পঞ্চম বর্ষ ।। প্রথম ওয়েব সংস্করণ ।। ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৬ মে ২০২৪
এমন একটা দোলাচলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছি যেখানে সত্য মিথ্যার বিচার করা কঠিন হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অহরহ মিথ্যাকেই সত্য হিসেবে প্রতিস্থাপন করে চলেছে জনসমক্ষে। তারা ভেবেই নিয়েছে, মানুষ সম্পূর্ণরূপে মুর্খ, ব্যক্তিত্বহীন। যেভাবে বোঝানো হবে, সেভাবেই বুঝবে। যেভাবে চালানো হবে সেভাবেই চলবে। হাতে অবস্থানরত মাটির পুতুলের মতো হাতের ইশারায় নাচবে সবসময়। কিন্তু একটা বিষয় মনে নেই তাদের, মানুষ বা জনগণ হাঁসের ঠোঁটের মতো। একসঙ্গে জল ও খাদ্যকে ঠোঁটে পুরে খাদ্যকে আলাদা করে জলকে অনায়াসে ফেলে দেয়। সেই ক্ষমতা তাদের আছে। এবং ওই ক্ষমতা আছে বলেই ভারতবর্ষে বহু সময় বহু বহিরাগত জাতি রাজত্ব করতে এলেও শেষ পর্যন্ত এখানকার মানুষ স্বাধীন। এবং এই স্বাধীনতা তাদের রক্তের কণায় কণায় রয়েছে। বর্তমানের সমস্ত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আবার এখানকার মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াবে এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
পদযাত্রা শুরুও হয়েছে। একে একে তেহারে জায়গা হচ্ছে নাটের গুরুদের। বাংলা তথা দেশকে যারা চুরির পিঠস্থান বলে ভাবার দুঃসাহস দেখিয়েছিল। তাদের পায়ের ধুলি পড়ছে না আর বাংলার রাস্তায় রাস্তায়। যে রাস্তায় প্রতিদিন যাতায়াত করে বাংলার পবিত্র জনগণ। ধুলি পড়ে সেই জনগণের পায়ের।
বাংলাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার বা তাকে কলোনি বানিয়ে রাখার যে প্রয়াস তা দীর্ঘ মেয়াদী। কিন্তু সেই প্রয়াসের সফল হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। জনগণ কিছুতেই তা হতে দেবে না। সফলতার শেষ পর্যায়ে এসে ভেস্তে দেবে সমস্ত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হলো এই সংস্করণ
______________________________________________
অনিমেষ মণ্ডল / পঙ্কজ মান্না / সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় / দেবযানী ঘোষাল / শর্বরী চৌধুরী / সুজন পণ্ডা / অনিমেষ মাহাত / পার্থসারথি মহাপাত্র / মুকেশ দাস / অনন্যা আচার্য /
_____________________________________________
অনিমেষ মণ্ডলের কবিতা
১. ফেরা
একটা পথ চলে যাচ্ছে
অপার শূন্যের দিকে
আমার হয়ত আর ফেরা হবে না
তোমার কাছে
খুব পুরাতন কোনও বাংলা সিনেমার মতো
একবার দমকা হাওয়ায় নিভে যাবে প্রদীপ
এই দৃশ্য আবহমানের এক আয়োজন ছাড়া
অন্য কোনো বিকল্প নয়
আসলে সব পথ অনন্তের দিকে যায়
আমরা মূর্খ তাই বুঝতে পারি না
কেবলই ফেরার কথা ভাবতে থাকি
কিন্তু কেউ ফিরে আসতে পারি না আর...
২. প্রদীপ
নৈশপ্রহরী হয়ে জেগে আছে রাত
দূরে দূরে নক্ষত্রের হাতছানি
আলো এসে শেষ দেখা দিয়ে যাচ্ছে
অন্য গোলার্ধের দিনান্তে
জোনাকিরা এসময় দূরে দূরে
নিভু নিভু প্রদীপের মতো...
অন্তরীক্ষ থেকে বহুদূরে
মাটির উঠোনে যে প্রদীপে
গার্হস্থ্যের চিরকালীন সুখদুঃখ
বারোমাস জ্বলে যায়
তুমি তার কাছে একবার
নতজানু হয়ে বসো সন্ধ্যাতারা...
৩. চলাচল
সমুদ্রবাতাসে কত বিরহের গন্ধ লেগে আছে
কেউ কি ভেবেছি কখনও
কতবার কাছে এসে ফিরে ফিরে যায় ঢেউ
তবু যার কথা ছিল
উতল হাওয়ার কাছে
তাকে আর ঝাউবনে কোথাও দেখি না
দিশাহীন নাবিকেরা তবুও তো
ফিরে আসে
বাতিস্তম্ভ আলো করে রাখে চতুর্দিক
আসলে যে ঢেউ এসে ছিন্ন করে
সম্পর্কের স্বরলিপি
সেই ঢেউ ভালোবাসা জানে না
জানে শুধু অবিরাম চলাচল
সমুজ্জ্বল সমুদ্রের এ বড় কঠিন নিয়ম...
পঙ্কজ মান্নার কবিতা
১.
ধাঁধা
'কে আমি' জানি না কিছু
আর 'তুমি কে' তা বুঝতে বুঝতে
পেলব মাসের পরে প্রখর বৈশাখ
ফিরে কেন আসো তুমি !
আমারি বা কেন কাছে যাওয়া !
এসবই ভাবতে ভাবতে
ঘাসের সবুজ খেলো রুদ্র বৈশাখ
মনে হয় বাঁধে কেউ , মনে হয় রাঁধে কেউ কষে...
কে রাঁধে এমন করে ,কে বা বাঁধে ! ভাবি তাই বসে
২.
আমি ঠেলে যাই
জীবন-গাড়িতে প্রিয় জীবনে বসাই...
চালাতে জানে না সে যে,
চেতনায় রামধনু অন্ধ টানেল শেষে বোধলোকে
আলো-রোশনাই …
আমি তো এক-আনি লোক,
চোখ বুজে রঙচটা জীবনের মধু চেটে যাই
দাসখতে এই-ই থাকে ...
জীবনের গাড়ি ঠেলি তাই
খুবই আস্তে চলে ...কভু ঝমঝম...
জীবনে চড়াই বেশি, উৎরাই কম
ঠেলছি সকাল থেকে...এখন প্রদোষ
তবুও জীবন-প্রভু ধরিতেছে দোষ
আমি তো অভাগা লোক,
জীবনের প্রেমে যেন মাতাল জগাই ...
একাই জীবনগাড়ি আমি ঠেলে যাই
বিষন্ন বিদায়
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়
শুকনো পাতার বিষাদভূমি থেকে
যে সামান্য আলো উঠে আসে
তাকে মায়া ভেবে, মোহ ভেবে
তুমিও তো হেঁটে গিয়েছ কতবার এই জলতল
তোমাকে এত একা ভেবে
পাথরের আড়াল থেকে যতবার ডেকেছে তক্ষক
আমি তার অন্তরীক্ষ থেকে
কুয়াশার মতো মাখতে চেয়েছি দূরের কুয়াশা
কখনো বোঝনি তুমি
অন্ধ বালকের গান, মন্থর সাপেদের পায়ে
ধুলোটুকু ফেলে রেখে
শীত পেরিয়ে যাচ্ছে শুকনো বাদামের ক্ষেত।
নদীর কথা
দেবযানী ঘোষাল
কখনো তো চাইনি আমি কেউ ছেড়ে যাক।
কখনো তো চাইনি থাকার নামে করুক করুণা।
তবু বয়ে যায় নদী শুকনো ফুলের রাশি নিয়ে।
বয়ে যায় শিকড় উপড়ানো কচুড়িপানা কে সাথে নিয়ে।
মোহনার ঠিকানা জানে না সে নদী।
তবু তো বইতে হবে এঁকে বেঁকে
নুড়ি পাথর টপকে।
কত বৃষ্টি আসে তাঁকে ভেজাতে।
ভয়ে কাঁপে হৃদয় বজ্রপাতে অমাবশ্যার রাতে।
জোছনা মাখা রাতে আনন্দে উচ্ছ্বল হয়।
অনবরত ছলাৎ ছলাৎ ছোট ছোট ঢেউ নদী কূলকে মুগ্ধ করে।
তবু নদী বয়ে চলে খরশ্রোতা হয়ে।
আশা মোহনায় হবে মিলন।
সাগরের প্রকান্ড ঢেউ শান্ত হবে শান্ত নদীর বুকে।
মূর্তি
শর্বরী চৌধুরী
নিজের মূর্তি গড়তে চেয়েছিলাম।
গেলাম নদীর ধারে মাটির খোঁজে।
মাটি দিয়ে মূর্তি গড়তে শুরু করলাম।
গড়া শেষ হলে দেখি মূর্তির ঠোঁটের কোণে লেগে আছে তাচ্ছিল্যের হাসি, যেন সে বিদ্রুপ করছে আমার পার্থিব অস্তিত্বকে !
সুজন পণ্ডার কবিতা
রাত্রি বিষয়ে
১.
রাত্রি বিষয়ক স্তব্ধতায়-
চিলছাতে তোমার বসে থাকার ছবি দেখি।
জ্যোৎস্না থইথই চরাচর
বায়ূ হীন।
নিঃশব্দ।
রাত্রি বিষয়ক স্তব্ধতায়
আমাদের - তোমার আর আমার
নিজস্ব কিছু তারামণ্ডল ছিল বহুকাল।
রাত্রি বিষয়ক স্তব্ধতায়
তোমার হাত
কাঁচের চুড়িতে জোনাকি জীবন।
রাত্রি বিষয়ক স্তব্ধতায়
চিলছাত--
তুমি বসে আছো একাই।
২.
খুব ভোরে ওঠা হয় না
এখন আমি সন্ধ্যার কাছে দাঁড়াই
একটুক্ষণ... কিছুক্ষন।
পাখিরা ফিরে যেতে যেতে
আলোরা ফিরে যেতে যেতে
আর ডাউন লোকাল ফিরে যেতে যেতে
আমাকে দেখে।
আমি সন্ধ্যার মুখোমুখি দাঁড়াই
একটুক্ষণ... কিছুক্ষণ।
দুজনেই ফিরে যেতে চাই
অথচ তারপর
দুজনেই আঁধারে মিশে যাই।
স্বর্গের রথ
অনিমেষ মাহাত
দিন বয়ে চলেছে জলের মতো
আমরা বসে আছি নদীর তীরে
নাহ!কোনো কোকিল ডেকে ওঠেনি
নিজের শবের জ্বলন্ত চিতা থেকে ওঠা
ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছি
স্বর্গের পথ খুঁজে বেড়াচ্ছি আমরা
দিন ফেনিয়ে উঠছে থুতুর মতো
সকলে তাকিয়ে আছি ঘড়ির দিকে
নেমে আসছে রথ
ও অভাগীর মা চেয়ে দেখ
আর বেশি দূরে নয়
দিন বয়ে চলেছে ঘড়ির মতো
মারাংবুরুর থানে ঘুমিয়ে পড়ছে ঢোল ধমসা
আমরা তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে
স্বর্গের রথ নেমে এল বলে
ও অভাগীর মা
শুয়ে পড়েছ নাকি?
পারানি
পার্থসারথি মহাপাত্র
আবহ সংগীতে দূর্যোগের পূর্বাভাস
বাসা বদলে ব্যস্ত পিঁপড়ের দল
কোনটা খুঁটো আর কোনটা খড়কুটো
বাদানুবাদ করতে করতে নষ্ট আবাদ
নাগরিকদের হাতে তুরুপের তাস
দরজায় শব্দ ঠক ঠক ঠক
খিড়কি খুলতেই দেখে
সরকার দাঁড়িয়ে করজোড়ে
—'এ দুঃসময়ে তুমি জনার্দন,
তুমিই পারাপার'।
সংযত ভালোবাসা
মুকেশ দাস
রূপ নই, এ তো রূপকার
নাম আছে তবুও সে নাম থাকে না আর,
দ্বার আছে তবুও, খোলা নেই দ্বার।
কুসুম কলি তুলি,
আছে জানি, চোখেও পড়ে ধরা,
তবুও প্রস্ফুটিত ফুল নাগালের বাইরে।
আমি বলি থাক না....
সে ফুল আরও দেখি
ক-দিন ধরে দু-নয়ন ভরে ।
বাঁশ বাগানের মাঝে,
সন্ধ্যের বেসাতির সন্ধান, খড়ের ছাতি,
পেতে চাই সেটি হাতের নাগালে,
কিন্তু, নিরাশ হয়ে হাত গুটোতে হয়
কেবল জ্বলন্ত খোঁচের ভয়ে ।
আমি বলি থাক না....,
সেটি দেখে আর একদিন না হয়
কিছু খেয়ে দিই কাটিয়ে।
তোমার সন্ধান পেয়েও আমি হাত গুটিয়ে
কেবল অর্থহীন হয়ে।
চক্রান্ত জানি না, নিন্দা নিতে জানি না,
জানিনা ভালোবাসাকে মিথ্যেভাষায় ভোলাতে।
জানি শুধু তাকে অমলিন ভালোবাসতে।
তাই বলি থাক না......,
মনের ভালোবাসা এভাবেই চলুক
হৃদয় মাঝে বাসতে বাসতে।
অতঃপর রূপকথারা
অনন্যা আচার্য
অতঃপর রূপকথারা পথ হারালো।
বসন্তের ভোর আমায় দিয়েছে শূন্যস্থান, সুখ-দুঃখ ও কিছু কবিতা। সেই কবিতারা আমার দীর্ঘকালের বন্ধু।
কবিতারাও তো পরস্পর পরস্পরের বন্ধু হতে পারে।
বসন্তের বন্ধু তো শরতও। মেঘের বন্ধু নীল রঙ।
পলাশের রঙের সাথে শরতের আকাশের কথোপকথন অথবা কবিতার সাথে ফুলের প্রেমালাপ। ফুলের সব ব্যথা আকাশ ছুঁতে পারে অথবা অন্ধকার । আমি জানি আমার সব লেখা পৌঁছায় তোর কাছে।
ফুলেদের কাছে, নদীর কাছে আর নিঃসঙ্গ মনের কাছে পাখির ডাকও কবিতা, সেই কবিতার কথা তুমিও জেনেছ অথবা খুঁজে চলেছ।
পলাশও খুঁজছে পলাশের রঙকে।
ভাঙা সময়ের খাঁজ থেকে উঁকি দিচ্ছে একখানা নদী। নদীর প্রেমিক বর্ষা। নদীর জল স্থির ও চঞ্চল। ঠিক যেন রাধিকার আঁচল।
একাকিনী রাধিকার অপেক্ষাও একটা রঙ অথবা অনেক কবিতা।
বর্ষা ভোলেনি রাধার অস্থিরতা।
আমার কিছু অবসর আছে।
বসন্তে আমার মনে পড়ে শরতের মেঘেদের দেখা অথবা বর্ষার জলের কথা।
অপেক্ষাও অধরা।
অপেক্ষার দুঃখই মাথুরের কবিতা।
______________________________________________
আগের সংস্করণের পাঠ প্রতিক্রিয়া
______________________________________________
১/ খুব ভালো হয়েছে দুটো বিভাগই।
----------কবি সোমেন মুখোপাধ্যায়
২/ খুব সুন্দর ছবিগুলো।
------------আলোকচিত্রী শুভাশিস গুহ নিয়োগী
৩/ অনেক ধন্যবাদ ভাই উত্তম।
তোমার শ্রম সার্থক হোক
-----------কবি ও প্রাবন্ধিক তপন পাত্র
৪/ আঠারোটি ছবিই অনবদ্য। সাথে শিল্পী পরিচিতি--- লেখার ভাষা ও বর্ণময় জীবনকথা--- রূপকথার মত লাগলো🙏🙏🙏
------------কবি ডরোথী দাশ বিশ্বাস
৫/ দারুণ সুন্দর সংখ্যা।
শ্যামাপদ মাহাত বাঁশির কবিতা আর তপন স্যারের গদ্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
------------কবি সুজন পণ্ডা
______________________________________________
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
অলঙ্করণ : কল্পোত্তম
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
'অরন্ধন'-এর বৈচিত্র্য ভাল লাগল; ধন্যবাদ, বন্ধু। @অশোক.
উত্তরমুছুন