জলশ্যাওলার বিরহকথা

জলশ্যাওলার বিরহকথা

দীপংকর রায়



১৫ তম পর্ব

             ট্রেন চলছে । ট্রাক চলছে। হুড়পাড় করে বাসনকোসোন হাঁড়ি-কলসি সসপ্যান ওঠানো নামানোর শব্দ। ওপাশে লিলিপুটের মতো মানুষগুলো। পথিকও অনেক ছোটো হয়ে গেছে যেন। ভীষণ ছোট্ট লাগছে তাকে। সে নিজেকেই চিনতে পারছে না। এরপর মানুষজনের হাহাকার রব শোনা যাচ্ছে। ছানার জলটুকু দেবে গো মা, ছানার জল ....!
              ময়রা পাড়ায় ছানার জলের চাহিদা বেড়ে গেছে। ভাতের ফ্যান। ফ্যান দাও.... ফ্যান দাও গো মা..... ফ্যানটুকুই দেও.... ভাত চাইছি না গো,  ভাত চাইছি না...... ফ্যান... একটু ফ্যান.... পারলি একটু লবন দিয়ো, এক ছিটে লবন.... লবনেরও বড় দাম গো, লবন ছাড়া কি চলে? লবন যে এ পোড়া দেশ থেকে কনে গ্যালো, তা কিডা কতি পারে আর... !
              ওমা, ট্যাঁপা মাছের মুণ্ডুগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তার মুখের উপর! আবার তারা পেট ফুলিয়ে একবার মুখ ছাড়িয়ে উঠে যাচ্ছে, আবার মুখের কাছে  এসে দাঁড়াচ্ছে। তার যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ওঁ..... ওঁ....  ও.... ও, আঁ.... আ.... আ..... ; এইসব গোঙানি শুধু। 

             পথিকের ঘর থেকে অনেকক্ষণ এই ধরণের আওয়াজ আসছে দেখে রুণী উঠে এসেছে মাঝের দরজা খুলে। সে চাপাস্বরে চেঁচাচ্ছে, ও জামাইবাবু, ও জামাইবাবু, কী হলো, কী হলো কি আপনার .....?
              তাকে যেন বোবায় ধরেছে ----- এই ধারণা পোষণ করে রুণী এবং তার বড় শ্যালকের স্ত্রী গীতা। দু'জনেই উঠে আসে। উঠে এসে তার গায়ে ঠেলা দিয়ে  কথাগুলি বলে যায় ---- জামাইবাবুরে মুখচোপায় ধরেছিল। 
               ততক্ষণে সেও উঠে বসে ভাবছে, এসব কী হচ্ছে .... কেন এসব দেখলাম,  এমনভাবে....! 
               বাইরে সকাল হয়ে গেছে। শুধু সকালই নয় অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে। প্রায় আটটা। 
               রুণী জিজ্ঞাসা করলো,  ও জামাইবাবু, স্বপ্ন দেখছিলেন নাকি?
               শ্যালকের বউ বললো, না না, এরে মুখচোপায় ধরাই কয়..। 
               রুণী  বললো, চা আনি। চা খেলে এসব সেরে যাবে, দেখে নেবেন। 

              এদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে বলতে সে চা খেতে লাগলো। ইতিমধ্যে যা হবার তা হয়েছে। সমস্ত বাড়িতেই চাউড় হয়ে গেছে যে, তাকে মুখচোপায় ধরেছে। একে একে শাশুড়িরা এক একজন করে আসছে আর বলে চলে যাচ্ছে এক এক কথা। কেউ বলছে, কী যে ভাবে বাবু এত, তা কে জানে! 
             মেজ কাকিমা বলতে বলতে চলে গেল, ঘুমোবে না , একদম ঘুমোবে না ---- সারাদিন এত চিন্তা যে কিসের বাবুর, তা কে বলবে, বুঝে পাইনে বাপু.... ;
              সাথির মা ব্যস্ত হয়ে শুধু বলে চলেছে এই কথা, ও বউ মা, বাবুরে গরম গরম চা দেও দেখিনি, গরম কিছু খেলেই কেটে যাবে ওসব ---
              ইতিমধ্যেই যে রুণী চা দিয়েছে, এই কথাটা বউমা শাশুড়িকে জানালো।
               তিনি এ সবই বলছিলেন দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে। পথিকের সামনে তিনি এত বছরে কোনোদিনও দাঁড়াননি। যা কিছু কথা ঘরের দরজার বাইরে থেকে। পথিক ভেবেছে সেসব নিয়ে, মনে করেছে, হয়তো তিনি লজ্জা পান। যেহেতু তাঁর এক পা টেনে টেনে হাঁটতে হয়, সেই জন্যেই তিনি সামনে আসেন না বোধ হয়। 
               এদিকে সে এখন ভাবছে এই কথাটি, তাকে মুখচোপায় ধরলে হই হই পড়ে যায়। অথচ সে একা একা থাকলে কারো দুশ্চিন্তা হয় না বিন্দুমাত্র।
              যা হোক এসব আলোচনায় বিশেষ কান দেয় না সে। গায়ে একটি জামা গলিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে পুব দিকের দরজা খুলে বাজারের পথ ধরে। 

                পথিক বাইরে বেরিয়ে যাবার বেশ খানিকক্ষণ পরে একে একে ঐ বাড়ির সকলেই উঁকিঝুঁকি মেরে যায়। আসেনি শুধু উর্মি। তাই, এবারে সেও আসলো। দেখতে পেল, ঘরে কেউ নেই। টেবিলের উপরে সেই খাতা খানি খোলা। এসট্রে বোঝাই পোড়া সিগারেটের ফিলটারগুলি। আর সেই বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা মলাটের  খাতাটিতে কত কি যে লেখা ! ওদিকে বিছানার উপরে একটি বালিশ ও কাঁথা । কাঁথাখানি অর্ধেকটা গুটানো। ঘরের ভেতর আরো কত কিছুই তো আছে, কিন্তু শুধু এগুলোর দিকেই তার নজর গেল কেন  তা কে বলতে পারবে! 
               বাংলাদেশের ম্যাপ দেখতে দেখতে ভাবলো, আচ্ছা পাবনা কোন জায়গাটায় দেখি একটু ---- সে দেখলো অনেকখানিই ভেতরে যেন। তারপরে সে আস্তে আস্তে সেই খাতা খানার পৃষ্ঠাগুলো উল্টাতে উল্টাতে যখন বসে পড়লো, তখন তার মনে হলো, দেখি কী লেখা আছে এতে! এবং পড়া শুরু করলো।
                খাতার যে পাতাগুলি পথিক প্রায় অর্ধেক রাত অবধি উল্টেছে সেও সেই পাতাগুলিই উল্টে যেতে লাগলো। দেখতে দেখতে কেন জানি না তার মনে হলো, ভেতরটা কেমন যেন মুচড়ে উঠলো তার। যেন অদ্ভুত এক অস্বস্তি হতে লাগলো। কিন্তু কেনই বা এমনটা হচ্ছে তার? দমবন্ধ করা একটা ভাব? তার মনে হলো, সে কি তাহলে কোথাও খুব দুর্বল হয়ে গেল! কিন্তু কেনই বা এমনটা? যদিও সে তার খুব একটা হদিস পেয়েছে বলে তো মনে হলো না। কিছুক্ষণ পরেই যেন জলে একটা তরঙ্গ উঠেছিল, তারপরেই আবার তা কোথায় উবে গেল সবটা নিয়ে। তারপরেই সে ভাবলো, এই মানুষটি এত কিছু এমনভাবে ভাবে! 
               তার ছোটো মাথায় এইটুকু ঢুকছে না ---- জামাইবাবু এত কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা কেনই বা করে? কিই বা পায় সে এসব ভেবে? আবার এও ভাবছে, যা ভাবছে ভাবুক গে। আমিই বা এসবের ভেতরে ঢুকছি কেন? এসবের মানে-টানে করে কি লাভ? আবার মনে হয়, আচ্ছা, সে তো এ বাড়ির জামাই, তাহলে এ বাড়ির এত কিছু নিয়ে ভেবে, তার কি? শুধু তাও তো নয়, এ ক'দিন কোথায় কখন কী করলো, কী ভাবলো, এত কিছু লিখে রেখেই বা লাভ কি তার? বাবা, কত সমস্ত জায়গার কথা! সব কিছুর একের পর এক হিসেব! আচ্ছা, এসব সবকিছুই কি তার জীবনের কথা , না বানানো সব গল্প? যাক যাক, বাবা! এই সময় না আসলে তো জানতেই পারতাম না। অনেক কিছুই জানা তো গেল! 
                  তারপরেই কেন জানি তার মনে হলো, তাহলে কি সে কোথাও নিজের দোলায় নিজেই দুলে উঠলো! যেন সে তিরতির করে বয়ে যেতে থাকলো এমন এক জল হয়ে, কোনো এক নদীর বারবেলা পেয়ে বসলো তাকে জল হয়ে, ঢেউ হয়ে----- কিন্তু সেসব না হয় যা হওয়ার হলো, কিন্তু কেন সে অমন ঘেমে নেয়ে উঠলো? যাই হোক, তার কথাই তো মনে হলো তারও এখন। তার কথা কেন তার মনে হতে লাগলো বার বার! কেন এই মানুষটা অমন করে একা করে দেয় আমাকে? কেন তার জন্যে এত ভাবনা হচ্ছে আমার? এত কিছু নিয়ে তালগোল পাকিয়ে একটা মানুষ ওই জন্যেই তাহলে অমন বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়! 
                 কিছুতেই কোনো কিছুতে ধরা দিতে চায় না কেন? সবই কি এই জন্যে?
                  তারপর তার মনে আরও প্রশ্ন জাগে, এসব কি সব এই এক রাত্তিরে লিখে ফেললো? তারপর আবার ভাবে, তাই বা ভাবি কেন, এখানে তো দিন তারিখ সবই দেওয়া আছে। এমনকি যে ক'দিন সে এসেছে তাও ;  আর তার ভেতরে ভেতরে আরো যে সময়ের কথাগুলি লেখা আছে, যে সময়গুলির কথা তার  জানার কথা না ----- সে কেন জানি মনে মনে ভেবে পাচ্ছে না তবুও, ভাবছে, এই মানুষটিকে নিয়ে সত্যিই তো এবার সে কিই বা করতে পারে ; যে ধারণা তার একভাবে না একভাবে ছিল, নানা ভাবে বোঝাবুঝির মধ্যে দিয়ে; এখন দেখছে ও বাবা, এর মধ্যে যেন আর একটা মানুষও এসে দরজা-জানলার সব দিককার খিল এঁটে দাঁড়ালো! এ পর্যন্ত তো যা হলো তা হলো, কিন্তু এবারে আর তাকে সে কোনোভাবেই ধরতে পারছে না। কারণ, তাকে যে খেলার সঙ্গি সে ভেবে নিয়েছিল, সেখানে এ কি দেখছে সে! আরো কত নানা ধরনের এলোমেলো সব নাম, তাদের কত সব খুঁটিনাটি, কত জনের মধ্যে আরো একজনকে  যেন নানা ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখলো সে। দেখলো সে যেমন ঠিকই, কিন্তু কোনো একজনেও তো তাকে ধরতে পারছে না ; যেন সবটাই অর্ধেকটা--- তাই এক লাফে সে যেন কোথাও চলে গেল তার সঙ্গে ভেতরে ভেতরে---- কেন জানি না, তার সঙ্গে নিজের মনের অনেকটা দূরত্বের কথাও কেউ যেন কানে কানে তাকে বলে উপলব্ধি করাতে চাইছে, তবু সে তাকে অনেক কাছের মানুষ বলেই বুঝে নিতে চাইছে যেন। আর তাই, সবকিছু ছেড়ে এখন সে তাকে হঠাৎ খুব কাছে পেতে চাইছে। একা একা বিড়বিড় করে কিসব বলেও ফিরতে লাগলো এখানে ওখানে , এঘর ওঘর, মনে মনে।
              কোথায় গেল যে? বাড়ির ভেতরে তো কোথাও নেই------ এটা সে বুঝে নিল খানিকটা একা ঘুরে ঘুরে। সে যখন একা এইসব বসে বসে টেবিলে পড়ছে। এমন সময় এ ঘরের বড় ছেলের বউ সামনে এসে ঝুঁকে পড়ে লক্ষ্য করেও গেল, সে কী করছে। যদিও কিছু জিজ্ঞাসা করলো না সে। কারণ তার সব কাজে তারা সে রকম মাথা ঘামায় না । তবে সে যখন সামনে এসে ঝুঁকে পড়ে কিছুটা দেখতে চাইলো, তখন কিছু না বলে সেও খাতাটি বন্ধ করে দিল। 
                কেন যে সে বন্ধ করলো কিম্বা লুকিয়ে ফেলতে চাইলো, এসব সে চলে যাওয়ার পরে নিজেই  ভেবে বেড়াতে লাগলো মনে মনে। 
                 জানলার একটি পাল্লা, টেবিলের পাশের, খোলাই ছিল। সে দিকে সে  অনেকক্ষন আনমনে  তাকিয়েও থাকলো। এইভাবে থাকতে থাকতে কেন জানি না তার মনে হলো কিছু একটা। সে বিচলিত হয়ে উঠলো। আবার ভাবতে লাগলো, গেল কোথায়, একা একা এমন সময়ে? কিন্তু কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করবার ইচ্ছা হলো না। তাই এ ঘর ও ঘর, বারান্দা, বাড়ির উঠোন, সদর দরজা, খামার, সকল জায়গা ঘুরে ঘুরে একা একাই আপন মনে খুঁজতে লাগলো তাকে। শেষে কোথাও না পেয়ে শেষপর্যন্ত এক পায়ে দুই পায়ে তার উপরের ঘরে যেতে যে সিঁড়িটি আছে, সেটার রেলিং ধরে কিছুটা ক্লান্তি জড়ানো ভঙ্গিতে উঠে চলে গেল নিঃশব্দে। এবং উঠে গিয়ে সে তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। একাকী মুখগুঁজে পড়ে রইলো উপুড় হয়ে অনেকক্ষণ বিছানায়।


               অনেকটা চলে এসেছে সে,  টের পেল তা। আমন ধান কাটার পর্ব  শুরু হয়ে গেছে কোথাও কোথাও। এদিকের সব ফসল কি নাবিতেই ওঠে ঘরে? আসার পথে শস্যফুল ফুটে উঠতে দেখেছিল সে মাগুরা থেকে কালিগঞ্জের পথে। তাহলে সেসব কি খুব আগে আগে লাগানো হয়েছিল? এক এক দিকে এক এক রকমের জল-মাটির টান থাকে। যা সে বরাবরই লক্ষ্য করেছে। রাড়ীখালীতে দেখে এসেছে ধান মাড়াই শুরু হয়েছে। আর এখানে এখন সেই ধান সবে কাটা হচ্ছে। তাও দু'চার দিন, কি বড়জোর পাঁচ-ছদিন হবে হয়তো।যাক, সেসব যা হচ্ছে তাই হোক না, ঠিক তাই বা বলে কি করে, ওদিকে বিদ্যুৎ মামার কথাটা মনে পড়ে গেল এই ক্ষেত্রে। আসার সময়ও তো তাকে দেখে এসেছে, সমস্ত  দিন  মাঠে কাটিয়ে সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফিরছে। এক এক দিন তার দুপুরের খাওয়াই হচ্ছে না। আর সেই অবস্থাতেই তো মাঠ থেকে ফিরেই নিজে নৌকা বেয়ে নদী পার করে দিয়ে গেল তাকে পয়ারী পিচ রাস্তা  পর্যন্ত। তাই ধান-কলাই-মুসুরি নিয়ে আগের সেসব নিয়ম এখন কি আর ঠিকঠাক আগের মতন কোথাও হয় নাকি? বা সেও কি আর আগের মতো এইসব সময় অসময়গুলো মনে করে ঠিকঠাক করে বলতে পারবে? 

                তার বেশ ভালো লাগছিল, সে বাজার  ছাড়িয়ে, পিচ রাস্তা ছাড়িয়ে, কাঁচা মাটির পথের ধুলো মাড়িয়ে চলেছে। 

               এ পথ যে সে খুব একটা ভালো চেনে তা না। বাজারের পেটের ভেতর  থেকে একরকম নেমে এগিয়ে গেছে যেন ---- দু'পাশের ক্ষেতে এখনো ধান গাছের সমারোহ। পাকা ধানের মাথার থেকে গড়িয়ে পড়ছে যেন এখনো শিশিরের জল। না হলে শিশিরে ধুলোয় মাখামাখি পড়ে আছে পাতায়। বাইরে এমন এক ভাব , যেন সেসব বলার বাইরে  একেবারেই। সে সবের কি যে রূপ, কি যে ঘ্রাণ তার, তা যেন সেই জানে শুধু !
              ফসলের মাঠ শুরু হওয়ার আগে, খানিকটা যেন গা ঘেষে শুরুতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছুটা বাগান। তাতে ভাঁটফুল, আষ্টেল গাছ, পিপুল গাছও ছিল কয়েকটি। জামও দুয়েকটা। বাবলা। এইরকম আরো কত এলেবেলে গাছগাছালিদের সংসার ধর্ম চলছিল যেন এইটুকু জঙ্গলের মধ্যে। সামনের এই দিগন্তপ্রসারী ফসলের মাঠের খানিকটা মাঝখান দিয়ে কাঁচা পথটি যে কোথায় এঁকে বেঁকে চলে গেছে তা সে জানে না। সেখানে সকাল বেলার রোদের আলো অনেকটা যেন সোনা গলিয়ে ফেললে যে রংটা বেরিয়ে আসে ঠিক তেমনই রং ধরেছে পাকা ধান গাছের উপর পড়ে । তাতে যে কত প্রাণের স্পন্দনের আভাষ লেগে আছে, তা আর কেই বা চোখ মেলে চেয়ে দেখে। কোথাও কোথাও এমনই সে সব প্রাণের হাওয়া, রোদ, যা পুরোটা অনুভব না করেও, তার এমনই এক ঘোরে কৃষকরাও হয়তো, কতো না গভীর থেকে গভীরতর আশায় বুক বাঁধে আর রোজ রোজ চেয়ে চেয়ে দেখে.....! 
             যদিও সে সব সব আবেগের ভাষা, তাতে কত রকমের যে দোলা থাকে, তা কি তার পক্ষেও বলা সম্ভব  সব আজ, ঠিক ঠিক মতো? তবু কেন জানি না, খুব ভালো লাগছিল তার। মনে হচ্ছিল, এইসব ধানে ভরা মাঠের পাশে পাশে প্রতিদিন যেন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হই আবার। 
              যদি সত্যিই হওয়া যেত ! যদি আমি আর একবার এইভাবে দু'হাত নাড়িয়ে পথে পথে, মাঠে মাঠে, ঘুরে-ফিরে কাটিয়ে দিতে পারতাম জীবনের বাকি সময় টুকু, তাহলে কী ভালোই না লাগতো! যদি এখানের কোথাও, একটু ধান-মাঠের পাশের রাস্তায়, ঘাসে, প্রাণের মানুষজনের মুখের দিকে শুধু একঝলক চেয়ে থেকে সমস্তদিন পরে ঘরে ফিরে যে আনন্দ সেইটুকু নিয়ে যদি কাটিয়ে দেওয়া যেত, তাহলে কী ভালোই না হত !  এইসব ক্ষেতের পাশে ভাঁটফুল, আষ্ঠেল, পিপুল, জাম, জামরুল ,কাঁঠালের বনে, তাদের সকলের ছায়ায় ছায়ায় দাঁড়িয়ে থেকে দু'বেলার এই সূর্যের আলোর কাল অতিক্রম করতে পারতাম দু'চোখ বুঁজে থেকে মোহিত হয়ে, আহা, তাহলে এ জীবন যেন ধন্য হয়ে যেত! 
      কিন্তু সত্যিই কি সে আশ্রয় আছে কোথাও আর! কে দেবে তাকে একটুখানি সেই সাধারণ এলেবেলে শান্তির নিশ্চয়তাটুকু! অনিশচয়তাই বা কোথায়? ইচ্ছে করলেই কি সেসব ফিরে পাওয়া যায় কোথাও নতুন করে আবার?


        
                                                                   চলবে........


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। মুকেশ কুমার মাহাত

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। নাচনী শিল্পীদের আলোক-চিত্র ।। সন্দীপ কুমার