তৈমুর খানের গুচ্ছ কবিতা

             
তৈমুর খানের গুচ্ছ কবিতা





১.
মৃত্যুর বিরুদ্ধে


 আর একবার জিজ্ঞেস করি:

 সঙ্গে আছো তো?


 শামিয়ানা টেঙেছে সব বাড়ি

 পাড়া-প্রতিবেশী সবাই উলুধ্বনি দেয়

 সন্ধ্যেবেলা ফিরব কোথায়?

 অন্ধকার সব রাস্তা করে নিচ্ছে চুরি!


 এটাই দুর্গার বাপের বাড়ি?

 এখানেই হোম করেছিলেন দক্ষ প্রজাপতি?

 শিউরে উঠছি…


 হাসপাতালের দিকে যেতে যেতে

 অ্যাম্বুলেন্সটি পাক খাচ্ছে...


 গাড়ি থামাও, গাড়ি থামাও

 একবার অন্তত একটা ফোন করি!



২.
বিশ্বাস


 আমরা বিশ্বাস পুষে রাখি

 বিশ্বাস এসে আলো জ্বালে

 আলোকিত ঘরে

 আমাদের শিশুরা চাঁদ দ্যাখে।


 চাঁদ কি টিপ দিয়ে যায়

 তাদের কপালে?


 দুধ নেই, দুধ খাওয়ার বাটি নেই

 তবুও বিশ্বাস আছে আমাদের।



৩.
আমার নীরব ধর্ম
 

স্বর্ণকমলগুলি ফুটেছে সরোবরে 

গুঞ্জন এসেছে কত গুঞ্জরিত হতে 

আমার নীরব ধর্ম, আমার নিশির খড়কুটো 

বিশ্রামে অবিশ্রাম অস্থির হয়েছে 


প্রতিবাদ ছিল নাকো, ঘোষণা ছিল না 

নির্বেদ অভ্যাসে শুধু শূন্যতা রচনা 


একটি মানুষ যদি এভাবেই মানুষ হতে চায় 

কাঁটাগুলি কেন রাখো তার রাস্তায় ? 


রাস্তা যেমনই হোক লক্ষ্য শুধু হাঁটা 

একটি পৃথিবী থেকে অন্য এক পৃথিবীর দিকে 

আমাদের ভাষার ভিতরে অন্য এক ভাষা আছে 

আমাদের বাঁচার ভিতরে অন্য এক বাঁচা



৪.
প্রথম চুম্বন


ও চুম্বন , 

বিশ্বাসের নদী পেরিয়ে 

           জাগরণের রাত্রি পেরিয়ে 

                        চলে যাচ্ছি দূরে 

              শিহরনের ফুল ফুটছে 

                             আমার শরীরে 


পাপড়িঠোঁটে কী বিস্ময় আলো 

              স্বপ্নের ভ্রমর এসে 

               আমার হৃদয়ে গান রেখে গেল 

                  সমস্ত সময় ধরে প্রেমের প্রবাহ 

                         তোমারই স্পর্শে বেজে ওঠে 


                সে এক ভাষাহীন অনুভূতি 

                               সে এক ভাষাহীন দাহ !


৫.
স্মৃতির বাগানে



কত ফুল ঝরে গেল বনে 

     ঝরা ফুলের হাসি 

          কুড়োতে এসেছি 

                          দুঃখ কত জমে আছে মনে 


   কোকিল ডেকেছে কত 

ময়ূর নেচেছে কত 

     ঘাস ছিঁড়ে খেয়েছে হরিণে 


    পরিরা গেয়েছে গান 

        মৌমাছিদের মধু পান 

              সকাল এসেছে পাখির কলতানে 


   আজ শুধু ধুধু মাঠে 

         স্মৃতির জাবর কেটে 

              একাকী চেয়ে আছি বড়ো আনমনে ! 


                                     _________________




কবি পরিচিতি : জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। 

পিতা ও মাতা :জিকির খান ও নাওরাতুন। 

পড়াশোনা :বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। 

পেশা : উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক । 

প্রকাশিত কাব্য : কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। 

পুরস্কার : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, কবি আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার ইত্যাদি। ঠিকানা : রামরামপুর (শান্তিপাড়া), রামপুরহাট, বীরভূম, পিন ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ফোন :9332991250



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪