সময়ের গান ও অন্যান্য কবিতা

সময়ের গান ও অন্যান্য কবিতা


ফজলুররহমান বাবুল

সময়ের গান  

তোমার আছে সময়, আছে স্বপ্ন, আছে বাড়ি এবং ঘর। বাড়ির ভিতর ঘরের ভিতর থাকবে তুমি কত বছর? সময় কমে অষ্টপ্রহর। আর, তুমি দিচ্ছ কারে রং-বেদনায় পাড়ি? তোমার আছে নয়াবাড়ি, পুরানবাড়ি, জঙ্গলবাড়ি। সকল বাড়ির পথেঘাটে সময় চলে ধীরিধীরি। আসলেই কি ধীরিধীরি? ডানে-বাঁয়ে সামনে-পিছে অনেক খবর, অনেক খবর। গোঁসাই থাকেন মনের ভিতর? সোজা হয়ে হাঁটবে তুমি মাটির ওপর, পথের ওপর। কমছে আয়ু বছর-বছর, অষ্টপ্রহর। জাগতে পারো ঘুমের ভিতর? আজকে তোমায় উলটাপথে হাঁটতে ডাকেন কোন মহারাজ? বৎস তোমার, বন্ধু তোমার, একটুখানি ধরুক তোমায়। দাঁড় টেনেছ নদীর বুকে জলের ওপর ঠান্ডা-হাওয়ায় গরম-হাওয়ায়। ঢাকা কিংবা উদলা-সময় অনেক গেছে টালবাহানায়। ঘরের ভিতর, পথেঘাটে, রৌদ্র-হাওয়ায় আছ তুমি অন্ধকারে। অন্ধকারে, অন্ধকারে। কোথাও তুমি বসে থাকলে আকাশ মিশে মাটির সঙ্গে রৌদ্রভারে। আকাশ হবে তোমার মতো, তেমন-কিছু চাও কি তুমি? চাইতে পারো, চাইতে পারো। বনে-বনে সবুজ-পাতা, হলুদ-পাতা, ঝরছে পাতা অহরহ। ঘুরছ তুমি, ঘোরো তুমি। জানো তুমি, ঘুরেফিরে ধরা তোমার খেতেই হবে পুলিশবিহীন অচিনপুরে। সকালবেলা দুপুরবেলা সন্ধেবেলা থাকবে তুমি অন্ধকারে? অন্ধকারে? অন্ধকারে?

 

স্বপ্নের গান

পৃথিবীটা গোলাকার বলেই ভাবছ কি আবার দেখা হল তোমার-আমার? কখনও কি আশা করেছিলে গভীর-কালো-রাত্রি থেকে ভোরের আলো দেখতে পাওয়ার? অনেক-বছর পরে আবার দেখা তোমার-আমার। সময় তো নেই বসে থাকার। আজকে বরং তুমি কিছু মসলা বাটো; আমি না-হয় কয়লা-কিছু কুড়িয়ে নিয়ে চুলার ভিতর আগুন জ্বালাই। আজকে না-হয় রাজবিধানে রাঁধি খিচুড়ি। রাঁধাবাড়াও শিল্প-কিছু। মানুষ রাঁধে কতকিছু। খিচুড়িটা রেঁধেই ফেলি তোমার সঙ্গে এবার। পথের ওপর, স্বপ্নের ভিতর ঘুরেছি-যে কতশত ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, তোমার দেখা পাওয়ার আশায়। আজকে আমরা জ্বালব কোনও নতুন পিদিম। স্বপ্ন বড়ো আদিম। বৃষ্টি এবং রোদ্দুরে আমরা ছিলাম; আমরা আছি একলা কিংবা ভিড়ের ভিতর। সময় যখন ফুরিয়ে যাবে, আমরা তখন করবটা কী? কোন পথেই-বা হাঁটব তখন? দেখব কারে জিগ্যেস করে?

 

খিদের গান

শিমুল-শাখায় হাওয়ার ভিতর ছায়া ঘুমায়। খিদে এসে তাকে জাগায়। খিদে হাঁটে রৌদ্রচ্ছায়ায় একা একা। দমকা হাওয়ায় হাঁটাচলায় বাঘের পেটে খিদে গড়ায়। 

আমরা মানুষ, ভাবি নাকি বাঘ-ভল্লুকের খিদে নাই? রুটি এবং হালুয়ায় আমরা যখন কিছুকিছু খিদে খাই, তখন গরম কিংবা ঠান্ডা উনুন কোন সুখে-যে লিরিক জাগায়! ভল্লুক এবং বাঘের পাড়ায় খিদে গড়ায় ঠান্ডা হাওয়ায়, গরম হাওয়ায়। 

 

পথের গান

অ্যা, এত জল, এত পথ কিংবা এত চাতুরী অজানার! এইদিকে কোনও পথ রয়েছে কি আর? এত আলো-জল, এত পথ কোন পথে যাওয়ার? সময়ের তোড়ে কত পথ থেকে যায় অচেনা। বেলাভূমি ছেড়ে আলো চলে যাওয়ার আগে কত-যে ঈগলেরা চলে যায়। এইদিকে কোনও পথ আছে কি আমার চলে যাওয়ার? এইদিকে একটা বাড়ি হয়ত খরগোশ-ছানার-এইদিকে কোনও বিপন্ন জলাভূমি-যেখানে অস্বচ্ছ জলে ঠোকর খেয়ে হাওয়া তার চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকায়। আর, এইদিকে ঈগলেরা চলে যায়। এত আলো, এত স্রোত, এত পথ কোন পথে হারায়? কত ক্লেশ পথের ওপর ফেলে দিয়ে আমরা ঘুমিয়ে থাকি অজানা জলের তলায়। কত জল বয়ে যায়। পথে পথে কত জল ঝরে আর উড়ে যায় কত। কত-কী থাকে না বেশিদিন। থাকে না ক্লেশ/বেদনা, রঙিন-দিন।

 

ভুত

একদিন কেউ আমাকে বলেছিল, ‘কোনও কোনও পথে গভীর রাতে অন্ধকারে জোনাকির লণ্ঠন হাতে শুধু ভুতেরা হাঁটে মানুষের খোঁজে। হয়ত-বা কোনওদিন ভুতের বিপ্লব দেখা যাবে পৃথিবীতে।’

নির্জন পথে, জঙ্গলে কিংবা একলা ঘুরে, কোথাও পাইনি আমি কোনও ভুতের দেখা। আমাকে তবে বলা যাবে কি ‘ভুত-বঞ্চিত'? মানুষের মনে ‘ভুত’ অভিধায় আছে কিছু তবু। মরে গেলে কোনওদিন ভবঘুরে ভুত হব না কি আমি? দ্বিধা/সন্দেহ মনে। আমি কি মরে গেলে ভুত হব কোনওদিন? কোথায়-বা আছে ভুতের শহর, ভুতের গাঁ, ভুতের গুহা? আর, কোন ভাষায় ভুতেরা করে কিচিরমিচির? ভুতের কোনও পরিসংখ্যান নাই, তবু, কতশত ভুতের জঙ্গলে পাখি গায়, রৌদ্র এবং ছায়া হাঁটে।        

 

কত-কী

জলে আর নিভে যায় বাতি। এছাড়াও কত-কী। ফেনা-জল কত রাশি-রাশি উবে যায় হাওয়ার ভিতর, জলের ভিতর। তুমি কাতর? পৃথিবী ঘুরছে নিরন্তর। কেউ শুয়ে আছে ঘরের ভিতর, কেউ-বা হাঁটছে পথের ওপর। আর, ‘এই করছো কী’বলে হঠাৎ কেউ চেঁচিয়ে ওঠে অল্পবিস্তর; কেউ-বা কারও কাছে জানতে চায় মৃত লোকটাকে কখন দেওয়া হবে কবর। কত বিজ্ঞাপন/প্লাকার্ড-প্রণয়ন, কত আনন্দ-বেদনা, কত বাধা আর কত বাঁধ ভেঙে যাওয়া, পথে যেতে যেতে কত-যে ফিরে চাওয়া।

শুশ্রূষা রাখো ধুলোবালি কিংবা জলে। আকাশ থেকে জল ঝরে, আবার জল উড়ে যায়, আবার ধুলো ঝরে পড়ে। হয়ত আজ ভাবছো তুমি, কী খবরেই-না পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাটি ভরে যায় আগামীকাল। আজই তো কত-কী, কত কথা, কত খবর, কত কর্মাকর্মে সূর্য ওঠা আর ডুবে যাওয়া।  







মন্তব্যসমূহ

  1. অনেক ভালো লাগলো। কবির নিজেকে পাল্টাচ্ছেন, শব্দকে নিয়ে খেলছেন, নিজেকে অতিক্রমের এই চেষ্টা কষ্টকর এবং সুন্দর!! শুভকামনা!!!

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। মুকেশ কুমার মাহাত

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। নাচনী শিল্পীদের আলোক-চিত্র ।। সন্দীপ কুমার