শরীরই আসল গণিত

শরীরই আসল গণিত

বিশ্বজিৎ লায়েক


১.
ঋতুমতী শরীরে তোমার


তুমি জেনে গেছো আস্বাদের গোপনীয়
আমার অকস্মাৎ ভেসে যাওয়া
তোমার নৌকায়
দেখো আজ ঋতু ছুঁয়েছে তোমার শরীর
জল শুধু জল শরীরে সমুদ্র লবণ
তুমি স্পর্শ না দিলে শুধু রাতের ভেতর
মিশে যাবে হিম আর হিমোগ্লোবিন ভোর

ফাগুন ঋতু চুপচাপ শুয়ে আছে শরীরে তোমার
তুচ্ছ যুবক আমি 
হা ঈশ্বর কোলকাতা থেকে নিভে যাচ্ছে সুপ্ত প্রত্যাশা
ঋতুমতী তুমি এবার মেঘ পাঠাও
সমস্ত আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামুক
শূন্য এ শরীর ভিজিয়ে নেবো



২.
চুপচাপ শুয়ে আছে চিরহরিৎ অরণ্য


তুমি চেনাও অরণ্য, তুমি চেনাও জল
সঙ্গোপনে দীর্ঘ সরলরেখা, মৃদু বাস্প চাপ
আমাদের ছলাৎছল স্তব্ধ আয়োজন
তুমি কি ভাসাতে পারো গোপনে শরীর
                  তীব্র তীব্র জলোচ্ছ্বাস

তুমি শুধু কথোপকথন, কেঁপে ওঠা শৈত্যপ্রবাহ
নীরব বীজের অঙ্কুরণ
তুমি শুধু অরণ্যজীবন
গোপনীয় আকাঙ্খা বল্কল ছেড়ে তুলে আনছ
                          চিরহরিৎ জল



৩.
অরগ্যাজম শরীরে তোমার 


মেয়ানো মুড়ির মতো বিস্বাদ প্রেম এখনও লেগে আছে ঠোঁটে
এখনও লেগে আছে বিষণ্ণ আলো দোমড়ানো মানুষের মুখে
পেঁয়াজ শল্কের মতো রাত 
রসায়ন শেষ হলে ফিনফিনে রঙ নিয়ে খেলা করে 
                                         শুয়ে থাকা আলো                                          
ভালোবাসার আগে যে স্বপ্ন শুয়ে থাকে কোমরের নীচে
তারও নীচে নেমে এসে দেখো কে যেন ছড়িয়ে গেছে ভোরের আলো



৪.
বৃষ্টিতে ভেজার গণিত


যারা এখনও শেখেনি বৃষ্টিতে ভেজার গণিত
তাদের ঈশ্বরী মেনোপজ পেরিয়ে
                             নিস্তব্ধ শীতল
শরীরের জল ছাড়া প্রেম অনুভব করার পুরুষ নই আমি

প্রেম তো ছলনা মাত্র
শরীরই আসল গণিত

অতএব
মেজাজ ঠিকঠাক রাখতে শরীর জলে নৌকা ভাসাও
দ্যাখো
প্রেম তো ধারণা মাত্র
শরীরই আসল গণিত



৫.
ঋতুকাল


টিউশন যুবক আমি—নিজেকে উপুড় করি
বল্মীকের স্তুপে
সবিশেষ অ্যাই তো তোমার ঋতুকাল শুরু
অ্যাই তো সবে বর্ষা—আষাঢ় ঘন মেঘ
চিনে নাও স্বাদ অবিরাম বর্ষার
ঘুমের মধ্যে চেপে ধরো ঠোঁট
                     কানের লতি, চিবুক

টিউশন যুবক আমি—অবসর সময় শিখে নিচ্ছি 
                                       প্রেম



৬.
আত্মরতি


স্পর্শরেখার উপর ছড়িয়ে পড়ছে দেবীপক্ষের ভোর
ঘেন্না ফুটেছে তার ঠোঁটে 
শরীরের ঘাম মেখে সামনে দাঁড়ালো যে যুবক

আত্মরতি জানে তোমার আমার দেহখানি
                                  নতুন সকাল
‘মাধুরী অধরা’ রেখে পৃথিবী সমানতালে পাক খায়

তোমার ভালো থাকা মেঘ তীব্র জঞ্জাল
লণ্ডভণ্ড মহাশূন্য বলয়, শস্যখেত
বালিশের নীচে ফেলে আসা ঘুম, ভগ্ন-দেউল, আদর

মুখোমুখি বসাব এইসব দৃশ্যকথা
ভিজে সপসপে আত্মহননের রোদ
এই লেখা তোমাকে পাবে না, পাবে তক্ষক 



৭.
ফাগুন লেগেছে আড়ালে আবডালে


তুমি এসে জল খাও আমি ডুবি জলে
কোথাও কি কিছু নেই তলে কি অতলে।

অথচ হিসেব রাখো কোথায় কখন
উপহার কিনে রাখি আড়ালে গোপন।

মাথা ব্যথা খিদে নেই কেন দিন দিন
নিরালা নির্জনে আমি সান্ধ্য চাউমিন।

একা নই সঙ্গে ছিল নীল নীল দোষ
ঘুম ঘুম আড়ি আড়ি খুব আপশোষ।

এরপর তুমি এসে জল খাও বেশ
অনুযোগ অভিযোগ সব আজ শেষ।



৮.
সম্পর্ক


ক্ষতগুলো লেগে আছে শরীরে ও মনে
                            মন বলছে বৃষ্টি হবে
তুমি কি জান মনীষা আধখানা অগম্য উত্তাপে পুড়ে
সংসার আসলে না লেখা চিত্রকল্প

ব্যবহারিক লেনদেনের ভিতর ছড়িয়ে বসে থাকে যে ঘ্রাণ
যে ঘিলু, যে হাড়গোড়, যে স্তন, যে নিক্ষিপ্ত শর
ইচ্ছা করলেও আর ফিরিয়ে নিতে পারবে না
কতটুকু প্রেমে কতটুকু ঘৃণা ছিল
নটে গাছের মতো আমাদের ভূমিকা ছিল একদিন

যোগ বিয়োগের তলে তলে নটে গাছটি মুড়িয়ে গেছে কবে
                     কিন্তু গল্প ফুরোয়নি এখনও



৯.
খোয়াব


কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছি না
বৃত্তের ভেতর ঢুকে পড়ছে মেঘের জিরাফ
মুশকিল ও উদারতা
            লিকলিকে গোপন এই খোয়াব
                                 খাদের কিনারে

হে অন্ধকার সীমান্ত জীবনের স্বাদ
নিরাপদে নামাও মাথা
তোমার কাছে ফেলে এসেছি আমার ভয়
                     লিকার চায়ে লাজুক চিনি
কথা দাও, তুমি আর ঝগড়া করবে না




১০.
বিবাহ


এ বলছে ও নিভৃত, মোহগ্রস্ত
ও বলছে এ আমার বিলম্বিত লয়

সূর্যাস্তে এ আর ও হাঁটছে দু’জন, দ্রুতবেগে, দ্রুততায়
                               ছুঁয়ে নিল নতুন স্বর

স্বর অনেক, রাস্তাও অনেক, এই জগৎ-সংসার এক
একটাই পথ 
          নামো, নামতে থাকো গোপন দরজা খুলে 
                        ধাপে ধাপে 
                                    হলুদে-সিঁদুরে


১১.
আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে’


তোমার রঙের সঙ্গে আমার রঙ প্রণয়ে নয় আশ্রয়ে নয় 
নির্বাক বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকে
তোমার গানের সঙ্গে আমার গান প্রসবের ব্যথা নিয়ে ছুটে আসে 
তোমার কংক্রিটের সঙ্গে আমার কংক্রিট ঘুমিয়ে পড়েছে 
গীতবিতানের গাঢ় বসন্তে কেউ গাইছে — ‘আহা, আজি এ বসন্তে 
                                               এত ফুল ফুটে’



১২.
সম্মোহন


হাত পোড়াতে গিয়ে কখনও কখনও ঘুম পুড়ে গেছে
হাত পোড়াতে গিয়ে কখনও কখনও পুড়ে গেছে ঘাম
কোথায় লুকোব এই মুখ, মৃত্যু কূপে ফেলে আসা অন্ধি-সন্ধি
আমিই শরীরে সরীসৃপ লাফাতে লাফাতে শিখেছি প্রেম
                           শরীর সম্মোহন
শরীর নেভাতে গিয়ে কখনও কখনও পুড়ে গেছে আগুন

পোড়েনি এখনও জীবাশ্ম অক্ষর
আর 
তোমার চিবুক



১৩.
মেঘদূত


ঈর্ষা কেন রাখাল
সঙ্গমে ঢালো রক্ত, জল, ঘাম
মাটির নীচে তোমার শরীরে পোঁতা ডিওলিন
                                সেমিকোলন
                           চাঁদের রতি মেঘদূত
শুষে নিচ্ছি প্রতিশ্রুতি বিরহ মিলন
ছিদ্রপথে বেরিয়ে যাচ্ছে দ্বিধা

পারদের নীচে তেল, সাবান, যৌনতা
নাভির নীচে খিদে

অভিসারে জ্বর, হঠাৎ মনে পড়ছে রাই

বিছানার ভাঁজে শরীরে নেই সরীসৃপ



১৪.
নির্জন


এত কথা, জ্বর হলে বোঝা যেত 
অভিমানে পুড়েছে রিং টোন 
অক্ষমতার নীচে লোডশেডিং 
পিচ্ছিল অচেনা পথ আদিম
              শরীরে নির্জন তিল
উর্বরা রাত্রি এখন
          শরীরের মাটি-ঘাস-জমি

শুনশান শরীর, বয়ে যাচ্ছে নদী
               বৃষ্টি নাও
দ্যাখো, নড়বড়ে সাঁকোর নীচে
মাদুর পেতে বসে আছে ভালোবাসা





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র ।। সন্তোষ রাজগড়িয়া

ছবি প্রদর্শ-শালা ।। আলোকচিত্র শিল্প ।। মুকেশ কুমার মাহাত

পঞ্চম বর্ষ ।। তৃতীয় ওয়েব সংস্করণ ।। ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ০২ অক্টোবর ২০২৪