জওয়াহের হোসেনের একগুচ্ছ কবিতা
জওয়াহের হোসেনের একগুচ্ছ কবিতা
১.
আড়ষ্ঠতা
বন্ধ্যা-বৃষ্টিতে সেঁকে নিই সুরার আগুন
কতটা সিঁদুর-রাঙানো মুগ্ধতায় আক্রান্ত রাত্রিবাসে
কতটা বিষের দামে অঝোর জলে তোমার অভিসার
কতবার মনে রেখে ভাবি দ্বন্দ্ব ও ভয়!
কামনার আয়ুতে ঝুলে থাকে ত্রস্ত শয্যা
আরশে ঋণী হয়ে যায় প্রাপ্তির ফসিল
২.
কুয়াশাবিদ্যুৎ
কুয়াশায় যে-ঘোর জমে আছে দূর পথের আদলে
তা দিয়ে রচি ধাঁধার জগৎ
গন্তব্যে রাত্রিজাগা গুটিপোকাদের নির্জন খেলা
পুরো গ্রাম লুটিয়ে পড়েছে
বিদগ্ধ বিহারে—
জমি খুঁড়ে খুঁড়ে এঁকে নিচ্ছি অবসর
অনুভূতিহীন ভস্ম দিনকূলে
৩.
জলমথিত
জল বুনতে বুনতে দেখি সময়—
নিস্ফল এতটা উপহাসমুখর
আঁধার প্রহর, ধুলোবার্তায় ভরে আছে দীর্ঘ পথ
আমি এই ভ্রমণশূন্য যাত্রার নিকটে
ভীতু পথিকের ন্যায় খুব নিরুপায়
৪.
জলবিহার
বৃথাই লুটিয়ে পড়েছিলাম— তোমার স্নানসিক্ত শরীরে
যেন কোনও অবাধ্যেও ঘোরলাগা পরাস্ত প্রহর
মৃদু সাহসে কম্পসমুদ্দুরে জীবন উদ্বাস্তু করে একদিন
আমার বিরহ আবর্তে বহুকাল
ঘর বেঁধেছি বিলুপ্ত সমুদ্রে একা
৫.
শব
শব ও রক্ত পুড়ছে, আশ্লেষে ঘন কুয়াশাশূন্য
আর্দ্রশীত লাল শির বেয়ে সিক্ত বেদনা নিয়ে
পলাতক নির্জনতার অশ্রুপাশে দীর্ঘ দেবদারু গাছ
শাখাহীন শব্দহীন ফেলে গেছে কেউ
একাকী নীলহাওয়া
৬.
অতৃপ্তসন্ধ্যা
দেহভর্তি ঋতুমোহ, এই দেহ
ছুঁতে গেছে এক নেশাতুর তীব্র মাতাল
উষ্ণ বাহুবন্ধে লাল চোখ
অতিশয় দেহ ঘিরে থাকে ভীষণ আনমনা
বৃষ্টির উনুন ঘিরে থাকে নিদ্রাগ্রস্ত প্রলাপ
দীর্ঘ সফরে ভাসিয়ে দিচ্ছে অতৃপ্ত-সন্ধ্যা
আমি তার একমাত্র নটরাজ
ভাবছি সংগোপনে শস্যভরা পৃথিবীতে
ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে হেঁটে যাব
মুর্শিদার নৈকট্যে
৭.
মহীরুহ
কিছু ভ্রান্ত কল্পবিন্যাশ ক্রমশ বিস্তৃত
তন্দ্রার জলজ রাত্রিরা জানে
দাহ উবে গেছে কাল
আমাকে হ্রস্ব করে বহুরূপী জল
ফটিকস্বচ্ছ দূর মহীরুহরা
লবণের স্বাধ নিয়ে যাচ্ছে এই নগরে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন