ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। মনি দাস
এক মেদিনীর দুই পারে
‘কিরে তোর হাতের খাঁড়া কই?’
-গায়ের রং কালো, তাই, এই বলে খেপাতো সবাই রাস্তাঘাটে। যখন তিনি ঘরে ফিরতেন পড়ন্ত দুপুরে ১৫-১৬ টা গরুকে গুটিয়ে। স্কুলের ফাঁকে বা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এটাই ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। আরো ছিল, যেমন চাষের কাজে বাবাকে সাহায্য করা, রান্নার কাজে মাকে সাহায্য করা, ধান ঝাড়া, গোলা গোছানো আর ছোট ভাইকে সামলানো। এসবের মাঝে পড়াশোনা সত্যিই যে কতটুকু হতো আর কতটুকুই বা মাথায় ঢুকতো কে জানে! আর এটাও কেউ জানতেন না যে, বাড়িতে কেউ এলে বা কোথাও কারুর বাড়িতে যাওয়ার হলে কেন লুকিয়ে পড়তেন তিনি ঘরের কোণে! সেটা লজ্জা ছিল, না ভয়, নাকি কুন্ঠা? হয়তো বা সবকিছুই একসঙ্গে।
১৪ বছর পর আজও হয়তো পাল্টায়নি কিছুই, প্রেক্ষাপট আর অনুষঙ্গ ছাড়া। তবে এখন নতুন কোন জায়গা এক্সপ্লোর করতে বা কারোর সাথে যেচে আলাপ করতে কোন লজ্জা হয় না তাঁর। তাই আজ আর কেউ তাঁর হাতের খাঁড়ার খোঁজ করে না। বরং জিজ্ঞেস করে ‘কিরে মনি তোর ক্যামেরা কোথায়? দিবি একটা ছবি তুলে!’
দিল্লিতে চলে যাওয়ার পর জীবনের ঝড় জল রোদে পুড়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তাঁর সেই কালো রং। তাই রং-এর দুঃখ আজ আর ততটা নেই যতটা আছে একটা বড়সড়ো প্রফেশনাল-ক্যামেরা হাতে না পাওয়ার দুঃখ। ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে শিক্ষার গাড়িও এসে পৌঁছেছে ব্যাচেলর ইন ফাইন আর্ট অবধি। আর এই চড়াই উৎরাই শুধুমাত্র পড়াশুনাতেই নয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই নানা ঘাত প্রতিঘাত এসেছে সময়ের হাত ধরে। এসেছে সুখ দুঃখ ভালবাসা আর ধোঁকাও। কিছু নিজের ভুল কিছু অন্যের আর কখনও বা নিতান্তই ভুল বোঝাবুঝির। তবে এসবের মধ্যেও বিশেষ প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এখনও তিনি পিছুপ নন। তাই, পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মেদিনীপুরেই খুলে ফেলেছেন একটি এনজিও। ভয়, লজ্জা, কুন্ঠা কাটিয়ে নিজেই আজ হয়ে উঠেছেন অনেকের ভরসা।
কেবল একটা জিনিসই বদলাইনি, রেগে ওঠার স্বভাব। যে স্বভাবের কারণেই বড় কিছু করে দেখিয়ে সবাইকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন একদিন। ছেড়েছিলেন অমরপুর গ্রাম। সেই আগুনের শিখা আজও তিনি জ্বালিয়ে রেখেছেন মনের ভেতরে। ভালো কিছু করার জন্য। ভালো কিছু ছবি তোলার জন্য। সৃষ্টিশীলতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে তোলার জন্য। তাই, কোথায় হারিয়ে যান সেই রাখাল বালিকা যখন ক্যামেরা পাশের সিটে রেখে চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট দেন রূপালী রঙের আই টেনে। পূর্ব মেদিনীপুরের ‘মাইঝি’ যখন হয়ে ওঠেন দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের মনি দাস? হয়ে ওঠেন গ্ৰাম বাংলার এক উদাহরণ?
খুব সুন্দর ছবিগুলো
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর ছবি
উত্তরমুছুনসংগ্রাম করে এগিয়ে চলার নামই জীবন..তোমার হাতের একটু ছোঁয়ায় জীবনের রং হয়ে উঠুক রঙ্গীন.. রইল শুভ কামনা..
উত্তরমুছুন