতির জন্ম হলো "আকালের মেঘ সকালে" ।
শুধু কৃষিক্ষেত্রেই নয়, মানভূম তথা পুরুলিয়ার আর্থ-সামাজিক জীবনের প্রেক্ষাপট থেকে উদ্ভূত হয়েছে অনেক "কথা" । পরনিন্দা, পরচর্চা ; নিজের ভালো-মন্দের বিচার না করে অপরের ছিদ্রান্বেষণ অন্যান্য সমস্ত এলাকার মতো এখানেও যথেষ্ট । তাই লোকে বলে "আপনার গুণ জানে নাই খাঁদি , পরকে বলে চেঁপা নাখি" প্রায় একই উচ্চারণ "চা'লনের পঁদ ঝর ঝর করে, চাল'ন পরের বিচার করে।"
বর্তমানে অসবর্ণ বিবাহ অনেকটাই সমাজ স্বীকৃত হয়ে গেলেও একসময় তথাকথিত সমাজের চোখে এটি ছিল প্রচন্ড গর্হিত কর্ম । ভাব-ভালোবাসা করে কোন যুবক যদি ভিন জাতির কোন সুন্দরী যুবতীকে বিয়ে করতো, তাকে ঠাট্টা করার জন্য মূলত মহিলারা বলতো "কুলের ক'ন্যা চেঁপটিও ভাল " অথবা "জা'তের মাঞা কালৌ ভাল্অ"।
সমাজ জীবনে মানুষের অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য রয়েছে । বিভিন্ন অভিজ্ঞতার নিরিখে বিভিন্ন কথার জন্ম । কখনো দেখা যায় পাকা মাথা অর্থাৎ বৃদ্ধ মানুষের পরিণত বুদ্ধি, তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান । সে কারণে অনেকেই বলেন, "তিনমাথা যার, বুদ্ধি লিবি তার" । আবার উল্টো অভিজ্ঞতাও ভাঁড়ারে রয়েছে, " বুঢ়াল না বাউলাল" । তাই বৃদ্ধ হলে যদি কেউ সহজেই রেগে যান , বেশি বকাঝকা করেন, তখন সমাজ বলে ওর "বুড়ান্তিকালে ভীমরতি ধ'রেচে"। এই সমস্ত বৃদ্ধদের কথায় তাঁদের ছেলেমেয়েরা গ্রাহ্য করে না, মান্যতা দেয় না , কথায় বলে --"বুঢ়ালে বাপ চিনহে নাই,বুঢ়ার কথা কেউ শুনে নাই "। তবুও যাঁদের অভিজ্ঞতা মধুর তাঁরা বলেন , "পুন্না চাল ভাতে বাড়ে", আর তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কেউ কাছে থাকলে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদী কন্ঠ উচ্চারণ করেন "যদি না পকায় কাটে"।
সমাজ অভিজ্ঞতা বড়ো বিচিত্র । বিল্ব ফলের মতো উপকারী ও উপাদেয় সম্পদ তো সকলেই গ্রহণ করতে পারে না, তাই উঠে এলো এমন কথা "বেল পা'কলে কাগের কি (?) ", কিন্তু কোন মূল্যবান সম্পদ অর্জন করতে হলে তার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতার প্রয়োজন হয় । আর সে জন্যই মনে হয় এমন প্রবাদ আমাদের ভাঁড়ারে ---"কাগ যদি রসিক হয় , বেল ফা'টে দু' ফাঁক হয় " ।
সীমান্ত বাংলার জনজীবনে এক সময় গরিব ঘরের মহিলাদের জীবিকা ছিল ধনীদের বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভানে চাল বের করে দেওয়া । ঢেঁকিতে ধান ভানা খুব একটা সহজ কাজ নয় । একজন কখনো কখনো বা দু'জন মিলে ঢেঁকির ন্যাজাড়ে পা দিয়ে ঢেঁকি ওঠানামা করায় , আরেক জন ঢেঁকির মুখে যে গর্তটি থাকে তাতে হাত ঢুকিয়ে ধান ওলটপালট করে । তা না হলে ঢেঁকির আগাড় বা মুখের আঘাত তো ঢেঁকির দনে বা গড়ে এক জায়গাতেই বারবার পড়তে থাকে,তাহলে নির্দিষ্ট কিছু ধান ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে যাবে আর বাকিগুলো ধানই থেকে যাবে । পাহার দেওয়ার চাইতেও যে গড়ের ধানগুলি উল্টে পাল্টে দেয় , তার কাজটি অধিক সিরিয়াস কাজ । বিন্দুমাত্র অসতর্ক হলেই মহাবিপদ । অথচ ঢেঁকি চলছে নির্দিষ্ট ছন্দে "ঢেকেরঢুম ঢেকরঢুম ঢেকেরঢুম..."তারই সাথে নিপুণ দক্ষতায় একই সাথে চলছে গালগল্প হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি মশকরা ! আবার চাল কেমন বেরোচ্ছে তা তুষে মিশে থাকা চালে ফুঁ দিয়ে তুষ উড়িয়ে শুধু চাল টুকু নিয়ে মুখে চিবিয়ে পরখ করে দেখে নিচ্ছে । এই চতুর্দিক সামলে চলার দক্ষতা বুঝিয়ে দিতে যে প্রবাদটির জন্ম হলো তা হচ্ছে "ভেনে কেটে পা ফেলো , ফুঁ দিয়ে গালে ভরো" । এখন জীবনে চলার পথে নানান ঝক্কি ঝামেলা সামলে কার্যসিদ্ধি করার বিষয়টিকে বোঝানোর ক্ষেত্রে এই প্রবাদটির ব্যবহার হয় ।
মানভূম পুরুলিয়ার মহিলারা যথেষ্ট কর্মমুখী, বলশালিনী এবং আত্মনির্ভরশীল । বরাবরই কৃষিকাজ, জ্বালানি সঞ্চয়, পশুপালন ইত্যাদি কর্মে তাঁরা পুরুষের তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে । একদিকে গৃহস্থের হেঁশেলের কাজ সামলানো অপরদিকে রুজি রোজগারের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া । আবার স্বামীর আনন্দ বিনোদনেরও সম্পূর্ণ সহযোগী হতে হয় । এত সবের কোন কিছু একটার ঘাটতি হলে তখন স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ বা সাঙাতে উদ্বুদ্ধ হন । নারীর সে এক অসহনীয় নির্মম যন্ত্রণা । এই কঠোর বাস্তবতা থেকে জন্ম নিয়েছে এক অসাধারণ প্রবাদ "ভাত দেয় কি ভাতারে, ভাত দেয় গতরে।"
এই অঞ্চলে তপশিলি জাতি ও উপজাতি মানুষের সংখ্যাধিক্য । আর্য সংস্কৃতির নিরিখে জাতিভেদ অনুসারে যাঁরা ব্রাহ্মণ , তাঁদের উপস্থিতি এখানে তুলনামূলক কম । সামনে অব্রাহ্মণেরা ব্রাহ্মণদের ভক্তি শ্রদ্ধা সম্মান জানালেও আড়ালে তাঁদের নিন্দায় মশগুল থাকেন । ব্রাহ্মণদের যে সমস্ত পুরানো সংস্কার সংস্কৃতি সময়ের সাথে সাথে তাঁরাও যখন সেখান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন, তখন এঁরা ঠাট্টা করেই বলেছেন ,"বামুন বো'ষ্টম, টম্ টম্ টম্ টম্ , গাছের ডালে পৈতা টাঙ্গাই কুঁখড়ি খাবার জম"। এখন যে কোন জাতির নিজস্ব জাতিগত বৈশিষ্ট্য হারিয়ে একটি জগাখিচুড়ি জাতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে এই প্রবাদের ব্যবহার হয় ।
আবার এই অঞ্চলের নিম্নবর্গের মানুষের বিশ্বাস প্রাচীনকালে ধান গাছে চাল ফলত, তখন ধান গাছ ছিল না, ছিল চাল গাছ । কিন্তু একদিন এক ব্রাহ্মণ চাল ক্ষেতের মধ্যে পায়খানা করতে বসে লোভ সংবরণ করতে না পেরে ওই অবস্থাতেই গাছ থেকে ছিঁড়ে চাল খেতে শুরু করে । মা লক্ষ্মী এই ঘটনায় অসন্তুষ্ট হয়ে নিজের লজ্জা নিবারণার্থে নিজেকে ঢেকে ফেলেন । তার ফলে চালের একটি খোসার জন্ম হয় এবং চাল ধান এ পরিণত হয়ে যায় । তাই কিছু ব্রাহ্মণের অসংযমকে ঠাট্টা করে বলা হয় "হাগা পঁ'দা বামুন" । বর্তমানে নিয়মনিষ্ঠতার অভাব বোঝাতে কথাটি ব্যবহৃত হয় ।
সমাজের জাতি বিভাজনে যে বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব আজও বিদ্যমান সেই সমস্ত জাতির কিছু কিছু কর্মকান্ড ও বৈশিষ্ট্য থেকে নানান প্রবাদ উঠে এসেছে । যেমন --"লাপিত পুঁজি পাঁচ শিকা"। কথাটির উদ্ভব হলো কেন ? না , এক নাপিত কোনমতে ১ টাকা ২৫ পয়সা জমিয়ে ছিল । সেই পাঁচ সিকে পয়সার অহংকারে নাপিত ধরাকে সরা জ্ঞান করে । প্রতিবেশীদের সঙ্গে অকারণে ঝগড়া বিবাদ করে । একদিন তার বিরুদ্ধে গ্রামের ষোলআনায় নালিশ করা হলে বিচারসভা বসলো । বিচারে তার পাঁচ সিকে জরিমানা হলো । এই জরিমানা দেবার পর থেকে নাপিত কিন্তু শান্ত হয়ে যায় । আর কারো সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি গালমন্দ করে না ।
কিছু কিছু মানুষের নেশার প্রতি আসক্তি আর অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও নজর না দেওয়া থেকেও কথার জন্ম হয়েছে । কথিত আছে তিন বন্ধু প্রতিদিন একটি দোকানের সামনে বসে গঞ্জিকা সেবন করতেন । তাঁরা নেশায় এতোটাই বিভোর হয়ে থাকতন যে অন্য কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করতেন না । হঠাৎ একদিন সেই আড্ডা'র পাশের দোকানদার খুন হয়ে যান । কোন একজন দুষ্কৃতী তরবারি দিয়ে দোকানদারের মুন্ডচ্ছেদ করেন । খবর পেয়ে পুলিশ এসে তিন বন্ধুকে প্রশ্ন করে ---"এই দোকানদারের মাথা কে কেটেছে , তোমরা তা দেখেছো ?" তখন তাঁরা বলেন "আসি যাই গাঁজা খাই , মাথা কভু দেখি নাই ।"
মোরগ লড়াই এই এলাকার অন্যতম লোকসংস্কৃতি । সেই মোরগ লড়াই থেকেও প্রবাদের উত্থান ঘটেছে । মোরগের পায়ুদ্বারকে বলে চুতি । লড়াইয়ের সময় কোন মোরগকে যদি তার বিপরীত পক্ষের মোরগ কায়েত বা কা'ৎ দিয়ে পায়ুতে আঘাত করে তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে লড়াই ময়দান থেকে ছুটে পালিয়ে যায় । এখন কোন ব্যক্তির দুর্বল জায়গায় আঘাত করে আক্রমণ করার ক্ষেত্রে এই প্রবাদটির প্রচলন লক্ষ্য করা যায় ।
কিছু কিছু পশুপক্ষীর আচরণ থেকেও "কথা"র সৃষ্টি হয়েছে । মানভূমে টেঁটই নামে এক ধরণের পাখি আছে । এই পাখিগুলোর ধারণা রাত্রে যে কোন সময় আকাশ ভেঙে পড়তে পারে । তাই তারা রাত্রিকালে নিদ্রা যাবার সময় পা দুটো আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে রাখে । তারা বিশ্বাস করে আকাশটা ভেঙে পড়লেও শরীরের কোন ক্ষতি হবে না , পায়ে করে আটকে দেবে । এমন হাস্যকর কান্ড কারখানা অনেক মানুষের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় ।
পশ্চিম সীমান্ত বঙ্গে কোন কোন জাতির বিবাহ অনুষ্ঠানে টাকা দিয়ে বর-কনেকে আশীর্বাদ করার প্রথা আছে । আশীর্বাদের নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের জন্য হাতে বেশি সময় না থাকলে বিয়ের লগ্নেই কনেকে টাকা দিয়ে আশীর্বাদ করে বিয়ে দেওয়া হয় । সেখান থেকে উত্থিত হয়েছে একটি প্রবাদ --"টাকায় লগন"। আজও সমাজে যদি কোন সামাজিক ক্রিয়া কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াই তা সম্পন্ন করতে হয়, তখন মানুষজনকে এই কথাটি উচ্চারণ করতে শোনা যায় ।
প্রবাদের উৎপত্তির ইতিহাস বিষয়টি এতই বিস্তৃত যে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এর আলোচনা সম্পূর্ণ অসম্ভব । এখন আরেকটি প্রবাদ বা "কথা"র কথা তুলে আজকের আলোচনা শেষ করব । মানভূম পুরুলিয়ার মানুষের , পেটে ভাত না থাকলেও মুখে হাসি থাকে , গায়ের জোর কমলেও পায়ে নাচের ছন্দ থাকে , রসেবসে থাকাটাই এই ভূগোল সীমার মানুষের জীবন ধর্ম । সেই রসবোধ থেকেই উঠে এসেছে একটি বেশ মজার প্রবাদ । একদিন এক গৃহকর্ত্রী তার শ্রমিককে জিজ্ঞাসা করে, " তুমি পান্তা খাবে না মুড়ি ?" শ্রমিকের তো পান্তা শব্দটির সাথে পরিচয় নেই । সে অনুমান করে পান্তা নিশ্চয়ই কোন মূল্যবান ও বড়লোকী খাবার । মুড়ি তো প্রতিদিনই খাচ্ছি , তাহলে পান্তাই খাওয়া যাক । তাই সে বললো, "মুড়ি নয় পান্তা " । কিন্তু খাওয়ার সময় দেখা গেল বাঁসী ভাত দেওয়া হলো তাকে । ভালো কিছুর আশায় পাওয়া গেল সেই খারাপই । হায় , "অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়" জন্ম হলো "পান্তা বলে টাটকা বাঁসী"র মতো রসে টইটুম্বুর এই "কথা"টির ।
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
অরন্ধন পড়ে মুগ্ধ হলাম
উত্তরমুছুনসময়োপযোগী সম্পাদকীয়। কবিতাগুলি মরমী। ' কথার অন্তরালে ' মন কাড়লো।
উত্তরমুছুন