তৈমুর খান এর গুচ্ছ কবিতা

তৈমুর খানের গুচ্ছ কবিতা



বিক্রিয়া


সব বিস্ময়গুলি এখন তোমার জলাশয়ে মৎস্য

সব কল্পনাগুলি এখন তোমার আকাশের চাঁদ

সব উপলব্ধিগুলি এখন তোমার বাগানের ফুল ফল


আমি বেড়াতে আসা পাখি

বাংলা ভাষার ঠোঁটে ঠুঁকরে ঠুঁকরে দেখি

 স্বাদ-বিষাদের আদিম রসায়ন


চিকন মাজা ডুবিয়ে দাও জলে

মাজার নিচে খাঁজ

আমার আত্মহত্যা লুকিয়ে আছে ওখানেই


জলের উপর চাঁদের ছায়া

ভেসে ওঠে পরকীয় সমাজ




দ্বিতীয় বিবাহ


মিছিল এগিয়ে চলেছে

শুধু রথতলায় থেমে আছে কাহিনি

কাহিনির উল্টোদিকে আমাদের বাজার

বাজারে পতাকা উড়ছে

নবীনে-প্রবীণে সম্মোহন কিনছে রোজ


আহা যুবতী সম্মোহনের খোলা পোশাক

সমস্ত শরীরময় কুশলী ইঙ্গিত

মিছিল

     রথতলা

        কাহিনি 

             বাজার

সবাই ঝুঁকে আছে দ্বিতীয় বিবাহের দিকে




রসগোল্লা

 

যেখানে কামড়াচ্ছি রস গড়িয়ে আসছে

ইন্দ্রিয় অথবা মস্তিষ্ক,ধারণা অথবা স্বপ্ন

এখন আমি রসের দোকানদার

তার সঙ্গে কাহিনিও বিক্রি হয়


কী সুন্দর এই দোকান

মাছি আর পিঁপড়েরাও প্রেমে পড়ে

চেটে চেটে খেয়ে যায় রস


আমিও মানুষ থাকি নাকি!

পাকে পড়া রসগোল্লা হই

কাচের জানালায় চেয়ে থাকি

আর স্মৃতিরসে হাবুডুবু খাই…




বিক্ষিপ্ত

  

মেয়ের নাম জোনাক

ইচ্ছার নাম পবিত্র

রাত্রির নাম পৃথিবী

এবার তবে ঘুমিয়ে পড়ি


কম্পনের পর কম্পন আসছে

দৈত্যের মতো রাজনীতির গান

সোনার পালঙ্কে মৃত্যু ঘুমায়

মৃত্যুকেই দেখছে এখন যুবক চুম্বন


সহ্যপাখির পালকের মুকুট মাথায়

রান্নাঘরের আলোয় খিদের উদ্বোধন

তেষ্টা পাওয়া মূর্খের বীজগণিত

পাংশু বর্ণ দুর্গম নিয়তির হাত


বাল্যকালের কৌতূহল মুখ ধুয়ে দাঁড়ায়

বিবাহিত হতে হতে অনেক বিবাহ এখন

স্টেশন জুড়ে বিধুর বিশ্রাম

নববধূ বিক্ষিপ্তা স্ট্রিট-লাইটের আলো….




যুগান্তর


বাঁশ আসতে শুরু করেছে

হৃদয় নেই এখানে

খোলা দরজায় নিয়তি যাওয়া-আসা করে


পর্দা সরে যাচ্ছে ঘন ঘন

পর্দার আড়ালে কেউ নেই

এক যন্ত্রণার বিকেল শুধু

মৃত কোকিলের কুহুকুহু পড়ে আছে


ছোট-বড় অমসৃণ বাঁশগুলি এখন ঢুকে যাচ্ছে

নির্বিকার

না, অসুবিধা হচ্ছে না, শুধু তীব্র রক্তক্ষরণ

আর অসহ্য প্রহর গুনে গুনে পার হচ্ছে

এক একটি যুগ




প্রেমিকা

  

সরস্বতীকে আবার নির্মাণ করি

আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে এক যুবক

তার জ্যোতির্ময় ইন্দ্রিয় থেকে নির্গত হয় ইশারা

আর উত্তেজনা হাঁ-করা তিমিমাছ


সরস্বতী আটপৌরে মৃন্ময়ী

আমি তার ছেঁড়া ফ্রক সেলাই করি

শরীর থেকে আলো এসে পড়ে

ক্রমশ আলোগুলি অপার্থিব হয়


পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিকার নাম সরস্বতী




ইতিহাস


বিপুল উচ্ছ্বাস নিয়ে লাফিয়ে পড়ছে সবাই

পাহাড়ের নিচেই জলাশয়

কেউ কেউ মাছ, কেউ কেউ কুমির, কেউ কেউ ব্যাং

সাফল্য সাঁতারের নাম

উপভোগের নাম আনন্দ


 আমরা দূর থেকে একটা বিরক্তির ইতিহাস লিখে

 পাঠিয়ে দিচ্ছি

আর ঝাঁপ দেওয়া কৌশলকেই

 নাম দিচ্ছি সভ্যতা।









তৈমুর খান 


পরিচিতি :  জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। 

পড়াশোনা :বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। 

পেশা :  উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক । প্রকাশিত কাব্য :   কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১) ইত্যাদি। 

পুরস্কার :  কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান। 

ঠিকানা :  রামরামপুর (শান্তিপাড়া), রামপুরহাট, বীরভূম, পিন ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ফোন ৯৩৩২৯৯১২৫০ 

                      মূল পাতায় যান

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। মুকেশ কুমার মাহাত

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। নাচনী শিল্পীদের আলোক-চিত্র ।। সন্দীপ কুমার