তৈমুর খানের কবিতা
তৈমুর খানের কবিতা
১
আমার নষ্ট হরিণীকে
বাধ্য হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি তোমার দিকে
তুমি তেমন নারী নও, রসের কলসি রাখোনিকো ভরে
মাথায় তোমার ফোটে না রজনীগন্ধা
সমুদ্রের ঢেউ থেমে নেই বুকে
আমার নৌকা শুকনো খাতে পুষছি বারোমাস
বর্ষাবিহীন বালির মরু কেবল অবিশ্বাস
উষ্ণ হয়ে উঠছে ধুধু বুকে
শ্যামলিমা মৃত , অনুচ্ছ্বাস
কেমন করে তোমার হাতে রাখব এই হাত ?
স্পর্শগুলি বিদ্ধ করে কাচ
রক্ত ঝরে, রক্তে সাঁতার কাটে যন্ত্রণার মাছ
অন্ধকার তুমি এখন চাঁদনিবিহীন রাত
বাধ্য হয়ে তোমাকে দিই গানের স্বরলিপি
রত্নাকরের বুকে জমে বল্মীকের ঢিপি
২
যিশুজন্ম
মুঠো খুলে দেখাচ্ছি তোমাকে
আমার মুঠোয় তোমারই মাথার চুল
মসৃণ ভোর হয়ে আছে
একান্ত নিজস্ব ভোর
এই ভোরে কোনওদিন বিষপান করব না আমি
মাইল মাইল পথ হেঁটে যাব
হেঁটে হেঁটে যাব আশ্চর্য পাহাড়ের দিকে
আমারই প্রেমের ক্রুশকাঠে
আমাকেই বিদ্ধ করে রাখে
৩
গাছ
কে আর আড়ালে যেতে চায়!
সবাই একদিন নেমে আসে উঠোনে
সবাই একদিন দুই হাত তুলে
এই মাটি আলো বাতাসে গাছ হয়
গাছে ফুল ফোটে, ফল আসে
সমস্ত জীবন ধরে গাছ ঝড় সামলায় ।
৪
আমাদের সভ্যতা
বাসন মেজে নিচ্ছে কেউ কেউ
মৃদু ঢেউয়ের কম্পনে ভেসে যাচ্ছে ছায়া
সকালের রূপসী আলোর মুহূর্তেরা
রাঙা করে দিয়েছে তোমাকে আমাকে
আমি আজ শিকারে যাব না
আমি আজ তোমারই শিকার
একটা জীবন শুধু এই ঘাটে করে ওঠানামা
তারপর অনেক তারপর পৃথিবী আবার ঘুমিয়ে যায়
এ শরীরে কালকেতু জাগে
এ ইচ্ছা বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন হয়
ইতিহাস থেকে ইতিহাসে নগরনটিনীর কোল পায়
তুমি ছিলে, তুমি আছো, কেঁপে কেঁপে ওঠে কালঢেউ
প্রথম আগুনে হাত সেঁকে স্মৃতির গুহায়
আমাদের ঘুম ভেঙে গেলে এমনই সকাল ছিল
আর দুজনে বল্কল খুলে এগিয়ে গেছি চুম্বনের দিকে
দ্যাখো দ্যাখো অনেক চুম্বন আজ ছড়িয়ে পড়ে রোদে!
৫
ঐতিহাসিক
তোমার মুখ মনে পড়ে
খোলা চুল এখনও উড়ে আসে
তোমার ভেজা শরীরের ঘ্রাণ এখনও উন্মুখ করে
একটা নৈঃশাব্দ্যিক বাড়ির ভেতর
আমার ক্রিয়াগুলি শূন্যতা বিস্তার করে চলে
শুধুই স্মৃতির চাঁদের জ্যোৎস্নায় অন্ধকার কুড়িয়ে পাই
মাঝে মাঝে যদিও পৃত্থীরাজ চৌহান
তবুও ইতিহাস পাল্টে যায়,
ভারতবর্ষের ম্যাপে সংযুক্তাও কাঁপতে থাকে
যুদ্ধগুলি সব পরাজয়ের দিকে হাঁটে
নিঃশব্দেই আলো নিভে যায়
গীতবিতানের কাছে কিছুক্ষণ বসি এই অবেলায়
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন