চতুর্থ বর্ষ ।। চতুর্বিংশতি ওয়েব সংস্করণ ।। ২৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ০৮ এপ্রিল ২০২৪
বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই কোন পরিবারের বাচ্চার স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে ওঠার পর সেই বাচ্চার বাবা-মা গৌরবান্বিত হয়ে প্রতিবেশীদের কাছে নিজেদের বড়াই করে বেড়ান যে, বহু কষ্টে বহু যত্নে বহু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সন্তানের উন্নতি ঘটিয়েছেন তাঁরা। ঠিক সেভাবেই ভোটের মুখে নিজেদের বড়াই করে বেড়াচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। কোন বিশেষ অঞ্চলের জন্য কোনকিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেও সেই অঞ্চলের উন্নতি নিয়ে নিজেদের নাম-গান করছেন দিনের পর দিন। যেন তাঁদেরই বিশেষ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সেই অঞ্চলের উন্নতি সাধন সম্ভব হয়েছে।
আসল কথা বলতে গেলে, কোন উন্নয়নশীল দেশের বিশেষ কোন একটা পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের চারপাশের অঞ্চলগুলো, সে ভিন্ন রাজ্যের হোক বা নিজ রাজ্যের, অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে থাকলে মাঝখানে থাকা সেই পিছিয়ে পড়া অঞ্চলেরও স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংঘটিত হয়। এবং সেই উন্নয়ন সংঘটিত হয় সেখানকার অধিবাসীদের প্রচেষ্টাতেই। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা তখন সেই অঞ্চলের উন্নয়নকেও নিজেদের প্রচেষ্টার ফসল বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এবং বড়াই করতে থাকেন যে, তাঁদের আমলেই, তাঁদের আপ্রাণ প্রচেষ্টাতেই পিছিয়ে পড়া ওই অঞ্চলেরও উন্নয়ন সম্ভবপর হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই অঞ্চলের উন্নয়নে তাঁদের কোন ভূমিকাই থাকে না। তারপরও জনগণ তাঁদের সেই কথাকে গ্রহণ করেন। কারণ এইসব বিষয়গুলোকে জনগণ বুঝে উঠতে সক্ষম হবেন তেমন শিক্ষা প্রদান করার কোন কালেই কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না নেতা-নেত্রীরা। যাতে করে তিলকে তাল এবং তালকে তিল বলে চালিয়ে দিতে পারেন তাঁরা। জনগণকে বানিয়ে রাখতে পারেন স্বনিয়ন্ত্রিত ভোট প্রদান যন্ত্র হিসেবে।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
শিশির আজম / পার্বতী রায় / হাবিবুর রহমান এনার / রূপক চট্টোপাধ্যায় / দেবযানী ঘোষাল / নূপুর রায় রিনঝিন / শ্যামাপদ মাহাত বাঁশি / অঙ্কন রায় / তপন পাত্র / সুজন পণ্ডা
_____________________________________________
শিশির আজমের কবিতা
১.
ইভের আপেল
আপেলটা তো আমি খেতেই চেয়েছিলাম আমি ভাবলাম
ইভ যদি আমাকে অনুরোধ নাও করতো
তবু আমি আপেল খেতাম
হ্যা আমি দ্বিধান্বিত ছিলাম
শঙ্কা
অস্থিরতা
কিন্তু ইভ আমাকে কতটা ভালবাসে আমি জানতাম
আর বাগানে কত কত ফল
আর একটাই আপেলগাছ
হ্যা আমি চেয়েছিলাম
আপেল
নিজ হাতে গাছ থেকে পেড়ে ইভ আমাকে খেতে দিক
২.
রাত দুটোর খবর
কফি আমার পছন্দ।
আনা পাবলোভা গত রাত দুটোয় আমাকে
কফি খেতে দিয়েছেন-
উদয়শঙ্কর জানেন না!
অবাধ্যতা জড়ানো স্মৃতিভোর
পার্বতী রায়
একটি কথার মধ্যে ডুব দিচ্ছিল আর একটি কথা
কি চাইছিলাম ভাবতে গিয়ে একা হচ্ছিলাম খুব !
অবাধ্যতা জড়ানো স্মৃতিভোর
কোথাও কোনও হাওয়ার বিনোদন ছিল না
স্ববিরোধী মন্ত্রগুলো ঠায় বসে হাসছিল বারান্দায়
গোপন কোনও পকেট ছিল না জানলার
অসহ্য সহবাসেরা ডানা ঝাপটাচ্ছিল নদীর কল্পনায়
আর কোনও ক্লাসরুম নয়
আর কোনও সেমিনার নয়
চলো জলের কাচে তুলে রাখি সম্পূর্ণ তথ্য
বিদূষক চোখের পাতা এতদিনে ঘাম মুছে নিতে শিখে গেছে
পর্দার আড়ালে বন্দি হচ্ছে স্মৃতিরা
হাবিবুর রহমান এনারের কবিতা
১.
ফিকির
বড়ই যতনে রাখিও সখি...অমোঘ দু'টি নয়নেরই মণিতে...শত শোক দুঃখের অশ্রু গো সখি; দেবো না মাটিতে ঝরিতে!
উদানে মাদানে, মাঠে ময়দানে...খাইতে শুইতে...
করছি গো সখি তোমার নামের জিকির; দখিণা
বয়ারে পয়গাম দিবে...কেহ জানি করছে সখি... তোমারই ফিকির!
২.
পলাতক
সৌখিন
লালসার খপ্পরে পড়ে
হারিয়েছে
আহ্লাদী যাপনকাল
মৌসুমি বায়ু বিচারক
গন্ধ শুঁকে রায় দিলো
শালা
নিকৃষ্ট...পলাতক
৩.
মা
অচিন গাঁয়ের অচিন বায়ে,
আছিস ক্যামন বুজানরে?
ক্যামনরে তোর কাটছেরে দিন,
পলপল জানতে চায় বাজানে?
দুঃখে ভরা এই জীবন আমার,
ক্যাউ জানে না-
ক্যাউ বোঝে না;
ক্যাবল যে আমার মা জানে
৪.
পৌষ
আঘন গেলে সৌম্য পায়ে আহা আসে গো সখি হাউসের পৌষ মাস, জমিন ভরা পৌষালি ধানে
ভালোবেসে দেয় কুয়াশা-চুম্বন...নাচে কিষাণের
তনুমন...শুরু হয় মহানন্দে...পৌষপার্বণ!
এহেন পৌষ মাস গো সখি, এহেন পৌষ মাস—
এহেন পৌষ মাসে গো হইলো আমার আচানক সর্বনাশ!
চতুর্দোলা
রূপক চট্টোপাধ্যায়
১.
আগুন সাঁকো জয়িতা ম্যাডাম পেরিয়ে গেলেন।
উল্টো ঘড়ি, ডাইনে পরা। স্নিগ্ধ চিবুক,
চলনটি তাও ছন্নছাড়া! হাসির বোকেট
জয়িতা ম্যাডাম, পৃথিবীটা ঠিক গোল ছিল কি?
না হলে তো ফের দেখাই হতো
চায়ের দোকান, মাছের বাজার
ড্রয়িং ক্লাসে মেয়ের সাথে।
একটু দাঁড়ান
আগুন সাঁকো নিভিয়ে দিলে
শশ্মাণ কেমন শান্ত পুরুষ
একটিবার দেখেই যাবেন।
একটু দাঁড়ান কয়েকটা যুগ!
২.
দেহতত্ত্বের গান ছিঁড়ে
বেরিয়ে আসে আশ্চর্য দুপুর।
যার জলে বহমান বাউল কঙ্কাল কাঙালিনীর কাছে
দিয়ে এসেছে দোতারা বৈরাগ্য।
যার সিঁড়ি বাধা ঘাটে
মা'ঠাকরুন স্নান সেরে ভেজা চুলে
উঠে যেতেন সুবর্ণ মহলে, রূপে জ্বলত পারদ পুরুষ।
আর কয়েত বেলের গাছ ভয়ে ভয়ে কাঁপাতো আঙুল!
মা ঠাকরুনের জল ছাপে আঁকা হতো
নির্জনতা। মফস্বলি বর্ষার দাগে দগ্ধ দেওয়াল
এখনো তাঁর নোলক ভেবে চন্দ্রোদয় দেখো।
হাহাকারে বসে থাকে নদী ও বনান্তর!
৩.
আমাদের পরিচয় পত্র হারিয়ে গেছে।
শুধু চামড়ায় ঢাকা মাংস আর
মাংসের আদর জড়িত কিছু সম্পর্কে কার্বনকপি নিয়ে বেঁচে আছি।
বাজার যাচ্ছি। ট্রেন ধরছি। ফুটে উঠছি বসন্তের
শেয়ারে ও শাওয়ারে নব নব কলেবরে!
হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে সঙ্গম শেষে
নরক বাহ নদীর মতো নেতিয়ে পড়ছি
দারিদ্র্য সীমারেখার নীচে
একচিলতে উঠোনে।
৪.
জমাট বেঁধে আছি। গলন অভিমানে।
ডোমনা পাহাড়ের মতো জটিল
পাথুরে আলোচনায়
কাঁটা আর বৈকল্য নিয়ে।
স্বাদ ছিলো গলনাঙ্ক ছুঁইয়ে দিতে
কেউ কপালে তুলে ধরবে আধো চন্দ্রোদয়
দুই চোখে দেবে ধানদুব্বো পরমায়ু।
দুই ঠোঁট চুম্বন ক্ষত!
আর তার আবেশেই সব অভিমানের মোম খুলে
গলে যাবো
নদীর মতো উচ্ছল চিত্রপট
দুই পাশে স্মৃতি বিজড়িত নারী ও পুরুষ
পাখি হয়ে যাবে একে একে!
দেবযানী ঘোষালের কবিতা
১.
নতুন গোলাপ
নতুন গোলাপের পাপড়িগুলো আজ ঝরে গেল।
ঝরে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করছিলাম।
চেষ্টা করিনি গোলাপ কাঁটায় রক্তাক্ত হয়ে পূজি মনের অন্তরঙ্গকে।
শুধু ঝরে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করছিলাম।
দেখছিলাম সৌন্দর্য্য সৌরভ কীভাবে মাটিতে মিশে যায় একটা সময় পর।
আমার প্রিয় গোলাপের পাপড়িরা আজ ঝরে পড়লো ভিজে মাটিতে।
২.
অনাকাঙ্ক্ষিত আকাঙ্ক্ষা
তোমার ভয়ঙ্কর আকাঙ্খায় আজ আর শিহরিত হই না।
ভীত সন্ত্রস্ত হই।
মনে হয় আমি সেই একপেশে,
যার অবিরাম ক্ষত বিক্ষত করার প্রত্তুত্তরে এমন এক একটা শীতল আঘাত হানছো তুমি।
অপ্রাপ্তির বদলে আরও রক্তাক্ত হয় আমার সহজ সরল অতল।
তাই ছুঁতে চাই না আর অতীত শুভ্র পলাশী বসন্ত।
যে কৃষ্ণচুড়ার আবেশে উপহার দিতে চেয়েছিলাম এক মুঠো হলুদ পলাশ
তুমি তার অর্থ বোঝোনি।
আমার আমিত্বে বেশ আছি আমি।
বেখেয়ালী বসন্ত আজ নিরুপায়ী।
ফিরে পেতে চাই না আর কিশোরী ফাগুন।
পরিণত সাবধানী আমি দেখবো শুধুই দুরের রঙিনমুখর বসন্ত দিনের বেলা।
ফিরে পেতে চাইনা ভ্রান্ত বসন্তবেলা।
বড় ক্লান্ত আমি।
ভাতের ঘ্রাণ
নূপুর রায় রিনঝিন
প্রেমের কবিতা লেখে সবাই তো রোজ
ভাতের কবিতা আজ চলো করি খোঁজ।
খালি পেটে এক ঘটি ঢগঢগ গিলে!
বাসা বাঁধে প্রেম দেখি কোন্ খালবিলে?
দরজায় কড়া নাড়া দেখেনি অভাব
হেসেখেলে দিন পাড়ি আমুদে স্বভাব!
প্রেমের কবিতা তাই সহজ সরল
পাথরে ভাতের ঘ্রাণ কঠিন গরল।।
শ্যামাপদ মাহাতর (বাঁশি) কবিতা
১.
বতর
চৈত্র মাস পড়লো...
শাল সেগুনের গা থেকে খসে পড়ল পাতা।
শুখনা পালাপাতের আঁচে সিঝবে মহুলবেড়ার ধান
সিঝা শুখা জলমরা
ধাপের পর ধাপ
সবকিছুরই বতর আছে।
লিরনকেও কাজে লাগাতে হয় যৌবনের মতো।
জোগাড় করতে হয় কাঠঝুড়ি পাতপালা
বতরের কথা ভাবতে ভাবতে রাকাপের জঙ্গলে
পাতা কুড়াতে যায় মহুলবেড়ার বউ।
২.
খুরের ধুলো
হঠাৎ করে আঁধার হয়ে আসে
সমস্ত আকাশ
হিজুলি কাজুলি আমলাতোড়ায় কোনো তফাৎ নেই
একবার শূন্য মনে হলে
কোনো বাঁধনই বাঁধতে পারে না আর
ষাঁড় এসে যেভাবে ছত্রভঙ্গ করে দেয় গাইগরুর গোঠ
সেভাবেই
খুরের ধুলোয় উড়ে যায় সমস্ত ভালোবাসা ।
ভালোবাসাপুর
অঙ্কন রায়
আমাকে তোমার ক'রে
তোমাকে আমার
মিলেমিশে বানাবোই
যৌথ খামার।
সেখানে ফলবে ধান,
নাম 'ভালোবাসা'।
ঘরে ঘর নেবো জুড়ে,
এ দোঁহের আশা।
এমনি করেই সব
দেশে ও নগরে
প্রেম রডোডেনড্রন
মেশাবো টগরে।
সারা পৃথিবীর বুকে
দূর বহু দূর
গড়বো আমরা দেখো
'ভালোবাসাপুর'।।
পুঞ্চার লোকশ্রুতি
তপন পাত্র
"লোক" শব্দটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । এর অন্যতম বড়ো কারণ একশ্রেণীর মানুষের মেধায় ও মজ্জাতে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে উঠছে যে, লোকসাহিত্য বা লোকসংস্কৃতি, লোকজন ও লোকযান নিয়ে একটা কিছু করতে পারলে লোকসমাজের কী কল্যাণ হবে সে কথা বড় নয়, কিন্তু কর্তা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠলে উঠতেও পারেন। তাই কতকিছু শব্দের পূর্বে "লোক" জুড়ে দিয়ে কত শব্দবন্ধ যে দিনরাত তৈরি হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই । এমনিতেই "লোক" শব্দের সঙ্গে "আয়ত" শব্দটি যুক্ত করে "লোকায়ত" শব্দটি বহু পুরাতন কাল থেকেই চলে আসছে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন "লোকহিত" শীর্ষক প্রবন্ধ । সেখানে "লোক" বলতে তিনি কাদের বোঝাতে চেয়েছেন, প্রবন্ধ পাঠান্তে আমরা তা বুঝতে পেরেছি। অক্ষয় কুমার দত্তের "পল্লীগ্রামস্থ প্রজাদের দুরবস্থা বর্ণনা" পাঠ করে পাঠকের মনে হয় দুরবস্থার শিকার পল্লীগ্রামস্থ প্রজারাই বুঝি প্রকৃতপক্ষে "লোক", লোক সাধারণ । নানাভাবে আমাদের মনের মধ্যে একটি ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মোটামুটিভাবে সভ্যতার মূল স্রোত থেকে সুদূরে অবস্থিত, সুসভ্যতার আলোকবর্জিত নিরক্ষর কিন্তু সুসঙ্ঘবদ্ধ জীবনে বিশ্বাসী মানুষ গুলোই "লোক" । যারা ব্যষ্টি অপেক্ষা সমষ্টিতে বিশ্বাসী, যারা "আমি"র চেয়ে "আমরা" বলতে বেশি ভালোবাসেন, তারাই প্রকৃত পক্ষে "লোক" ।
আর "লোকায়ত" শব্দটি সময়ের সাথে সাথে তার অর্থ নানা পথে পরিবর্তিত করেছে । বিবর্তনের পথ ধরে শব্দটির অর্থ বিস্তার ঘটেছে এবং সংশ্লেষ বা রূপান্তরও ঘটেছে বলা যায় । আভিধানিক অর্থে "লোকায়ত" শব্দটির মানে "বেদবিরোধী চার্বাক মতাবলম্বী" বা "নাস্তিক"। প্রচলিত অর্থ বলে বেদ বর্জিত, চার্বাক শাস্ত্রানুসারী, অনাত্মবাদী বিষয়-ই হল লোকায়ত । কিন্তু প্রচলিত ও পুরাতন অর্থ বাদ দিয়ে এর বুৎপত্তিগত অর্থটিই আজকের দিনে বেশি বেশি করে গ্রহণীয় হয়ে উঠেছে । ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে এই শব্দটি সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসবদ্ধ । এর ব্যাসবাক্য ---"লোকে আয়ত"।আবার বলা যায় "লোকের মধ্যে বিস্তৃত" , "লোকের মধ্যে ব্যাপ্ত", "লোকের মধ্যে প্রসারিত", "লোকের মধ্যে প্রচারিত", "সাধারণ লোকের মধ্যে প্রচলিত"। জনসাধারণের অধীন, জাতি -ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিক এক বলে স্বীকৃত যেখানে, যা ধর্মনিরপেক্ষ; তাই-ই লোকায়ত । একালে তো লোকায়ত রাষ্ট্র, লোকায়ত সরকার, লোক আদালত ইত্যাদি প্রভৃতি শব্দগুলির অধিক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সব মিলিয়ে একথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে যে একেবারে সাধারণের মধ্যে প্রচলিত , সাধারণ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের , প্রয়োগ-অপ্রয়োগের বিষয়ই হলো "লোকায়ত"।
পশ্চিম বাংলার মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত, পশ্চিম সীমান্ত বঙ্গবাসীর মনচিত্রে সদা সর্বদা সতত অনুরণিত মানভূম তথা পুরুলিয়া জেলার একটি ব্লক বা থানা পুঞ্চা এলাকার লোকায়ত বিশ্বাস নিয়ে দু'চারটি কথা লিখতে গিয়ে এত বড় ভূমিকাকে অনেকেরই অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে , কিন্তু আমার মনে হয়, যে বিষয়টির ওপর আলোকপাত সেই বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা লিপিবদ্ধ করা সমীচীন।
পুঞ্চা থানার অন্তর্গত পাকবিড়রা এবং বুধপুর দুটি সর্বভারতীয় স্তরে ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান , লোকউৎসব ও লোকসংস্কৃতির লীলাক্ষেত্র রূপেও সবিশেষ পরিচিত । প্রত্নতাত্ত্বিক আলোচনাতেও এই দু'টি নাম বারবার উঠে আসে। এই দু'টি স্থানের মন্দির জৈন মন্দির নাকি ভৈরব থান ও শিবথান সে নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই । পাকবিড়রার আরেকটি বিশেষত্ব আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত মানভূমের ভাষা আন্দোলনের ইতিবৃত্তে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে । কিন্তু যে কাহিনী তুলে ধরতে চাই তা হোল, পাকবিড়রার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দু'টি প্রচলিত লোককাহিনী ,বা লোকশ্রুতি এবং বুধপুর মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পৃথক একটি লোককাহিনী বা লোকগল্পকথা বা লোকবিশ্বাস ।
সে অনেককাল আগের কথা, তখন পাকবিররা ভৈরবথান ঝোপ জঙ্গলে ভরা । সেখানেই থাকতেন বাবা ভৈরব এবং তার মাসীমা । ভক্তেরা মাঝে মাঝে ভৈরব ঠাকুর দেখতে আসতেন ।পূজা দিতে আসতেন । একদিন সকালবেলা কয়েকজন মহিলা ভক্ত এসে দেখলেন বাবা ভৈরব এর দু'পায় কাদা লেগে আছে । একেবারে ক্ষেতের কাদা। মাসীমাকে ভক্তরা জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা ভৈরবের পায়ে কাদা কেন? মাসীমা কোন উত্তর করলেন না । ভক্তদের মধ্যে একজন অন্যান্যদের বললেন, "তরা জানিস নাই ,বাবা ভৈরব বর্ষা পার হবার পর শরৎকালে প্রতিদিন ভোর বেলায় ধান ক্ষেতের আ'ড়ে আ'ড়ে ঘুরে বেড়ান যদি দেখেন কারো ক্ষেতের জল আ'ড়ের কলে ভুলুক দিয়ে নিচের খেতে না'মে যা'ছে, তাহলে নিজেই পা টিপে টিপে সেই ভুলুক বন্দ করেন । তারপর সকালের আলো ফোটার আগেই তিনি নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন । সে কারণেই তার পায়ে কাদা লেগে থাকে ।"কিছুদিন আগেও এলাকাবাসীর মধ্যে যাঁরা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছিলেন তাঁরা গল্পটি জোর বিশ্বাসের সঙ্গে প্রচার করতেন।
আর একটি গল্প হল ---তখন কাঠের উনুনে মুড়ি ভাজার চাল উলানোর জন্য মাটির বড়ো কড়াই চাপিয়ে ভৈরবের মাসী কাঠের চললাড়া চাটু দিয়ে চাল লাড়ছেন । তার পর মাটির খলাতে মুড়ি ভাজাবেন । সে দিন ছিল ছাতা পরব । চাকলতোড়ের ছাতা পরব । মানভূমে ছাতা পরব অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব । হঠাৎ বাবা ভৈরব ইচ্ছে হলো আমি ছাতা পরব দেখতে যাব । রাজা কীভাবে ঘোড়ায় চেপে ছাতা তুলতে যান সেই দৃশ্য আমাকে দেখতে হবে । কিন্তু বাবা ভৈরবকে নেহাত বালক কল্পনা করে মাসীমা অনুমতি দিলেন না । তখন বাবা ভৈরব বললেন, আমাকে তো যেতে নিষেধ করছো, তুমি দ্যাখো আমার কীর্তি, আমি এখান থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চাকোলতোড়ের ছাতা উঠানো দেখব । এই বলামাত্র বাবা ভৈরব তর তর করে লম্বা হতে শুরু করলেন । বিপদ বুঝে অতি দ্রুত মাসী সেই গরম চালভর্তি কড়াটা ভৈরবের মাথায় চাপিয়ে দিলেন । তখন ভৈরব আর লম্বা হতে পারলেন না এবং সে কারণেই ভৈরবের মাথায় একটা চেপ্টা দাগ আছে ।
বুধপুর এর বুদ্ধেশ্বর প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধেশ্বর কি না বলা মুশকিল। হয়তো জৈন মূর্তি স্থাপনের জন্য জৈনরাএকটি চৌকো আকৃতির প্রস্তুর এনেছিলেন । পাথরটি খোদাই করে মহাবীরের মূর্তি স্থাপন হত পারতো । কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক লড়াই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মহাবীর রূপান্তরিত হলেন মহাদেবে । এগুলি মানভূম এলাকার প্রস্তর নয়। অন্য কোনো দূর-দূরান্ত থেকে কংসাবতীর জলপথে যে প্রস্তরগুলি আনা হয়েছিল তা দিয়েই বানানো হয়েছে মন্দির । চতুর্দিকে ছড়ানো-ছিটানো ছিল অনেকগুলি বিভিন্ন ধরনের মূর্তি, গইরা ,হাঁড়ি এবং কুমোরদের চাকার আকৃতির চাকা । তখন এই এলাকা ছিল জঙ্গলে ভর্তি । এক রাতের মধ্যেই নাকি বুধপুর সুন্দরভাবে বৃন্দাবন হয়ে উঠছিল । কিন্তু হঠাৎ কাজ শেষ হতে না হতেই ভোরবেলার কিছুটা আগেই সেদিন একটি কুঁখড়িষাঁড়া কুক্ কুক্ কুক্ কুকুক্কুক্ করে ডেকে ওঠে। ফলে আর বৃন্দাবন গড়ে উঠলো না । ধীরে ধীরে জায়গাটি ঊষর মরুভূমিতে পরিণত হল । এই গল্পকথা শুধু বুধপুরে নয় পশ্চিম সীমান্ত বাংলা এবং রাঢ় অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে যতো প্রাচীন দেব দেবতার মন্দির আছে , তার অনেকগুলো দেবস্থানকে ঘিরেই এজাতীয় গল্পগাথা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে । তবে একথা সত্য যে সময়ের সাথে সাথে আজ বুধপুরের বুদ্ধেশ্বরের মন্দির মরুভূমিতে পরিনত হয়ে গেছে । সেখানে যেভাবে মন্দির কে কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে আবৃত করা হয়েছে, তাতে আর অন্তত এই জাতীয় কোন গল্পকথা মানানসই বলে মনে হবে না । লোকবিশ্বাস যাই থাকুক , বর্তমানে বুধপুরের বিরাট সেই পুরাতন কৌলিন্য আর নেই । যে পুরাতন প্রস্তরগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারত , সেগুলি সময়ের সাথে সাথে এলাকায় কিছু কিছু দুষ্টু ব্যক্তির ঘর ও প্রাচীর নির্মাণের বনেদের ভিতরে ঢুকে গেছে । কোন কোন প্রস্তর আবার প্রাচীর নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এই সমস্ত লোকবিশ্বাস অবিশ্বাসের গাঢ় ও গূঢ় কৃষ্ণ অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে । কে করবে সৎ গবেষণা, রক্ষণাবেক্ষণ ? সরকার বাহাদুর ? সময় কোথা সময় নষ্ট করার !!!
নির্মল হালদারকে লেখা সুজন পন্ডার একটি চিঠি।
প্রেমের প্রতি আচ্ছন্নতা...
সুন্দর একটি শব্দবন্ধ। এই আচ্ছন্নতা যদি বাঁচিয়ে রাখে অসুবিধা কি?
আমাদের সবচেয়ে বড় দোষ হচ্ছে, আমরা সব বিষয়েই বড্ড বেশি বিচার করতে বসে যাই... রায় দানের প্রবনতা আমাদের একটু বেশিই যেন।
আমার খুব সীমিত অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি দাদা, এক জীবনে যদি অর্জন কিছু করতে হয় তবে তা মানুষ হোক...
ভালো মন্দ জটিলতা সারল্য সব মিলিয়ে এক একটি মানুষ...
আসলে কিন্তু প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র... সবার চাহিদা এক নয়... সবার গুণ গুলি ও একরকম নয়...।
তার মানে এই নয় যে যার সাথে আমার সুর মেলে না সে গায়ক নয়...।
মানুষ তো শারীরিক ভাবে খুবই দুর্বল একটি প্রাণী... বুদ্ধির দিক দিয়েও এখনো সম্পূর্ন বিকাশের চেয়ে ঢের দুরে আমরা দাঁড়িয়ে... কাজেই নিজের অসহায়তাকে ঢেকে রাখতে... নিজের অক্ষমতাকে লুকিয়ে রাখতে মানুষ বাধ্য হয়েছে গতানুগতিক রাস্তায় হাঁটতে। অচেনা অজানা জিনিসে রোমাঞ্চ যেমন আছে, তার ঝুঁকিও সেইরকম বেশি... বেশিরভাগ মানুষ তাই স্বাভাবিক ভাবেই গতানুগতিক। তাদের দোষ দেওয়াও যায় না... তবে উপেক্ষা করাই যায়।
ছাঁচ ভেঙে ফেলা জীবন আপনার নয় বলছেন?? কে জানে...
আমি তো আর কজন দশটা পাঁচটার চাকরি করে অবসর নেওয়া... সংসারের চাপে নুয়ে পড়া বৃদ্ধের সাথে আপনার মিল পাই না... আবার যারা একেবারে
সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে... এক্কেবারে সাধকের পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার দাবি করে এক মেকি দূরত্বের আড়ালে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে গেছেন সেই সারিতেও আপনাকে দেখি না...
ছাঁচ কোনটা আমি জানি না। ছাঁচে পড়লে ভালো আবার না পড়লেই বিরাট বুদ্ধিজীবী তাও মনে করিনা।
আগেও লিখেছি আবার বলি আগে থেকে ঠিক করে রাখা কোনো ডিজাইনে মানুষ গড়ে ওঠে না... খুব ভালো খুব খারাপ কিছু হয় না। সম্পূর্ণ ব্যাপারটি আপেক্ষিক।
বাঁধা রুটিনের বাইরে গেলে বিস্তর লোক গেল গেল বলে চিৎকার করবে... ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করবে...
আমি বলি আপত্তি কি? করুক না হয়। হতেও পারে আমি ভুল। ওরা প্রমাণ করে দিতেও পারে। আমিই যে সবজান্তা ইশ্বর তাও তো নয়... আমার আজকের করা একটি কাজ ভুল প্রমাণ হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আজকের আমার প্রচেষ্টা টুকু তো মিথ্যে নয়।
সময়ের অক্লান্ত প্রবহমানতার কাছে, মানুষ তো খুব ক্ষনস্থায়ী। আমাদের এক জীবনে দেখা বহু দৃশ্য, অর্জন করা বহু অভিজ্ঞতা একদিন এক নিমেষে ভুল প্রমাণিত হতে পারে... ভাবুন রোজ আমরা দেখছি সূর্য পূর্ব আকাশে উঠছে, পশ্চিমে ডুবে যাচ্ছে... অথচ স্কুলের শিশু অবধি জানে আমাদের এই দেখায় এবং সত্য জানার মধ্যে কি বিরাট একটা ফারাক... তাহলে শুধু শুধু আমার কথাই শেষ কথা এই অহং কেন? আবার একই সাথে সত্যি জানার পরও আমরা তো ভোরের ভালোলাগা অথবা সন্ধের বিষন্ন হাওয়াকে অস্বীকার করতে পারছি না।
প্রকৃতি যেখানে আমাদের প্রতিদিন এই সহাবস্থান দেখাচ্ছে সেখানে আমাদের গোঁ ধরে থাকলে চলবে কেন?
আমি বলছি আপনি যে আচ্ছন্নতার কথা বলছেন তাতে লোকের সমর্থন না থাকতেই পারে... আপনি যদি সর্বত ভাবে তাতে ডুবে থাকেন, তবে সেই ডুব তো মিথ্যে নয়... এই ডুব ক্ষতি করবে নাকি বৃদ্ধি করবে তা তো পরের কথা। ছোট্ট জীবনে পরের কথা ভেবে সময় নষ্ট করতে নেই... মুহুর্তে বেঁচে থাকার সুখ বেশি।
আসলে নিজের সুখ দুঃখ বিশেষত যন্ত্রণা গুলি সবাইকে দেখাতে নেই। মানুষ হিংস্রতম প্রাণী... ওই ক্ষত কুরে কুরে উন্মুক্ত করে দিয়ে জান্তব আনন্দ পায়...
সবাই ক্ষততে হাত বোলায় না... কেউ কেউ ওই একটু সুযোগেই নখ দিয়ে দেখতে চায় কষ্ট কতোটা গভীর... ক্ষততে কতোটা নরম মাংস.....
আমরা সবাই তো কোনো না কোনো আচ্ছন্নতায় বাঁচি... মোহতে বাঁচি।
কেউ প্রেম বা সম্পর্কের মোহে, কেউ অর্থ অথবা ক্ষমতার কেউ আরো কিছুর... সবাই নিজের ভালো লাগা আর সমস্যা গুলি নিয়ে বেঁচে থাকে...
এই যে আমার ভালো লাগা গুলি, আমার পছন্দ গুলি... এই যে অনুভূতি এটা তো একান্ত আমার। আমার সম্পূর্ন স্বাধীনতা আছে সেই অনুভূতির আবেগকে প্রকাশ করার... কিন্তু একই সাথে ভুলে যাওয়া যাবে না... প্রিয় এবং শ্রেষ্ঠ দুটি এক জিনিস নয়। প্রিয় বা পছন্দকে শ্রেষ্ঠত্ব আরোপ করতে গেলে তা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে। পছন্দ ব্যক্তিগত... শ্রেষ্ঠত্ব সামষ্টিক শিরোপা। একইভাবে অপছন্দও নিছকই ব্যক্তিগত.... ব্যাক্তিগত ভাবে আমার পছন্দ হয়নি মানেই তার অর্থ এই নয় যে সেটি খারাপ।
ঠিক ভুল অথবা ভালো মন্দ শুধু এটুকু দিয়ে বিচার তো হয় না। পৃথিবী সাদাকালো বা ধুসর নয়... এখানে অনেক রং...
______________________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া
______________________________________________
১/ দারুণ সম্পাদকীয়। সুজন পণ্ডা সহ বেশ কয়েকটি কবিতা একবারে পড়ে ফেললাম। অপূর্ব।
---------কবি ডরোথী দাশ বিশ্বাস
২/ সম্পাদকীয়টা পড়লাম । একেবারে উপেক্ষিত জনজাতির মনের কথা। বাকিগুলো অবসর করে পড়বো।
----------কবি শশধর মাহাত
৩/ শ্যামাপদ মাহাতোর কবিতা গুলি অপূর্ব।
-----------কবি কাকলী দরিপা
৪/ কবিতাগুলো পড়লাম। বেশ ভাল।
-----------কবি নূপুর রায়
৫/ বিষয়বস্তু এবং ছবি, দুই-ই চমৎকার।
-----------কবি সুনৃতা রায়চৌধুরী
৬/ মাছের আলোক চিত্র সিরিজে ছবিগুলো ভীষণ আকৃষ্ট করেছে। সেই প্রসঙ্গে শিল্পীর ভাবনাকে সাধুবাদ। লেখাগুলিও যথেষ্ট ভালো লেগেছে।
ভালোবাসা জানাই।
----------কবি শ্যামাপদ মাহাত বাঁশি
______________________________________________
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ : কল্পোত্তম ও তপন পাত্র
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
খুব ভালো লাগলো লেখাগুলো পড়ে।
উত্তরমুছুন