দ্বিতীয় বর্ষ ।। অষ্টাদশ ওয়েব সংস্করণ ।। ৪ পৌষ ১৪২৮ ।। ২০ ডিসেম্বর ২০২১
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এখন বিশ্বের অন্তত ৮৯টি দেশে শনাক্ত করা গিয়েছে। এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও অনেক বেশি দ্রুততার সাথে ছড়াচ্ছে এবং মাত্র তিনদিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
এই সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী হার নিয়ে ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শদাতা বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আরও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে হাসপাতালগুলো বিশাল চাপের মুখে পড়বে। আর ফরাসি প্রধানমন্ত্রীও হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, "অমিক্রন এখন ইউরোপে 'বিদ্যুৎ গতিতে' ছড়িয়ে পড়ছে এবং সামনের বছরের শুরুতে ফ্রান্সে এটাই হবে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া ধরণ।"
যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে যাওয়া-আসার ওপর এরই মধ্যে ফরাসি কর্তৃপক্ষ নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তার কয়েক ঘন্টা আগে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
ইউরোপে এখনো পর্যন্ত অমিক্রন সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে যুক্তরাজ্যে। শুক্রবার সেখানে ১৫ হাজার অমিক্রন সংক্রমন ধরা পড়েছে পরীক্ষায়।
ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে এখন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
জার্মানি, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসে নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইউরোপে ৮ কোটি ৯০ লাখ কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং প্রায় ১৫ লাখ মানুষ কোভিড সংক্রান্ত কারণে মারা গেছে।
কিন্তু মোদ্দা কথা হচ্ছে, গত বছর ভারতবর্ষে কোভিড যেভাবে থাবা বসিয়েছিল ঠিক সেভাবেই এ বছরও এই নতুন এবং তুলনামূলক আরোও অধিক শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট থাবা বসাতে সক্ষম হলে ভারতবর্ষের অবস্থা কি হবে? আমাদের দেশ কি তাকে আটকানোর জন্য কোনোকিছুই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আগেভাগে?
গত বছর অর্থাৎ ২০২০ তে কোভিড মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঝাঁঝরা করে দিয়ে গিয়েছে আমাদের দেশকে। এখনও স্বজন হারানো সেইসব পরিবারগুলো ভুলতে পারেনি সেই বিভীষিকা। কিন্তু তবুও কি আমরা এবং আমাদের সরকার, সে কেন্দ্র হোক বা রাজ্য, শিক্ষা নিয়েছি তার থেকে? আমরা কি আগেভাগে তাকে আটকানোর কোনো প্রচেষ্টা চালাচ্ছি? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হবে, না। কারণ আমরা এমন একটা জাতি যারা ঠকেও শিখি না। কানা হয়েও বার বার লাঠি হারানোটাই অভ্যেস আমাদের।
উত্তম মাহাত, সম্পাদক
______________________________________________
এই সংস্করণে যাঁরা লিখছেন
______________________________________________
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় / ডরোথী দাশ বিশ্বাস / অয়ন জোয়ারদার / অচিন্ত্য মাজী / সুনীতি গাঁতাইত / সুজন পণ্ডা / বিউটি সান্যাল / উৎপল দাস / মধুপর্ণা / তপন পাত্র / শ্রীদাম কুমার / দীপংকর রায় /
______________________________________________
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
শুনেছ
আমি কি বলেছি কোনো কথা?
হয়ত কথার ব্যথা পোরা ছিল পকেটে পকেটে।
হয়ত ব্যথার কথা রেডিওতে বেজেছিল রাতে।
হয়ত তোমার ঠোঁট ছুঁয়েছিল শব্দের ইঙ্গিত।
হয়ত জুতোর সোল ছিঁড়েছিল তস্কর কংক্রিট।
হয়ত কথার ফেনা সশব্দে জলকাদা ঘাঁটা।
হয়ত কথার শেষে কন্ঠনালীতে বেঁধে কাঁটা।
তুমি কি শুনেছ নীরবতা?
ডরোথী দাশ বিশ্বাসের কবিতা
১.
উৎসবের দীপ গেছে নিভে...
উৎসবের দীপ গেছে নিভে
শেষ হলো স্বপ্ন দিয়ে সাজানো সাঁঝ
বিদায় নিয়েছে রূপকথা ভরা রাত
প্রবল বর্ষণে ছিন্ন ঝুমকোলতা মাটিতে লুটায়
ঝোপের অন্তরালে সিক্ত দোলনচাঁপা অস্তিত্ব জাহির করে সুঘ্রাণে ...
মেঘে ছাওয়া সুসকাল
ঝোড়ো বাতাসের কোলে
রূপোলি ঝালরের মতো দোলে ...
জানিনা কেন দুঃখেরা সব মিলেমিশে রচনা করেছে বিশাল এক পাহাড়
যা চোখের পাতার উপর ভারী হয়ে অবস্থান করছে ...
আর মেঘমন্দ্রিত সকালের আলো আরো বেশী করে আনে তন্দ্রালু ভাব ..
বিশেষ কোন সঙ্গীতের সুর মুর্ছনায়
দুঃখেরা বাতাস আর্দ্রতায়
ছড়িয়ে পড়ে বরফকুচির ন্যায়
আমারই চারপাশে
অলসতার বাতাবরণ সৃষ্টি করে যায়...
কালসমুদ্রের তীরে নোঙর ফেলেছে আজ কল্পনার খেয়া
অন্তর নিঃশব্দে কেঁদে যায়
বোবা যন্ত্রণায় ...
২.
তবু মুহূর্তে দুলে ওঠে মন...
একটা একটা করে খুলে গেলো সব জানালা,
আলো এলো
বাতাস এলো
গরাদ ঠেলে দৃষ্টি ঠেকলো দূর আকাশে
মুহূর্তে দুলে উঠলো মন ....
সে তো বেশীক্ষণ নয়,
আচমকাই ফোন বেজে উঠলো,
আমার যে ফোনেই ফোবিয়া,
অকালমৃত্যুর খবরে চমকে উঠলাম।
এই আকাশ নীল,
এই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন,
প্রায় একমাস ধরে
সকাল হলেই পাশে রাজপ্রাসাদে মার্বেল কাটার শব্দ,
কাঠের আসবাবপত্র তৈরির তোড়জোড়,
কান ভোঁ ভোঁ
মাথা ঢিপ্ ঢিপ্
কত ডেসিবেল মাপা হয়ে ওঠেনি।
অর্জন করেছি সহিষ্ণুতা,
অভ্যস্ত হয়েছি গলা উঁচিয়ে কথা বলতে।
সবই শিখছি, সবই শিখতে হয়।
অনির্ণেয়
অয়ন জোয়ারদার
কোনো কিছুকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে, ফলাফল আসে অসংজ্ঞায়িত। শূন্যকে তো শূন্য দিয়ে বিভাজন করা যায় না! তাহলে ফলাফল আসে "অনির্ণেয়।".... তাই শূন্য মৌলিক নয় আবার যৌগিকও নয়;
সারিতেই ফেলা যাবে না!
হ্যাঁ, তবে শূন্যকে তুমি স্বাভাবিক পূর্ণসংখ্যা বলতে পারো।
শূন্য কে দিয়ে কত কিছু করতে পারো.. চোখ মুখ এঁকে দিয়ে ছানা বড়া করে দিতে পার।
খেলাতে, জীবনে কাউকে কাউকে শূন্য দিতে পারেন, নিজেকে তো হামেশাই..;
তবে মহাশূন্যের খোঁজে এই যে নিজের মন যায় , আর ফিরতে হয় যৌগিকে, মৌলিকে -
তাকে অংক দিয়েই বিচার করি আমি।
শূন্যের মজা নিয়ে কতবার সার্কাসে হাততালি দিয়ে আমাকে দর্শক বলেছে- 'অনির্ণেয়!!'
আমি সাবানের ফেনায় শূন্য উড়িয়ে কতবার খেলেছি বিভিন্ন মরসুমে!
-হাঁপিয়ে যাবে আমার শূন্য দিয়ে গুণ ভাগ করা দেখে।
এবার শূন্য নিয়ে কথা বন্ধ করে দেখি, হয়তো সূর্য উঠেছে, অথবা চাঁদ উঠবে উঠবে করছে..।
অচিন্ত্য মাজীর কবিতা
১.
ঝড়
প্রচণ্ড ঝড় তাড়া করলেও অশ্বারোহীকে ছুঁতে পারেনি। অশ্বারোহী নিজের ভেতর দিকে তাকাল। জেদী প্রখর পক্ষীরাজ ঘোড়া। পেছনের গাঢ় কালো বিন্দুটি ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা মেঘের পাঁজরে ফুঁড়ে আছে জয়ন্তী পাহাড়ের শৃঙ্গ। পঞ্চমুখী অচেনা গাছটির তলে বড়ো বড়ো লাল ফুল। এখন আর ঝঞ্ঝার আওয়াজ নেই। ঝকঝকে তলোয়ারটিকে খাপে ঢুকিয়ে সে সাদা ফুলে ছাওয়া একটি গাছের তলায় বসল।
ক্লান্তির ভেতর অক্ষয় রক্তবীজ কখন উদ্ভিদ হয়ে উঠেছে টের পায়নি অশ্বারোহী। শেষ রক্তটীকা কবে পরেছিল মনে করতে পারছে না। ক্ষতের আড়াল থেকে নীলাভ সেই বৈদূর্যমণি হঠাৎ দিপদিপ করে উঠল। মসীবর্ণ গোল থালার ভেতর পদ্মমুখ ফুটে আছে, আর তার শেকড়ে অশ্বারোহীর নাভির প্রাচীন আঠা। দূর পাহাড়ের ছায়া বাঁকাভাবে পড়েছে গভীর ক্ষতোমুখে।
২.
পথ
সামনে একটি বড় বাঁক নিতেই দেখতে পায় প্রকাণ্ড বৃক্ষ শাখায় বসে আছে জোড়া শালিখ। জোড়া শালিখ দেখতে পেলে নাকি দিন ভালো যায়। কেমন একটা গুনগুন ধ্বনিত হয়ে এল ভেতর থেকে। অবুঝ দোলাটি লাগতেই আলতো শিরশিরে ভাব। শালগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে এক আদিবাসী তামাক পাতায় দোক্তা ঢুকিয়ে বেশ মৌজ করে টান দিচ্ছে। তার উদাসী ঢুলুঢুলু চোখে সফেদ জ্যোতি ছড়ানো। ওর মাঝবয়সী বউ বন থেকে কুড়িয়ে এনেছে বেতের ঝুড়ি ভর্তি সরস কন্দ আর লাল পিঁপড়ের ডিম।গলায় সীম বিচির মালা।
ঝাঁকড়া শিমূল গাছটি পেরোতেই দেখা গেল বিরাট পেখম মেলে ময়ূর পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। কাছে গেলেই ছুটে পালায়৷ অশ্বারোহীর চোখে লেগে থাকে সেই নাচের রঙ। যেন সোনালি ধানের মালা রঙ আর শব্দের ছাঁটে ভরে উঠেছে মাটি দিয়ে লেপা খড়ের চালা। অনালোকিত গুণ্ঠনে চুপ করে আছে তার পরকিয়া ভাষা। রাঙানিয়া জাদুর ঘোরে কার পদছাপ? বনের ভেতর ঘুঙুর বাজে। দেরি হয়ে যাচ্ছে পথিকের। অনেক দূর যেতে হবে তাকে।
চাদর
সুনীতি গাঁতাইত
শীত এসেছে ঘরে বাইরে,এসো আসন পাতি রৌদ্রের,গরম নরম হোলে কষ্টসকল ছুঁয়ে যায় বিছানায় এক অছিলায়
মোহিনী সময় সম্মুখে ।
আজ পিকনিক নেই ,স্কুল ছুট ছেলেরা পায় না চাল,ছোলা সাবান,গৃহস্থের বারান্দায় আলো খায় সোনালী ধান।
তবু ব ইমেলা লিটিল ম্যাগাজিন কবিমন উত্তাল ভোর,ডেকে আনি আগুন গুনগুন সুরে চাই দাবীর উঠোন।
একমুঠো সাদা ফুলভাত হাসি কচি কিশলয় মুখে আলোর শান দিই চেতনার পিলসুজে,
কদম কদম বাড়ায়ে যা দেশে।
কে তুমি এমন করে পাগল করো?নেশার ঘোরে বুকে ফাগুন জ্বালো!নেবো না ফুল
ছোঁব কাঁটাই,ইজমে ধূমদ্রোহ।
হেমন্ত রাত
সুজন পণ্ডা
খোলা মাঠে চিত হয়ে শুয়ে আছি,
মাথার ওপর তারা তার ওপারে তারা।
তারায় তারায় নিশ্ছিদ্র রাত্রি।
কুয়াশায় নরম হয়ে আসে
আমার সযত্নে লালিত ঘুম।
আমার রাত।
আর বারবার তারা খসে পড়ে।
ঘুমের এপিঠে ঘুম, ওপিঠে ঘুম।
ঘুমে ঘুমে নিমগ্ন শতাব্দী।
ভয় লাগলে আমি উপুড় হয়ে
শুকনো ঘাসে মুখ গুঁজে দিই।
কখনো শুয়ে থাকে সন্ধে..
জ্যোৎস্না আর লেবু ফুল।
যুদ্ধের পর আরেক যুদ্ধ...
এই আমার ফানুস
উড়িয়ে দিচ্ছি ।
একদিন আকাশে একের পর এক ক্ষত,
গভীর দাগ রেখে
নিভে যাবে।
আমার ফানুস
আমার শুকনো পাতা।
কখনো জ্যোৎস্না নিভে যায়
তারা খসে পড়ে।
এখানে জন্ম নেয় স্থবির।
ঘুমের পর আরেক ঘুম
যুদ্ধের পর আরেক যুদ্ধ...।
সর্বংসহা নদী
বিউটি সান্যাল
আমার একটা নদী আছে।
যে নদীটা পাহাড় থেকে খাদে পড়ার সাহস রাখে,
যে নদীটা জলপ্রপাত তৈরী করার ক্ষমতা রাখে।
যে নদীটা ফুটি ফাটা ঐ পাথর চাটানে,
ঝরনার জল হয়ে ঝরতে জানে।
যে নদীটা দুকূল প্লাবিত করে,
নতুন সৃজনে মত্ত হতে জানে।
জানেন!
সেই নদীটাই চুপিসারে অজস্র ইতিহাস বুকে চেপে চলতে জানে।
সেই নদীটাই অসংখ্য লাস বইতে জানে।
সেই নদীটাই কলঙ্কিনী চাঁদের ছায়া বুকে এঁকে,
একা রাত্রি যাপন করতে জানে।
হ্যাঁ সত্যিই আমার একটা নদী আছে।
যে নদীটা সাগর সঙ্গমে মিশতে জানে।
যে নদীটা প্রয়োজনে গর্জন করতে জানে।
উৎপল দাসের কবিতা
পরব
নতুন কাপড় নাই, দেখতে যাবো কিসে
ঘর থেকেই প্রণাম করি মা গো
ছেলেমেয়ে রেখে দিও যতনে
আসছে বছর সুবর্ণরেখা যাবো
ভরা পৌষে হাতখালি
ডুব দেব নদীর জলে
নারকেল ভাসাবো
মকর মেলাতে
নারীর পরিসর;'ঘরে বাইরে' এবং সাইবার এলাকায়।
প্রথম পর্ব - ব্যক্তিগত পরিসর।
মধুপর্ণা
পরিসর শুধুমাত্র স্থানিক নয়, মূর্ত এবং বিমূর্ত - এই দুই মাত্রা একত্রে মিলে নির্মিত হয় পরিসরের ধারনা। এই পরিসরে প্রতিষ্ঠিত কিছু নিয়মাবলী থাকে, আরো কিছু নিয়ম অলিখিত, অদৃশ্য ভাবে থাকে এবং প্রতিনিয়ত একটি নিয়ম উৎপাদন ও লাগু হবার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সামাজিক পরিসরকে আপাতত তিনটি ভাগে ভাগ করে কয়েকটা কথা বলতে চাইছি। ব্যক্তিগত পরিসর, বাহ্যিক পরিসর এবং সাইবার পরিসর। এই দৃশ্যমান বেঁচে থাকায় যখন বিভিন্ন পরিসরের জল-অচল ভাগ গুলো ক্রমে পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তখন এই সামাজিক পরিসর গুলিতে নারীর অবস্থান দেখার চেষ্টা করি তাহলে দেখা যাবে প্রতিটি পরিসরে নারীর অবস্থান আলাদা। এই 'নারী' একটা হোমোজিনিয়াস ক্যাটাগরি নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থান ভেদে বদলে যায় অথবা নির্মিত হয় তার/তাদের অবস্থা/ অবস্থান। রিসোর্স, জাতি, বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণী ভেদে বদলে যায় বিভিন্ন পরিসরের সঙ্গে 'নারী'র সম্পর্ক, লগ্নতা, সমঝোতার সমীকরণ।
পারসোনাল স্পেস আর পাবলিক স্পেস অর্থাৎ ব্যক্তিগত পরিসর ও বাহ্যিক পরিসর - রবীন্দ্র উপন্যাস থেকে ধার করে যদি বলি "ঘরে-বাইরে"। প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র স্থানিক পরিসর মনে হলেও, এই পরিসর গুলির নানাবিধ মাত্রা রয়েছে, হতে পারে মানসিক, হতে পারে অনুভূতিগত। আবার প্রতিটি পরিসরের মধ্যে রয়েছে একটি ও অন্যটির বিনিময়যোগ্যতা। নারীকে এই পরিসর গুলোর মধ্যে যাতায়াত করতে হয় খুব সন্দর্পনে। যে কোনো মুহুর্তে প্রোটোকল ভেঙে যাবার আশঙ্কা, আশঙ্কাটি কার ? তার নিজের ? সমাজের ? পিতৃতন্ত্রের ? কার ? নিজের সুবিধার জন্য যে বা যারা নির্মাণ করেছে তাদেরই আশঙ্কা। এবং তার আরোপিত চাপে নারীর মধ্যে সেই আশঙ্কার প্রতিফলন।আরও পড়ুন
প্রাণের টুসু জলে দিব না...
তপন পাত্র
এই বাংলার এক বহুল প্রচলিত প্রবাদ : '‘কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ" । সর্বনাশের উল্টো পিঠে সব পেয়েছির তাৎপর্যটি কৃষিনির্ভর মানভূমের আলো-হাওয়ায় সুপরিস্ফুট এবং অনুভবযোগ্য । পৌষমাস মানভূমের কৃষিজীবী মানুষের চোখে পূর্ণতার প্রতীক । আমরা শুনতে পাই পল্লী প্রেমিক কবিগুরুর পরিচিত কণ্ঠস্বর “ডালা যে তোর ভরেছে আজ পাকা ফসলে”। প্রাচুর্যের স্বর্ণময়ী পৌষ তো কৃষক,শ্রমিক, ক্ষেত মজুরের জীবনে সম্বচ্ছরে একবারই আসে। বাতাসে ভেসে আসে গান , যেন মহালয়ার ভোরবেলাকার আবাহন সঙ্গীত ---
“আসচে মকর দু’দিন সবুর কর,
তরা বাঁকা পিঠার জগাড় কর..."
মকর তো মানভূমে দুর্গোৎসবের চেয়েও বড়ো উৎসব, মানভূমের জাতীয় উৎসব লোককবির কথায়
“পৌষ সাঁকরা’তে আমদের মকর পরব,
মিঞা - মরদ সব চক্চকায়।
দুগ্গাপূজা, রাস পরব , সব পেঁ"দা মনে হয়।”
সত্যিই, মকর মানেই সে কী লাবণ্যে পূর্ণ দেহ ! সে কী আনন্দধারায় বিগলিত প্রাণ ! মানভূমের মাটিতে জন্মে খাঁটি মানভূঞা না হলে তার পূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করা যায় না।
মকরের প্রকৃত সূচনা অঘ্রাণ সংক্রান্তিতে । এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে অঘ্রাণের গৌরব ও গুরুত্ব অপরিসীম । মাঠের ধান ঘরে আসে । কর্মহীন কাজ পায়। শূন্য হয় পূর্ণ । তাই তো এমন প্রবাদ আমাদের ঝুলিতে – “আঘন মাসে চু'টারঅ সাতটা বহু”। এখানে হয়তো বড়লোকী ঠাট্ -এর প্রতি শ্লেষ আছে কিন্তু তার চেয়েও বড়ো কথা শ্রী ও সম্পদের সংশয়াতীত স্বীকৃতি রয়েছে । ভাদরে যখন “রাজার ভান্ডারও খালি”, তখন যে কৃষক এক দুখিনী চাষী বৌকে এক মুঠো ভাত দিতে পারে না, পৌষে সে সাতটি বৌকে ভাত দেবার ক্ষমতা ধরে। ভাদর তো সব অর্থেই “শূন্য মন্দির”। যে কৃষক ভাদরে সামান্য দু'মুঠো ভাতের জন্য কাঙাল, অঘ্রাণ-পৌষে সে সাজিয়ে তোলে রসনালোভন পুরপিঠের থালা।
“আঘন সাঁকরা’তে গুঁড়ি হাত,
পৌষ সাঁকরাতে পিঠা ভাত"
– মানভূমের আর একটি প্রিয় প্রবাদ । অঘ্রাণ সংক্রান্তিতে যে পিঠের সূচনা, পৌষ সংক্রান্তিতে তার পরিসমাপ্তি। অঘ্রাণ সংক্রান্তিতে মকরের মহড়া শুরু । সারা অঘ্রাণ মাসের রবি ও স্থানবিশেষে বৃহস্পতিবারগুলোতেও ইতুর পূজা। সংক্রান্তির ভোরে ভাসান। পুকুর-নদী-বাঁধ বা অন্য কোন জলাশয় থেকে সেই ফুল-পল্লব নিয়ে এসে পয়লা পৌষের সন্ধ্যায় টুসু পাতা । এদিন যেমন টুসুর স্থাপনা তেমনি নানাভাবে মকরের স্বাদ গ্রহণেরও সূচনা। মকরের উদ্বোধন । আর বোধন চাউড়ির দিন । চাঁউড়ির পরদিন বাঁউড়ি । বাঁউড়ির রাত পেরোলেই মকর ।
চাঁউড়ির আগের দিনকে বলা হয় ''চালধুয়া''। পিঠের চাল ধুয়া হয় এইদিন। চাঁউড়ির দিন সেই আধভেজা চাল কুটে গুঁড়ি তৈরি হয় । কাঠের ঢেঁকিতেই গুঁড়ি কুটা হয়ে আসছে শত সহস্র বছর ধরে । যতক্ষণ না একটি পরিবারের গুঁড়ি কুটা হচ্ছে ঢেঁকির নেজাড় থেকে পা সরাতে নেই । তবে সময়ের সাথে সাথে আর ঢেঁকি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না । এখন মেসিনেই গুঁড়ি পেশানো হচ্ছে । স্বাভাবিকভাবেই, সংস্কারেরও পরিবর্তন ঘটছে । তবে এই গুঁড়ি কুটার দিনটি আজও “চাঁউড়ি” নামেই পরিচিত । আর বাঁউড়ির দিন চালের গুঁড়ি দিয়ে পিঠে বানানোর দিন । সব বাড়িতেই গড়গ'ড়া পিঠা বা পুরপিঠা বানানো হয় । তবে যাদের বাড়ির বা ভাই-ভায়াদের মধ্যে কেউ মারা যায়, তাদের সে বছর পুর বাদ দিয়ে শুধু চালগুঁড়ি দিয়েই পিঠে বানাতে হয়। এদিন “বাউড়ি বাঁধা”-এ অঞ্চলের মানুষের একটি অবশ্য পালনীয় অনুষ্ঠান। ঘরকন্নার যাবতীয় জিনিসপত্র, চৌকাঠ, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ‘'পুয়ালদড়ি’' বা ‘'বিচালদড়ি" দিয়ে বাঁধতে হয় । এই দড়ি পাকানো হয় শুদ্ধাচারে, উল্টো দিক থেকে পাকানো দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় পিঠের হাঁড়িটিও। ঘরের খুঁটাটিও বাদ যায় না ।
---- পরদিন মকর স্নান সেরে মকরজল ছিটিয়ে গৃহের কর্তা সেই সকল বাঁধন খোলেন । এই বাউড়ি বাঁধার উদ্দেশ্য অমঙ্গল থেকে গৃহস্থকে রক্ষা করা । বাঁউড়ির পরদিন অর্থাৎ মকরের দিন পিঠেকে আয়াস করে খাবার দিন। শুধু পিঠে খাওয়া নয়, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মকর স্নান সেরে নতুন বস্ত্র পরিধান করে । প্রবাদ আছে, "মানুষ ঢেঁকি বন্ধক দিয়ে হঁলেও মকরে লৈতন কাপড় প’রব্যাক।”
কারণ নতুন পোশাক জুটাতে না পারা, পরিবারের পুরুষের অক্ষমতা, সেই অক্ষমতার অপমান আত্মহত্যার সামিল । যার প্রমাণ মেলে টুসু গানে ---
"ই বছরও পৌষ পরবে মিলল না শায়া-শাড়ি
ও তুই লে লো লে গলায় দড়ি”।
শায়া-শাড়ি-ব্লাউজ এমনকি মেয়েকে বাপের বাড়িতে নিয়ে আসার সামান্য অর্থও জোগাড় করতে পারেনি মা-বাবা । তাই মেয়েকে আনতে পারেনি, তখন এই আনন্দের দিনে মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে লুকিয়ে লুকিয়ে মনস্তাপের সঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে
গায় ---
“এত বড় পৌষ পরবে
রখলি মা পরের ঘরে
মা গো আমার মন কেমন করে।”
মকরের পরের দিনটিকে এখানকার মানুষ ‘'আখিয়ান'' যাত্রা বলে । ''আখিয়ান'' শব্দটি অক্ষ-অয়ন শব্দজাত বলেই মনে হয় । "অক্ষ" অর্থে "সূর্য" এবং "অয়ন" অর্থে "গতি" অর্থাৎ সূর্যের গতি । মকরের পরদিন 'আখ্যান' । কৃষি নববর্ষের প্রথম দিন, এই 'আখ্যান' বা আখিয়ানের দিন কৃষক তার কোন জমিতে আড়াই পাক হাল চালিয়ে বছরের প্রথম হালচালন সম্পন্ন করে । এখানকার মানুষ বিশ্বাস রাখে এ দিন যে কর্মের সূচনা, তাতে সিদ্ধি অবশ্যম্ভাবী । তাই কেউ কেউ মাটিতে চোট দেয় । শিকারী শিকারের সূচনা করে, পথিক শুভযাত্রা করে, সংসারী নবগৃহ নির্মাণ করার থাকলে বনেদ খোঁড়ে। আবার গ্রামের মোড়ে, প্রান্তরের শালগাছের ছায়ায় গরাম ঠাকুরের পুজা হয় । হাঁস, মুরগী, ভেড়া, ছাগল বলি দেওয়া হয় গ্রামের কল্যাণের কামনায় । এভাবেই মকর পরবের অন্যতম অঙ্গ আখ্যান উদযাপিত হয় । চতুর্দিকে শুরু হয় মোরগ লড়াইয়ের উৎসব ।
এখন প্রশ্ন হোল, যে টুসুকে ঘিরে এতো উন্মাদনা , সেই টুসু ব্রতের তাৎপর্যটি কী ? টুসুকে কেউ বলেন তুষু । গবেষকদের ধারণা এই নামকরণের মূলে তিযা নক্ষত্রের প্রভাব থাকা অসম্ভব নয় । তবে মূলত ধানের তুষ থেকে নামকরণটি এসে গেছে বলে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য । তুষ তুষুব্রতের একটি অপরিহার্য উপাদান । কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে এর একটি নিবিড় যোগ রয়েছে । গরুর গোবর, সরষে ফুল, নতুন ধানের তুষ প্রভৃতি উপকরণের প্রচলন তুষু বা টুসু পাতার সাথে সংযুক্ত । টুসু পাতার দৃশ্যটি দেখলে দর্শক মাত্রই বুঝতে পারবেন এর সঙ্গে উর্বরতাবাদের যোগসুত্রটি সুস্পষ্ট । আমরা একটু ব্রতের বিধিটি জেনে নিই, অঘ্রানের সংক্রান্তি থেকে পৌষের সংক্রান্তির আগের রাত পর্যন্ত পূজা । প্রতি সকালে স্নান করে গোবরের ছ'কুড়ি ছ'গন্ডা বা একশত চুয়াল্লিশটি গুলি পাকিয়ে, কালো দাগহীন নতুন সরাতে বেগুনপাতা পেড়ে তার উপর গুলিগুলো রাখা হয় । তার উপর নূতন আতব চালের তুষ বা কুঁড়ো ছড়িয়ে ছড়া বলা হয় । ব্রতের নানা উপকরণ থেকে বোঝা যায়, এটি সার মাটি দিয়ে ক্ষেত উর্বর করার ব্রত । এছাড়া প্রার্থনার ভাষাটিও লক্ষ করার মতো ---
“কোদালকাটা ধন পাব ,
গোহাল আল গরু পাব ।
দরবার আল বেটা পাব ,
মরাই উপচা ধান পাব ।... ইত্যাদি ।
আমরা শুনতে পাচ্ছি মঙ্গলকাব্যের কবির প্রার্থনা ---
"আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে"।
আমরা যদি প্রাচীন টুসু গানগুলি বিশ্লেষণ করি , সেখানে কৃষি কথা, জল সংরক্ষণ, শস্য উৎপাদন ইত্যাদির কথারই প্রাধান্য।
ভাসানের সময় একটি গানে বলা হয়েছে ---
“জলে হেল, জলে খেল
জলে তুমার কে আছে ?
আপন মনে ভাবে দেখ,
জলে শ্বশুর ঘর আছে।”
অর্থাৎ কৃষির দিন যাপনের মূল আধারটি জল । পৌষ সংক্রান্তির সকালবেলা সেই জলেই টুসুর বিসর্জন । টুসু লৌকিক দেবী ,সেই টুসুকে, আর চৌডলকে আবার কোথাও কোথাও মাটির তৈরি টুসু প্রতিমাকে আজ বিসর্জন দিতে মন সরে না । তাই আনন্দ-বিষাদে অশ্রুসিক্ত কুমারীরা টুসুকে নিয়ে নাচতে নাচতে গায় ---
“প্রাণের টুসু জ্বলে দিব না,
আমদের মনে বড়ই বেদনা ।''
অথবা
" প্রাণের টুসু জলে দিব না,
আমদের বড়োই মনের বেদনা ।"
কানে বাজে রবীন্দ্র চরণ ---
"যেতে নাহি দিব"
তবু
“যেতে দিতে হয়"।
।। পান্তা ফুরোবার আগে ।। নির্মল হালদার ।।
শ্রীদাম কুমার
দক্ষিণের বারান্দা প্রকাশিত নির্মল হালদারের কাব্যগ্রন্থ -- 'পান্তা ফুরোবার আগে '। প্রচ্ছদ মনোজ্ঞ শোভনসুন্দর। পাতা, মুদ্রণেও অকুণ্ঠ প্রশংসা প্রাপ্য প্রকাশকের। প্রত্যেক কবিতাপ্রেমীর বইটি অবশ্য সংগ্রহযোগ্য।
কাব্যগ্রন্থটির পাতা পাল্টালেই মনে হয় প্রকৃতির জল হাওয়া রোদ মেখে-- কবিতাগুলি ধূলো মাটির অক্ষর ছুঁয়ে আছে পরম মমতায় নিবিড়তার বন্ধনে। কবি নির্মল হালদারের মিত- বাকসিদ্ধির হাত ধরে কাব্যগ্ৰন্থটি পৌঁছে গেছে চিরন্তনের দিকে। অবলীলায় আর সাবলীলতার সুষমায়। আমাদের চেতনাতেও ছড়িয়ে যায় তার গূঢ় সঞ্চরণ আর রসোজ্জ্বল মানবীয় উষ্ণতা।
বইয়ের শুরুতেই কবি বলেন--
" দুটি তারার মাঝে যেটুকু জায়গা
আমারই জায়গা। "
নক্ষত্র ছড়ানো বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের আবহমানের শরিক হিসেবে কবি নির্মল হালদার নিজেকে ভাবতে পেরেছেন। তাই তো তিনি যাবতীয় সংকীর্ণতার গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে পারেন। দুই তারার মাঝে জায়গা করে নিতে পারেন। এখানে সব কিছুরই জায়গা মেলে, --সবারই স্থান সংকুলান হয়। এখানে হানাহানি ছিনিয়ে নেওয়া নেই। " হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার " করে বলতে হবে না--
" আমার জমি নেই জায়গা নেই
সবাই সবকিছু কেড়ে নিয়েছে "
________________________________________________
ঔপন্যাসিক দীপংকর রায়ের ধারাবাহিক উপন্যাস---
"জলশ্যাওলার বিরহকথা" --- এবার নবম পর্ব
________________________________
জলশ্যাওলার বিরহকথা
দীপংকর রায়
একত্রিশে কার্তিক, পনেরোই নভেম্বর :
অলস এক বেলা । অনেক দিন পর এখানে আমার সঙ্গে গাছাড়া দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কোনো কাজ নেই। খাওয়া আর ঘুম। আর মাঝে মাঝে যা মনে আসে তাই লিখে যাওয়া। যে প্রেরণায় এর আগে অন্যান্য কিছু লিখতাম তা কোথায় কত দূরে যে হাওয়া বাতাসে গুঙিয়ে বেড়াচ্ছে, তাকে আর খুঁজে পাই না। কয়েকবার ভেবেছি এদিক ওদিক একটু যাই, কিন্তু কী এক ভয়ে কেন যে কুঁকড়ে আছি তাও বুঝতে পারছি না।
ভাবি, যেখানে যাই, গিয়ে একটু শান্তি পাবো, তাও তো মনে হচ্ছে না। তবে সব জায়গাতেই যেতে হবে যে একথাও তো সত্যি। নিজের অবস্থার কথা কাকে আর বলি ! এদিকে এদেশে এলে ধার বেড়েই চলে। ঈশ্বরের কোনো অনুকম্পাই কী আছে আমার জন্যে কোথাও একটু ?
সকালে ভাবলাম টেলিফোন করবো, কিন্তু করতে গেলেই যে খরচ তা সামলে উঠতে পারবো বলে তো মনে হয় না ! এখানে একটি ছেলের সাইকেলের পেছনে উঠে ঈদগাঁয় গেলাম। আজ ঈদুজ্জোহা পালন করছে মুসলমান সম্প্রদায় ---- ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা কাপড়ে টুপি মাথায় দিয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া দেখে ভীষণ ভালো লাগছিল। যদিও কিছুক্ষণ বাদে আর একটি কথাও মনে পড়ছিল, পুজো-পাব্বনে দিন দিন মানুষজনের সমাগম কমে আসা দেখে। যেমন প্রতিমা নিরঞ্জনেও দিন দিন আর আগের মতো লোকজন হয় না। জোড়োনের নৌকোও লাগে না আর আগের মতো। দিন দিন প্রতিমা-মূর্তি পাল মশাইকে ছোটো করতে বলে বলে , এখন আর সে কাজেও বেশি মানুষের প্রয়োজন হয় না। চারজন মানুষ হলেই নিরঞ্জন হয়ে যায়। সঙ্গে থাকে কিছু কচিকাঁচা। ঢাকিও আগের মতো তার উদ্দাম নাচ দেখাতে পারে না, ধুনুচি নাচেও আর আগের মতো নৌকার মাঁচা নাচতে থাকা দেখা যায় না। সন্ধ্যা লাগতে না লাগতেই কয়েকটি ঘাট ঘোরাঘুরি করার পরেই বিসর্জনের নৌকার মুখ ঘুরিয়ে ফিরে আসে ঘাটে। আরও পড়ুন
আমাদের বই
সম্পাদক : উত্তম মাহাত
সহায়তা : অনিকেতের বন্ধুরা
টুসুর ছবি : তপন পাত্র
যোগাযোগ : হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৯৩২৫০৫৭৮০
ইমেইল - uttamklp@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন